Logo oF Communism

বর্তমান পর্যায়ে যে অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন: ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) - পলিট ব্যুরোর বিবৃতি

২রা মে, ২০২০

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বিশ্বব্যাপী লকডাউনের পরিসর আরো দু সপ্তাহ বৃদ্ধি হয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই যে সমস্যাগুলি উদ্ভূত হচ্ছিল, যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল কোটি কোটি ভারতীয় জনগণকে বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিক, দিনমজুর এবং দরিদ্র মানুষ ,যাদের বেঁচে থাকাই সমস্যা ছিল-- তাদের সমস্যা আরও গভীর হবে ।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সরকারের যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলি বর্তমানে নেওয়া প্রয়োজন তা জনগণের সম্মুখে আনছে । এই ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে দ্রুততার সঙ্গে সরকারকে মনোনিবেশ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে অর্থনীতির এই রোডম্যাপের সূত্রপাত ঘটাতে হবে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এই রোডম্যাপ মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করেছে।

বর্তমান পর্যায়ে যে অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন:

ভারতীয় অর্থনীতি আগে থেকেই মারাত্মক মন্দার কবলে ছিল। মন্দার সীমারেখায়। উৎপাদনের বৃহদায়তন হ্রাস, কর্মচ্যুতি, দুর্দশাগ্রস্ত কৃষি, বেকারত্বের ঊর্ধ্বমুখী ভঙ্গি কোভিদ অতিমারীর প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই ছিল। এই লকডাউনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। জনগণের দুর্দশার ব্যাখ্যামূলক বৃদ্ধি ঘটেছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সামনে রাখছে যা সরকারের দ্রুত গ্রহণ করা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং এর সঙ্গে যুক্ত মানুষের উৎকণ্ঠা অবশ্যই সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।মধ্যস্থায়ী , দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।এই তিন ধরনের ব্যবস্থারই উদ্যোগ এখনই শুরু করা প্রয়োজন।

আমাদের অর্থনীতি এবং জনগণের কল্যাণের স্বার্থে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি( মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে এই প্রস্তাবগুলি বিবেচনা করতে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) জনগণের সকল অংশের নিকট, রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট এবং গণ আন্দোলনগুলির কাছে আহ্বান জানাচ্ছে একত্রিত হয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নিম্নলিখিত বিষয়গুলি কার্যকরী করার লক্ষ্যে চাপসৃষ্টির জন্য:

তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা

...........................

১. বর্তমান পরিস্থিতিতে লক্ষ-লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ ক্ষুধার্ত ,কর্মহীন ,রোজগারবিহীন অনেকেই কোয়ারেন্টাইন শিবিরে। সরকার দাবি করছে লকডাউন কোভিড ১৯ সংক্রমণের সংখ্যার তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধিকে রৈখিক এ রূপান্তরিত করেছে। যদি ধরে নিই বিষয়টি সঠিক তা হলেও লকডাউনের সমাপ্তির পর সংক্রমনের তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধির আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লকডাউন প্রসারিত হবে কিনা বা বাধ্যতামূলক শারীরিক দূরত্ব রাখার মত অন্য কোন ফর্ম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে কিনা তারচেয়েও বড় কথা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের তীব্র ভাঙ্গন অব্যাহত থাকবে। খাদ্য হোক বা অর্থ এদের ত্রাণ প্রদানই প্রাথমিকতা, অগ্রাধিকার। আশ্চর্যজনকভাবে সরকারের ঘোষিত প্রাথমিক প্যাকেজ অর্থাৎ ১.৭ লক্ষ কোটি প্রয়োজনের তুলনায় ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির। এর আপডেট ছিল পুরনো প্রকল্পের নবায়ন। কার্যত তা প্রকৃতভাবে লক্ষ লক্ষ দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের প্রায় কোন কাজেই লাগেনি।

