মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফার চক্রান্ত চলছে - এর জবাব চাই
জীবনদায়ী টিকার রক্তখেকো পণ্যে রুপান্তর, ভারত এবং ভারত সরকার
ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
এই বছর এপ্রিল
মাসে ভারতে করোনা সংক্রমণ তার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় – তখনো অবধি সারা দেশের
মাত্র ৩.৫ শতাংশ নাগরিক ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক
সংবাদ সংস্থাগুলি ততদিনে ভারতে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার কথা ফলাও করে প্রচার করতে
শুরু করেছে। এই অবস্থার কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তারা দুটি কারন চিহ্নিত করে –
১) ভারতে
কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি অতি দক্ষিনপন্থি সরকার হিসাবে চিহ্নিত করার সাথেই তারা
উল্লেখ করে মোদী সরকার দুর্যোগের মোকাবিলা করার বিষয়ে কোনও পরিকল্পনাই গ্রহণ করেনি
বরং সেই সময় নির্বাচনের প্রচার কাজ চালাতে তারা এমন জনসমাবেশ সংগঠিত করেছে যাতে এই
সংক্রমণ ক্রমশ অতি-সংক্রমনের চেহারা নিয়েছে।
২) এর কিছুদিন
আগে থেকেই ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি মাঝারি এবং
স্বল্প আর্থিক সংস্থান যুক্ত দেশগুলিতে (মূলত ইউরোপের বাইরের দেশসমুহে) টিকা
প্রস্তুতিতে জরুরী কাঁচামাল রপ্তানি করতে অসম্মতি জানায়। কার্যত এই অবস্থানের অর্থ
হয় ইউরপীয় নন এমন মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকারকেই অস্বীকার করা।
এই পরিস্থিতিতে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার টিকাকরণের কাজকে খোলাবাজারের নীতি অনুযায়ী সম্পন্ন করার নীতি গ্রহণ করে। ক্রমশ স্পষ্ট হয় এই নীতির ফলে ভারতে টিকা প্রস্তুতকারী বৃহৎ সংস্থাগুলি বাজারের নিজেদের শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে নিতে পেরেছে – আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে সরকারী নীতির ফলে জীবনদায়ী টিকাকে বাজারে মুনাফার লক্ষ্যে সওদা করতে দেওয়ায়। আসলে চলতি ব্যবস্থার অন্তঃস্থ উৎকট অসাম্যই এমন ভয়াবহতার কারন। বাজারে টিকা প্রস্তুত করে ব্যবসা করতে দেওয়া হয় দুটি ভারতীয় সংস্থাকে, প্রথমটি সেরাম ইন্সটিটিউট এবং দ্বিতীয় ভারত বায়োটেক। বেসরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে টিকা বিক্রি করে ডোজ প্রতি সেরাম ইন্সটিটিউটের মুনাফা ২০০০ শতাংশ এবং ঐ একই ক্ষেত্রে ভারত বায়োটেকের মুনাফা ৪০০০ শতাংশ! মানুষের জীবন বাঁচানো ওষুধ সরবরাহ করার বরাত পেয়ে এই দুটি সংস্থার মুনাফা লগ্নী পূঁজির জগতে যাকে অতি-মুনাফা (Super Profit) বলে দুহাত ভরে তাই লুটেছে। প্রতি ডোজে আন্তর্জাতিক টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজার কিংবা মডার্না’র ক্ষেত্রে এই মুনাফার হার যথাক্রমে ৬৫০ শতাংশ এবং ৫০০ শতাংশ। ভারতীয় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাদ্বয়ের এহেন মুনাফা লুট প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে সাংবাদিক পি সাইনাথের একটি উক্তি – “ দুর্যোগ সবসময়ই দুর্দান্ত সব সওদার জন্য সহায়ক হয় – বহুজনের দুর্দশার বিনিময়ে সর্বদাই অর্থ লুটের সুযোগ থাকে”। ভারতে করোনা মহামারীও মুনাফা-পিশাচদের সামনে ঠিক তেমনই সুযোগ এনে দিয়েছে।
