Site icon CPI(M)

Ideology Series (Part VIII): Historical Tendency of Capitalist Accumulation

Idology Series 8

প্রাককথন

‘কেন এমন হল’- ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্ন করার হিম্মত দেখিয়েছিলেন কার্ল মার্কস। এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পথেই ধারণাসম্মত জ্ঞান এবং বিজ্ঞান-যুক্তি-প্রতিযুক্তিসম্মত জ্ঞানের যথাযথ সংশ্লেষে নির্মিত হল ইতিহাসের বিজ্ঞান- ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। পুঁজি গ্রন্থের সার কথা যদি হয় ‘উদ্বৃত্তের নির্মাণ ও তার অধিকার সম্পর্কে ধারণা’ তবে সেই উপলব্ধির সবচেয়ে উপযোগী প্রয়োগ হল ইতিহাসের সত্যকে প্রকাশ করায়। মার্কস সেই কাজ নিজেই শুরু করেছেন, আমাদের সেই ধারা অনুসরণ করে কাজ এগোতে হয়।

মার্কসের হাতে পূঁজির রহস্য উন্মোচনের পরে একটা নতুন ধাঁধার জন্ম হল। বিজ্ঞানসম্মত অর্থশাস্ত্রের নতুন সীমাবদ্ধতা সামনে চলে এল। কিছুটা ধীর কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন পথে ক্রমশ একটা বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হবার সময়েই একটা প্রকল্পনা (হাইপোথিসিস)-কে পুঁজিবাদ নিজের জন্মরহস্যের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। অথচ লোকঠকানো ব্যবসার গোড়াতেই সেই বিরাট গলদটি রয়ে গেছে। মার্কস দেখালেন পুঁজি কীভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি করে, সেই উদ্বৃত্ত মূল্য পুনরায় কীভাবে পুঁজি হিসাবে ব্যবহৃত হয় – আগের (অর্থাৎ বিনিময় চক্রের প্রথমার্ধের পর্বে) তুলনায় পুঁজি কলেবরে বাড়ে অনেকটাই এবং সেই পথেই সম্পদের নামে মুনাফার পাহাড় নির্মিত হয়। এই অবধি কথাও কোনো সমস্যা নেই, পাটিগণিত বোঝেন এমন যে কেউ পূঁজির চক্র এবং চক্রান্ত দুইই বুঝতে পারবেন। চক্রাকার পরিচলনের পথে যেটা সহজে ব্যাখ্যা করা যায়না তা হল – প্রথমে জন্ম নিল কে, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা নাকি পুঁজি নিজেই?

তিনি দেখিয়ে দেন পুঁজি সঞ্চয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়াই হল দুনিয়াজূড়ে রক্তস্নাত লুটতরাজ। এখানেই মার্কসীয় প্রজ্ঞায় আরোহী যুক্তির (Step Up Approach) প্রয়োগ। ধনতন্ত্রের মুখোশ টেনে ছিড়ে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন দুনিয়াজূড়ে সম্পদ লুঠ করেছে প্রাক পুঁজিবাদী সমাজের লুঠেরা নেতৃবর্গ এবং দুহাতে রক্তমেখে সেই লুটের টাকাতেই পুনিবাদের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি প্রমাণ করলেন পূঁজির আদিমতম সঞ্চয় কোন পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার ফলা না বরং ঠিক তার উল্টো – পুঁজি ছিল বলেই ধনতন্ত্র নির্মিত হতে পেরেছে। সেই নির্মাণের ভিত দুনিয়াজূড়ে অসংখ্য অসহায় মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে পোক্ত হয়েছে। এই মহাপাপ থেকে পুঁজি এবং পুঁজিবাদ কারোরই মুক্তি নেই- কখনো হবে না। যে ব্যবস্থাটা নিজেই নিজের নামে ঢাক পিটিয়ে প্রচার করছে There is no alternative – সম্পদ সৃষ্টির মহান ও পবিত্র কর্তব্য সম্পর্কে নিজেদের উপরওয়ালার প্রেরিত দূত বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা আসলে ছিল খুনি লুঠেরা- এখন হয়েছে চোর।

পুঁজি (ক্যাপিটাল)-র প্রথম খন্ডের ৩২ নং অধ্যায়ে পূঁজির আদিম সঞ্চয় ও তার ঐতিহাসিক প্রবণতার কথা লিখেছিলেন কার্ল মার্কস। সেই অধ্যায়টিই আজকের প্রতিবেদন।

বাংলা অনুবাদের কাজে লেফটওয়ার্ড থেকে প্রকাশিত বইটির সাথে পেঙ্গুইন ক্ল্যাসিকস’র তরফে ১৯৯০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি সংস্করণটিকেও আমরা কমবেশি ব্যবহার করেছি।

