History and Rationality

ইতিহাস বিকৃতি বনাম যুক্তিবাদ

গীতশ্রী সরকার

মানুষের ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস, ভারতের ইতিহাস— এর অনুসন্ধানের ধারা বহমান। মানুষ তার অতীতকে খুঁজছে, নির্মাণ করছে। সময় পরিস্থিতি মতাদর্শের ভিন্নতা নিরিখে ইতিহাসের বদলও ঘটছে। ইতিহাস কোনও কল্পকথা নয়। মানুষের ফেলে যাওয়া চিহ্ন, স্মারকের ভিত্তিতে উত্তরসূরিরা অতীতের অনুসন্ধান করেছে। এই অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই তৎকালীন সমাজ সংস্কৃতি জীবনযাপনের কিছু ঝলক দেখতে পাই আমরা। গুহাচিত্র থেকে খননকার্য প্রাপ্ত আসবাব, মূর্তি, বিভিন্ন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে শিলালেখ, বিজয়স্তম্ভ অতীত অনুসন্ধানের অন্যতম উপাদান বা tools। ইতিহাসে, অতীতের পুনরুদ্ধারে অনুসন্ধানকারী দর্শন অবশ্যম্ভাবীরূপে প্রভাব ফেলে। ইতিহাস কোনও একরৈখিক, একপেশে দেখা নয়। ইতিহাসে কোনও সিদ্ধান্তই ধ্রুবক নয়। ইতিহাসের সন্ধান এক নিরন্তর যাত্রা। কোনও নতুন আবিষ্কার যে কোনও সময় বদলে দিতে পারে আপাত জানাকে। সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার হয়তো ভবিষ্যতের মানুষকে এক নতুন ইতিহাসের সামনে দাঁড় করাবে। একপেশে, পক্ষপাতদুষ্টতা ইতিহাস দেখাকে সংকুচিত করে। বহুরৈখিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ইতিহাসের নানা স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়। বহুস্তরীয় এই দেখা খানিক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের নির্মাণের সাহায্য করে। তবে এই দেখা অনেকাংশে নির্ভর করে পাঠকের,অনুসন্ধানকারী দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

মানুষ আক্ষরিক অর্থে ইতিহাস লিখে রেখে যায়নি।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, পুরাণ, সাহিত্য, বিজয়স্তম্ভ, দলিল-দস্তাবেজ এই সবই ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই উপাদানগুলিতে বর্ণিত সমাজ-সংস্কৃতি তৎকালীন ইতিহাসের স্বাক্ষ্য। পাশ্চাত্য শিক্ষার সম্প্রসারণ হাত ধরে আধুনিক ইতিহাস চর্চার পথ চলা শুরু হয়। ম্যাক্সমুলার সাহেবদের ইতিহাস চর্চায় স্বর্ণযুগ অন্ধকার-যুগের তত্ত্বের আমদানি হয় এইসময়। ইতিহাসবিদরা প্রাক দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রাচীন ও হিন্দুদের হিসেবে চিহ্নিত করে এই সময়কে স্বর্ণযুগ এবং মুসলিম শাসনকালকে অন্ধকার যুগ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্ধকার যুগের তত্ত্ব একটি নির্দিষ্ট মতবাদের ফসল। কেন একটি যুগকে অন্ধকার যুগ বলব, তা নিয়ে আজ বহু গবেষণা হচ্ছে। প্রমাণ হচ্ছে সাহিত্য-সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি  ঘটেছিল এই সময়। ধর্মের ভিত্তিতে যুগ বিভাজন ভারতবর্ষের দ্বিজাতিতত্ত্বের বীজ বুনেছিল। এর পরবর্তীতে  জাতীয়তাবাদী আদর্শে দীক্ষিত ইতিহাসবিদরা হিন্দু পুনরুদ্ধার, হিন্দু জাগরণের জয়গাথা লিখেছেন। এই সময়কার সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকেই জন্ম হয় সাম্প্রদায়িকতার। যার অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগের মতো রাজনৈতিক  প্রতিষ্ঠানগুলি আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়। বঙ্গভঙ্গ থেকে দেশভাগ হয়ে আজকের NRC CAA  কয়েক দশক ধরে সাম্প্রদায়িক শক্তি এক জাতির অভাবের কারণ হিসেবে অন্য জাতি, অন্য ধর্মের মানুষের  দিকেই আঙুল তুলেছে। হিন্দু মহাসভার সেদিনকার রাজনীতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে নব্বইয়ের দশকে। আরএসএস বিজেপির প্রচার সাম্প্রদায়িকতাকে অন্দরমহল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে খানিক সক্ষম হয়েছিল। ২০১৪ সাল পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের শাসন পুরাতনকে ভুলিয়ে এক নয়া ইতিহাস রচনা করতে চাইছে। ভারতবর্ষের যুক্তিবাদী লেখক-পাঠক ইতিহাসবিদরা আজ বাঁচাতে চাইছেন সত্যিকারের ইতিহাসকে। চেনাতে চাইছেন আসল ভারতবর্ষকে, তার নানা পর্যায়কে। কালবুর্গি থেকে গৌরী লঙ্কেশ, ইরফান হাবিব থেকে রোমিলা থাপার,  রাম পুনিয়ানীদের যুক্তিবোধ, প্রশ্ন, তর্ক আজ হিন্দুত্ববাদী রক্ষণশীল গুণ্ডাদের মাথা ব্যথার কারণ। অন্ধ আনুগত্যপ্রিয় সাম্প্রদায়িক শক্তির অন্যতম দুশ্চিন্তা যুক্তিবাদ, প্রগতিশীলতার চর্চা। তাই আজ গোটা ভারত জুড়ে বই পোড়ানো, যুক্তিবাদীদের ওপর আক্রমণ, তাদের হত্যা করার যজ্ঞ চলছে।

