২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের এক দশকের শাসনে। ভারতের সংবিধানের চারটি স্তম্ভ— ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়াকে এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এবং সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপব্যবহার করে, মোদী সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক শাসন ভারতের শ্রমজীবী জনগণের অধিকারকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ফ্যাসিবাদী পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, ভারতকে বিশ্বের অন্যতম বৈষম্যযুক্ত সমাজে পরিণত করেছে, জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করার জন্য বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক আদর্শ চাপিয়ে দিয়েছে। অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ এর ফলাফল নির্ধারণ করবে যে এই নির্বাচনে “আমরা জনগণ” আমাদের ভোটের মাধ্যমে ভারতের সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষা করতে পারবো কিনা।
এই লোকসভা নির্বাচন ভারতের সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রকে একটি তীব্র অসহিষ্ণু, ঘৃণা ও হিংসাচালিত স্বৈরতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্বের রাষ্ট্রে রূপান্তর করায় বিজেপি’র প্রচেষ্টার থেকে রক্ষা করার নির্বাচন- এই সম্পর্কে আমাদের কোনও ভুল করা উচিত হবে না।
এটাই বিজেপি’র পরিচালক সংগঠন আরএসএস’র খোলাখুলিভাবেঘোষিত লক্ষ্য, আরএসএস এখন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অভূতপূর্বভাবে প্রবেশ করেছে এবংভারতের শিরায় শিরায় সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিগত পাঁচ বছরে, আমাদের দেশ শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসী, দলিত, মহিলা, যুব এবং ছাত্রদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের, প্রতিরোধের লড়াইয়েরও সাক্ষী থেকেছে।
এই সংগ্রামগুলির মধ্যে অনেকগুলি, বিশেষ করে কৃষকদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম প্রমাণ করেছে যে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে এই সরকারের শক্তি এবং দমন-পীড়নকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে ও পরাজিত করতে পারে। এই সময়ের মধ্যে আমরা সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার (এলডিএফ) দ্বারা বাস্তবায়িত বিকল্প নীতিগুলির সম্ভাবনাও দেখেছি যা আর্থিকভাবে শ্বাসরোধ করার সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গণমুখী নীতি রূপায়ণে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলোকবর্তিকা।
সিপিআই(এম) ভারতের জনগণের সামনে তার ইশতেহার প্রকাশ করছে এই স্পষ্ট বোঝাপড়া থেকে যে বিজেপি এবং তার সহযোগীদের পরাজয় নিশ্চিত করা এই সময়ে প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের আবশ্যিক কর্তব্য। সিপিআই(এম) এই সম্মিলিত দায়িত্বকে শক্তিশালী করতে এবং কেন্দ্রে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে পার্টির সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর জন্য, এবং জনস্বার্থবাহী নীতি নিশ্চিত করার জন্য সংসদে সিপিআই(এম)’র শক্তিশালী উপস্থিতি জরুরি। ইশ্েতহারের প্রথম অংশে, বর্তমানের প্রধান সমস্যাগুলির ওপর আলোকপাত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশে, বিকল্প নীতির জন্য সিপিআই(এম)’র দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে যা জনগণের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে প্রকাশিত নির্বাচনী ইশতেহারটি পড়তে নিচের লিংক ব্যবহার করে পিডিএফ'টি ডাউনলোড করুন।