কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির সাক্ষাতকারঃ একটি প্রতিবেদন (৩য় পর্ব)

গত ৩ এবং ৪ জানুয়ারি,২০২১ সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা হয় কলকাতায়। এই সভায় রাজ্য কমিটির সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সভার শেষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অতিমারি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা, জাতীয় অর্থনীতির অধোগতি, দিল্লিতে কৃষকদের আন্দোলন নানা প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির একটি সাক্ষাতকার আয়োজন করা হয় CPIM Digital’র পক্ষ থেকে।

ইংরেজি ভাষায় কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির সাথে কথা বলেছেন কমরেড শমীক লাহিড়ী। তাদের আলোচনা পার্টি কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের জানার প্রয়োজন। সেই কারনে সাক্ষাতকারের ভিডিও পার্টির ডিজিটাল মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আপলোড করা হয়েছে। বাংলায় স্বচ্ছন্দ যারা তাদের সুবিধার্থে সেই কথোপকথনের পুর্নাঙ্গ অনুবাদ মোট তিনটি পর্বে রাজ্য পার্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল।

তৃতীয় পর্ব

১৭. বিহারের নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী দলগুলি একসাথে মহাজোট গঠন করে লড়াই করেছে, সেই লড়াইয়ের ফলাফল অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্যান্য রাজ্যে আগামী নির্বাচনগুলিতেও এমন জোট সম্পর্কে আপনার কি বক্তব্য?

মনে রাখতে হবে বিহারে মহাজোটের ভিতরে যতগুলি দল ছিল তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক দল বিজেপি’র সাথে জোটবদ্ধ ছিল – নানা প্রলোভন সেক্ষেত্রে কাজ করেছিল। তা সত্বেও বলা যায় বিহারের ফলাফল মহাজোটকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক রণকৌশল হিসাবে প্রমান করেছে। কিন্তু এই হাতিয়ার দেশের সমস্ত রাজ্যে একই মাত্রায় সফল হবেই এমন নয়, এর কারন রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরীণ বৈরিতা নয় – নির্দিষ্ট রাজ্যের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বাস্তবতা। শুধু ফলাফল বিচার করলেই মহাজোটের প্রভাবকে ব্যাখ্যা করা যাবে না, এই জোট বিহারে রাজনৈতিক স্লোগানকে পরিবর্তন করতে পেরেছিল। বিজেপি’র স্লোগানকে পরাস্থ করে কর্মসংস্থান এবং জনজীবনের অন্যান্য সমস্যাকে বিহারের নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হিসাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল – সাফল্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই কথা মাথায় রাখতেই হবে। বিজেপি বিরোধী মহাজোটের সাফল্য কর্ণাটকে খুবই সম্ভাবনাময়, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিত অন্যরকম হওয়ায় বিজেপি বিরোধিতার নামে সবাইকেই সাথে নেওয়া চলে না। এ রাজ্যে শেষ দশবছর ধরে তৃণমূল সরকারের কাজে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা এখন মঞ্চ বেঁধে বিজেপি বিরোধিতার কথা বলছেন। এই অবস্থায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করার নামে তৃণমূলকে সাথে নেবার অর্থ হবে তৃনমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের সুবিধা পাবে বিজেপি। আমরা কি করে সেই কাজ করতে পারি? সারা দেশসহ পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি’কে আটকানো আমাদের প্রধান লক্ষ্য, তৃনমূলকে জোটের মধ্যে এনে নির্বাচনে বিজেপি’কে সুবিধা পাইয়ে দেবার কোন সম্ভাবনাই নেই। কর্ণাটকের পরিস্থিতির সাথে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এই কারনেই আলাদা, এখানে লড়াইয়ের কৌশলকেও তাই যথাযথ হতে হবে। তৃনমূলের পক্ষ থেকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা মানুষের মনে আদৌ ভরসা যোগাতে পারছে না। তৃনমূল বিজেপির বোঝাপড়া অনেকদিনের, মমতা ব্যানার্জি বিজেপি সরকারের ক্যাবিনেটে মন্ত্রী ছিলেন – সেই কথা কেউ ভোলে নি। মুখে তারা যতই বিজেপি বিরোধিতার কথা বলুক না কেন তাদের সেই বিরোধিতার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এই কারনেই এ রাজ্যের নির্বাচনী লড়াইতে বামেরা যে জোটের কথা বলেছে তাতে তৃনমূলের কোন স্থান নেই। বিজেপি’কে পরাস্থ করতেই হবে, সেই কাজে সফল হতে গেলে তৃনমূলকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে তৃনমূলের হাত ধরেই। এই সত্যকে মাথায় রেখেই এখানে জোটের আহ্বান রেখেছে বামেরা।

