Neoliberalism

জনকল্যাণ ও খয়রাতি প্রসঙ্গে (২য় পর্ব)

সৌভিক ঘোষ

কাজের সুরক্ষা, রোজগার এবং বুনিয়াদী পরিকাঠামো (খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি) সরকারী ব্যবস্থা মজবুত হলে শ্রমের বাজারে গরীব মানুষের দর কষাকষির জোর বেড়ে যায়। তখন যা ইচ্ছা মজুরি দেওয়া চলে না। তখন ইচ্ছামত ছাঁটাই করা যায় না। দুটাকার সামগ্রীকে চার টাকায় বেচা যায় না। চাহিদার সংকট মেটাতে না পারায় ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ ধ্বসে পড়ছে। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় পে-কমিশনের সুপারিশ ছিল ন্যুনতম মজুরির পরিমাণ হতে হবে মাসিক ১৮০০০ টাকা, যার সাথে যুক্ত হবে সময়োপযোগী ‘ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স’ যা মূল্যবৃদ্ধিজনিত সংকটের সমাধান করবে (প্রাপ্য ডিএ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনাম রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের মামলা এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক)। এটুকু জানলেই স্পষ্ট হয় দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ কি অবস্থায় দিন গুজরান করছেন। এমন অবস্থাতেও মোদী সরকার ভর্তুকি তুলে দিতে চায়, নিয়ন্ত্রণহীন করতে চায় খাদ্যসামগ্রীর দাম। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন কোভিড এবং লকডাউনের জন্য উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানের অবস্থা যখন বেহাল সেই অবস্থায় কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিপুল মুনাফা করেছে কি করে? এই প্রসঙ্গেই কর্পোরেট কর ছাড়ের বিষয়টি চলে আসে। উৎপাদন বন্ধ থাকার (আসলে বন্ধ রাখার) অজুহাতে কর্পোরেটদের ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার কর ছাড় দিয়েছে মোদী সরকার, একইসাথে মূল্যবৃদ্ধি এবং কাজ হারানোর হিসাবকে যুক্ত করলে বিপুল মুনাফার উৎস সন্ধানে সময় লাগে না। সাধারণভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে উৎপাদনকে দুটি ক্ষেত্রে ভাগ করা যায়, একটি শ্রমনিবিড় আরেকটি অপেক্ষাকৃত কম শ্রমনির্ভর। আমরা জানি উদ্বৃত্ত মুল্য তৈরি করে উৎপাদন খরচের পরিবর্তনশীল অংশটি অর্থাৎ মূলত মজুরি। তাহলে উৎপাদন বন্ধ থেকেও মুনাফার নামে হচ্ছেটা কি? এহেন বন্দোবস্তের জোরেই ভারতে শেষ দুবছরেই নতুন বিলিওনেয়ার তৈরি হয়েছে। আরও একটি বিষয় রয়েছে, অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় এমনসব উৎপাদন খরচের প্রাথমিক চাপটি থাকে মূলত স্থির পূঁজি (কাঁচামাল, মেশিন ইত্যাদি সহ পরিকাঠামো)-তে। অপেক্ষাকৃত কম বিনিয়োগ লাগে এমন উৎপাদনে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণই বেশি হয়। বাজারে যাবতীয় পণ্যেরই দাম নির্ধারিত হয় উৎপাদন খরচের সাথে গড় মুনাফা যুক্ত হয়ে। এই অবস্থায় উচ্চ মূল্যের বিনিয়োগ প্রয়োজন এমন শিল্পক্ষেত্রের তুলনায় শ্রমনিবিড় উৎপাদনে উদ্বৃত্ত সম্পদ তৈরি হয় অনেক বেশি কিন্তু গড় মুনাফা পণ্য নিরপেক্ষ বলে  উৎপাদন খরচের তারতম্যের জন্য দ্বিতীয় ধরনের পণ্যের (শ্রমনিবিড় উৎপাদন) বিক্রয়মুল্য হয়ে পড়ে কম।

একদিকে উৎপাদনের স্বাভাবিক সময়ে (লকডাউন পূর্ব) চুরি করা বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত মুল্য (অ্যাবসল্যুট সারপ্লাস) দখলে রইল, পরে লকডাউনের কারনে উৎপাদন বন্ধ রেখে মুজুরির খরচ বাঁচিয়ে চড়া দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটে নেওয়া হল। ছোটখাটো সংস্থাগুলি (স্বনিযুক্তি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্র) যেখানে পাঁচজনের বেশি কর্মচারী নেই, মালিক নিজেই শ্রমিক হিসাবে কর্মরত - বাজারের নিয়মের সাথে পাল্লা দিতে পারেন না, তাদের গিলে খেয়ে নেয় বড় কর্পোরেটরা। সুতরাং বাজারী গণতন্ত্রে যতই সমান সুযোগ বলে গলা ফাটিয়ে ফেলা হোক না কেন আখেরে এই ব্যবস্থায় ক্রমাগত পূঁজির কেন্দ্রীভবন ঘটে, বাজার দখল করে কতিপয় সংস্থা যারা ‘আলপিন টু এলিফ্যান্ট’ সবকিছুই ‘সাপ্লাই’ করে। দেশের প্রায় ৯৪শতাংশ শ্রমজীবী জনসাধারণ অসংগঠিত ক্ষেত্রে মাসিক ১০ হাজার টাকারও কম রোজগারে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, ঠিক তখনই বিকেন্দ্রিত উৎপাদন কৌশলের (থার্ড পার্টি সাপ্লায়ার, কন্ট্র্যাক্ট বেইজড প্রোডাকশন এবং হাল ফ্যাশনের ওয়ার্ক ফর্ম হোম) মাধ্যমে সারা দেশের যাবতীয় ক্ষুদ্র উৎপাদনকে নিজেদের দখলে নিয়ে আসছে কর্পোরেটরা। অর্থাৎ সরাসরি নির্দিষ্ট কোন মালিকের ছাতার তলায় কাজ না করেও শ্রেণি হিসাবে ভারতের শ্রমিকরা চরমভাবে শোষিত হচ্ছেন– কর্পোরেট পূঁজির জাঁতাকলে। নতুন নাম রেখে বলা হচ্ছে ‘গিগ ইকোনমি’ – আসলে লুটেরা পুঁজিবাদ। দুনিয়াজূড়ে অসাম্যের বর্তমান মূল্যমান অতীতে ঔপনিবেশিক জমানায় লুঠতরাজ চালিয়ে অর্জিত মুনাফার পর্যায়ে উন্নিত হয়েছে। যা চলছে তাকে গ্লোবাল ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্টে ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাস’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যারা বলছেন তাদের করের টাকায় খয়রাতি বন্ধ হোক তারা কি ভুলে গেলেন এই কিছুদিন হল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের কাজে গঠিত ট্রাস্টের তহবিলে জমা করা অনুদানের অর্থে করছাড়ের সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (CBDT)। তারা কি ভুলে গেলেন ঐ সময়েই দেশের আর্থিক সংকটের মোকাবিলা করতে স্বাধীনতার পর থেকেই যা কার্যকরী সেই প্রধানমন্ত্রী ত্রান তহবিলক ইচ্ছাকৃতভাবে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। কেন? কারণ সেই তহবিলের হিসাব ক্যাগ (CAG) দ্বারা নিরীক্ষিত (Audit) হত। কেন্দ্রীয় সরকারের তিনজন মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী সহ মোট চারজনকে নিয়ে PM Care's নামে আরেকটি তহবিল খোলা হল। সেই তহবিলে জনগণের পয়সাতেই বিপুল অর্থের যোগান দেওয়া হল- অথচ জনগণের দেওয়া সেই অর্থের হিসাব-নিকাশ করার এক্তিয়ার কোন সরকারি সংস্থার রইল না! কর্পোরেটদের বিপুল অংকের কর ছাড় দেওয়া ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে। আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক- কেউ বলতে পারেন, বাড়তি কর দেয় যারা তাদের জন্য বাড়তি সুযোগসুবিধা দেওয়া কেন অন্যায় হবে? অন্যায়, অবশ্যই অন্যায়। কারণ যে দেশে কর্পোরেটদের ৩৫০০০ কোটি টাকার মতো করছাড় দেওয়া হয় সেই দেশেই নেট ইনডায়রেক্ট ট্যাক্স (NIT) আদায় হয় ৯.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা (২০২০-২১ অর্থবর্ষের হিসাব)। এই কর শুধু বড়লোকেরা দেন না, সারা দেশের সমস্ত জনসাধারণ একসাথে জেনারেট করেন। যদি গোদা ভাবেও হিসাব করা হয় যে ভারতে বড়লোক ও শ্রমজীবীদের আনুপাতিক উপস্থিতি ৭০:৩০, তবে সরকারী ভর্তুকিতে কাদের অধিকার বেশি? অথচ এদেশেই করোনা সংক্রমনে কাজ হারানো গরীব পরিবারগুলি মাথার উপরে ছাদ পায় না, বিনামূল্যে জরুরী অক্সিজেন সিলিন্ডার পায় না, উপযুক্ত পরিমানে খাদ্য মেলে না তাদের, শিক্ষার সুযোগ পেতে নেট প্যাকেজ রিচার্জ করতে হয়।

এবছর তো সাড়ে বারো মিনিটে বাজেট পাশ করিয়ে নেওয়া হল। গত বছর সরকার কি বলেছিল? ২০২২-২৩ বাজেটে চারটি প্রধান (মানে কথা বলার মত) বিষয় ছিল-

১) স্বাধীনতার ৭৫ থেকে ১০০ বছর সময়কে ‘অমৃতকাল’ হিসাবে ঘোষণা, দেশের অর্থনীতিতে সমান্তরাল দুই ব্যবস্থা চালু করার নামে একদিকে পরিকাঠামো খাতে ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ আরেকদিকে তফশিলি জাতি, উপজাতি মানুষ সহ মহিলাদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে সার্বিক বাজেট। এহেন লক্ষ্যের আড়ালে রাজনীতি স্পষ্ট, খোলাখুলি কর্পোরেটদের হাতে আরও আরও বেশি করে সম্পদ তুলে দিয়ে জনগনের জন্য সরাসরি সরকারি ব্যয়বরাদ্দের দায় অস্বীকার করা।

২) অতিমারির ধাক্কা, আর্থিক পরিস্থিতির সার্বিক অবনমন, কর্মসংস্থান হ্রাস, সামগ্রিক চাহিদায় সংকোচন এবং ভয়াবহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও সারা পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে ৯.২ শতাংশ হারে। কোন অর্থনীতির সূত্রে এহেন অসাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছান যাবে তার অবশ্য সদুত্তর নেই, আছে শুধু নির্ভার দৃপ্ত ঘোষণা এবং সমানুপাতে বিজেপি সাংসদদের টেবিল চাপড়ানি। করোনা অতিমারির সময় জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয়ের দায় রাজ্যগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে মোদি সরকার, তাই আজ বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যোদ্ধার সম্পর্কিত ঘোষণা করলে চমকে উঠতে হয় বৈকি!

৩) দেশের আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে চাহিদার সংকোচন মোকাবিলা করতে আয়কর সীমার বাইরে থাকা পরিবারগুলিকে নগদ আর্থিক সাহায্যের দাবিকে বারে বারে অস্বীকার করা হয়েছে, অথচ উৎপাদনশীলতা বাড়ানোকে এই বাজেটে লক্ষ্য বলে ঘোষণা করা হল। মানুষের হাতে সামগ্রী কেনার মত যথেষ্ট অর্থ না থাকলে বাজারে যোগান বাড়লে কিভাবে সমস্যার সমাধান হবে কেউ জানে না। কৃষকদের ঐতিহাসিক আন্দোলনে পিছু হটেছে মোদি সরকার, কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা সত্ত্বেও বাজেটে উৎপাদিত ফসলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কে কিছু নেই, ফসল কেনায় সরকারি মান্ডি ব্যবস্থা সম্প্রসারণের কোন কথা নেই, এমনকি ক্ষুধার সমস্যা মেটাতে শক্তিশালি গনবন্টন ব্যবস্থা সম্পর্কেও কিছু নেই। শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে দুর্যোগের সময় বাড়তি সহায়তা দেওয়ার বদলে শ্রম কোড বাতিল সম্পর্কে কোন কথা নেই। এরই সাথে একটি ছোট তথ্য – আমাদের দেশের রাজস্ব ঘাটতি (Fiscal Deficit) ৬.৪ শতাংশ, বলা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে এই ঘাটতিকে ৪ শতাংশের নিচে নিয়ে যাওয়া হবে।

৪) দেশের যে কোন বিষয়কেই ডিজিটাইজড করার কথা ইদানিং খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এতদিন বিবিধ সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য আবেদন জানানো, স্ট্যাটাস রিপোর্ট জানা এবং অন্যান্য সরকারি কিংবা সরকার পোষিত পরিষেবা (যেমন ব্যাংকিং)-কে ই-প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা গেছে। এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী একটি গোটা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা করেছেন। সারা দেশে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় যখন বহু ছাত্র-ছাত্রী ডিজিটাল ডিভাইডের শিকার, তখন এই ঘোষণা সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবাহি যে এই কেন্দ্রীয় সরকার ডিজিটাল ডিভাইডকে আরও বেশি করে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারায় নিয়ে যাবে। দেশের শিল্পমহলের সাথে হাত মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে ঘোষণা হয়েছে, অর্থাৎ পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল যারা তাদের জন্য সস্তা দরে শ্রমিক হওয়াকেই দস্তুর করতে চাইছে সরকার – এই পরিকল্পনাই জাতীয় শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এই চারটি বিষয় ব্যতীত বাকি যা কিছু ঘোষণা সেইসব কিছুকে দুভাগে ভাগ করা যায়। এক যে সমস্ত বিষয়ে সাধারণ জনজীবনের কোন প্রত্যক্ষ নির্ভরতা নেই, যেমন কর্পোরেট সারচার্জ কমানো, বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবা, ড্রোন ব্যবহার করে স্টার্ট আপ, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, অ্যানিমেশনে টাস্ক ফোর্স, এক স্টেশন এক দ্রব্য কিংবা এক দেশ এক রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকভাগে রয়েছে এমনসব ঘোষণা যেগুলি সম্পর্কে জনগনের অবস্থা ঘর পোড়া গবাদি পশুর মতোই! নোট বাতিল, জিএসটি এবং অন্যান্য যেকোনো ঢক্কানিনাদে মোদী সরকার যখনই দেশের এবং দেশবাসীর কল্যাণের কথা বলেছে ফল হয়েছে বিপরীত। এই বাজেটেও পরবর্তী পাঁচ বছরে ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থান, প্রতিরক্ষায় দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদন বাড়ানো, ডিজিটাল কারেন্সির (ডিজিটাল রুপি) প্রচলন এধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য সমস্ত সমালোচনা ব্যতিরেকে একটি ঘোষণাকে সমর্থন করতেই হয়! ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশের জনগণ যাতে সহজে বিদেশ যাত্রা করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে আর কিছু না হোক অত্যাধুনিক চিপযুক্ত ই-পাসপোর্ট পরিষেবা চালু করছেন! আপনার না পোষালে টুক করে চলে যান- এই আর কি!

মোদী জমানায় যেভাবেই হোক না কেন মুনাফা থেকে অতি মুনাফা লুটের পথ পরিস্কার থাকায় তাদের বিবেচনায় সাম্প্রদায়িকতা, বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা এমনকি দাঙ্গা অবধি আলোচনার বিষয় না- কেননা উৎপাদনমুখী কোনোরকম চরিত্রই আধুনিক লগ্নী পুঁজির নেই। পণ্য উৎপাদন হোক বা না হোক, বাজারে চাহিদা থাকুক বা মন্দা বেড়ে চলুক- ‘ইধার কা পয়সা উধার’ করেই যদি দিনের শেষে সম্পদের পরিমাণ অনেকগুণ বাড়িয়ে নেওয়া যায় তবে রাস্তার আগুন অ্যাডভান্স লোণ কার্ভের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা কমায় না। যতই কারচুপি হোক না কেন, সবই তো আসলে মাথা পিছু আয়ের গড় মান বাড়িয়ে দেয়! হ্যাঁ, গোটা দেশে কারোর একটি পয়সা বেতন, মাইনে, ভাতা না বাড়লেও যদি শুধু একটি পরিবারের আয় কয়েকশোগুণ বেড়ে যায় তাহলেও মাথাপিছু গড় আয় বাড়ে! এবং তখনও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ‘বিকাশ’-র গপ্পো শুনিয়ে চলে।

আসলে সরকারের নামে আমাদের দেশে কি চলছে?

Concessions to corporates in return for political funding are the highlight of crony capitalism under the Modi government. During the last 7 years of this government, Rs.10.72 lakh crore of loans taken by its crony corporates have been written off. The consequent money power in the hands of the BJP is completely distorting a level playing field for all contestants to ensure free and fair elections.

[Paragraph: 2.81, 23rd Congress Political Resolution of CPI (M)]

আজকের ভারতে গরীব মানুষ যেটুকু সরকারী সাহায্য পায় সেসব কারোর দয়ার দান নয়। সেই আদায় এক দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল- গরীব শ্রমজীবী মানুষের ঘাম-রক্তের ইতিহাস। একে আরও আরও দুর্বল না করলে আগামী দিনে সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। তাই মানুষকে ক্রমাগত দেওয়ালের দিকে ঠেলে নিয়ে চলছে এই সরকার। সমস্যা একটাই, দেওয়ালে পিঠ থেকে গেলে আর পিছনো যায় না। তখন সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া মানুষের আর অন্য উপায় নেই- আরএসএস সেই অবস্থার কথা ইতিহাসে পড়েছে। তাই ইতিহাসের সিলেবাসটাই বদলে ফেলতে চাইছে। ভাড়াটে বুদ্ধির জোরে মানুষের ক্ষোভকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। এতে বিশেষ কাজ দেবে না। কারণ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার মতো কাজে ব্যস্ত রাখার সুযোগটুকুও এই সরকার দিতে পারে না। জনকল্যাণ রাষ্ট্রের দায় শুধু না, রাষ্ট্রের কর্তব্যও। রোজগার কেড়ে নিয়ে, জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়ে, পড়াশোনার সুযোগ না দিয়ে রাষ্ট্রীয় কল্যাণের উপরে নির্ভরশীল হতে বাধ্য করছে যে ব্যবস্থা তাকেই তার দায় স্বীকার করতে হয়। মালব্য অ্যান্ড কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা কি এটুকুও জানেন না? এসব তো আর যাই হোক অর্থনীতি নয়!

অর্থনীতি যে জানেন না সেকথা তো নিজেরাই প্রমাণ করে দিয়েছেন। নাহলে রাষ্ট্রকে দেয় করের টাকাকে কেউ ‘আমার পয়সা’ বলে?


শেয়ার করুন

উত্তর দিন