বিবিধ মতাদর্শের ভিত্তিতে ইতিহাসের নির্মাণ প্রক্রিয়াটি  সংগঠিত হয়। রমেশচন্দ্র মজুমদাররা ধর্মকে চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিতে রচনা করেছেন ভারতের ইতিহাস। অন্যদিকে ডিডি কোসাম্বি রামশরণ শর্মারা মার্কসবাদী দর্শনের আলোকে ইতিহাস সমালোচনার পর্যালোচনা করেন। তবে একথা অবশ্যই স্বীকার্য

আর সি মজুমদারদের আলোচনায় পক্ষপাত থাকলেও বিকৃতি ছিলনা। কিন্তু বর্তমান বিজেপি আরএসএস হিন্দু রক্ষা দলের মদতে বিকৃতিকে পাথেয় করেই হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস চর্চার ধারাটি শক্তিশালী হচ্ছে।

মসজিদ ধ্বংস করে মন্দির গড়া, সুলতানি ও মুঘল যুগের স্থাপত্যকে হিন্দু মন্দির বলে দাবি করার মধ্যে দিয়েই বিকৃত ইতিহাসের নতুন সোপান গড়ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি। এই বিকৃত ইতিহাস নির্মাণই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে সরকারি মদতে। এই বিকৃতি কেবল আজ ঘটছে এমন নয়— বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন দেশের শাসক তার অবস্থানের, আদর্শের সত্যতা প্রমাণের জন্যই ইতিহাসের কিছু অংশকে নিপুণভাবে বাদ দিয়ে, কিছু অংশের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করে এক স্বতন্ত্র ইতিহাসের নির্মাণ করেছে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ জার্মানির নাৎসি বাহিনীর উগ্র জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক ইতিহাস চর্চা। ভারতবর্ষের উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস নির্মাণকারীরা ভারতবর্ষের এক বড় সময়ের ইতিহাসকে ভ্যানিশ করে দিতে চান।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের নির্মাতা গোলওয়ালকারের কথায় ভারতীয় মানে হিন্দু, আর অভারতীয় মানে  অহিন্দু। আ বাঞ্চ অফ থটস বইতে বলেন যে মাতৃভূমির পবিত্রতা রক্ষায় একমাত্র রক্ত দিয়েছে হিন্দুরা তাই ভারতবর্ষে হিন্দুদের। আরো বলেন, ‘এই ভূখন্ডের সন্তান হয়ে কেবলমাত্র হিন্দুরা এখানে বাস করে আসছে।’ এই মন্তব্যের সূত্রে এক লহমায় ভারতবর্ষের জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা বৌদ্ধ জৈন, প্রাগার্য, দলিত, মুসলমান, শিখ, পারসিকদের ইতিহাসকে নাকচ করে দেন। এই প্রসঙ্গে সুকুমারী ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন ‘শুধু হিন্দুই ভারতীয়— এমন একটা অযৌক্তিক,অমানবিক, শুধু গায়ের জোরে বারবার বললেও কথাটা মিথ্যাই থেকে যায়,  সত্য হয়ে ওঠে না।’ আরএসএসের ঘোষিত অন্যতম তিনশত্রু মুসলমান, খ্রিস্টান এবং কমিউনিস্টরা। হিন্দুত্ববাদীদের মতে এই তিন অংশই ‘দেশদ্রোহী’ কারণ তারা এই দেশের কেউ না। মুসলমানরা মক্কা, খৃষ্টানরা জেরুজালেমে, আর কমিউনিস্টরা রাশিয়ার। আজও হিন্দুদের মূলত মুসলিমদের বহির্দেশীয় হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে দেশ ছাড়া করতে চায়ছে, এই ভারতবর্ষের মাটিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে বসবাসকারী মানুষকে শরণার্থী করে রাখতে চায়ছে। আর্য রক্তের গৌরবে মোহে আবিষ্ট হিন্দুত্বের ধারক-বাহকদের জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে আর্যরা কোথা থেকে এসেছিল। এশিয়া মাইনর থেকে আগত আর্যরা সেদিন ভারতবর্ষের আদি বাসিন্দাদের হারিয়ে দখল করেছিল এই ভূখণ্ডকে। তাহলে আজ কি প্রাগার্য, আদিবাসীরা আর্যদের দেশছাড়া করবে? ভারতবর্ষের যুগ যুগ ধরে মানুষের স্রোত এসে মিশেছে। আর্যরা  ভারতবর্ষকে যেমন নিজের মাতৃভূমি হিসেবে গড়ে নিয়েছে, কাবুল কান্দাহার থেকে আসা বাবর আকবররাও তেমনভাবে গড়েছে এই দেশকে।