টিকা প্রস্তুতির কারখানা সেরাম ইন্সটিটিউটের (পুনাতে অবস্থিত) বর্তমান মালিক অদর পুনাওয়ালা ভারতের আট নম্বর ধনীতম ব্যক্তির সন্তান। উত্তরাধিকারসুত্রেই তিনি এই সংস্থার কর্ণধার হয়েছেন। যখন ইউরোপ এবং আমেরিকার টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ভারতে (এবং ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন দেশে) টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল রপ্তানিতে রাজী ছিল না – আমেরিকায় বাইডেন সরকার আসীন হবার পরেও করোনার টিকা প্রস্তুতির সামগ্রী রপ্তানিতে কঠোর সরকারী বিধিনিষেধ (Embargo) ছিল, সেইসময় অদর পুনাওয়ালা পৃথিবীজুড়ে সবার জন্য টিকাকরণের দাবীতে সোচ্চার ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীগুলির সাথে জূড়ে ছিলেন। ব্র্যান্ডেড টিকার আড়ালে বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি মানুষের জীবনদায়ী ওষুধের বিনিময়ে বিপুল মুনাফা করছে – তখন তিনি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সুর চড়ান। এখন সেরাম ইন্সটিটিউটপ্রতি বছর ১.৫ বিলিয়ন ডোজ টিকা প্রস্তুত করতে সক্ষম এবং সেই হারে উৎপাদন করে তারা সেই টিকা ১৭০টি বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করছে। ২০২০ সালে ব্রিটিশ-স্যুইডিশ সংস্থা আস্ট্রজেনেকা’র সাথে তাদের চুক্তি হয় এবং সেই অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউট রয়্যালটির বিনিময়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণালব্ধ করোনার টিকা ভারতে প্রস্তুতির বরাত পায় যা কোভিশিল্ড নামে বাজারে আসে। বর্তমানে ভারতে করোনা সংক্রান্ত টিকার বাজারে এরাই ৯০ শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে। দুনিয়াজূড়ে টিকা বন্টনের (রপ্তানির) যে আন্তর্জাতিক চুক্তি কোভ্যাক্স নামে পরিচিত তার ভিত্তিতে এরা সারা পৃথিবীতে ২০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা রপ্তানি করবে। এর পরেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বিশ্বের বাজার দখল করে রাখছে বলে পুনাওয়ালা এই বছরের মার্চ মাস অবধি ভীষণরকম সরব ছিলেন।
শেষ অবধি আমেরিকায় টিকার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারী বিধিনিষেধ (Embargo) প্রত্যাহৃত হয়। ততদিনে সমস্ত গনমাধ্যমে পুনাওয়ালা’কে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক মহান ব্যক্তি হিসাবে প্রচার করা শুরু হয়ে গেছে – কিন্তু তখনও কেউই বুঝতে পারেনি (!) পুনাওয়ালার এমন প্রতিবাদী আচরণের কারন মানবিক ন্যায্যতা নয় বরং তার লক্ষ্য একশো আশি ডিগ্রি বিপরীত। মার্চ মাসে যখন আমেরিকা কেন কাঁচামাল রপ্তানি করছেনা বলে চিৎকার করে পুনাওয়ালা প্রায় গলা চিরে ফেলছিলেন তার অনেক আগেই এবছরের জানুয়ারি মাসে সেরাম ইন্সটিটিউট প্রতিদিন ৫০০০ ডোজ টিকা উৎপাদনে সক্ষম ছিল! তবে পুনাওয়ালার এহেন আচরণের এর কারন কি? ভারতীয়দের টিকা না পাওয়ার ভয়াবহ অবস্থার পিছনে আমেরিকার বিধিনিষেধ আদৌ দায়ী না, ঐ বাড়তি কাঁচামাল সম্পর্কে পুনাওয়ালা সোচ্চার ছিলেন কারন দিন প্রতি উৎপাদনের হার এবং গোটা পৃথিবীতে সেই উৎপাদিত টিকা চড়া দামে রপ্তানি করে মুনাফা লুটে নিতে সেরাম ইন্সটিটিউট আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থার তুলানায় পিছিয়ে পড়ছিল। আমেরিকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হতেই মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্সের সাথে চুক্তি করে সেরাম ইন্সটিটিউট ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়া টিকার পাশাপাশি আরেকটি নতুন টিকার উৎপাদন শুরু করে।
