cpim logo

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভার প্রেস বিবৃতি

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী),পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভা হয় ভার্চুয়াল। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সভায় অংশ নেন।
রাজ্য কমিটির সভায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে পার্টির কর্মসূচির পর্যালোচনা হয়। রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র জানান, পার্টির কর্মতৎপরতা বেড়েছে। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন পার্টি ও গণসংগঠনের কর্মীরা। একই সঙ্গে পার্টিকে সাংগঠনিক ভাবে আরো সংহত করার কাজে গুরুত্ব দিতে হবে। বুথভিত্তিক সংগঠনকে প্রস্তুত করতে হবে। এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। পার্টির স্বাধীন উদ্যোগ, বামপন্থীদের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি এবং রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমবেত করেই আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করতে হবে। রাজ্যে বিশেষ করে খাদ্য ও কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার জমি তৈরি হচ্ছে। রাজ্য সম্পাদক সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য ও প্রচার পৌঁছে দেবার কাজে আরো গুরুত্ব দেবার কথাও বলেন।
রাজ্য কমিটির সদস্যরা জানান, সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুতর দুর্দশা নেমে এসেছে। মহামারীর প্রকোপ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা যেমন প্রকট হচ্ছে তেমনই কাজের আকাল দেখা দিয়েছে। জীবিকার সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। বিজেপি তার সুযোগ নিয়ে মেরুকরণের পথে হাঁটতে চাইছে। এই অবস্থায় পার্টির সাম্প্রতিক সময়ের কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গিয়েছে। সর্বভারতীয় প্রতিবাদের অঙ্গ হিসেবে কর্মসূচিতে ভালো অংশের মানুষকে সমবেত করা গেছে। স্থানীয় স্তরে শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, মহামারী মোকাবিলায় ধনতন্ত্রের অক্ষমতা প্রকট হয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। চীন বাদে সমস্ত দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সঙ্কোচন হচ্ছে। ভারতে এই সঙ্কোচন বিরাট। এই পরিস্থিতিতে চার প্রধান সামাজিক দ্বন্দ্বই তীব্রতর হচ্ছে। জনগণের বিরুদ্ধে শাসক শ্রেণীর আক্রমণ তীব্রতর হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রাম গড়ে তোলাই দুনিয়ার সব দেশের কমিউনিস্টদের কাজ।
ইয়েচুরি বলেন, আত্মনির্ভর ভারতের নামে আত্মসমর্পণের ভারত তৈরি করা হচ্ছে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেসরকারী হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারত হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেশি-বিদেশি পুঁজির মালিকদের মুনাফা সর্বোচ্চকরণের খেলার মাঠ। শ্রেণী আক্রমণ তীব্রতর হচ্ছে। এর সঙ্গেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীব্র করা হচ্ছে। সরকার সমস্ত ক্ষেত্রকে কুক্ষিগত করছে। স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। স্বাধীন বিচারবিভাগের বদলে সরকারের বিচারবিভাগ গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। সংসদ ডাকা হয়েছে অথচ প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকবে না। বিরোধীদের প্রশ্ন তোলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এবারের সংসদ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বিপজ্জনক কয়েকটি অর্ডিন্যান্স পাস করানোর জন্য। সংবিধানের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্যই হল জনগণের সার্বভৌমত্ব। সেটিকেই নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে ইউএপিএ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। আরএসএস-র কর্মসূচিই হল সম্পূর্ণ অসহিষ্ণু ধর্মাশ্রয়ী ফ্যাসিস্তসুলভ রাষ্ট্র গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই তারা এগচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে কীভাবে তারা ধ্বংস করতে চায় তা সাম্প্রতিক জিএসটি ক্ষতিপূরণ অস্বীকারে ফের প্রমাণিত হয়েছে।
ইয়েচুরি বলেন, একই সঙ্গে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত মিত্রে পরিণত হচ্ছে। মার্কিন রণনীতির অংশ হয়ে যাচ্ছে। চীনকে ঘেরার নামে মার্কিন রণনীতির অংশ হিসাবে চতুষ্টয় বা কোয়াডের শরিক হচ্ছে ভারত। প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। ভারত-চীন সমস্যা সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেন, সর্বদলীয় সভায় সিপিআই(এম) আলোচনা ও কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছিল। এখন বিদেশমন্ত্রীও সেই কথা বলছেন। শান্তিপূর্ণ আলোচনাই একমাত্র পথ।
ইয়েচুরি বলেন, মহামারীর কারণে সতর্কতা মানতেই হবে। কিন্তু ভয়ের বাতাবরণে পক্ষঘাতগ্রস্ত পরিবেশ তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। এই পরিবেশ ভেঙে ফেলার একমাত্র উপায় জনগণের যন্ত্রণা নিয়ে শ্রেণী আন্দোলন গড়ে তোলা। আরএসএস-বিজেপি’র বিরুদ্ধে মতাদর্শগত সংগ্রাম সফল করতে হলেও জীবনজীবিকার লড়াই গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিক প্রশ্নে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। না হলে প্রান্তিক ও আক্রান্ত মানুষের মধ্যে দক্ষিণপন্থা তাদের জনভিত্তি তৈরি করার চেষ্টা করবে। এই লড়াই গড়ে তোলার সময়ে শুধু কেন্দ্রীয় বা রাজ্যস্তরের বিষয়ই নয়, এলাকার জনগণের সমস্যা নিয়ে লড়াই গড়ে তুলতে হবে।
ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি সরকারে থাকলে আরএসএস-র কর্মসূচি রূপায়ণ হবে। আশু লক্ষ্য বিজেপি-কে পরাস্ত করতে হবে। সেই কারণে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে সমবেত করার চেষ্টা করতে হবে। ইস্যুভিত্তিক লড়াইও গড়ে তুলতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে স্বাধীন, বামপন্থীদের সঙ্গে যৌথভাবে এবং ব্যাপকতম সম্ভব ঐক্য গড়ে তুলে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
এদিনের সভা থেকে বিকাশ ভট্টাচার্যকে রাজ্য কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন