শান্তনু দে
অক্টোবর বিপ্লব। এই গ্রহের প্রথম সর্বহারা রাষ্ট্র। এই প্রথম, পুঁজিবাদের একটি সুনির্দিষ্ট বিকল্প হিসাবে বিশ্ব ইতিহাসের অ্যাজেন্ডায় সমাজতন্ত্র।
অক্টোবর বিপ্লব। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তর। শোষণ-ভিত্তিক সমাজের অবসান। পুঁজি ও মুনাফার স্বার্থে নয়, শোষিত জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্র— সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে তার প্রথম বাস্তব প্রতিফলন।
অক্টোবর বিপ্লব। এক নতুন বিশ্বের অগ্রদূত। একটি নতুন যুগের সূচনা।
কেন? এর আগে আঠারো বা উনিশ শতকে অনেক বিপ্লব হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে সামন্ত রাজাদের উৎখাতের লক্ষ্যে। বুর্জোয়া বিপ্লব। যেমন ছিল ফরাসী বিপ্লব। একটি ধ্রুপদী বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। তারপরে বিশ শতকে অক্টোবর বিপ্লব। তার আগে প্যারি কমিউন। সর্বহারাদের প্রথম ক্ষমতা দখল ও একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রচেষ্টা। যদিও তা ছিল স্বল্পায়ু। তবে ছিল অক্টোবর বিপ্লবের পূর্বসূরী।
কেন অক্টোবর বিপ্লব নতুন বিশ্বের অগ্রদূত?
কারণ, অক্টোবর বিপ্লব পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণে প্রথম মাইলফলক। এই প্রথম একটি বিপ্লব করল শ্রমিক শ্রেণি। এই প্রথম একটি বিপ্লব হলো, যার নেতৃত্ব শ্রমিক শ্রেণি।
কেবল জারের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল না এই বিপ্লব। এই বিপ্লব ছিল একটি নতুন ধরনের বিপ্লবের আগমন বার্তা: সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, পুঁজিবাদ-বিরোধী এবং চরিত্রের দিক থেকে সমাজতান্ত্রিক। যার ছিল বিশ্বজোড়া তাৎপর্য। লেনিন এবং বলশেভিকরা রাশিয়ার বিপ্লবকে বিশুদ্ধ ‘জাতীয়’ পরিসরে দেখেননি। দেখেছিলেন বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্বসূরী হিসাবে।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপার সম্ভাবনাকে দেখাল এই বিপ্লব। এই বিপ্লব দেখাল তার অভাবনীয় সাফল্যকে। এই প্রথম, সমস্ত মানুষের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু— খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ, বস্ত্র, বাসস্থানের নিশ্চয়তা। শিল্প ও কৃষিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি।
বিপ্লবের সময় কতটা পিছিয়ে ছিল রাশিয়া, আজ কল্পনা করাও কঠিন। ৮০ শতাংশ রুশই ছিলেন নিরক্ষর। উচ্চশিক্ষার জন্য সাকুল্যে ৯০টি প্রতিষ্ঠান। টেনেটুনে ১,১২,০০০ ছাত্র। মাত্র দু’দশকের মধ্যে নিরক্ষরতার অবসান। ১৯৪১, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ৮০০। ছাত্র সংখ্যা ৬,৬৭,০০০। বেকারির অবসান। ঘরের টুকিটাকি কাজের বন্দি জীবন থেকে মহিলাদের মুক্তি। প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা।
গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের আলো। এইচ জি ওয়েলসের মতো মানুষও ভ্লাদিমির লেনিনের ‘পাগলামি’ দেখে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘ক্রেমলিনের স্বপ্নদর্শী’। দশ বছর পর সেই ওয়েলসই নিজে দেখেছেন গোটা সোভিয়েত ইউনিয়ন উজ্জ্বল আলোয় হাসছে। সাত পুরুষের অন্ধকার তাড়িয়ে ঝলমল করছে বিদ্যুতের আলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম দেশ, যেখানে সুনিশ্চিত করা হয় কাজের অধিকার। দিনে সর্বোচ্চ ৮-ঘণ্টা। সবেতন ছুটি। পুরুষ- মহিলার সমান অধিকার। কী বাড়িতে, কী বাড়ির বাইরে সমাজে, কী কর্মক্ষেত্রে। মহিলাদের জন্য মাতৃত্বকালীন সুবিধার অধিকার। সবার জন্য আবাসনের অধিকার। বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। সর্বজনীন বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা ও শিক্ষার অধিকার।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তাক লাগিয়ে দেওয়া অগ্রগতি। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। স্পুটনিক। মহাকাশে প্রথম মানুষ। যৌথ খামারের এক ছুতোরকর্মীর সন্তান। ইউরি গ্যাগরিন।
১৯১৭ থেকে দু’দশক। অল্প সময়ের মধ্যে দুরন্ত অগ্রগতি। মনে রাখতে হবে মাঝে ১৯৩০। বিশ্বজুডে ভয়াবহ মন্দা। ঘটনা হলো এই মন্দা কিন্তু ছুঁতে পারেনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে। এবং এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পরিকল্পিত অর্থনীতির সাফল্য। দু’টি ব্যবস্থার ভিন্নতার অনিবার্য প্রতিফলন।
মন্দা শুরুর অনেক আগে ১৯২৫। বলশেভিক পার্টির চতুর্দশ কংগ্রেস। লেনিন নেই। স্তালিন বলছেন: পুঁজিবাদী দেশগুলি আমাদের চেয়ে ৫০-১০০ বছর এগিয়ে। ওদেরকে যদি ধরতে হয়, তাহলে আমাদেরকে ধরতে হবে ১০ বছরের মধ্যে। আর যদি আমরা ১০ বছরের মধ্যে ধরতে না পারি, তাহলে ওরা আমাদের গুঁডিয়ে দেবে।
আর তিরিশের মন্দা দেখে স্তালিন বলছেন, দ্যাখো, দ্যাখো পুঁজিবাদের সঙ্কটকে। দ্যাখো ওদের কী অবস্থা। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মাঠ-খেত কাদায় ভরা। পাখি উড়তে গিয়ে খেতে পড়ে গিয়েছে। স্তালিন বলছেন, ওই কাদায় আটকে পড়া পাখির মতো সঙ্কটগ্রস্ত পুঁজিবাদের অবস্থা। লেজ তুলতে গিয়ে কাদায় আটকে যাচ্ছে ঠোঁট। আর ঠোঁট তুলতে গিয়ে লেজ।
ওই সময়েই (১৯২৮) প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা। যে ধাঁচ আমরাও পরে নিয়েছিলাম।
গোটা দুনিয়ায় হিটলার এগোচ্ছে। তখন কে কোথায় ছিল? আড়াই কোটি রুশ জনগণ, লালফৌজের জীবনদান। স্তালিনের উদাত্ত ডাক, ভলগার এপারে এক ইঞ্চিও জমি নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ছিল শুধু একটিই সমাজতান্ত্রিক দেশ।
শুধু সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বদলে গেল চেহারা। পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ নিল সমাজতন্ত্রের পথ। তার রেশ ধরে উত্তর ভিয়েতনাম, গণতান্ত্রিক কোরিয়া, শেষে চীনের আকাশে লাল তারা। সবশেষে ১৯৫৯, কিউবার বিপ্লব। গোটাটা মিলিয়ে সমাজতান্ত্রিক শিবির।
একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ সমাজতন্ত্রের পথ গ্রহণ করে গড়ে তুলছেন নতুন জীবন।
এই গ্রহের যেখানে সূর্যের আলো, সেখানেই লাল পতাকা। আর সেখানেই লেনিন। খেতে কারখানায় হাটে বন্দরে বস্তিতে— যেখানে মানুষ, সেখানেই লাল পতাকা। সেখানেই লেনিন। যেখানে মুক্তির যুদ্ধ সেখানেই কমরেড লেনিন। এমনকি হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পর্যন্ত উড়েছে লাল পতাকা। ইতিহাস জানে। আর জানেন জুলিয়াস ফুচিক। যিনি ফ্যাসিস্ত কারাগারে মে’দিন পালনের সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন।
১৯৯১। সোভিয়েতের ভাঙন।
