বি টি রণদিভে
মহান অক্টোবর বিপ্লবের পর অতিক্রান্ত সাতটি দশক নবীন ও বৈপ্লবিক সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মুমূর্ষু পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেকার দ্বন্দ্বের এক ঐতিহাসিক কাহিনী বিবৃত করেছে। চেতনা ও ধর্মকাণ্ডের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পৃথিবীজোড়া আধিপত্য বজায় রাখার বিফল, মরিয়া প্রচেষ্ঠার দ্বারা এই দশকগুলি চিহ্নিত হয়ে আছে। মানব জীবনের সামাজিক ভিত্তিকে পরিবর্তন করার এই সংগ্রামে প্রগতি বিরোধীরা যে কোনও অর্থে ব্যবহার করা থেকেই নিরস্ত পাকেনি। (প্রগতি বিরোধীদের) আদিম হিংস্রতা, অবিচার কুৎসা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে বলি দেওয়ার প্রবৃত্তির দ্বারা শ্রেণী সংগ্রামের নিম্নরুচি ও নীচ চেহারা প্রকট হয়ে উঠেছে। মহান অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্ত্তী সত্তর বছরব্যাপী অগ্রগমণের পথে দেশে দেশে সমাজতন্ত্রকে এই নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাছাড়া যারা ইতিহাসের চাকাকে উল্টোদিকে যোরাতে চায় তাদের সামরিক আক্রমণের মুখোমুখি দাড়িয়ে, সোভিয়েত ইউনিয়নের শ্রমিকশ্রেণী তথা জনগণকে সংগ্রামের মূল ধারাটি সামাল দিতে হয়েছে এবং সীমাহীন ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে।
এই সংগ্রামের ফলশ্রুতি হলো সারা পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশে সমাজতন্ত্রের বিস্তৃতি, মহান চীন বিপ্লব সহ একাধিক দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক অভিযানকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ভিয়েতনামের জনগণের মহান ও বিপুল সাফল্য, পুরাতন ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার পতন, যার ফলে ভারতসহ অন্যান্য পরাধীন দেশগুলির স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত হওয়া এবং শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে পৃথিবীর শ্রেণীশক্তিগুলির ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটা।
যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্নে:
যুদ্ধ ও শান্তির মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে দুই সমাজব্যবস্থার বৈপরিত্য অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। বিগত সাতটি দশক ধরে যুদ্ধে ইন্ধন যুগিয়ে, দখলদারী ও পরাধীনতা সৃষ্টিকারী যুদ্ধ সংগঠিত করে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চক্রান্ত চালিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা তার নৃশংস ও নরখাদকসুলভ চরিত্র উন্মোচিত করেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর পারমাণবিক শক্তির প্রাধান্য অর্জনের লক্ষ্য থেকে এক পারমাণবিক ধ্বংসকাণ্ডের আয়োজন করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আজও যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্নে ছেলেখেলা করছে।
পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের একতরফা নিষেধাজ্ঞায় সাড়া দিতে অসম্মত হওয়া, পারমাণবিক অস্ত্র হাসের প্রতিটি সোভিয়েত প্রস্তাব ও চুক্তি বানচাল করা, ইউরোপ থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র তুলে নিতে গড়িমসি করা, এ সবই এমন একটি সমাজব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যাজর্জর চরিত্রের পরিচয় বহন করে, যার নিজের অস্তিত্বরক্ষার জন্য যুদ্ধ করাটা আবশ্যক।
নিজের অস্তিত্বরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য, বিশ্বজোড়া কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য এবং পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রমুক্ত রাখার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে ছোট-বড় দেশের ঘাড়ে বিপুল প্রাণহানি ও ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে সোভিয়েত বিজয়ের ফলে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন বিন্যাসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ একটার পর একটা ধাক্কা খাওয়া সত্ত্বেও সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে অপরাপর জাতিগুলির স্বাধীনতাহরণের চেষ্টা করছে। জেনিভার উপর কাপুরুষোচিত আক্রমণ, নিকারাগুয়ায় হস্তক্ষেপ, ইজরায়েল এবং বর্ণবিদ্বেষী দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারসহ যেখানে যত প্রতিক্রিয়াশীল ও একনায়কতন্ত্রী সরকার আছে তাদের প্রতি ঘৃণ্য সমর্থন— এগুলিই হল সাম্প্রতিককালে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা হতে নির্গত ইতিহাস। এরা ভারতবর্ষেও ঐক্য এবং স্থিতিশীলতাবিরোধী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করার উদ্দেশ্যে পাঞ্জাবে খালিস্তানী উগ্রপন্থীদের সমর্থন ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে। বিভিন্ন দেশের প্রত্যাঘাত এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপর্যয় থেকে ওরা কিছুই শেখেনি। কারণ আগ্রাসন ও পরাধীনতা বিস্তার করাই সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় শর্ত। যুদ্ধ এবং লুণ্ঠনই এদের এক মাত্র পররাষ্ট্রনীতি। এখন বিশ্বজোড়া আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্য থেকে তারা পৃথিবীকে পারমাণবিক ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে।
বিপরীত দিক থেকে তুলনা করলে, গত সাতটি দশক দেখিয়ে দিচ্ছে যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন অক্লান্তভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার নীতি, ভিন্ন ভিন্ন সমাজব্যবস্থা অনুসরণকারী দেশগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের নীতি এবং সারা পৃথিবীতে স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সমর্থনের নীতি অনুসরণ করছে।
সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ:
সমাজতন্ত্র এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবিচ্ছের অঙ্গ সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের বহিঃপ্রকাশ হিসাবেই ঐসব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলি সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুদ্ধ হল সাম্রাজ্যবাদের নিরবিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব বজায় রাখার পূর্বশর্ত, সমাজতন্ত্রের অস্তিত্ব বিকাশের পক্ষে আবশ্যকীয় শর্ত হল শান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব।
শ্রমজীবি মানুষের আন্তর্জাতিক সংস্থা (প্রথম আন্তর্জাতিক)-র প্রতিষ্ঠা সভার উদ্বোধনী ভাষণে কার্ল মার্কস শ্রমিকশ্রেণীর বৈদেশিক নীতির মূল আদর্শগুলি লিপিবন্ধ করেন। নিজ নিজ দেশের সরকারের বৈদেশিক নীতির প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখার অনন্য এবং এক দেশের শ্রমিকশ্রেণীকে আরেক দেশের শ্রমিকশ্রেণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত করানোর কৌশলের বিরদ্ধে আন্দোলন করার অন্য কার্ল মার্কস সকল দেশের শ্রমিকশ্রেণীর কাছে আহ্বান জানান। উদ্বোধনী ভাষণে বলা হয়-
‘শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির জন্য ভ্রাতৃত্বমূলক সহমত যদি আবশ্যকই হয়, তাহলে সেই মহান উদ্দেশ্য কিভাবে সেই পররাষ্ট্রনীতির দ্বারা সফল হতে পারে যা অন্ধ জাতি সংস্কারে প্ররোচনা দিয়ে এবং সর্বনাশা যুদ্ধের মাধ্যমে মানুষের রক্ত ও সম্পদের অপচয় করে?’
তিনি আরও বলেন যে ঘটনাবলী থেকে শ্রমিকশ্রেণীর এই শিক্ষাই হয়েছে যে-
‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির রহস্য তাকে আত্মস্থ করতে হবে, নিজ নিজ সরকারের কূটনৈতিক কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে হবে, প্রয়োজনে সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দিতে হবে, প্রতিরোধে অক্ষম হলে, সম্মিলিতভাবে একই সময়ে নিন্দা করতে হবে এবং যেসব সরল আইন, নায় ও নীতি ব্যক্তিগত সম্পর্ক পরিচালিত করে, তাকেই জাতিগুলির পারস্পরিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে সর্ব্বোচ্চ নিয়ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এই ধরণের এক পররাষ্ট্রনীতির জন্য লড়াইটা শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির জন্য সাধারণ সংগ্রামেরই অংশ।
দুনিয়ার মজদুর এক হও।’
রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণী রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর উপরোক্ত আদর্শগুলি বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ধ্রুবতারা হিসাবে ঘোষণা করার সময় এল। মার্কস যে আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রচার করেছিলেন, তারই আলোকে আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী সমাধানে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রসারে শ্রমিকশ্রেণীর পদ্ধতি কি হবে, তা লেনিন কর্তৃক রচিত ও সোভিয়েত সরকার কর্তৃক গৃহীত শান্তি সম্পর্কিত ঐতিহাসিক ঘোষণা দেখিয়ে দিল। এই ঘোষণায় বলা হল ‘অক্টোবর ২৪-২৫’এর বিপ্লব দ্বারা সৃষ্ট এবং শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষক প্রতিনিধিদের সোভিয়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক ও কৃষক প্রতিনিধিদের সরকার সহ যুদ্ধরত সমস্ত জনগণও তাদের সরকারের কাছে এক ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক শান্তির আহ্বান করছে। এই সরকারের মতে যে শান্তি হবে কোনও ক্ষতিপূরণ এবং কোনও জবরদখল ব্যতিরেকে (অর্থাৎ কোনও বিদেশী ভূমির দখল, কোনও বিদেশী রাজ্য বলপূর্বক আত্মসাৎ ব্যতিরেকে)’।
উপনিবেশ ও অঞ্চল জবরদখল ও আত্মসাৎ করার জন্যই ১৯১৪-১৮ সালের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হয়েছিল। সফল বিপ্লবের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শান্তির জন্য সোভিয়েতের এই ঘোষণা পৃথিবীর দেশগুলির মধ্যে সমতা ও স্বাধীনতার এক নতুন যুগের আহ্বান করলো। তারপর থেকেই শান্তির স্বার্থে, আগ্রাসন ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং পরাধীন ও ঔপনিবেশিক দেশগুলির মুক্তির জন্য সোভিয়েত রাষ্ট্র ও শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কতন্ত্রের বিরামহীন সংগ্রাম সারা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করলো।
শান্তির জন্য সংগ্রাম:
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে ১৯৩০-এর দশকে ফ্যাসীবাদী যুদ্ধ বিপদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী শক্তিগুলির সমাবেশের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও ফ্রান্স সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করার জন্য হিটলারকে প্ররোচিত করেছিল।
সাম্রাজ্যবাদীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পারমাণবিক বোমার উপর একচ্ছত্র অধিকারের উপর নির্ভর করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবীর উপর আধিপত্য করার স্বপ্ন দেখল। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সকল প্রস্তাব বানচাল ও খারিজ করা হল। সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর পারমাণবিক প্রাধান্য অর্জনে কৃতসংকল্প মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধকে বহির্বিশ্বে টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা, ‘নক্ষত্রযুদ্ধ পরিকল্পনা’ পরিত্যাগ করতে রাজী নয়। ইউরোপ থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরানোর চুক্তিকে নিশ্চল ও বিলম্বিত করা হচ্ছে।
লক্ষকোটি মানুষ সমর্থিত শান্তির আন্দোলন আজকে বিশ্ববাসীর কাছে জীবন মরণের প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে। এটি আজ মানুষের অস্তিত্বরক্ষার লড়াইতে পরিণত হয়েছে এবং প্রত্যেকেই বুঝতে পারছে যে এর বিরুদ্ধপক্ষ মানব অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলেছে। সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ ভিত্তিক সঠিক আন্তর্জাতিক নীতির জন্য লড়াইটি মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার সংগ্রামে পর্যবসিত হয়েছে।
উল্টোদিকে সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধিতে এবং যুদ্ধ প্রস্তুতিতে দৃঢ়সংকল্প। এরা এদের অর্থনীতিকে সামরিক ব্যয় নির্ভর করে তুলেছে এবং যখন লক্ষকোটি মানুষ বেকার ও অভুক্ত, তখন তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলায় সমর্থ অস্ত্র তৈরী করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। এরা সমর শিল্প ব্যবস্থার হাতে সরকারকে অর্পণ করছে। হিরোসিমা এবং নাগাসাকি হলো এর প্রতীক সংকেত।
সংকটাপন্ন পুঁজিবাদী দুনিয়া:
ফ্যাসীবিরোধী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পুঁজিবাদী দুনিয়া একাধিকবার সংকটে পড়েছে। যুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তী বছরগুলি তুলনামূলক ভাবে সংকটমুক্ত হওয়ার ফলে বিশ্বাসপ্রবনদের মধ্যে আশা জাগে যে অবশেষে মন্দার যন্ত্রণা অবসানকারী এক নতুন ধনতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু ধনতন্ত্রের ( অন্তর্নিহিত ) দ্বন্দ্ব প্রতিপালিত হল। একচেটিয়া পুঁজি ও বহুজাতিক সংস্থার ক্রমবর্দ্ধমান ক্ষমতা এবং একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে রাষ্ট্র কর্তৃক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে এই দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠলো৷ এই পঞ্চদশ বার্ষিকী পরিকল্পনা জাতীয় আয় ও শিল্পোৎপাদনকে দ্বিগুণ করার ব্যবস্থা করেছে। ঐ সময়কালে সোভিয়েত উৎপাদন ও যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি এবং আমূল পরিবর্ত্তন ঘটবে।
এর ফলে এই ১৫ বছরে যে অর্থনৈতিক ক্ষমতার সৃষ্টি হবে, তা সোভিয়েত শাসনের পূর্ব্ববর্ত্তী সমস্ত বছরগুলিতে সঞ্চিত ক্ষমতার প্রায় সমান হবে এবং সাম্যবাদের বস্তুগত ও প্রযুক্তিগত ভিত্তি প্রস্তুত করার দিকে এক দীর্ঘ পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
এই ভাবেই দুই ব্যবস্থার বৈপরিত্য ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎকর্ষ প্রমান করছে।
উৎপাদনের হাতিয়ারের উপর সামাজিক মালিকানা এবং পরিকল্পিত অর্থনীতি —সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এই সুবিধাকে শিল্প ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সুবিধার সাথে যুক্ত করার ফলেই সোভিয়েত ইউনিয়নে এই বিপুল অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি ও শ্রমিক রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এই যুক্ত সুবিধাগুলি নিশ্চিত করেছে যে, কোনও বেকারি থাকবে না এবং জনগণের জীবনের মান দ্রুত উন্নত হবে। শিল্প ও প্রযুক্তির বিকাশকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার অনিবার্য্য পরিণতি হিসাবে যে উদ্বৃত্ত শ্রম সৃষ্টি হয় তাকে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যের মত অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করে জনগণের অসংখ্য চাহিদা পূরণ করা হবে।
সি এম ই এ ভুক্ত দেশগুলিতে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনের জন্য নিবিড় পরিকল্পনা দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে আরও সহায়তা করা হবে। এটা হল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। এটি ধনতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বাণিজ্য চুক্তি এবং অগ্রসর দেশগুলির অন্যান্য দেশের উপর আধিপত্য করার জন্য প্রযুক্তির একচেটিয়া অধিকারের উপর সতর্ক পাহারা দেওয়ার প্রচেষ্টার তুলনায় স্পষ্টভাবে বিপরীত চিত্র।
পরিকল্পিত অর্থনীতি বনাম নৈরাজ্য:
অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্তী সাতটি দশক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অস্থিরতা সংকট ও অনিশ্চয়তার বিপরীতে সোভিয়েত ব্যবস্থার স্থিতি ও উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠিত করেছে। ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রবক্তারা যখনই ঐ ব্যবস্থার অব্যাহত অগ্রগতি প্রত্যাশা করেছে, প্রত্যেকবারই তাদের আশা ধূলিস্যাৎ হয়েছে এবং অর্থনৈতিক বিপর্য্যয় নেমে এসেছে।
১৯২০-র দশকে ধনতন্ত্রের আংশিক স্থিতি দেখা যায় এবং ধনতন্ত্রের প্রবক্তারা এই ব্যবস্থায় আঘাত সহ্য করার অবস্থা রয়েছে বলে ঢাক পেটাতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নে যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর তখনও পুনর্গঠন চলছিল আর পুঁজিবাদের প্রবক্তারা তাদের প্রচারে এরই সম্পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু ১৯২৯ সালের মধ্যেই যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন তার প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু করেছে, তখনই এই (ধনতান্ত্রিক) সমাজ মহামন্দা নামক অভূতপূর্ব সঙ্কটের কবলে পড়ে। ১৯৩৩ সালের মধ্যে ধনতান্ত্রিক দুনিয়া সংকটের পাঁকে আরও গভীর ভাবে নিমজ্জিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সংকট ও বেকারী থেকে মুক্ত এক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপনকারী প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সফল পূর্ণায়ন ঘোষণা করে । প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফলের সারমর্ম বলার সময়, স্তালিন সঠিক ভাবেই বলেন:
‘ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই শ্রেষ্ঠ এবং অন্য সকল অর্থনীতি ভঙ্গুর ও অর্থনৈতিক বিকাশের সমস্যার মুখে নিজেদের প্রমাণ করতে অক্ষম– বুর্জেয়া অর্থনীতিবিদদের এই প্রচারকে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফল নস্যাৎ করে দিয়েছে । পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলাফল দেখিয়ে দিচ্ছে যে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি দেউলিয়া ও ভঙ্গুর। এর প্রয়োজন ফুরিয়েছে এবং একে এখন উন্নততর সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক অর্থ নৈতিক ব্যবহার জন্য পথ ছেড়ে দিতে হবে। সোভিয়েত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই হচ্ছে একমাত্র অর্থনীতি যার কোনও সংকটের আশঙ্কা নেই এবং ধনতন্ত্র বা সমাধানে অপারগ সেই সব অসুবিধা অতিক্রম করতে সক্ষম’।
পরবর্ত্তী বছরগুলিতে এই সত্য প্রতিভাত হয়েছে। ১৯৩৭ সালে যখন ধনতান্ত্রিক দুনিয়া আরেকটি বিপর্যয়কর মন্দার কবলে পড়েছিল, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সম্পন্ন করে এবং নতুন সাফল্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করে।
পরিকল্পিত অর্থনীতি বনাম নৈরাজ্য:
অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্ত্তী সাতটি দশক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অস্থিরতা, সংকট ও অনিশ্চয়তার বিপরীতে সোভিয়েট ব্যবস্থার স্থিতি ও উৎকর্ষ প্রতিষ্ঠিত করে ধনতান্ত্রিক সমাজের প্রবক্তারা যখনই ঐ ব্যবস্থার অব্যাহত অগ্রগতি প্রত্যাশা রয়েছে, প্রত্যেকবারই তাদের আশা ধূলিস্যাৎ হয়েছে এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
পুনরুন্নয়ন মানে অন্য বেকারির হাস প্রাপ্তি নয় বরং বৃদ্ধি। এটা ধনতান্ত্রিক সমাজের নতুন বৈশিষ্ট্য। সর্বশেষ প্রাপ্ত সংখ্যা থেকে দেখা যাচ্ছে যে ইউরোপের মোট বেকারের ৪০ শতাংশের এক বা একাধিক বছর ধরে কাজ নেই। এই তালিকার শীর্ষে আছে বেলজিয়াম- ৬৩ শতাংশে। ইউরোপে মোট বেকারের সংখ্যা ১৬০ লক্ষ, এবং সারা পুঁজিবাদী দুনিয়ায় তা ৩ কোটিতে পৌঁছে গেছে। বেকার বৃদ্ধির হার নীচের সারনী থেকে দেখা যাবে:
বেকারের শতকরা হার
দেশ | ১৯৭৩ | ১৯৮৩ | ১৯৮৭ |
ফ্রান্স | ২.৬ | ৮.১ | ১০.৯ |
ইতালি | ৬.২ | ৯.০ | ১০.৭ |
ইউ কে | ৩.০ | ১১.৩ | ১০.১ |
ইউ এস এ | ৪.৮ | ৯.৮ | ৬.০ |
পশ্চিম জার্মানি | ০.৮ | ৬.১ | ৭.০ |
সংবাদপত্রগুলি সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্বন্ধে মন্তব্য করেছে যে ‘ওয়াল স্ট্রীটকে বিধ্বস্ত ও ভবিষ্যত সম্বন্ধে অনিশ্চিত করে ১৯২৯ সালের অনুরূপ এক ধ্বসে ডাও জোন্স শিল্প গড় ৫০০ পয়েন্ট ঝপ করে পড়ে যাওয়ার ফলে ২০শে অক্টোবর ইউরোপের শেয়ার বাজারে বিক্রির হুড়োহুড়ি পড়ে যায়’। নিউইয়র্কের শেয়ার বাজারের চেয়ারম্যান বলেন ‘এটি আমার পক্ষে যতটা সহ্য করা সম্ভব তার সবচেয়ে নিকট বিপর্যয়’। এই অবনমন অনায়াসেই একটি রেকর্ড এবং এর শতকরা হার, ১৯১৪ সালে ১২ই ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক ধ্বসের শতকরা ২০ ভাগের সামান্য কিছু কম। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে বাজারের ধ্বস পাঁচ বছরের মধ্যে জাতির প্রথম মন্দা শুরু করার লক্ষন। কিন্তু অন্যেরা আরেকটু সতর্ক হয়ে বলেন যে রেগান প্রশাসন বাণিজ্য ও বাজেট ঘাটতি নাটকীয় ভাবে না কমালে মন্দা শুরু হবে, এটা তারই লক্ষণ ।
সোভিয়েত অর্থনীতির সংকটমোচন:
যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার তুলনায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎকর্ষ জারেকবার প্রতিপন্ন করলো। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি যুদ্ধজনিত ব্যাপক ধ্বংস ও বিপর্য্যায় থেকে উদ্ধার পেতে বহু সময় নেয়।