পূঁজির আদিম সঞ্চয়ের ঐতিহাসিক চরিত্র

কার্ল মার্কস

পূঁজির আদিম সঞ্চয় যেভাবে শুরু হয় ইতিহাসের নিরিখে বিবেচনা করলে তা নিজেকে কেমন চেহারায় রূপান্তরিত করে নেয়? যতদিন অবধি ক্রীতদাস ও ভূমিদাসেরা এর তাৎক্ষনিক অভিঘাতে মজুরি-শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়নি, ততদিন এহেন বদলকে বড় জোর নিছক পরিবর্তনই বলা যায়। আসলে এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ উৎপাদকদের সরাসরি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। প্রত্যক্ষ উৎপাদক অর্থাৎ যারা সরাসরি গতর খাটিয়ে উৎপাদন করত, স্বাভাবিক নিয়মেই উৎপাদিত সামগ্রী তাদেরই ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। সেই অধিকারটিই কেড়ে নেওয়া হল। ধারণার দিক থেকে সামাজিক সম্পত্তির বিরুদ্ধ প্রমাণ (অ্যান্টিথিসিস) হল ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যে সমাজে উৎপাদনের উপকরণসমুহ ও প্রয়োজনীয় মানবিক শ্রমশক্তিটুকু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাইরের শর্ত হিসাবে ব্যক্তি মালিকানার অধীনে থেকে সক্রিয় হয় একমাত্র সেখানেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্ব থাকে। সে যুগে উৎপাদকরা নিজেদের শ্রমশক্তিই খরচ করত, কিন্তু তারা মজুরি শ্রমিক ছিল না, তখনকার ব্যক্তিগত সম্পত্তির চরিত্র অন্যরকম। তৎকালীন অবস্থা থেকে আজকের পরিস্থিতি অবধি পৌঁছানোর মাঝে অনেকগুলি অন্তর্বর্তী পর্যায় পেরোতে হয়েছে। সেই সকল পর্যায়ের দুই প্রান্তে রয়েছে দুটি চরম অবস্থা। একদিকে উৎপাদনের উপকরণ ও আরেকদিকে উৎপাদিত সামগ্রী দুয়েরই মালিক যখন শ্রমিক নিজেই সেটাই ছিল কুটির শিল্প ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার ভিত্তি। কৃষি উৎপাদন বা পন্য সামগ্রী দুটিই কুটির শিল্প সমাজের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভবিষ্যতে বৃহদাকার সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার জন্য আবশ্যিক পূর্বশর্ত ছিল ঐ ব্যবস্থাই। বিরাট আকারের সামাজিক উৎপাদন কাঠামো কেবলমাত্র উৎপাদনের চরিত্র বদলায়নি, আগেকার ক্রীতদাস বা ভূমিদাসত্বের অবস্থা থেকেও শ্রমিককে মুক্ত করেছে। দাসত্বের যাবতীয় চেহারা যা আগেকার সমাজব্যবস্থাগুলিতে লক্ষ্য করা যায় তার সমস্ত পর্যায়েই কুটির শিল্প ভিত্তিক উৎপাদনের অস্তিত্ব ছিল। যদিও সেই উতপাদন প্রক্রিয়া এক জায়াগায় আটকে থাকেনি, ক্রমবিকশিত হয়েছে। বিকাশের পর্যায়ে একসময় সে নিজের ধ্রুপদী স্তরে পৌঁছায়, এ কাজে তার যাবতীয় শক্তিও নিঃশেষিত হয়। ঐ পর্যায়েও আপন শ্রমের নিয়োগকর্তা হিসাবে শ্রমিকরা ও জমির অধিকারি হিসাবে কৃষিজীবীরা নিজেদের উৎপাদনের উপকরণসমুহ ও উৎপাদিত সামগ্রীর মালিকই ছিল। এর দ্বারাই অনুমান করা যায় চাষের কাজের মাটি সহ উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণগুলি ক্রমশ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট উৎপাদক গোষ্ঠীর বাইরে উৎপাদনের কাজে শ্রমের বণ্টন ঘটত না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উৎপাদনের কাঠামোর মাধ্যমে বিরাট উৎপাদন প্রক্রিয়ার সামাজিক চেহারাটি তখনও অধরা ছিল। বস্তুত বিভিন্ন সামগ্রীর উৎপাদন প্রক্রিয়াটি ছিল এক এক ধরণের স্বতন্ত্র কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা। এমন সমাজ কার্যত একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে, একে অনেকাংশেই আদিম সমাজ ব্যবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। নিজেকে একটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসাবে টিকিয়ে রাখার জন্য যা দরকার ছিল সেই কারণটিকে পিকেউর অত্যন্ত সঠিকভাবেই- ‘সর্বজনীন মধ্যবিত্তিকে আইনানুগ করে রাখতে হত’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

