প্রভাত পট্টনায়েক
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফার হার ক্রমশ কমতে থাকে। এই প্রবণতার উৎস সম্পর্কে পণ্ডিত অর্থশাস্ত্রীগণ বিভিন্ন তত্ত্ব হাজির করেছেন। মার্কসও এই প্রসঙ্গে লিখেছেন। তিনি দেখিয়েছিলেন নিজেদের সৃষ্ট সমাজব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ গলদ হিসাবে মুনাফার ক্রমহ্রাসমান হার প্রসঙ্গে পুঁজিবাদীরা যথেষ্টই সচেতন, মার্কসের পর্যালোচনায় সেটাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কে যতরকম তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে বেশকিছু অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্য, বাদবাকি ভ্রান্তই। অ্যাডাম স্মিথ’র তত্ত্বটিও সেইসব ভ্রান্তির অন্যতম একটি।
স্মিথ ঠিক কি বলেছিলেন? ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রানশক্তি হল পুঁজির সঞ্চয়করণ (Capital Accumulation), নিরন্তর প্রক্রিয়া হিসাবে এক বিশেষ মাত্রায় পোঁছালে সেই সঞ্চয় পাহাড়প্রমাণ আকার নেয় (Excessive Capital Accumulation)। তখনই মুনাফার হার কমতে শুরু করে- এই ছিল তাঁর মূল কথা। কোনও একটি নির্দিষ্ট উৎপাদনক্ষেত্রে যদি উৎপাদনের হার ও পুঁজির সঞ্চয় লাগামহীনভাবে চলতে থাকে তবে উৎপাদিত পণ্যের ইউনিট পিছু দাম (বাজার দর) কমাতেই হবে। এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে এমন একটা অবস্থা তৈরি হবে যখন উৎপাদিত পণ্যের ইউনিট পিছু দাম (Price), ঐ পণ্যের উৎপাদন খরচের থেকেও কম হয়ে যাবে। সুতরাং বিক্রয় হওয়া পণ্যে ইউনিট পিছু মুনাফার পরিমাণও (Margin) কমবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই লভ্য মূলধনের (Capital Stock) মোট পরিমাণ জানা, প্রতি ইউনিট মূলধনের ভিত্তিতে উৎপাদনের পরিমাণও আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। অতএব অধিক উৎপাদনের ফলে মুনাফার হার কমে যেতে বাধ্য। এহেন মতামতের স্বপক্ষে স্মিথ’র যুক্তিটি অবশ্য মাইক্রো-ইকোনমিক দৃষ্টিভঙ্গীতে নির্ধারিত। কিন্তু সামগ্রিক অর্থনীতি (Macro-Economy)-কে ব্যাখ্যা করতে গিয়েও তিনি ঐ যুক্তিকেই প্রয়োগ করেন, অর্থাৎ উৎপাদনের একেকটি ক্ষেত্রে যদি মুনাফার হার কমে তবে তার সার্বিক প্রভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতিরও একই পরিণতি ঘটবে।
মাইক্রো-ইকোনমিক ক্ষেত্রের কোনও নির্দিষ্ট সত্যকে আরোহী যুক্তি হিসাবে প্রয়োগ করে ম্যাক্রো-ইকোনমিক বাস্তবতাকে ব্যখ্যা করার এমন পদ্ধতি অবশ্যই ভ্রান্ত। নির্দিষ্ট কোনও উৎপাদনক্ষেত্রের নিয়ম সামগ্রিক অর্থনীতির বেলায় খাটে না। কোনও একটি শিল্প-উৎপাদনে (Trade) পুঁজির সঞ্চয় বাড়লে বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ ঘটে, একথা ঠিক। কিন্তু এর ফলে মোট চাহিদায় যেটুকু বৃদ্ধি হয় তা সেই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেরই বৈশিষ্ট- সার্বিক অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে উৎপাদন কিংবা আয়ের কোনও পরিবর্তন ঘটে না, এটুকু (ex-hypothesi) সকলেই বোঝে। আরও একটা বিষয় আছে, কোনও একটি উৎপাদন ক্ষেত্রে আয় বাড়লে সেই অতিরিক্ত আয় যে কেবল সংশ্লিষ্ট পণ্যের জন্যই খরচ হবে এমন না। পুঁজির বাড়তি সঞ্চয় যেমন যোগান বাড়িয়ে চলে, মূল্যবৃদ্ধিও একইসাথে ঘটে। ফলে খরিদ তখনই বাড়বে যদি সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির হার ঐ মুহূর্তে মুল্যবৃদ্ধির হারের চাইতে কম হয়। কিন্তু পুঁজির বাড়তি সঞ্চয় ইতিমধ্যেই মূল্যবৃদ্ধির হারকে পণ্যের প্রকৃত মূল্য (Base Price) বৃদ্ধির তুলনায় অনেকটা এগিয়ে দেয়। এই কারণেই বাড়তি যোগানের বেলায় প্রকৃত মূল্যের চাইতে পণ্যের দাম কম রাখতে বাধ্য হতে হয়। তাই মুনাফার পরিমাণ (Proft Margin) ও মুনাফার হার দুইই কমতে থাকে।