২.এই সংকট আর কতদিন অব্যাহত থাকবে তা অজ্ঞাত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এখনই যেটা করা উচিত তা হচ্ছে আয়কর যাদের দিতে হয় না এমন মানুষদের প্রত্যেককে তিন মাস ধরে মাসিক ৭৫০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য প্রদান করা। এদের প্রত্যেককে ছয় মাসের জন্য প্রতিমাসে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য প্রদান করে সহায়তা করা। এফ সি আই এর গোডাউনে বর্তমানে ৭৭০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য রয়েছে। বর্তমানে কার্যকরী মজুতের সীমারেখা ২৪০ লক্ষ টন। আবার ৪০০ লক্ষ টন রবিশস্য যুক্ত হবে এর সঙ্গে। সুতরাং বিতরনের জন্য প্রচুর খাদ্যশস্য সহজলভ্য। খাদ্যশস্য এতটাই উদ্বৃত্ত যে সরকার মজুদ চালকে জৈব জ্বালানি ইথানলে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। লক্ষ লক্ষ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করাটাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।যেখানে প্রাপকের নিজের রান্না করার মতো অবস্থা নেই সেখানে সরকারের উচিত খাদ্যশস্যের পরিবর্তে রান্না করা খাবার দেওয়া। দেশব্যাপী মিড ডে মিল প্রকল্পের নেটওয়ার্ককে সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। দানাশস্য ছাড়াও ডাল, রান্নার তেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষ বিনামূল্যে এই সময়ে মানুষকে দেওয়া প্রয়োজন।

৩. বর্তমান পর্যায়েএই রকম অর্থ ও খাদ্য স্থানান্তরের জন্য জি ডি পি এর আনুমানিক ৩ শতাংশ খরচ হবে। এই ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়েছে ধনীদের ২০ শতাংশ স্বেচ্ছামূলকভাবে সুবিধা প্রাপকদের থেকে নিজেদেরকে বিযুক্ত করবেন। এর জন্য কর আরোপের পরিকল্পনা পরবর্তীতে ভাবা যেতে পারে, যখন সাপ্লিমেন্টারি বাজেটের প্রয়োজন হবে।এই বাজেটে সম্পদ কর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে গণ্য হবে, এতে সম্পদও সংগ্রহ হবে এবং দ্রুত বর্ধমান অর্থনৈতিক অসাম্যও নিয়ন্ত্রিত হবে। এর বাইরে মহা ধনীদের ওপর এক কর বসানো উচিত। এই সময়ের জন্য সমগ্র ব্যয়ের অর্থ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ধার করা যেতে পারে। আমাদের মতে এইটা বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির কোন বাধা তৈরি করবে না। বিশেষ করে তখন, যখন বিশাল পরিমাণে অব্যবহৃত এবং অবিক্রীত খাদ্যশস্য দেশে রয়েছে।

৪. যদিও এই জাতীয় স্থানান্তর এর জন্য সংস্থানগুলি সরবরাহ করবে কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু প্রকৃত স্থানান্তর রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে তাই রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য স্থানান্তর করতে হবে। নগদ স্থানান্তর অনুদানের ফরম রাজ্যগুলির মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এটি সহজ হবে যেহেতু বন্টনের সর্বজনীনতার জন্য জনসংখ্যাই মাপকাঠি হবে। রাজ্যগুলি আবার পরিমাণমতো অর্থ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিকে হস্তান্তর করবে তার কারণ এদের সাহায্য প্রয়োজনীয় হবে অর্থ বন্টনের ক্ষেত্রে।

৫.রাজ্য সরকারগুলি অর্থ স্থানান্তর এর ক্ষেত্রে ধার্য পরিমাণের অতিরিক্ত ব্যয় করবে।এটিও বিস্ময়কর যে রাজ্যগুলির জিএসটি সংক্রান্ত প্রাপ্য আগস্ট মাস থেকে বকেয়া পড়ে আছে। অবিলম্বে এই অর্থ তাদেরকে প্রদান করা উচিত। রাজ্য সরকারের ধার করার যে সীমা সেই সীমা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা উচিত। খোলা বাজারের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি থেকে তাদের ধারের অনুমতি দেওয়া উচিত। মুক্তবাজার নিলামে রাষ্ট্রীয় বন্ডের সুদের হার বর্তমান সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফিস্কল অবরুদ্ধ রাজ্যগুলির উপর এক বিশাল বোঝা চাপিয়ে ছিল। এই পথের প্রতি বিশ্বস্ততা ছেড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রীয় বন্ড বর্তমান রেপো রেটে ছাড়া উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ইউ এস ফেডারেল রিজার্ভ, ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই কাজ করছে। এইসব সাহায্যর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রাইভেট ফান্ডে চেয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে মহামারী সংক্রমণের নাম করে তা রাজ্য সরকার গুলিকে সহায়তার কাজে ব্যবহার করতে দিতে হবে, স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধি, ভেন্টিলেটর ও মাস্কের সরবরাহ বৃদ্ধি, প্রতিষেধকের সামগ্রী, টেস্টিং যন্ত্র ইত্যাদি কাজে।