বিকাশের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে, ঐ উৎপাদন ব্যবস্থা নিজেই নিজের বিলুপ্তির জন্য জরুরী বস্তুগত নিয়ামকদের সামনে টেনে নিয়ে আসে। উৎপাদনের কাজে সেই মুহুর্ত থেকে সমাজজীবনে নতুন শক্তি এবং নতুন আবেগ সঞ্চারিত হয়। অতীতের উৎপাদন ব্যবস্থায় এই সকল শক্তি ও আবেগের পায়ে বেড়ি পড়ানো ছিল। ঐ বেড়ি ভাঙ্গারই ছিল এবং সবশেষে তা ভেঙ্গেও দেওয়া হল। ক্ষুদ্র উৎপাদনের বাধা পেরিয়ে সবকিছুকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াতেই অনেকের মালিকানাধীন ছোট ছোট সম্পত্তি ক্রমশ গুটিকয়েক লোকের বিশাল সম্পত্তিতে পরিণত হয়। সেই শক্তি ও আবেগের জোরেই মানুষকে ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়, তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় এবং শ্রমের উপায়সমুহকে দখল করে কার্যত জনগণের বিশাল অংশের উপরেই দখল কায়েম হয়। এমন ভীতিকর ও বেদনাদায়ক দখলের কাহিনীই আজকের সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ইতিহাসের ভূমিকা। পুঁজির চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে জোরপূর্বক দখল করার এক ধারাবাহিক প্রবণতা। এদের মধ্যে থেকে আমরা কেবলমাত্র সেগুলিকে পর্যালোচনা করেছি যা কিছু পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের পদ্ধতি হিসাবে আগেকার উৎপাদকদের উপরে নির্দয়ের ন্যায় ভাঙচুর চালিয়েছে, দখল করেছে এবং এসবই করেছে সেই উদ্দীপনার অধীনে। নতুন সামাজিক ব্যবস্থা পত্তনের জন্য প্রয়োজনীয় আবেগের সবচেয়ে কুখ্যাত, সবচেয়ে জঘন্য ও সবচেয়ে নিকৃষ্টতম উদাহরণ হল এই আদিম সঞ্চয়। আগেকার সমাজব্যবস্থায় উৎপাদকের নিজের শ্রমের বিনিময়েই ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জিত হত। পুঁজিই এই সকল পরস্পরবিচ্ছিন্ন ও স্বাধীন শ্রমজীবীদের বিরাট আকারের উৎপাদনের কাজে শ্রমের শর্তানুযায়ী একত্রিত করে। পূর্বতন ব্যবস্থার ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রতিস্থাপিত করে। এতে আসলে যা ঘটে, তা হল নামমাত্র কিংবা প্রায় বিনামূল্যের শ্রমশক্তিকে শোষণের উপর নির্ভর করে ব্যক্তিগত সম্পত্তির নির্মাণ। ঐ শোষণ চাপিয়ে দেওয়া হল উৎপাদকদের উপর অর্থাৎ, মজুরি শ্রমিকের উপর।

সামাজিক উৎপাদনকে রূপান্তরের সেই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত পুরানো সমাজকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত যথেষ্টরূপে পচিয়ে দিয়েছে, যত তাড়াতাড়ি শ্রমিকরা সর্বহারায় পরিণত হয়েছে, শ্রমের উপকরণসমুহকে যত দ্রুত পুঁজিতে পরিণত করা গেছে পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতিও সেই গতিতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। এর পরে উৎপাদকের শ্রমের আরও সামাজিকীকরণ ঘটবে এবং ভূমি ও উৎপাদনের অন্যান্য মাধ্যমকে সামাজিকভাবে শোষণের উপযুক্ত পণ্যে রূপান্তরিত করা হবে।  উৎপাদনের সাধারণ উপায় সহ ক্ষুদ্র আকারের ব্যক্তিগত মালিকদের আরও বেশি করে গিলে খাওয়া শুরু হবে। গোটা প্রক্রিয়াটিই কার্যত একটি নতুন রূপ ধারণ করবে। নিজের জন্য কাজ করা শ্রমিকদের দখলে নিয়ে আসার কাজ আর প্রয়োজন নেই, এবার পুঁজিবাদীরা একে অন্যের উপর দখল চালাবে। পুঁজিবাদী উৎপাদনের নিজস্ব আইনের মাধ্যমেই সেই দখল চালানো হবে, এরই নাম পুঁজির কেন্দ্রীকরণ। একজন পুঁজিপতির হাতেই অন্য পুঁজিপতিদের মৃত্যু ঘটবে।  এহেন কেন্দ্রিকরণ যত এগোবে ততই গুটিকয়েক পুঁজিপতিদের হাতে অন্যান্য অনেক পুঁজিপতিদের উচ্ছেদ হতে হবে। শ্রম নিযুক্তির সমবায় পদ্ধতি, ফলিত বিজ্ঞানের সচেতন প্রয়োগ, কৃষিজমির বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নততর চাষাবাদ ও জমির রূপান্তরকরণ এসবই ক্রমবর্ধমান কায়দায় বিকশিত হতে থাকবে। উৎপাদনের যাবতীয় উপায় ও উপকরণসমূহের আর্থিকীকরণ ঘটবে এবং সামাজিক শ্রমের সাধারণীকরণের মধ্যে দিয়েই কাজটি করা হবে। সারা দুনিয়ার জনসাধারণকে ক্রমশ এক বিশ্ববাজারে জালে জড়িয়ে ফেলা হবে। এটাই হবে পুঁজিবাদী শাসনের আন্তর্জাতিক চরিত্র। বিরাট পুঁজির মালিকের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকবে, এরাই দুনিয়াজুড়ে উৎপাদন প্রক্রিয়ার যাবতীয় সুবিধা হস্তগত করবে। এমন কাজের ফলাফল হিসাবেই জনসাধারণের জীবনে দুঃখ, অবক্ষয়, শোষণ ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়া নিজেকে যত বেশি সংহত করবে শ্রমিক শ্রেণীও তত বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবে, সুশৃংখল ও সংগঠিত হবে। যত সময় এগোবে একচেটিয়া পুঁজিবাদী শাসনের আধিপত্য কায়েমের পথে তারা আরও বেশি বাধাস্বরূপ হয়ে উঠবে। অথচ সেই ব্যবস্থার অধীনেই তাদের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীকরণ ও শ্রমের সামাজিকীকরণ দুটিরই বৃদ্ধি ঘটে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে যখন সামগ্রিক অবস্থাটা পুঁজিবাদী বন্দোবস্তের সাথে সম্পূর্ণ বেমানান হয়ে পড়বে।  শোষণভিত্তিক সমাজব্যবস্থার গায়ের চামড়া ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। পুঁজির নিয়মে ব্যক্তিগত সম্পত্তির যে ব্যবস্থা তার মৃত্যুঘণ্টা বাজবে তখন। এক দীর্ঘ যুগ ধরে যারা সবকিছু লুঠ করেছে, যাবতীয় সম্পত্তির থেকে সবাইকে উচ্ছেদ করে নিজেরা দখল করেছে এইবার তাদেরই উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।

পুঁজিবাদী উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আসলে পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়ারই ফয়ালফল। ঐ উৎপাদন প্রক্রিয়াই পুঁজিপতিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির জন্ম দিয়েছে। সামাজিক জীবনে বিভিন্ন মানুষের নানারকম ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদকের শ্রমজাত সামগ্রীর উপরে দখল কায়েম করা হয়, একেই ভিত্তি করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পুরাতন সম্পত্তির ধারণার নেতিকরণ ঘটিয়েছিল। কিন্তু পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ বলে সেই ব্যবস্থা নিজেই নিজের নেতিরকরণের উপাদানকে জন্ম দেয়। তাই দ্বিতীয়বারের নেতিকরণটি আসলে নেতির নেতিকরণ। এতে উৎপাদকের ব্যক্তিগত মালিকানার পুনরুজ্জীবন ঘটে না, পুঁজিবাদ যা কিছু অধিগ্রহণ করেছিল তাতে স্বতন্ত্র সম্পত্তির জন্ম হয়। অর্থাৎ জমি ও উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণের উপরে সামাজিক মালিকানা কায়েম হয়, এই মালিকানা আসলে পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সামাজিক মালিকানা।

বহুজনের মালিকানাধীন হয়ে যে সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল পুঁজিবাদের অধীনে তাকে যে কায়দায় কেন্দ্রীভূত করা হয় তা কার্যত অভূতপূর্ব, হিংসাশ্রয়ী ও যথেষ্ট জটিল। পুঁজিবাদী মালিকানাধীন সম্পত্তি যখন পুনরায় সামাজিক সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হবে সেই প্রক্রিয়া আগেকার তুলনায় অনেকটাই সরল হবে কারন ইতিমধ্যে উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সামাজিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। প্রথমবার গুটিকয়েক দখলকারীদের দ্বারা বিরাট সংখ্যক উৎপাদকেরা উচ্ছেদ হয়েছিল, পরেরবার এর সম্পূর্ণ বিপরীতটাই ঘটবে। জনসাধারণের বিরাট অংশ গুটিকয়েক দখলদারকে উচ্ছেদ করবে।   

প্রাককথন ও অনুবাদ- সৌভিক ঘোষ

শেয়ার করুন