কিন্তু মুনাফার হার কমতে থাকার প্রসঙ্গে সামগ্রিক অর্থনীতি (Macro Economy)-র বেলায় এমন যুক্তি অকেজো হয়ে পড়ে। অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদাকে উৎপাদিত পণ্যের মোট পরিমানের ভিত্তিতেই বিবেচনা করা হয়। উৎপাদন ছাড়াও নানারকম বাণিজ্য হয়, সেই আলোচনা আপাতত মুলতুবি রাখা হল। পুঁজি সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে বাড়তি যোগানের দাবী ওঠে, পণ্য উৎপাদনও বেড়ে চলে। এই অবস্থায় বাজারে লভ্য যাবতীয় পণ্যের মধ্যে কোনও একটি বা দুটির ক্ষেত্রে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলির দাম বেড়ে যায়- বাদবাকি সামগ্রী প্রকৃত মূল্যেই বিকিকিনি চলে। কিন্তু একে সামগ্রিক অর্থনীতিতে মুনাফার হার কমে যাওয়ার মতো অবস্থা বলে ধরে নেওয়া যায় না। তাই অ্যাডাম স্মিথ যেভাবে পুঁজির সঞ্চয়কেই মুনাফার হারে ক্রমপতন ঘটার কারণ বলে দেখিয়েছেন সেকথা সামগ্রিক অর্থনীতির বাস্তবতায় খাটে না।
স্মিথ’র ঐ যুক্তি ভুলই ছিল। তা সত্ত্বেও পরবর্তীকালে একদল আমেরিকান অর্থশাস্ত্রী তাকেই পুনরুজ্জীবিত করতে উঠেপড়ে লাগেন। তারা নতুন করে দেখাতে চাইলেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতার মুক্ত আবহে পুঁজির সঞ্চয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, তারই প্রভাবে মুনাফার হারে ধ্বস নামার প্রবণতা তৈরি হয়। এদের যুক্তি হল প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধনের প্রভাবে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, ঐ অবস্থায় সাধারণ মজুরির যে কোনও পর্যায়ে পণ্যের দাম কমানোর বাধ্যবাধকতাই মুনাফার হারে পতন ডেকে আনতে যথেষ্ট।
কিন্তু এমনটা ঘটে যদি গড় মজুরি কমার হারের চাইতে পণ্যের দাম কমার হার বেশি হয় তবেই। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধনের জোরে পণ্যের দাম যতটা কম রাখা যায়, ঐ একই সময়ে যদি মূলধনের বেশিরভাগ অংশটি উদ্বৃত্ত সৃষ্টির বদলে মজুরি খাতে খরচ হয়ে যায় তখন প্রতি ইউনিট মূলধনে যতটা মুনাফা হওয়ার কথা ছিল সেই হিসাবটা আর মেলে না, তখনই মুনাফার হারে ধ্বস নামে। কিন্তু মজুরির খাতে খরচ বৃদ্ধির অবস্থাটা যে কেন হবে অর্থাৎ গড় মজুরির চাইতে পণ্যের দাম কমতে থাকার হার যে কেন হঠাৎ বেড়ে যাবে সেই প্রসঙ্গে কোনও ব্যখ্যা মেলে না। তাই প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধনের ফলে মজুরি খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ার ব্যপারটা আসলে একটা ধারণামাত্র, এর স্বপক্ষে হাতেকলমে কিংবা তত্ত্বগত প্রমাণ সেভাবে কিছু নেই।
অর্থনীতিতে নয়া-স্মিথপন্থার যুক্তি প্রসঙ্গে আপাতত ইতি টেনে মূল কথায় ফেরা যাক। সাধারণভাবে মুনাফার হার কমতে থাকা সম্পর্কে তিনটি মৌলিক ব্যখ্যা রয়েছে। যুক্তির বিচারে এবং তাত্ত্বিক পরিসরে এর প্রতিটিই সম্ভাবনাময় বলে বিবেচিত হয়। আলাদা আলাদা করে বিচার করলে ঐ ব্যখ্যাগুলিকে অভিজ্ঞতার নিরিখে ভুল বলে বিতর্কে কিছুটা এগোনো গেলেও, একত্রে বিবেচনা করলে সেই যুদ্ধ শুরুর আগেই হার মেনে নিতে হয়।
প্রথমেই আসে ডেভিড রিকার্ডোর মতামত। ভুট্টা উৎপাদনকে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করেই তিনি মুনাফার হার কমার কারণ ব্যখ্যা করেছেন। রিকার্ডো বলছেন, পুঁজির সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলেই বাজারে পণ্যের যোগান বেড়ে চলে। যেমন ভুট্টার উৎপাদন বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের কারণেই ভুট্টা চাষের জন্য উপযুক্ত জমির পরিমাণ অনন্ত হয় না, একটা সময় পরে অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট জমিতে চাষ করতে বাধ্য হতেই হয়। তখন অবধারিতরূপেই ভুট্টা উৎপাদনের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা চাপে, ফলে মুনাফার হার কমতে শুরু করে। অনেকেই রিকার্ডোর যুক্তিকে ‘ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের ফলশ্রুতিতে মোট মুনাফায় হ্রাসের প্রভাব’ (Diminishing returns to scale) বলে বিবেচনা করেন। একে পরিবর্তনশীল বিনিয়োগের (বিনিয়োগের অন্যান্য উপাদানগুলিকে অপরিবর্তিত রেখে কেবল একটি উপাদানের বদল ঘটানো) ফলে মুনাফার মোট পরিমানে হ্রাস বললেই বরং অনেকটা সঠিক হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের একটি নির্দিষ্ট গুনমানকে মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
দ্বিতীয় তত্ত্বটি মার্কসের। পুঁজির সঞ্চয়করণ প্রক্রিয়ার ব্যখ্যায় মার্কস পুঁজির স্বয়ংক্রিয় কাঠামো’র (Organic Composition of Capital) ধারণা দিয়েছেন। স্বয়ংক্রিয় কাঠামো বলতে বোঝায় স্থির পুঁজি ও পরিবর্তনশীল পুঁজির অনুপাত। পুঁজির সঞ্চয় বাড়লে ঐ অনুপাতটি বৃদ্ধি পায় অথবা আধুনিক পরিভাষা অনুযায়ী মূলধনের ইউনিট পিছু উৎপাদনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। একই সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধনের চাপে শ্রমের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। এমন অবস্থায় মোট উৎপাদনের ভিত্তিতে মজুরি বনাম মুনাফার অনুপাত বেড়ে গেলে মুনাফার হার কমতে থাকে।
অবশ্য ঐ অবস্থায় মুনাফা বনাম মজুরির অনুপাত (মজুরি বনাম মুনাফার ঠিক বিপরীত)-কে সময়ের সাথে বৃদ্ধি করা গেলে মুনাফার হারে পতন কিছুটা হলেও রোধ করা যায়। কিন্তু পুঁজির স্বয়ংক্রিয় কাঠামো সংক্রান্ত অনুপাতটি যদি ক্রমশ বাড়তেই থাকে তবে আর মুনাফার হারে ধ্বস আটকানো যায় না। কেউ বলতে পারেন, মজুরি খাতে খরচ কমিয়ে দিলে এমন সমস্যার সমাধান হতে পারে, কিন্তু মজুরি জনিত ব্যয় কমানোর একটা সীমা আছে। মজুরি দেওয়া বন্ধ রেখে ঐ খরচ বড়জোর শুন্য করা যায় কিন্তু তার চেয়ে কম করার উপায় নেই।
আসলে কি ঘটছে? পুঁজির সঞ্চয় বৃদ্ধির সাথেই কাঁচামালের যোগান বেড়ে চলে, ফলে শ্রমিকের মাথা পিছু বাড়তি কাজ চাপতে শুরু করে। এতে স্থির পুঁজির পরিমাণ বাড়ে বলে পুঁজির স্বয়ংক্রিয় কাঠামো সংক্রান্ত অনুপাতটি বাড়তে বাধ্য। একটা নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির (অর্থাৎ মেশিনপত্রের উন্নতি, কাজের গতি বৃদ্ধি কিংবা উৎপাদনের হার বৃদ্ধি) বদলে উৎকৃষ্ট ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রযুক্তিগত উন্নতিসাধন হলে এমনটাই ঘটে। একথা ঠিকই যে প্রযুক্তির এহেন একদেশদর্শী অগ্রগতি সর্বদা হয় না, মাঝেসাঝেই ঘটে। স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ পুঁজিবাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট বলে মার্কস এমন একটা সাধারণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেছিলেন যেখানে মূলধন কখনো উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেবে আবার কখনো উৎপাদিত পণ্যের গুনমানের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে পড়বে। দ্বিতীয়টা ঘটার যেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, প্রথমটির ক্ষেত্রেও সেই একই সম্ভাবনা কার্যকরী হয়। এই কারণেই অ্যাডাম স্মিথের কল্পনানির্ভর তত্ত্বের তুলনায় কার্ল মার্কসের মতামত অনেক বেশি যুক্তিগ্রাহ্য, অনেক বেশি বাস্তবসম্মত।
তৃতীয় আরেকটি ব্যখ্যাও যুক্তির বিচারে সম্ভাবনাময় বলে বিবেচিত হয়। সেই তত্ত্ব বলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজির সঞ্চয় যত বাড়ে মোট চাহিদা ততই কমতে থাকে। এমন অবস্থায় স্বাভাবিক বাজারের অন্যান্য শর্তাবলী আগেকার অবস্থায় ধরে রাখলেও উৎপাদনের কাজে মানবসম্পদ ব্যবহারের হার ক্রমশ কমতে শুরু করে, ফলে বাজারের চাহিদা আরও কমে। তখন উৎপাদিত পণ্য বিক্রি কম না হওয়ায় দাম বাড়িয়ে সেই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। মুনাফা বাড়ানোর এমন অধীর আগ্রহে আরও কিছুদুর এগোলে মুজুরি বনাম মজুরির খাতে পুঁজির বণ্টন আগেকার অনুপাত একেবারেই বদলে ফেলে। মজুরির তুলনায় পুঁজি ক্রমাগত মুনাফার দিকেই কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। এতে বাজার পুনরায় সংকুচিত হয়। এহেন চক্রাকার আবর্তে মুনাফার হার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ঐ চক্র যত ঘোরে, সম্ভাবনাও তত বেশি বাস্তব হয়ে ওঠে।
মুনাফার হার কমে যাওয়ার প্রত্যেকটি প্রবণতাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সতর্ক করে তোলে। বাস্তবে মুনাফার হারে ধ্বস নামার অনেক আগেই প্রতিরোধী ব্যবস্থা গৃহীত হয় যাতে অমন সম্ভাবনাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। তাই মুনাফার হার কমতে থাকার বিষয়টিকে ভবিষ্যতের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বলে ধরে নেওয়া চলে না, একে পূর্বাভাস হিসাবেই বিবেচনা করা উচিত। পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত গতিময়তা, তার সঞ্চারপথ চিহ্নিত করতেই ঐ পূর্বাভাস কাজে লাগে। এ হল ধনতন্ত্রকে বিচার-বিশ্লেষণ-পর্যালোচনার হাতিয়ার।
এই আলোচনার শেষে আমরা কোথায় পৌঁছাই? মুনাফার হার কমতে থাকা প্রসঙ্গে যে রাস্তাতেই এগোনো হোক না কেন শেষ অবধি আমরা যা খুঁজে পাব সেটাই সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার অর্থনৈতিক কারণ। সস্তা দরে কাঁচামালের যোগানই হোক কিংবা পুঁজির স্বয়ংক্রিয় অনুপাতকে নিয়ন্ত্রণ- উপনিবেশ বা আধা-উপনিবেশ স্থাপনেই সব সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া যায়। অধিক-উৎপাদনজনিত সংকটের প্রভাবে যখন আর কিছুতেই নিজেদের দেশের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না তখনই তো উপনিবেশ এবং আধা-উপনিবেশের বাজারগুলি দখল করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রিকার্ডোর বক্তব্যই ধরা যাক। জরুরী পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন ক্ষেত্রটিকে প্রসারিত করতে করতে একসময় প্রবল সমস্যায় পড়তে হবেই এটুকু বুঝতে কারোরই অসুবিধা হয় না। তখনই তো উপনিবেশ বা দখলে রাখা দেশসমুহকে ঐসকল পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য করা হবে, যাতে নিজেদের পাতে যোগানের অভাব না হয়।
রাজনৈতিক স্বাধীনতার ভিত্তিতে আজকের পৃথিবীতে উপনিবেশের অভিশাপ দূর হয়েছে একথা ঠিক। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে দখল না করেও একের পর এক দেশকে নয়া-উদার অর্থনীতি মেনে নিতে কার্যত বাধ্য করা হয়েছে। এহেন আধিপত্য কার্যত আগেকার বন্দোবস্তের মতোই নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।
অনুবাদ- সৌভিক ঘোষ
মূল প্রবন্ধটি ইংরেজিতে Where can there be a fall in the rate of profit? শিরোনামে পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকার (১৭-২৩ জুলাই, ২০২৩ সংখ্যায়) ইকনোমিক নোটস বিভাগে প্রকাশিত
* অর্থনীতি সম্পর্কিত ইংরেজি শব্দের ভাষান্তর অনুবাদকের নিজস্ব
* লেখায় ব্যবহৃত মার্কসের ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া সুত্রে সংগৃহীত