আমাদের কাজ তৃনমূল এবং বিজেপি দুইয়ের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। এটা অত্যন্ত আনন্দের যে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এই প্রশ্নে একমত। মনে রাখতে হবে রাজনীতি সরল পাটিগণিত নয়। পাটিগণিতে দুয়ের সাথে দুই যোগ করলে চার হবে, রাজনীতিতে ফলাফল চার হতে পারে, শুন্য হতে পারে আবার বাইশও হতে পারে। আমাদের কাজ নির্দিষ্ট বাস্তব পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেই বিচারেই তৃনমূলকে জোটের বাইরে রাখা হয়েছে – তাকে হারাতেও হবে।

নীতির বিচারে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই। দেশজুড়ে এখন কৃষকদের আন্দোলন চলছে বিজেপি সরকারের আইন বাতিলের দাবীতে। এই রাজ্যে তিনবছর আগে থেকেই কৃষকেরা লড়াই করে চলেছেন। সরকারি ঘোষণায় ন্যুনতম সহায়ক মূল্য যা কৃষকেরা এই রাজ্যে আদৌ তা পান না। এটাই এই রাজ্যের পরিস্থিতি।

সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টিতে বিচার করলেই দেখা যাবে তৃণমূল এবং বিজেপি একে অন্যকে বিভাজনের রাজনীতি করতে সাহায্য করে। এমন একটি রাজনৈতিক দলের সাথে বামেদের জোট সম্ভব নয়।

১৮. দেখা যাচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই এরাজ্যের নির্বাচনে জাত, ধর্ম, ভাষার বিভাজনকে ব্যাবহার করতে চাইছে। স্বাধীনতার পর থেকে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন এমন কখনো হয় নি। একে কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে?

জনজীবনের প্রকৃত এবং বাস্তব সমস্যাগুলিকে সামনে রেখেই আমাদের লড়াই করতে হবে। জাতি, ধর্ম, ভাষার বিভিন্নতা নির্বিশেষে নিপীড়িত সকলকেই একজোট করতে হবে। ওরা মানুষের জোটকে ভয় পায় – তাই জাত, ধর্ম, ভাষার নামে মানুষের জোট ভাঙতে চায়, আমরা সেই জোট গড়ে তুলবো। বেকার অথবা কাজ হারিয়েছে যে তার অবস্থার জন্য ধর্ম, জাতি কিংবা ভাষা দায়ী নয় দায়ী ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থা বদলের লড়াইতেই মানুষকে একজোট করতে হবে। মানুষ একজোট হলে ওদের সব কৌশলকেই পরাস্থ করা যায়। মনে রাখতে হয় মুনাফা লুটে নেবার ব্যাবস্থায় মানুষ জর্জরিত, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ভীষণ। দক্ষিনপন্থি রাজনীতির উত্থান ঘটে মানুষের ক্ষোভকে অন্যের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে – বিভাজনের কৌশল প্রয়োগ করে, তাতে নিজেদের মুনাফা লট করার রাস্তা পরিস্কার থাকে। আমেরিকার মানুষ ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান তুলেছিলেন, তখন মানুষকে বিভাজিত করতে ট্রাম্প ‘হোয়াইট পাওয়ার’-এর স্লোগান দিলেন। তার উদ্দেশ্য পরিস্কার – মানুষের ঐক্য নষ্ট করে দেওয়া। আমাদের দেশেও একই কায়দা প্রয়োগ করা হচ্ছে। দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে হিন্দু – মুসলমানের মধ্যেকার সমস্যাই এদেশের প্রধান বিষয়। মানুষকে ধর্মের নামে আলাদা করে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। আমাদের বক্তব্য এদেশে হিন্দু – মুসলমানের ভিতরে সম্যসা নেই, প্রধান সমস্যার এক দিকে রয়েছে মুনাফা লুটের ব্যাবস্থা, ভয়াবহ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্য আরেকদিকে রয়েছে নিপীড়িত জনগণ। এখানেই দক্ষিনপন্থি রাজনীতির সাথে আমাদের ফারাক। ওরা জনগণকে ভুল পথে ঠেলে দিয়ে নিজেদের মুনাফা বজায় রাখতে চায়, বামেরা তার বিপরীতে চলে মানুষের সমস্যার সমাধান দাবী করে।

সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে মহানগরের রাস্তার নামকরণ হয় মহাকবি শেক্সপিয়রের নামে। সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারকত্বই এই রাজ্যের বৈশিষ্ট।  

১৯. বলা যেতে পারে নবজাগরণের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে এখনও প্রাসঙ্গিক...

tagore

অবশ্যই! এখানেই পশ্চিমবঙ্গের অনন্যতা। এই নবজাগরণ সারা দেশে স্বাধীনতা লড়াইকেও প্রভাবিত করেছিল। সেই কারনেই এই রাজ্যে বিজেপি’কে পরাস্থ করতেই হবে। মজার হলেও একথা সত্য যে লম্বা দাড়ি রাখলেই কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে যাবেন না! যারা এমনটা মনে করেন তারা পশ্চিমবঙ্গকে এতটুকুও বোঝেন না। মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংকীর্ণতাজর্জর জাতিয়বাদের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বিশ্বজুড়ে মানুষের সমানাধিকারের কথা বলে গেছেন। তার কথার মর্মবস্তু আন্তর্জাতিকতাবাদ।

২০. জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। কাচের খন্ডসমূহ কখনো হীরকের তুল্য হতে পারে না...

একেবারেই তাই। তার লেখা উপন্যাস ‘ঘরে-বাইরে’ এবং ‘গোরা’ সেই দর্শনের কথাই বলে। সংকীর্ণতার যে বিপদ জাতীয়তাবাদের মধ্যে রয়ে যায় সে সম্পর্কে তিনি বারে বারে সতর্ক করেছেন। সবারই সেই লেখগুলি পড়ে নেওয়া উচিত।

২১. গত সাধারণ নির্বাচনের কথা মাথায় রাখলে এরাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট কতদুর কার্যকরী হতে পারে বলে আশা করা যায়? প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে বাম-কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট দাঁড়ায় বারো শতাংশের মতো। এই অবস্থায় জোট করে নির্বাচনের লড়াইতে জিতে বিকল্প নীতির সরকারের স্লোগান কতদুর বাস্তব বলে আপনি মনে করেন?

34 years Of LeftFront 1

জোটের সম্পর্কে যে সমস্ত নেতিবাচক সমালোচনা উঠে আসছে তার সবটাই গত নির্বাচনের ফলাফলকে ভিত্তি করে রয়েছে। গতবারের নির্বাচন দ্বিমেরু লড়াইতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছিল। এই রাজ্যে দক্ষিনপন্থী রাজনৈতিক শক্তি মানুষকে দুটি শিবিরে ভাগ করতে চায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই কায়দাতেই প্রচার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য মানুষের জীবনজীবিকার সমস্যাকে দূরে সরিয়ে তাদের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতিকে কার্যকর করে তোলা। বরাবরই আমাদের এই প্রবণতার বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হয়, এমন প্রচার এখন নতুন নয়। রাজনীতিতে বামেদের বৈশিষ্ট এখানেই যে তারা প্রতিকুল এবং নেতিবাচক প্রচারের জাল কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বামপন্থা এই জন্যেই প্রাসঙ্গিক কারন তারা মানুষের রুটিরুজির লড়াইতে জাগ্রত থাকে। জীবনজীবিকার সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে এগিয়ে নিয়ে যাবার মধ্যে দিয়েই দক্ষিণপন্থাকে পরাস্ত করতে হয় – কোন নির্বাচনী যোগ-বিয়োগ সেই লড়াইয়ের প্রতিবন্ধক হতে পারে না। প্রসঙ্গ আদৌ এটা নয় যে শেষ নির্বাচনে আমরা কত ভোট পেয়েছি, প্রশ্ন হল মানুষের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে আমরা কতটা ভূমিকা পালন করতে পারছি। সেই লক্ষ্যে এগোলে সমস্ত নির্বাচনী হিসাব নিকেশের উর্ধে উঠে মানুষের রায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির পক্ষেই যাবে।

পশ্চিমবঙ্গে কোভিড অতিমারির সময়ে লকডাউনের বাধা পেরিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করেছেন বাম কর্মী, সমর্থকেরা। সারা দেশে এই রাজ্যেই এমন কাজ প্রথম শুরু করা হয়। বাম কর্মী - সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের মানুষের পাশে থেকে প্রমান করেছেন মানুষের জীবন জীবিকার সংকটে তাদের পাশে তৃনমূল - বিজেপি কেউ ছিল না, তারা তখন মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘরবন্দী রাখতে চেয়েছে। বামপন্থীরা মানুষের পাশে থেকে প্রমান করেছে মানুষের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি পরাস্থ করা যায়, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়, হাত ধরে, একজোট হয়। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।

দ্বিমেরুকরণের রাজনীতির বিপরীতে হেঁটে জীবনজীবিকার লড়াই, জনজীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধানে জনগণের ফ্রন্টের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামের পথে চলাই আসল কথা। আমাদের সেই রাস্তায় দৃঢ়ভাবে চলতে হবে। মানুষের লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলন সাফল্য পেলে বামেদের নির্বাচনী জয় এবং বিকল্প সরকার গঠন একশোভাগ বাস্তব।

ওয়েবডেস্কের পক্ষে সাক্ষাৎকারের অনুবাদ – সৌভিক ঘোষ

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে লিংকে ক্লিক করুনঃ সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাতকার (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রথম পর্ব পড়তে লিংকে ক্লিক করুনঃ সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাতকার (প্রথম পর্ব)


শেয়ার করুন

উত্তর দিন