এদের বহু দেশকেই যুদ্ধক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়া এবং যুদ্ধের সময়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উপর সাহায্যের জন্য নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সীমাহীনভাবে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন একাই নিজে নিজে সর্বাপেক্ষা কম সম্ভবপর সময়ে অর্থনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিপতিরা এবং তাদের সংবাদপত্র হিসাব করেছিল যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কয়েক দশক লেগে যাবে এবং আমেরিকার সাহায্য তাদের প্রয়োজন হবে। তাদের সকলকেই হতাশ হতে হয়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে ১৯৪৬ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রীম সোভিয়েত ১৯৪৬-৫০ সালের মধ্যে সোভিয়েত অর্থনীতির পুনর্গঠন ও বিকাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল যুদ্ধপূর্ববর্তী কৃষি ও শিল্প বিকাশের স্তর পর্য্যন্ত পৌছানো এবং ক্রমান্বয়ে তাকে অতিক্রম করে যাওয়া ।
সর্বহারার একনায়কতন্ত্র এবং মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা লক্ষকোটি মানুষকে এই লক্ষ্য পূরণে উদ্দীপ্ত করতে পেরেছিল। শ্রম উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কারখানা ও অফিসের শতকরা নব্বই ভাগ শ্রমিক-কর্মচারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছিল ।
কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির চাহিদা পূরণে তাও যথেষ্ট ছিল না। সুতরাং এরই পরিপুরণে সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ব্যাপক ব্যবহার করে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য অতিক্রম করা হলো। যুদ্ধ পূর্ব শিল্পোৎপাদনের মাত্রা আড়াই বছরের মধ্যে ১৯৪৮ সালে অতিক্রম করা হলো । তারপর থেকে উন্নয়নের স্তর বিশেষ পশ্চাদপদতা জনিত সমস্যা থাকা সত্বেও সোভিয়েত অর্থনীতি একের পর এক চমকপ্রদ অগ্রগতি ঘটিয়েছে।
বর্তমানে পঞ্চদশ বার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন এক বিশাল অগ্রগতি ঘটাতে উদ্যত হয়েছে। অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিও, প্রাথমিক সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠে অনুরূপ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।
তৃতীয় বিশ্বের কল্যাণে:
বহু তৃতীয় বিশ্বের দেশের আত্মনির্ভরতা ও স্বাধীনতার সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে উন্নত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
মূলতঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার জন্যই বিশেষতঃ ভারত তার আত্মনির্ভরতার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে এবং পশ্চিমের দেশগুলির উপর পরনির্ভরতা ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। রাজীব গান্ধী সরকারের অনুসৃত নয়া নীতিগলি ভারতীয় অর্থনীতির স্বয়ম্ভরতাকে বিপন্ন করছে এবং একে পশ্চিম দেশগুলির উপর বেশী করে নির্ভরশীল করে তুলছে। সোভিয়েত সাহায্য যদি উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বাধীনতাকে শক্তিমান হতে সাহায্য করে, তবে পশ্চিমের সাহায্য কার্যত ক্রমবর্ধমান ঋণ, পরনির্ভরশীলতা বাড়ায় এবং আত্মনির্ভরতাকে হ্রাসের দিকে ঠেলে দেয় ।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টির পথ নির্দেশ এবং শ্রমিক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছাড়া সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সাফল্যের কথা চিন্তা করা যায় না। এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং পদে পদে সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে প্রায়শঃই ভুলভ্রন্তি ও দোদুল্যমানতা দেখা গেছে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং একটি সঠিক আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণে ভুল হয়েছিল। এমনই কিছু পদক্ষেপ কমিউনিষ্ট আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, কিছু অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিলম্বিত করে। কিন্তু পরিশেষে এই সব ভুল বহুলাংশে সংশোধিত হয়েছে এবং সোভিয়েত ব্যবস্থার জন্য সাফল্যের পর সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এই সাফল্যগুলিই দেখিয়ে দিচ্ছে যে ধনতান্ত্রিক শোষণ, যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও দুর্দ্দশা থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করতে হলে সমাজতন্ত্রই একমাত্র রাস্তা ।
পিপলস্ ডেমোক্র্যোসী—১লা নভেম্বর, ১৯৮৭