৬. যে সমস্ত মানুষ মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছেন তারা যাতে চিকিৎসা সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হন কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্যই অবিলম্বে তা নিশ্চিত করা উচিত। অবশ্যই অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার সব ধরনের পন্থা গ্রহণ করেই। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের জীবন রক্ষাকারী টিকা, গর্ভবতী মহিলাদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে ওষুধ, রক্তের সংকটেরও যুদ্ধকালীন মোকাবিলা করতে হবে।

৭. কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যকে সহায়তা দেওয়া, রাজ্য সরকার সরকারি স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থায় নির্ভর করার পরেও মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে। রাজ্য সরকারগুলিকেই প্রত্যক্ষভাবে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে । ফলে এই সময় বিধেয় যে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থাগুলি সরকারি কাজে ব্যবহার করবার নির্দেশিকা অন্ততপক্ষে যতদিন এই মহামারী পর্ব চলে। স্পেনে এই জিনিষ হয়েছে। মানুষকে টেস্ট করা হয়েছে চিকিৎসা করা হয়েছে বিনামূল্যে এই সংস্থা গুলিতে। সরকার ডাক্তারদের এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিষেবা গ্রহণের জন্য আহবান করতে পারে প্রয়োজনীয় মূল্যে। সুপ্রিম কোর্ট বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংস্থায় বিনামূল্যে টেস্ট করার কথা বলেছে। কিন্তু এই অবস্থা থেকে পশ্চাদপসরণ বিভ্রান্তিকর এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চূড়ান্তভাবে প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের অপরিকল্পিত এবং ও বিবেচিত লকডাউন লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্গতির কারণ হয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংস্থাগুলিকে এই সংকটকালে সরকার অধিগ্রহণ করছে না।এর মানে এই সরকার এক জঘন্য শ্রেণীপ্রবণতা দেখাচ্ছে জাতীয় সংহতি কে অবজ্ঞা করে। অথচ এই অধিক্রমন অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল এই অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য।

৮. কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় কোন কর্মচ্যুতি হবে না,কোন মজুরি ছাঁটাই হবে না। সবচেয়ে আক্রান্ত প্রস্থচ্ছেদের মানুষ যাতে বিশেষ গুরুত্ব, বিশেষ প্রতিরক্ষা পায় যেমন মহিলা আদিবাসী, দলিত, কায়িক শ্রমিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই বিষয়ে গ্যারান্টি ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ মজুরি বিলের ৮০শতাংশ পর্যন্ত নিশ্চিত করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অবিলম্বে এই সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা করা উচিত।

৯. সার্বজনীন স্থানান্তরের রসদের প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে সমস্যার সৃষ্টি করবে। বর্তমানে বিদ্যমান কোন বেনিফিশিয়ারি তালিকাই যথেষ্ট নয়। বর্তমানে বিদ্যমান রেশন দোকান গুলির আউটলেটের শৃংখল ও কোন একক হবে না। গ্রামের চেয়ে শহরে অনেক বেশী সমস্যা হবে। খাদ্যশস্য বন্টন করবার ক্ষেত্রে যাচাইকরণে পরিচিতির ক্ষেত্রে কাগজের সংমিশ্রণ কে যেমন রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংক পাসবই, এনরেগা জব কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের এইসব কার্ড নেই তাদের পরিচিতির জন্য বিধায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, পৌরসভার ওয়ার্ড সদস্যরা সহায়তা করতে পারেন যাতে এদের কাছে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত হয়।বিভিন্ন রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সৃজনশীল পদ্ধতি অবলম্বন করছে নগদ স্থানান্তর যাতে সবাই পেতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য।তারা কেবলমাত্র বিদ্যমান বেনিফিশিয়ারি তালিকা বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের উপর নির্ভর করছে না। এই ব্যবস্থার প্রসারণ দরকার।