একথা ঠিক, সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র নির্মাণের শেষদিকে দেখা দিয়েছিল গুরুতর ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিকৃতি। উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ রহিত হচ্ছিল। প্রকট হচ্ছিল বন্টনের সমস্যা। ঘাটতি ছিল সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের অনুশীলনে। আবার এও ঠিক, একদিনে ভেঙে পড়েনি মস্কো।
গত দশকের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে রয়েছে দু’টি ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’: একটি অক্টোবরের দিনগুলি, যার বর্ণনা রয়েছে ওই শিরোনামে লেখা জন রীডের বইয়ে।
আরেকটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেস (১৪-২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬)। দু’টি ঘটনাই আচমকা এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল ‘আগে’ এবং ‘পরের’ মধ্যে... সহজ করে বললে, অক্টোবর বিপ্লব তৈরি করেছিল একটি বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন, যাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বিংশতিতম কংগ্রেস। বলেছেন এরিক হবসবম।
রেগান বললেন: রাষ্ট্র কোনও সমাধান নয়। রাষ্ট্র হলো সমস্যা। মানে সব দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রের কাঁধ থেকে ঝেডে ফেল। থ্যাচার বললেন: দেয়ার ইজ নো অলটারনেটিভ। পুঁজিবাদের কোনও বিকল্প নেই। পুঁজিবাদই সারসত্য। ধ্রুবসত্য। ফুকুয়ামা বললেন ইতিহাসের অবসান। পুঁজির সঙ্গে শ্রমের দ্বন্দ্বের অবসান। বুর্জোয়া ইতিহাসবিদরা বলতে শুরু করলেন অক্টোবর বিপ্লব, সমাজতন্ত্র ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।
একদিকে এই প্রচার। অন্যদিকে প্রচার শুরু হলো অক্টোবর বিপ্লব কোনও বিপ্লব ছিল না। ওটা ছিল অভ্যুত্থান। মানে কিছু সেনা জেনারেলের ষড়যন্ত্র। নিছক সরকার হটানো। লেনিন ছিলেন তাঁদের হোতা। মানে কী? বলশেভিক পার্টির কমরেডরা ষড়যন্ত্রী? লেনিন স্তালিন ষড়যন্ত্রী?
ঘটনা কী? অক্টোবর বিপ্লব মানে গণবিপ্লব। কারা ছিলেন লড়াইয়ে? শ্রমজীবীরা। কারা ছিলেন নেতৃত্বে? শ্রমিকশ্রেণি। আর কারা? কৃষকরা। সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটি অংশ। সেই সেনাবাহিনী কারা? কৃষক-খেতমজুর থেকে আসা জওয়ানরা।
অন্যদিকে চললো সমাজতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদকে এক করে দেখানোর চেষ্টা। একই পঙতিতে নিয়ে আসার চেষ্টা। সমগোত্রীয় দেখানো। ২০০৯। সম্ভবত এপ্রিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটা প্রস্তাব নেয় তাতে বলা হয় সাম্যবাদ আর ফ্যাসিবাদ একই উত্তরাধিকারের অংশ। ১২ আগস্ট দিনটিকে ঘোষণা করা হয় হিটলার আর স্তালিনের সময় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ দিবস হিসবে!
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের পরে অনেকেই মনে করেছিলেন এবারে কমিউনিস্ট পার্টি চলে যাবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। কিন্তু, তা হয়নি। বাড়ছে কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা আর প্রভাব।
দু’দশক যেতে না যেতেই খসে পড়েছে ‘অ-বিকল্প’ বিশ্ব পুঁজিবাদের বাহারি পলেস্তারা। শতাব্দী প্রাচীন সংস্থা লেম্যান বোল্ড। ওয়ালস্ট্রিটে বেআব্রু পুঁজিবাদ। সংকটের শুরু। এখনও চলছে।
আজ কেমন আছে রাশিয়া?