ভারতবর্ষ সেই ভূখণ্ড, সেই মহামানবের সাগরতীরে যেখানে আর্য অনার্য দ্রাবিড় শক হুন পাঠান মোঘল লীন হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী শক্তি আজ তাজমহলকে তেজা মহালয়া আখ্যা দিচ্ছে, বাবরি মসজিদ এরপর কাশির মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোর হুংকার দিচ্ছে। যুক্তির জোরে আজ প্রশ্ন করতেই হবে রাম কে, এই রাম তো বাল্মিকী রচিত রামায়ণ নামক আদিকাব্যের নায়ক মাত্র। এই গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার এই মরিয়া চেষ্টা কেন? আর যদি এই প্রশ্ন না করি, তবে কাল পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য  তাজমহল ভেঙে কোনও গেরুয়া মন্দির তৈরি হবে, ভারতবর্ষের অন্যতম পুরাতন শহর বারানসি কাশীর মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির তৈরি হবে, আর মন্দিরের পাশের বেনারসি শাড়ির মুসলিম কারিগরদের ইতিহাসকে মিথ্যে করে দেবে আজকের শাসক।

ইরফান হাবিব যথার্থই বলেছেন, ‘এখন ইতিহাস চর্চার নামে পৌরাণিক নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।’ যে হিন্দু রক্ষক শক্তি হিন্দুর হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য অন্যের ঘর ভাঙতে পিছপা হয় না, তারা কি হিসেব রাখেন কতগুলো বৌদ্ধসঙ্ঘ ভেঙেছিল হিন্দু ব্রাহ্মণরা? আরএসএস বাহিনীর প্রধান আজ রামরাজ্য গড়বার হুংকার দিচ্ছেন। ভারতবর্ষের সংবিধান পুড়িয়ে মনুসংহিতাকে আদর্শ হিসেবে প্রতিস্থাপিত করছে। যে রামরাজ্য শূদ্রের হত্যা নারীর পুড়ে মরাকে স্বীকৃতি জানানো হয় আজকের আধুনিক মানুষ কোন যুক্তিতে তা মানবে। দ্রৌপদী মুর্মু যখন দেশে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন, তখন এই ভারতেরই কোনও প্রান্তে দলিত হওয়ার অপরাধে আত্মহত্যা করে কোনও যুবক, উচ্চবর্ণের চৌহদ্দিতে এসে পরার অপরাধে আদিবাসী দম্পতিকে  পিটিয়ে খুন করা হয়— সেই দেশে, সেই ভারতবর্ষ আমরা চাই না।

Irfan Habib
ইরফান হাবিব
রোমিলা থাপার

আজকের পৃথিবীতে যখন মানুষ দু'বেলা পেট ভরে খেতে পারছে না, বেকার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন, আজ হারাচ্ছে মানুষ দেশের সম্পদ এক এক করে বিক্রি করে দিচ্ছে সরকার  তখন এক পচা-গলা বাস্তব থেকে চোখ ফেরানো জন্যই রামরাজ্যের রঙিন ফানুস ওড়াচ্ছে সরকার। ‘হিন্দু খাতরেমে হ্যায়’র তত্ত্বওয়ালাদের কাছে প্রশ্ন, যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ হিন্দু, যেখানে মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ, সেখানে সংখ্যাগুরু হিন্দুরা কিভাবে বিপদে পড়ছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত সমাজের উন্নতির তত্ত্ব বারবার সামনে এনেছে শাসকরা। বঙ্গভঙ্গের সময় লর্ড কার্জন থেকে দেশভাগের সময় মুসলিম লীগ ও তৎকালীন হিন্দুত্ববাদী রাও একই তত্ত্বের আমদানি করেছিলেন।কিন্তু তারপর ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিমদের লড়াই করতে হলো পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিমদের বিরুদ্ধে। এক দেশ, এক ভাষা, এক জাতি, এক ধর্ম এর প্রবক্তারা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বীজ বুনছে।

বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের অন্যতম বিনোদন মাধ্যমগুলি সাম্প্রদায়িকতার প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে।

বিনোদন জগতের খানিক কল্পনা বাস্তব ইতিহাসের মিলনে যে রূপকথা নির্মাণ হয় তা প্রতিদিনকার জীবনে বিধ্বস্ত, ধুঁকতে থাকা মানুষের অপ্রাপ্তিময়তার মাঝে খানিক প্রাপ্তির আশ্বাস। জীবনে প্রভুত্ব ও বঞ্চনার শিকার একাংশের মানুষের কাছে মুসলিম ও হিন্দু সমস্ত সমস্যার মূল। তার এই ক্ষোভ প্রতিদিনকার জীবনে প্রকাশও পায় চায়ের আড্ডা থেকে ফিরতি ট্রেনের কামরায়। কাশ্মীর ফাইলস বা পৃথ্বীরাজ চৌহান এর শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া পর্দার অমিতপরিক্রমশালী, মহাতেজা কোনও হিন্দু পণ্ডিত, হিন্দু রাজার জানকবুল লড়াই— সেই মানুষের আপাত বিধ্বস্ত জীবনে রোমান্টিসিজমের মিঠে বাতাস। এই রক্তস্নাত ভ্রান্ত হিন্দুত্ববাদী রোমান্টিকতা প্রতিদিনকার অভাব মেটায় না। এ প্রকল্পগুলি কেবল একপেশে, এক জাতি কেন্দ্রিক দুর্দশার ছবি তুলে ধরে। রোজ খুন হয়ে যাওয়া, উধাও হয়ে যাওয়া একজন সাধারন কাশ্মীরি মানুষের (তিনি পণ্ডিত বা শেখ যা খুশিই হতে পারেন) কাহিনী সযত্নে এড়িয়ে যান হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের নির্মাতারা।

ইরফান হাবিব মনে করেন ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তথ্যের ক্ষেত্রে কোনও আপস করা চলে না। ইচ্ছামতো কোনও ঘটনাকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া যায় না।

ভারতবর্ষের ইতিহাস সমন্বয় সহিষ্ণুতার ইতিহাস। প্রায় প্রতিটি ধর্মেই মতপার্থক্যের সুরাহার পন্থা তর্ক। যুদ্ধ নয়। তবু আজকের উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি ভুলিয়ে দিতে চায় চৈতন্যদেব থেকে কবীর, দিন ই ইলাহি থেকে দারাশুকোর উপনিষদ চর্চার ইতিহাসকে। ভারতবর্ষের সংস্কৃতি যৌথতার সংস্কৃতি। আজানের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা আর শঙ্খের শব্দে, ধুনোর গন্ধে সন্ধ্যা নামা ভারতবর্ষকে আজ সবটুকু শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে বাঁচাতে হবে— বাঁচাতেই হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন