Dr. pabitro sarkar

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সার্থকতা খুঁজে নিক

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। ২০০২ সালে রাষ্ট্রসংঘ "to promote the preservation and protection of all languages used by peoples of the world" – এর লক্ষ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। তবে মাতৃভাষার দাবীতে যে সংগ্রাম সারা পৃথিবীতে ইতিহাস নির্মাণ করেছিল তার সুত্রপাত ১৯৫২ সালে। ২০২১ সালের পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ওয়েবসাইট টিম হাজির হয় ডঃ পবিত্র সরকারের সামনে – উদ্দেশ্য, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতা সম্পর্কে তার বক্তব্যকে জনসাধারনের মধ্যে প্রচার করা। ডঃ পবিত্র সরকার ফুলব্রাইট স্কলারশিপ সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন, পিএইচডি অর্জন করেন ভাষাতত্ত্বে। ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং নাটকের জগতে তার অবাধ, স্বচ্ছন্দ যাতায়াত, আলোচ্য বিষয়ে ওয়েবসাইট টিমের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কাজে তিনি এই বলে নিজের বক্তব্য শেষ করেন – “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতার দায়িত্ব অবশ্যই বড়দের – পরিবারের ভিতরেও যেমন, সামাজিক জীবনেও তেমনই”। সেই কথোপকথনই ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হল।

১. এই দিনের পিছনে যে সংগ্রামের ইতিহাস তা আপনার চোখে কেমন?

ডঃ সরকারঃ- ভারত স্বাধীন হল। কিন্তু দেশ দুইভাগে ভেঙ্গে গেল। নতুন দেশ পাকিস্তানের পূর্ব অংশে ভাষাকে কেন্দ্র করে জটিলতা সৃষ্টি হল। সাধারণ মানুষের সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করে শাসকের ইচ্ছামত ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং শ্রেণীগত আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া হল তাদের উপরে। বলা হল ইসলামের ভাষা হবে উর্দু। দেখা গেল সবকিছুতেই পশ্চিম পাকিস্তানের জোর বেশি, অধিকার বেশি। যদিও এসবের বিরুদ্ধে সেদেশের মানুষ প্রথম থেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বাংলা ভাষা ব্যাবহারের অপরিহার্যতা সম্পর্কে প্রথম আওয়াজ তোলেন তখনকার গণপরিষদের সদস্য, কুমিল্লার সাংসদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি উর্দুর সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেবার দাবী জানালেন – যদিও তার সেই দাবী গণপরিষদে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। এই সময় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ, সাধারণ মানুষ এবং সক্রিয়ভাবে কমিউনিস্টরা এই একই দাবীতে সোচ্চার হলেন। এমনকি মুসলিম লিগের সাধারণ সদস্যেরা, যাদের অনেকেই পাকিস্তান গড়ার পক্ষে ছিলেন তারাও এই দাবীকে সমর্থন করেন। ১৯৪৮ সালেই এই দাবীর পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। কায়দ–এ-আজম মহম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে এসে ঘোষণা করলেন পাকিস্তানের ভাষা হল উর্দু ,“Urdu will be the language of Pakistan” – সেই ঘোষণার সাথে সাথেই বহু মানুষ একসাথে ‘নো’ ‘নো’ আওয়াজ তুলেছিলেন। এর পর থেকেই আন্দোলন তীব্রতা পায়। ছাত্রসমাজের প্রতিবাদ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য জবরদস্তির বিরুদ্ধে জনমানসে অসন্তোষ ছিলই, তার সাথে যুক্ত হল এই ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই। ক্রমশই বোঝা গেল এই আন্দোলন এক বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিতে চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বীজ এখানেই নিহিত রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে হরতালের ঘোষণা করা হল, সরকার এর বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারী করেছিল। তখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নাজিবুদ্দিন। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গেই ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে গেল, পুলিশ সেই মিছিলে প্রথমে লাঠি এবং পরে গুলি চালায়। এই আক্রমণে পাঁচজন শহীদ হলেন, ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়েছিল, পরে আরও একজন মারা গেলেন। রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার এবং শফিউর – এদের নাম পরে জানা যায়। এই ইতিহাস অনেকরই জানা, কিন্তু এই ইতিহাসকে আজকের প্রজন্মের কাছে বারে বারে পৌঁছে দিতে হবে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের আক্রমনে শহীদ হবার ঘটনা - ইতিহাসে এর গুরুত্ব বিরাট, ভবিষ্যতের জন্যেও তাই। এই লড়াইয়ের ১৯ বছর পরে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম নেয়। পূর্ব পাকিস্তানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এক বিশেষ রুপ নিয়েছিল, প্রথমে রবীন্দ্রসাহিত্যে, পরে রেডিয়তে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারী হয়েছিল। আরবি, ফারসি ভাষাকে ব্যাবহার করতে একরকম চাপ সৃষ্টি করা হত। বাংলা ভাষার মধ্যে জোর করে আরবি, ফারসি শব্দের প্রয়োগ করা হত। স্বাধীনতা তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই। এই ইতিহাসকে মনে রাখতেই হয়। কোফি আন্নানের সময়কালে ইউনেস্কোতে যখন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব নেওয়া হয়, অন্যান্য অনেকগুলি দেশে সাথে পাকিস্তানও সেই প্রস্তাবে সমর্থন দেয়। এই দিনটিকে স্বীকৃতি দেবার সাথে আরেকটি ঘটনাও ঘটে, সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার একটি যোগাযোগ তৈরি হল। ১৯৫২ সালের লড়াই এভাবেই পূর্ণতা পেল। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে মানুষ প্রান দিতে পারে এই নজীর পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী হল। চল্লিশ হাজার বছর আগে যখন প্রথম ভাষার প্রচলন শুরু হয় তখন পৃথিবীতে প্রায় ১৪-১৫ হাজার বিভিন্ন ভাষা ছিল, এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ হাজারে। বলা হচ্ছে আগামী দিনে আরও তিন হাজার ভাষা অবলুপ্ত হতে চলেছে, যদিও আজকের পৃথিবীতে অনেকেই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেতন হয়েছে। ভাষাকে ধ্বংস করে কে? ইংরেজিতে বলা হয় Killing Language (মারণ ভাষা)। ইংরেজি তো বটেই, রুশ, স্প্যানিশ, আরবি, ফরাসী এমনকি বাংলাও এমন মারণ ভাষার ভূমিকা পালন করেছে। মালতো নামে একটি ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করার দায় বাংলার। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব বোঝাই যায়। ইতিহাস বলতে এই।

২. এমন কি বলা যায় ভাষার দাবীতে আন্দোলন বা ব্যাপক অর্থে সাংস্কৃতিক আন্দোলনই ধীরে ধীরে রপান্তরিত হল জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে?

ডঃ সরকারঃ- একেবারেই তাই। তবে এই লড়াইয়ের একটা আন্তর্জাতিক চরিত্র রয়েছে। সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দাবিকেই সমর্থন করে এই আন্দোলন।

৩. ভাষাগত আগ্রাসন – এর পিছনে পুঁজিবাদের ভূমিকাটা ঠিক কেমন? সহজ মুনাফার স্বার্থে এক ভাষা, এক দেশ এমনটাই তো পূঁজির পছন্দ। মানুষের মধ্যেকার বিভিন্নতা, বৈচিত্রকে উচ্ছেদ করে সবাইকে একরকম সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করে তুলতে পারলেই পুঁজিবাদের সুবিধা। আজকের পরিপ্রেক্ষিতে সেই আগ্রাসনের চেহারাটা কেমন?  

ডঃ সরকারঃ-  আজকের পুঁজিবাদ অতীতের তুলনায় অনেকটাই চালাক! তারা স্লোগান তুলেছে Think Global, Act Local! এর পিছনে এক প্রবল তঞ্চকতা লুকিয়ে রয়েছে। আজকের পুঁজিবাদ ছোট ছোট ভাষাকে ব্যাবহার করতে চায়, আসলে মানুষের সংগ্রামী ঐক্যকে নষ্ট করে দিতেই ভাষার অজুহাতে পরিচিতি সত্বার রাজনীতিকে সামনে আনা হয়। বিজ্ঞাপনে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগে মুনাফার স্বার্থরক্ষা করে তারা নিজেদের ভণ্ডামি ঢেকে রাখে। পুঁজিবাদ প্রকৃতপক্ষে ছোট ভাষার বন্ধু নয়, ইংরেজিকেই তারা Global Village এর নামে চালিয়ে দিতে চেয়েছে, চাইছে। মনে রাখতে হবে বহুভাষী সমাজে ভাষাকে কেন্দ্র করে একরকম জাতিভেদ তৈরি হয়। কোনও ভাষার জোর কম না বেশি তা স্থির করা হয় সেই ভাষায় কাজের সুযোগ বা আরও স্পষ্ট করে বললে রোজগারের সুযোগ কম না বেশি তার দ্বারা – অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সেই ভাষার অংশগ্রহনের অনুপাতের ভিত্তিতে। ইংরেজিকে দেখানো হয়েছে Language of Success হিসাবে। আগ্রাসন সেখানেই। হিন্দির ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়, শাসক শ্রেণীর কাছাকাছি থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ হবে এমন একটা ভাবনা থেকেই হিন্দির প্রতি কিছুটা বাড়তি আগ্রহ, এমন যুক্তি উপেক্ষা করা যায় না। ছোট থাকতেই চাপিয়ে দেওয়ার কারন সেটাই, পরিবারে বাবা-মায়েরা সেই কাজ করেন, সামাজিক ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা নেন অন্যান্য প্রভাবশালীরা। সেই কারনেই ইংরেজি শিক্ষাকে বাংলার পাশে রেখে শিখতে চাইবার বদলে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি এমন সার্বিক