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো-টুকরো। রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরজিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, আজারবাইজান, মলদোভা, আর্মেনিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া।
সোভিয়েত সাধারণতন্ত্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম রাশিয়া আজ অন্যতম সমৃদ্ধ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে। ইউক্রেনের যুদ্ধ আসলেই সোভিয়েত বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ পরিণতি।
অথচ, সোভিয়েত পতনের এক বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব জেমস বেকার রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’, যদি মস্কো দুই জার্মানির মিলনে সম্মতি দেয়। পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও নয় অর্থ: পূর্ব বার্লিনের পূর্বে ‘এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’ ন্যাটো।
গর্বাচ্যভ সেই চুক্তিতে সহমত হয়েছিলেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন তার কথা রাখেনি।
ন্যাটোকে ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে তাই তারা তাকে আরও পূর্বদিকে সম্প্রসারিত করতে শুরু করে। ১৯৯০ থেকে ন্যাটো আজ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সদস্য সংখ্যা ষোল থেকে বেড়ে এখন ৩০। পূর্ব ইউরোপ, বলকান ছাড়িয়ে এমনকি সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে আফ্রিকায়। এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায়।
আবার এই রাশিয়া সেই রাশিয়া না!
সমাজতন্ত্র থেকে ধান্দার ধনতন্ত্রে! ২০১৬, দ্য ইকনমিস্ট পত্রিকার ‘ধান্দার ধনতন্ত্রের’ সূচকে এক নম্বরে রাশিয়া। ‘স্বাভাবিক’ বাজার অর্থনীতিও রূপায়িত হয়নি রাশিয়ায়। বরং, পরিণত হয়েছে এক অদ্ভূতুড়ে ধান্দার-রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদে। বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোশেফ স্টিগলিৎজ। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে অসম সমাজ! নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ, ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ গ্রন্থের লেখক টমাস পিকেটি দেখিয়েছেন রাশিয়াতে আবার ফিরে এসেছে জার-জমানা!
সেদিন সবাই আশা করেছিলেন এবারে ন্যাটোকে গুটিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, যে উদ্দেশ্যে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়নই আর নেই। তাছাড়া, ন্যাটোর মোকাবিলার লক্ষ্যে যে ওয়ারশ চুক্তি হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিপর্যয়ের পর তারই যখন অবসান হয়েছে, তখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমানোর চুক্তিও সই হয়ে গিয়েছে। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবনা ছিল ন্যাটোর আর কোনও প্রয়োজন নেই।
ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে তিনদশক। তবু ন্যাটো কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে? ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে কেন সে নিজেকে সম্প্রসারিত করে চলেছে?
আজ সোভিয়েত নেই। তাহলে শত্রু কে? আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চায় বিশ্বজোড়া আধিপত্য।
রুশ জনগণ এখন ফিরতে চান সোভিয়েত ইউনিয়নে, সমাজতন্ত্রে। গতবছর লেভাদা সেন্টারের জনমত সমীক্ষায় প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই (৭৫ শতাংশ) বলেছেন, দেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে ভালো সময় ছিল সোভিয়েত যুগ’!
জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্তালিন। এবছর লেভাদা সেন্টারের জনমত সমীক্ষায় ৫৬ শতাংশই তাঁদের ‘মহান নেতা’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্তালিনকে। পরে লেনিন, পুশকিন। দুমায় কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় বৃহওম দল।
গতবছর সেপ্টেম্বরে রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ দুমার নির্বাচনে তাক লাগিয়ে দেওয়া সাফল্য পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। রিগিং, অনলাইন ভোটে ব্যাপক কারচুপি সত্ত্বেও সমর্থনের হার সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮.৯৩ শতাংশ। আসন সংখ্যা পনের থেকে বেড়ে এখন ৫৭। সাইবেরিয়া ও দূর প্রাচ্যের একাধিক প্রদেশে জিতেছেন কমিউনিস্টরা। লেনিনের জন্মস্থান উলিয়ানোভস্কেও জিতেছেন কমিউনিস্টরা। বাড়ছে কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা আর প্রভাব। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা এখন ১ লক্ষ ৬২ হাজারের বেশি। রয়েছে ৮১-টি প্রাদেশিক কমিটি। পার্টি শাখার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।
এখনও বিপ্লবের দিনে আমাজন থেকে আন্দামান সাজে লাল ঝান্ডায়। এই শপথে: একদিন ‘প্রতি মাস হবে অক্টোবর, প্রতিদিন প্রত্যেকে লেনিন।’