এই সময় পুনাওয়ালাকে “ভ্যাকসিন প্রিন্স” হিসাবে আখ্যায়িত করা শুরু হয় এবং অ্যাস্ট্রজেনেকার সাথে চুক্তিমত সেরাম সারা পৃথিবীতে টিকা রপ্তানির যে বরাত পায় তাকে তুলে ধরা হয় “করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানবতার সুরক্ষায় এক পদক্ষেপ” বলে – অথচ তার কর্মসূচি আগাগোড়াই টিকার বিনিময়ে বিপুল মুনাফা লুটের প্রতিযোগিতায় সবার আগে থাকা ব্যতিত কিছুই ছিল না। সেই লক্ষ্যেই সেরাম ইন্সটিটিউট টিকা প্রস্তুত করেছে – বাজারে চড়া দামের জন্য যোগান বাড়ায় নি অথচ যথেষ্ট হারে উৎপাদন চালিয়ে গেছে! একটি সংবাদসংস্থার প্রশ্নের উত্তরে পুনাওয়ালা নিজেই জানিয়েছেন “এখনো অবধি আমরা ১৬৫টি দেশে বাণিজ্য করতে পারছি, ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারেও আমরা নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে চাই - এই দেশগুলির বাজারে বড় বড় সংস্থাগুলি এতদিন নিজেদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব কায়েম করে রেখেছিল”। এই জন্যই যখন পুনাওয়ালা প্রতিবাদী শিবিরের হয়ে আমেরিকার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন ঠিক তখনই পূর্বতন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথেও তিনি বহুবার কথা বলেন এবং যাচ্ছেতাই যেসব নিয়মের ফাঁসে আটকে সেরাম আমেরিকার বাজারে ব্যবসা করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সেগুলি খারিজ করার বিষয়ে তাকে রাজী করাতেও বারংবার চেষ্টা করেছেন। ঐ সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে সেরামের প্রস্তুত করা টিকা কোভিশিল্ড প্রতি ডোজ পিছু ১০ ডলারে সওদা হলেও আমেরিকান সংস্থাসমূহ যেমন ফাইজার, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের সাথে তারা প্রতিযোগিতায় আসবে এমনকি বিভিন্ন ছোটখাটো সংস্থাগুলিকেও তাদের উৎপাদিত টিকার বাজারমূল্য কমাতে বাধ্য করতে পারবে। ফলে একইসাথে বাজারের দুই মেরুতেই তারা (সেরাম) হয়ে উঠবে শক্তিশালী – একদিকে বৃহৎ সংস্থাগুলির সামনেও তারা প্রবল প্রতিদ্বন্ধি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে আরেকদিকে ক্ষুদ্র সংস্থাগুলিকে হয় তারা (সেরাম) গিলে খাবে নয়তো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য করবে।
এই সমস্ত বিশাল
লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকার সাথেই পুনাওয়ালা আরেকটি ছোট কাজ করেছেন। নিজের দেশে
মোদী সরকারের নীতিতে বলিয়ান হয়ে যাতে অন্য কোনও সংস্থা করোনার টিকা প্রস্তুত করে ভারতের
বাজারে যোগান না দিতে পারে সেই বন্দোবস্তে তার ভুল হয় নি। ভারতে টিকার জন্য
হাহাকার কোনও দুর্যোগ নয় – আসলে সরকারী বদান্যতায় মুনাফা লুটের যন্ত্র হতে বেরিয়ে
আসা আবর্জনা (Waste Product)।
ভারতে ব্যবহার হচ্ছে এমন আরেকটি টিকার নাম কোভ্যাক্সিন। এই টিকার গবেষণা এবং উৎপাদনে ভারত সরকার আর্থিক সংস্থান দিয়েছে। টিকা প্রস্তুত করেছে হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক সংস্থাটি। এই সংস্থার কর্ণধার ডঃ কৃষ্ণ এল্লা দাবী করেছিলেন তাদের (ভারত বায়োটেক) উৎপাদিত ভ্যাকসিনের দাম এক বোতল পানীয় জলের থেকেও কম হবে – এখন সেই কোভ্যাক্সিন রাজ্যগুলিকে ডোজ প্রতি ৫.৪০ ডলারে কিনতে হচ্ছে এবং বেসরকারি হাসপাতালে এক ডোজ এই টিকার মূল্য প্রায় ১৬ ডলারের কাছাকাছি। কোভিশিল্ডের উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমনটা বড় সংস্থার পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ ছিল, কোভ্যাক্সিনের উপরে এমন কোনও বাধ্যতা খাটেনি। তা সত্বেও যতদিন না কেন্দ্রীয় সরকার ভারত বায়োটেককে কোভ্যাক্সিন উৎপাদনে একমাত্র স্বত্বাধিকারী বলে ঘোষণা করেছে ততদিন অবধি তারা অন্য কোনও সংস্থাকে এই টিকা উৎপাদন করতে দেয় নি। বাজারে টিকার চাহিদা ক্রমশ বেড়েছে – খোলাবাজার এবং কালোবাজার দুই ক্ষেত্রেই টিকার দাম বহুগুণ বেড়ে গেছে। এইটুকু বুঝতে কোনও অসুবিধা নেই কৃষ্ণ এল্লা’র উদ্দেশ্য ছিল লাগামহীন মুনাফা লুটে নেওয়া – দেশসেবা কিংবা মানবসেবা কোনটাই নয়।
এতকিছু না জেনেও মহামারীর সময়ে সরকারী অর্থে (অর্থাৎ জনগণের টাকায়) উৎপাদিত টিকা কেন আমাদের দেশে মানুষকে এত বেশি দাম দিয়ে টিকা কিনতে হবে এই প্রশ্নে অদর পুনাওয়ালার উত্তরই সবকিছু স্পষ্ট করে দেয় – অত্যন্ত সহজ ভাষায় তিনি বলেছেন “যখন বাজারে চাহিদা বিশাল কিন্তু যোগান খুবই কম তখন পণ্যের দাম তো বাড়বেই”।
তাই ঘুরেফিরে অর্থনীতির একটি পুরানো সমস্যা আরেকবার আমাদের সামনে এসেই যায় – উৎপাদনের চরিত্র সামাজিক হলেও উৎপাদিত পণ্যের মালিকানা ব্যাক্তিগত।
এই গোটা ঘটনায় দেশের সরকার কিভাবে জড়িত? মোদী সরকার এই হাহাকারের দায় কখনোই এড়িয়ে যেতে পারে না কারন যে “খোলাবাজারের” উদারবাদী নীতিতে আমাদের দেশে টিকার উৎপাদন সম্পাদিত হয়েছে তাতে এমনটাই ছিল অবশ্যম্ভাবী। জনগণের টাকায় টিকার গবেষণা চলেছে অথচ যখন প্রয়োজন এলো সেই গবেষণালব্ধ টিকা হয়ে গেল বেসরকারি মালিকানাধীন পণ্য! আর কে না জানে পণ্য উৎপাদন এবং তার মূল্য নির্ধারণের আগাগোড়া সবটাই অমানবিক! সরকারের ভূমিকা এখানেই প্রাসঙ্গিক ছিল – সর্বজনীন টিকাকরণের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল যা মোদী সরকার দেয়নি, তাদের দুর্যোগ মোকাবিলার কোনও আগাম পরিকল্পনাই ছিল না। বরং তারা সবসময় করোনার বিপদকে কম করে দেখাতে চেয়েছে, নিজেরাই অতি সংক্রামক জনসমাবেশের অনুমতি অবধি দিয়েছে। ভারতে ধান্দাবাজ পুঁজি (Crony Capital) যাতে মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা লুট করতে পারে কার্যত মোদী সরকার সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। এখানেই এই সরকারের রাজনৈতিক এবং আরও নির্দিষ্ট করে বললে শ্রেণী পরিচিতির মুখোশ খুলে যায়। তারা জনগণের ভোটে জিতে এসে জনগণের কথা ভুলে গিয়ে “জীবনের চেয়ে মুনাফা বড়” (Profit Over Life) নীতিকে প্রণয়ন করেছেন – মুনাফার লোভে লালায়িত পুঁজিকে লুটে নেবার রাস্তা দেখিয়েছেন শুধু তাই নয় লুটের সেই কম্মোটি যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে সেই ভরসা যুগিয়েছেন। জেনেশুনে সংকট তৈরি হতে দেওয়া হয়েছে যাতে সংকটমোচনের বাজারমূল্য বেড়ে যায়। বর্তমানে ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি টিকা কিনতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে – বলা ভাল তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং দুই ক্ষেত্রেই যা খরচ হচ্ছে বা হবে তা জনগণের টাকা। একদিকে চড়া দামে টিকা আরেকদিকে কোটি কোটি নিরন্ন, অভুক্ত, অর্ধভুক্ত জনগন যাদের সংক্রামিত হলে চিকিৎসা খরিদ করার সামর্থ্য নেই, মাথার উপরে ছাদ নেই, রোজগার নেই, কাজ পাওয়ার সুযোগ অবধি নেই (এসব নেই কারন সরকার লকডাউন ঘোষণা করায় তারা কাজ হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছেন – পায়ে হেঁটে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য পেরিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরতে হয়েছে, কেউ সেই রাস্তাতেই প্রাণ হারিয়েছেন) অথচ বেঁচে থাকার অধিকারটুকু রয়েছে!
সেই বেঁচে থাকার অধিকারের জোরেই মোদী সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে, চোখে চোখ রেখে – তাদের বুঝিয়ে দেবার সময় এসেছে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধি হয়ে দেশ পরিচালনা করে ঠিকই কিন্তু জনগন হিসাবে কারা সুখেস্বাচ্ছন্দে রয়ে যাবেন আর কারা দূর্দশাপীড়িত হয়ে মুছে যাবেন তা নির্বাচনের অধিকার কোনও সরকারের থাকে না।
ওয়েবডেস্কের পক্ষেঃ সৌভিক ঘোষ
তথ্যসুত্রঃ আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রতিবেদন, ভারত সরকারের ঘোষণাসমূহ, দ্য ইন্টেরসেপ্ট ডট কম