উৎকণ্ঠা। চিন্তার বিষয় সেটাই। এইসব করে ছেলে মেয়েদের মনে একটা ধারণা গেঁথে দেওয়া হয় যে মাতৃভাষাটা কোনও কাজের নয়, ওটা কেবল একটা পারিবারিক ব্যাপার। সাহিত্য পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা শিখতে চায় খুবই কম জন। আসলে সকলেই কাজের চিন্তায়, অর্থাৎ রোজগারের চিন্তায় মগ্ন – অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা জনমানসে ভাষা শিক্ষার সাধারণ অভিমুখ গড়ে তোলে। খবরে প্রকাশ আমাদের রাজ্য সরকার ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল খুলতে চলেছে – এতে সর্বনাশ হবে। ছেলে মেয়েরা বাংলা পড়বে না। বাংলা খবরের কাগজের পাঠক কমে যাবে, বাংলা বইয়ের প্রকাশনা কমে যাবে কারন সবটাই মুনাফার শিকলে বাঁধা। অর্থাৎ বাংলা ভাষা বিপন্ন হয়ে উঠবে, বলা যায় এই সমস্যা শুধু বাংলা ভাষার নয়, ভারতের প্রতিটি ভাষারই সমস্যা, এমনকি হিন্দিরও। আজকের হিন্দি ভাষায় অহেতুক ইংরেজি শব্দের প্রয়োগ এতটাই উৎকট যে সেই ভাষায় আর নতুন শব্দের উৎক্রমণ নেই। বাংলাতেও এমন ধারায় But, So, Of course এমন অজস্র শব্দের অহেতুক ব্যাবহার করা হচ্ছে, বড়রা এমনকি শিক্ষিত মানুষেরাও এমন খিচুড়ি প্রস্তুত করছেন। বাংলাদেশ, যেখানে বাংলাভাষার দাবীতে আন্দোলন হয়েছে সেই দেশেও এই সমস্যা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যাদের BNGS – ‘বিলেত না গিয়েই সাহেব’ বলা হয়, এমন মানুষ সব জায়গাতেই বেড়ে যাচ্ছে যারা বুঝে না বুঝে ইংরেজি শব্দের প্রয়োগ করে চলেছেন। এতে যেমন একদিকে নিজেদের ভাষার শরীর ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, অন্যদিকে সেই ভাষাভাষীর লোকজনের ভাষার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে, ভাষা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি উৎসব পালন করবো, গান গাইবো, পূজো করবো সবই ঠিক কিন্তু এর সাথে আমাদের নিজেদের ভাষার দিকেও নজর দিতে হবে। আমরা আমাদের ভাষাকে কি অবস্থায় রেখেছি তা সবাইকেই মনে রাখতে হবে। উদযাপনের সার্থকতা সেখানেই।

৪. স্বার্থকতার প্রসঙ্গেই বলা যেতে পারে কি ছেলে মেয়েদের উপরে সবদিক থেকে ইংরেজি কিংবা হিন্দি শেখার যে চাপ তা আসলে সেই “Think Global”-রই চাপ? ব্রিটিশ শাসনে থাকাকালীন যারা ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন তাদের উপরেও কি এই প্রভাব সেভাবে কাজ করেছিল? তারা কি বাংলা কিংবা নিজেদের মাতৃভাষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজী শিখেছিলেন?