১০. এই পদক্ষেপগুলি এমন এক সময়ে গ্রহণ করতে হবে যখন ভারত বিশ্ব অর্থনীতি থেকে যথেষ্ট ধাক্কার সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টও চাপের মধ্যে আছে। মহামারী স্পষ্টভাবে পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন এর ভ্রান্তিগুলি প্রকাশ করেছে। একদিক দিয়ে আন্তঃসীমান্ত ভাইরাস সংক্রমণের কাজকে দ্রুত করেছে আন্তঃ সীমান্ত অর্থ সঞ্চালনের দ্রুততায়। অন্যদিকে আন্তঃসীমান্ত অর্থের চলাচল জাতীয় সরকারগুলিকে ভীত করেছে। এর মধ্যে ভারত সরকার বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে মাথা নত করছে। ফিস্ক্যাল ঘাটতি সংক্রান্ত সতর্কতাঃ যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে মানছে না এমনকি এই মহামারীর সময়েও। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা কমানোর জন্য সরকার খরচ করছে না। ভারত সরকার অর্থসংক্রান্ত হুকুমনামা মানছে, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা কমানোর ব্যাপারে কৃপণ হয়ে রয়েছে,কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে না তবুও দেখে অর্থ থাকছে না, চলে যাচ্ছে। হলে ডলারের তুলনায় টাকার দাম অভূতপূর্বভাবে কমছে। অর্থের ধরনের একটি প্রস্থানের সমস্ত ঘটনা ঘটছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে। যদিও এদের মধ্যে ভারত অনেকের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে আছে। ইমুতে যা বর্নিত আছে তা যদি অনুসরণ করা না হয় তাহলে দেশ থেকে অর্থ প্রস্থানের প্রবণতা আরো শক্তিশালী হবে। এর থেকে রক্ষা পেতে দুটি পদক্ষেপ অবিলম্বে গ্রহণ করা উচিত। অর্থের বহির্মুখের ওপর কিছু প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ যাতে ফিন্যান্স ক্যাপিটালের বহিঃগতিতে রিজার্ভের বহিঃ গমন না হতে পারে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিশেষ পরিমাণ আই এম এফ এর স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এস ডি আর) সম্পর্কিত। অযৌক্তিকভাবে জাতীয় সমস্যার বিরোধিতা করার পরিবর্তে যা সরকার এখন করছে, ভারতের সক্রিয়ভাবে এটি সমর্থন করা উচিত। অন্য সকল ঋণের মত মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের পরিবর্তন লাইন সহ বৈষম্যহীন, বিচ্ছিন্ন, সুদ মুক্ত, অ-শোধ যোগ্য এবং কোন শর্তসাপেক্ষ নয় অথবা কোন বাহু প্রদর্শনের বিষয় হবে না।

মধ্যমেয়াদি ব্যবস্থাসমূহ

এম জি এন আর ই জি এস

........................................

১১. এই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগুলি মাঝারি মেয়াদে অনুসরণ করতে হবে লকডাউন ধীরে ধীরে উত্তোলন করার ব্যবস্থা হিসেবে। এই ব্যবস্থা গুলির মধ্যে চারটি হলো কেন্দ্রীয়। প্রথমটি এম জি এন আর ই জি এস এর সাথে সম্পর্কিত। বেশিরভাগ রাজ্যেই কার্যত এম জি এন আর ই জি এস বন্ধ হয়ে আছে।এম জি এন আর ই জি এস এর অধীন কাজের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে। নগদ স্থানান্তরের যে কথা বলা হচ্ছে তা যখন শেষ হয়ে যাবে তখন শ্রমিকরা এবং যে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে লকডাউন এর কারণে তারা জীবনের একটা সূত্র খুঁজে পাবে। চারটি ব্যবস্থা কর্মসংস্থানের নিশ্চিতির প্রশ্নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত বকেয়া মজুরি যা ক্রমশ বাড়ছে তা প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ যে পরিযায়ী শ্রমিকরা শহর থেকে ফিরে আসছে এবং কাজের দাবি করছে, শুধু তারাই নয় যারা এই প্রকল্পে অতীতে নিবন্ধিকৃত হয়েছে প্রত্যেকেই কাজ দিতে হবে।এম জি এন আর ই জি এস প্রসারিত করতে হবে চলতি ফসলের মৌসুমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের ব্যবহৃত শ্রম এবং পরিবারের ক্ষেত্রে। তৃতীয়তঃ ১০০ দিনের কাজ শুধু পরিবারে আবদ্ধ থাকবে না, প্রত্যেক বয়স্ক মানুষের প্রতি প্রসারিত হবে। কাজ না দিতে পারলে,এদের বেকারি ভাতা দিতে হবে-আইনে যেমন নির্ধারিত আছে। চতুর্থত এম জি এন আর ই জি এস শহর এলাকার ক্ষেত্রে প্রসারিত করতে হবে । যেখানে শহুরে প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র সংস্থায় কর্মসংস্থান সম্ভব যেখানে প্রয়োজনীয় পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হয়। ক্ষুদ্র সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দেওয়ার এটি একটি উপায় হবে। এই সংস্থাগুলিকে ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত করবার পন্থা তাদেরকে শ্রমিক সরবরাহ করে এবং এর জন্য তাদের থেকে অর্থ গ্রহণ না করে।

এম এস এম ই

.......................

১২. দ্বিতীয় মধ্যমেয়াদি ব্যবস্থা বিশেষতএম এস এম ই গুলির এবং কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। শহুরে কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প থেকে শ্রম সরবরাহ করাই এই সংস্থাগুলিতে যথেষ্ট হবে না । তাদের যথেষ্ট অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন। বেঙ্গলিি কে এদে প্রয়োজনের সময়় অনুযায়ী ঋণ দিতে হবে। উচ্চ জামানত সুরক্ষার দাবি করা যাবে না। সরকারকে ঋণ প্রদানের গ্যারান্টি দিতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এই সংস্থাগুলির জন্য ঋণেেের ওপর স্থগিতাদেশ ৩ মাস থেকে ১ বছর করা উচিত। চাহিদার হঠাৎ পড়তি বা হঠাৎ বৃদ্ধি এই সংস্থাগুলির টিঁঁকে থাকার সমস্যা হয়ে যাচ্ছে যতক্ষন না স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। এই সংস্থাগুলিকে অনুগ্রহ করার সময় বৃদ্ধি এবং আর্থিক সাহায্য করা উচিত যাতে সরকারের থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির উপায় এরা পায়। কৃষিতে কৃষকের ঋণ মুকুবের সুযোগ থাকাা দরকার। দরকার নতুন ঋণপ্রাপ্তি সরকারি ঋণের হারে। ডেয়ারি কৃষকদের সাহায্যর জন্য এবং দুধের চাহিদা বাড়ানোর জন্য লিটার পিছু ৫ টাকা ডেয়ারি সমবায়কে ভর্তুকি দেওয়া উচিত।

পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রত্যাবর্তন

...............................…...........

১৩.তৃতীয় মাঝারি মেয়াদী পদক্ষেপটি হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের উৎসাহিত করা যারা ইতিমধ্যে গ্রামে ফিরে গেছে। এদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সহজতর করতে হবে অবিলম্বে ট্রেন চলাচল এবং বাস চলাচলের মাধ্যমে যা ভারতবর্ষের নির্মম লকডাউনে বন্ধ হয়ে রয়েছে। যদিও অন্য দেশে এই চিত্র নেই । তাদের কাজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে । এতে সময় লাগবে এবং কাজটা সহজও হবে না। কারণ রোগের ছায়া এবং লং গাউন এর পুনরাবৃত্তির ভয় সকলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতবিক্ষত করবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের যে আশঙ্কা দূর করতে হবে। এবং একটি স্পষ্ট মানবিক সরকারের চিত্র তুলে ধরতে হবে। বর্তমান সরকারের মত নয় যারা অস্থির সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাকে প্রয়োগ করে পুলিশি অত্যাচার এর সাহায্যে। বিদেশ থেকে যে অভিবাসী শ্রমিকরা এ দেশে ফিরতে চায় তাদের ফেরার ব্যবস্থাও করতে হবে।

প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ

...........................................

১৪. চতুর্থ মাঝারি মেয়াদী ব্যবস্থা হচ্ছে যুক্তিসঙ্গত মূল্যে স্থিতিশীল, পর্যাপ্ত এবং অবিচ্ছিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ। লকডাউন ইতিমধ্যে সরবরাহের যে শৃঙ্খল তার ভেঙে দিয়েছে। বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উৎপাদন এবং পরিষেবাকে বহুবিধ উপায়ে ব্যাহত করেছে। এগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সুনির্দিষ্ট এবং সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে অন্তরগমন ও বহিঃগমন সম্পর্কই এই ধরনের উৎপাদন কে পরিচালিত করে। সেই জন্য দেশজুড়ে কিছু পরিকল্পনা ব্যবস্থার কার্যকর পুনর্বহাল প্রয়োজন।

গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন

...............................................

১৫. পঞ্চম মধ্যমেয়াদি ব্যবস্থা শুরু হবে পঞ্চায়েত নিয়ন্ত্রিত গ্রামীন ছোট সংস্থা গুলিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন স্থানীয় উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণে। সমগ্র উদ্যোগ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও অনেক ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা গ্রামে থাকতে শুরু করবে। তাদের জন্য কাজের অনুসন্ধান ও প্রয়োজন। এম জি এন আর ই জি এস এর বহির্ভূত ও অতিরিক্ত কাজের প্রয়োজন। কৃষি বানিজ্য তৎপরতাকে উৎসাহিত করতে হিমঘর সংরক্ষণ পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং বাজার ব্যবস্থা কে গড়ে তোলা প্রয়োজন। গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের এটি একটি পথ। কর্ম নিবিড় উন্নয়নের গতিপথের দিশায় এটি একটি বিকল্প প্রতিঘাত হবে। এর জন্য ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন হবে। রাজ্য সরকারগুলি এর ব্যবস্থা করবে প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ ও পরিচালকমণ্ডলীর পরামর্শক্রমে ।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাসমূহ

..................................

এখন আমরা আসছি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থায়। এগুলিও এখন শুরু করতে হবে। অর্থনীতির বৃদ্ধি কৌশলকে পুনঃমুখী করা প্রয়োজন। ভিত্তি হবে অভ্যন্তরীণ বাজার, কৃষির বৃদ্ধি চাষী সবজি বাজারের বৃদ্ধিকে নির্ণয় করে। বর্তমান সময় কালে কৃষিকে অবহেলা করা হয়েছে। তবুও লকডাউন এর সময় কালে লক্ষ লক্ষ মানুষের কৃষি হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ আশ্রয়। কৃষির প্রতি এই অবজ্ঞার বিপরীত ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য চাই একাধিক পদক্ষেপ। পারিশ্রমিকের মাধ্যমে কৃষি পণ্য সংগ্রহর বিধান, বাণিজ্যিক শস্যের ক্ষেত্রে সংগ্রহ প্রক্রিয়ার প্রসারণ যা এর আগেও ব্যবহার করা হয়েছিল, মাশুল ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আভ্যন্তরীণ বাজারের প্রতিষেধক গড়ে তোলা বিশ্ববাজারের দামের ওঠানামার প্রতিক্রিয়া থেকে। নতুন ফলন উৎসাহ পদ্ধতিতে গবেষণা, কম জল নিবিড় বিভিন্ন চাষের উন্নয়ন, সিলিং উদ্বৃত্ত ভূমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা, অব্যবহৃত জমিতে বনায়নের ব্যবস্থা করা। কৃষকের মাথাপিছু কৃষিজ আয় বৃদ্ধি। কৃষি শ্রমিকেরা টুঁটি টেপা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভারতের শ্রমজীবী জনগণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। মহামারীর বিরুদ্ধে আজকের লড়াইয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভয়ঙ্কর সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করেছে। জরুরিভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জিডিপির ৩ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ করতে হবে। রাজ্য সরকার কেও এর উপর অর্থ যুক্ত করতে হবে এই ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে। ওষুধের সি জি এস টি হার কমাতে হবে।পশুদের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন আত্মনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষাই যথেষ্ট বিনিয়োগ বিশেষ করে বিদ্যালয় শিক্ষার সার্বজনীনকরণ যৌথভাবে করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই প্রশ্নে বাজেটে জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয়বরাদ্দ করতে হবে।

শারীরিক দূরত্ব ও সামাজিক সংহতি, পরিহার করুন মেরুকরণ এবং কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ।

...........................................................

১৭. এই মহামারীর সময় সকলের একত্রিত হওয়ার সময় । অথচ এই সময়ে একটি কৃত্রিম জাতীয় ঐক্যর কথা বলা হচ্ছে যা যেন এই মহামারীতে সর্বরোগহরকর।সরকারের অন্তর্নিহিত সমর্থন দিয়ে এই মহামারী কে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নাগরিক স্বাধীনতা এবং সি এ এ 'র মত কঠোর আইনের বিরুদ্ধে, ইউ এ পি এ 'র মত আইনের বিরুদ্ধে, সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে প্রেসের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ, যারা সবসময়ই সরকারের সমালোচক ইত্যাদি সরকারের এগুলি হল মোটামুটিভাবে বিপরীত ঘটনা যা এই সময় প্রয়োজন নয় বা অন্য সময়েও প্রয়োজন নয় । এটি তার কর্তৃত্ববাদী এজেন্ডার অংশ। লকডাউনের মধ্যেও এই অংশকে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে। এর পরিবর্তন না হলে দেশ এবং জনগণ মহামারীর বিরুদ্ধে কার্যকরীভাবে লড়াই করতে পারবে না।
শেয়ার করুন

উত্তর দিন