ডঃ সরকারঃ-  না। উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার রেনেসাঁসের সময় যা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিত আজকের দিনে বোঝা সত্যিই জরুরী। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের শিক্ষার ভাষা হবে ইংরেজি, ম্যাকলে সাহেব সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিলেন। একইসাথে মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসাও জেগে উঠেছিল। তারই প্রভাবে বহু বাংলা পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হল, বাংলা নাটক শুরু হল, বাংলা কবিতা বেরোতে শুরু করল – আর এসবকিছুই করেছিলেন ইংরেজি শেখা ব্যাক্তিরাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে অনেকগুলি ভাষাশিক্ষার চল থাকা সত্বেও, দেবেন ঠাকুরকে একজন (পরিবারের জামাই) ইংরেজিতে সম্বোধন করায় তিনি তাকে তিরস্কার করেছিলেন। আমার মনে হয় ইংরেজি শেখার মানে এমন নয় যে আমরা নিজেদের ভাষাকে ভুলে যাব। সেই যুগে পড়াশোনার সার্বিক ভাষা ইংরেজি হওয়া সত্বেও এমনটা হয়েছিল তার কারন এটাই। এই উপলব্ধিরই আজকের দিনে বড় অভাব ঘটছে। আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে যে জীবন সংকটের সম্মুখীন হতে হয় তাতে লড়াইয়ের রসদ বাংলাটা ভাল করে জানলে, কম পড়ে না। বরং আমি মনে করি মাতৃভাষায় পাঠ্যক্রমের পুরোটা শেখানোর পাশপাশি ইংরেজিটাও ভালভাবেই শেখানো চলতে পারে – তাতে কোনও সমস্যা নেই। আজ প্রযুক্তি যে সুবিধা দিচ্ছে, ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা পান নি, তাদের জন্য কোনও হাতে গরম ইংরেজিময় পরিবেশ ছিল না। নীরদ চৌধুরীর মতো মানুষ বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেও অসাধারণ ইংরেজি রচনা করেছেন – এমনটা করা যায়। যে কোনও সরকারের সেই চেষ্টাই করা উচিত।

৫. আজকের প্রজন্মের জন্য মাতৃভাষাকে ব্যবহার করেই শিক্ষিত হবার যে অনুভব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা আপনি বলছেন সেই কাজ কিভাবে হতে পারে? এক্ষেত্রে পারিবারিক সঙ্গতি, অভ্যাস, সংস্কৃতি নিশ্চিত একটা প্রভাব ফেলে। সাধারণ পরিবারের জন্য উপায় কি? মাতৃভাষার সচেতন চর্চা কিভাবে সম্ভব?

ডঃ সরকারঃ-  এই কাজ করতে হবে পরিবারের বড়দেরকেই। একটু খেয়াল রেখে চললেই এই সমস্যা মেটানো যায়। আজও এমন বহু মানুষজন রয়েছেন যারা কথা বলার পুরো সময়টাই ইংরেজি অথবা বাংলা কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাষার ব্যাবহার করেন। বাড়ির বড়দেরকেও সেই অভ্যাস করতে হবে, তাদের দেখেই ছোটরা শিখবে। অন্যান্য যেকোনো শিক্ষার মতোই ভাষাশিক্ষাও একটি অভ্যাসগত শিক্ষা যার কোনও বিকল্প আগেও ছিল না, আজও নেই। ঘরের মধ্যেকার সংস্কৃতিই ছেলে মেয়েরা বাইরে নিয়ে আসে, তাদের গড়ে তুলতে হবে ঘর থেকেই। তা সে বাড়ির ভিতরের ঘর হোক বা বিদ্যালয়ের। আমি নিজেও সেই অভ্যাস বজায় রাখতে সচেতন থাকি। ফোনে কথা বলার সময় ‘OK’ না বলে ‘আচ্ছা’ বলাই যায়, তাতে কোনও কুন্ঠার বিষয় নেই। বহুদিন যাবত যেসব ইংরেজি শব্দ আমাদের কথায় জায়গা করে নিয়েছে যেমন চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি এসবগুলি ব্যাতিরেকে এমন সচেতন চর্চাই আজকের দিনের প্রয়োজন। আমাদের সচেতন ভাষা চর্চাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সার্থকতা তুলে ধরে।

ওয়েবডেস্কের পক্ষে কথায়ঃ সৌভিক ঘোষ  


শেয়ার করুন

উত্তর দিন