ELectoral Bond

Travails of a Chaukidar: Sinister Saga of Fraud and Deception

নীলোৎপল বসু

দেশের প্রধান মন্ত্রীর যাবতীয় নাটুকেপনার ধারাবাহিক বোঝা যদি সত্যিই কাউকে বইতে হয় তবে দেশবাসীরাই সে তালিকায় প্রথম। তারা যেন আঁস্তাকুড়, ওনার যখন যা ইচ্ছা সবই এদের মাথায় ছুঁড়ে দেন। জঞ্জাল নিক্ষেপের সাম্প্রতিক উদাহরণ কি? সম্প্রতি তিনি নিজেই নিজের সরকারের হয়ে বেজায় ঢাক পেটানো আরম্ভ করেছেন। এমন অভূতপূর্ব ‘বিধিসম্মত’ শাসনকাল নাকি আগে কখনো ভারত দেখেনি! তার আমল নাকি দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতার প্রতিমূর্তি। নিজেদের কাজকে মহিমান্বিত করতে যে শব্দবন্ধ তিনি ব্যবহার করেছেন তা হল চৌকিদার। সরকার নাকি ওয়াচ ডগের মতো জনসাধারণের স্বার্থরক্ষায় ব্রতী। একথা তো জানাই যে বাঁশের চাইতে কঞ্চি কিছুতেই ছোট হয়ে থাকতে পারে না। তাই উনি যতটা বলে থামলেন, আর এস এস বিজেপির ছোটখাটো নেতারা ব্যাপারটাকে সেখান থেকেই আরও ফোলাতে শুরু করলেন। সেই ফুঁ’র দমকে এখন বলা হচ্ছে যারাই এ সরকারের বিরোধী তাদের প্রত্যেকের ডিএনএ’তেই দুর্নীতির বীজ লুকিয়ে রয়েছে।

শেক্সপিয়র বলে যে একজন ছিলেন সেকথা কিছুতেই ভুলতে নেই! উনি তো সেই কবেই লিখে গেছেন এহেন বজ্র আঁটুনির ফলাফল সবশেষে ফস্কা গেরোই হয়! যত আওয়াজই ওরা তুলুক, যতই পেঁচিয়ে ধরুক আসলে তো ভিতরটা ফাঁপা! দেশের মানুষের সবার ব্যাংক একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া যে আষাঢ়ে গপ্পো, আদতে জুমলা, সরকারের দু নম্বর কর্তা অমিত শাহ নিজেই সেকথা বলে ফেলেছেন। স্বচ্ছতা খুঁজবেন? রাফালে চুক্তিতে নির্ধারিত দরদামের ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে ক্যাগকে ব্যবহার করা হয় সেকথা মনে রাখবেন। আরও আছে। পিএম কেয়ার্স ভোলেননি তো? সেই যাতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করা তহবিলকে অডিটের আওতার বাইরে রাখতে বেসরকারি ফান্ড বলে যুক্তি হাজির করা হল।

এমনই পরিস্থিতিতে এইবার যুক্ত হল নির্বাচনী বন্ড। কালো টাকার প্রসঙ্গে যে সরকার সবচেয়ে বেশি জোরে গলা ফাটাত দেখা গেল তারাই কর্পোরেটদের থেকে নেওয়া অর্থ সাহায্যের হিসাব লুকিয়ে রাখতে চাইছে। ব্যাংকের পরিষেবাকে ব্যবহার করার নাম করে নির্বাচনী বন্ডকে টাকা তোলার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আসলে ঘুরপথে কালো টাকাকে সাদা করে নেওয়ার বন্দোবস্ত। এমন কৌশলে নাম-ধাম লুকিয়ে কর্পোরেটরা বিজেপিকে অর্থসাহায্য করত, আর এরা সেই জোরে এই করব, সেই করব বলে হুংকার ছাড়তেন। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেল এই সরকার আসলে কি চায়। ঐ রায়ের পর আজ আর কারোর বুঝতে অসুবিধা নেই উলঙ্গ রাজার ব্যাপারটা আসলে কেমন।

রায়ের মূল কথা

সুপ্রিম কোর্ট নিজেদের রায়ে নির্বাচনী বন্ড ব্যাপারটাকেই সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। ঐ রায়ের অনুষঙ্গ হিসাবেই ইনকাম ট্যাক্স আইন, কোম্পানি আইন, বৈদেশিক অর্থসাহায্য (ফরেন কন্ট্রিবিউশন) আইন, জন প্রতিনিধিত্বকারি আইন এবং রিজার্ভ ব্যাংকের আইনে এরা যা যা পরিবর্তন এনেছিল সে সবই বাতিল বলে ঘোষণা হয়েছে। রায় দিতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত গোটা নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত গোটা বন্দোবস্তটাকেই অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করেছে।

এই রায়ের মূল ভিত্তিটা কোথায়? কর্পোরেটরা অর্থসাহায্য করতে পারেন, কিন্তু তারা কোন কোন রাজনৈতিক দলের তহবিলে কত পয়সা যোগাচ্ছে সেকথা জানার অধিকার দেশের জনসাধারণের রয়েছে। এই অধিকার তাদের দিয়েছে এদেশের সংবিধান।

নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যায় অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR), কমন কজ এবং আমরা, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)। এই দুপক্ষের পক্ষ থেকে পেশ করা যুক্তি-প্রতিযুক্তি শেষ হলে রায় দিতে গিয়ে দুটি মূল বিষয় বিবেচ্য হিসাবে সামনে চলে আসে। একদিকে ছিল তথ্যের অধিকার যা নির্বাচকমণ্ডলী বা জনগণকে সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে সুযোগ দেয়, আরেকদিকে ছিল কর্পোরেটদের আবদার, যা গোপনে রাজনৈতিক দলের তহবিলে অর্থসাহায্যের সুবিধা দেবে। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের সামনে এই মামলার শুনানি চলে। রায় দিতে গিয়ে পাঁচজন বিচারপতিই ঐক্যমতে পৌঁছান। রায়ের বয়ান লেখার কাজটি সম্পন্ন করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না পৃথক আরেকটি রায়দানের দায়িত্ব নেন। সেই রায়েই উল্লেখ করা হয় নির্বাচনী বন্ড আগাগোড়া অসাংবিধানিক।  

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উল্লিখিত হয়েছে এমন বন্ডের ব্যবহারে সংবিধানের ১৯(ক) ধারায় স্বীকৃত জনগণের তথ্যের অধিকার আইনকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। কর্পোরেটদের থেকে প্রাপ্ত লাগামহীন অর্থসাহায্য যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ব্যাহত করবে সেকথাও বলা হয়। আমাদের দেশে নির্বাচনী বিধি-নিষেধের প্রেক্ষিতে এহেন বিপুল ও গোপন অর্থসাহায্যের উদ্দেশ্য যে ক্ষতিকর সে কথাও উল্লিখিত হয়েছে। আদালত রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছে অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড মারফৎ প্রাপ্ত যাবতীয় টাকাপয়সার হিসাব প্রকাশ করতে হবে। রাজনৈতিক দলের তহবিলে যথেচ্ছ লেনদেন গোপন রাখতে কোম্পানি আইনে যে সকল সংশোধন করা হয়েছিল তার জোরে রীতিমত লোকসানে চলা কোম্পানিও বন্ডের মাধ্যমে অর্থ যোগাতে পারত। এমন কাজ একেবারেই অসাংবিধানিক। বিদেশী ব্যবসা-বাণিজ্য সংস্থার অধিনস্ত ভারতীয় কোম্পানিগুলি (সাবসিডিয়ারিজ)-র মাধ্যমে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের তহবিলে অর্থের যোগান যে নির্বাচনভিত্তিক সার্বভৌম গণতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে যায় সেকথাও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। ভারতের জনসাধারণ নিজেদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারকে নির্বাচিত করার যে সাংবিধানিক অধিকার পেয়েছে তাকেও এমন অর্থসাহায্যের বন্দোবস্ত লঙ্ঘন করে।

সুপ্রিম কোর্ট ২৩২ পাতার রায় দিয়েছে। রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সহ আরও তিনজন জজ মোট ১৫৮ পাতার রায় লেখেন, বাকি ৭৫ পাতার দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকে একটিই কৌশল অবলম্বন করে। তাদের বক্তব্য ছিল এই মামালার বিচার-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আদালত যেন ‘আইনসভা ও বিচারালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও প্রাথমিক কর্তব্য’-এর বিষয়টি বিবেচনায় রাখে। আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে বলে সরকারের ঐ যুক্তি এক্ষেত্রে অসার কারণ সংবিধানের ঐ বিধি অনুযায়ী মামলার চরিত্র নিছক সাধারণ হলে তবেই আইনসভা ও বিচারালয়ের স্বতন্ত্র ভূমিকার কথা ওঠে। নির্বাচনী বন্ডের আইনটি জাতীয় অর্থনীতি প্রসঙ্গে সরকারের নীতি নির্ধারণ প্রসঙ্গের কোনও বিষয় নয় বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যংক সংক্রান্ত ৩১ নম্বর আইনের সংশোধনটি অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ হওয়া স্বত্বেও নির্বাচনী বন্ড মামলায় এমন কায়দায় কর্পোরেট অর্থসাহায্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে দেশের নির্বাচনী বিধি-নিষেধ সমেত গোটা প্রক্রিয়াটাই এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে। অতএব সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি নিজেদের সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যে বলেই বিবেচনা করছে। 

ফিন্যান্স আইনের সংশোধনগুলি এমন কায়দায় সম্পাদিত হয়েছিল যাতে নির্বাচনী বন্ড এর কোনও তথ্য প্রকাশ না হয়।  রাজনৈতিক দল শেষ বিচারে জনগনের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে, অথচ নির্বাচনী বন্ড এর মাধ্যমে সেই জনগণকেই দলীয় তহবিলের জরুরী তথ্য জানতে না দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হল। একই কায়দায় আয়কর আইনেরও পরিবর্তন করা হয়েছিল যাতে এই বন্ডের কোনও বিস্তারিত রেকর্ড না থাকে। রাজনৈতিক দলের তহবিলে কর্পোরেট অর্থ সাহায্যের বিশদ বিবরণ যাতে না খুঁজে পাওয়া যায় সেই জন্য কোম্পানী আইনেও সংশোধন আনা হয়। আগেকার আইনে এসব তথ্য সংরক্ষিত রাখা বাধ্যতা মূলক ছিল, সেসব আইনকে ইচ্ছাকৃত দূর্বল করা হয়েছিল।

এই রায়কে আমরা ঐতিহাসিক বলছি কেন? কারণ এই রায়ের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় আমাদের দেশে রাজনীতির পরিসরেও কেমন বৈষম্য কার্যকরী হয়, রাজনৈতিক প্রভাবের পিছনেও অর্থনৈতিক শক্তি কিভাবে সক্রিয় থাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বড়লোকেরা দেশের রাজনীতিকে নিজেদের মতো করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলে, অর্থশালী গোষ্ঠী ও রাজনীতির আন্ত:সম্পর্ক অনেক গভীরে। এ ধরনের নির্বাচনী বন্ড আসলে কি করে? এর দ্বারা নিজেদের টেবিলে বসেই এক বিরাট অংশের কর্পোরেটরা আমাদের দেশের সরকারের নীতি নির্ধারণে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দেশের নীতি নির্ধারক (আইনসভায় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারি রাজনৈতিক দল) ও অর্থশালী কর্পোরেট গোষ্ঠী একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলছে কিনা সেই  বিষয়ে যথাযথ তথ্য সম্পর্কে অবহিত থাকার অধিকার ভারতের নাগরিকদের রয়েছে। এই বন্ড সংক্রান্ত কাজে যেভাবে শুধুমাত্র স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াকেই ব্যবহার করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে বিশেষ গোপনীয়তা বজায় রাখতেই এমন বন্দোবস্ত। ব্যাংকের যেকোনও কাজে এখন কেওয়াইসি (নো ইওর কাস্টমার) ব্যবহার করা হয়, তাকেও এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সরকার এই বন্দোবস্তকে আগাগোড়া সুরক্ষিত বলে দাবি করলেও আদালত সেই বক্তব্যকে খারিজ করে দিয়েছে।বিচারক সঞ্জীব খান্না যে বিশেষ রায় দিয়েছেন তাতে উল্লেখ রয়েছে এই বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের বেশিরভাগটাই গুটিকয় নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হাতে জমা হয়েছে যারা কেন্দ্র এবং কিছু  রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে।

মিথ্যাচার ও প্রবঞ্চনার কৌশল

সেবার নোটবাতিলের সময় মোদী সরকার যেমন কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের অকেজো আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ঢাক পিটিয়েছিল এবারও নির্বাচনী বন্ডের বেলায় তারা একই কায়দায় এগিয়েছে। আসলে কি ঘটল? একদিকে নগদ লেনদেনের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে বিপুল পরিমাণ কালো টাকাকে নির্বাচনী বন্ডের নামে নিজেদের তহবিলে টেনে আনা এবং তহবিলে অর্থ সাহায্য দেওয়া ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ্যে না আনার জন্য আইন তৈরি হল। তাই কোর্ট বলেছে ‘ এধরনের লেনদেনে কালো টাকাকে ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে ‘। 

নির্বাচনী তহবিলের জন্য এমন বন্ডের কি সত্যিই খুব প্রয়োজন ছিল? আগেকার অবস্থায় কাদের অসুবিধা হচ্ছিল? কোনরকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই যেভাবে বন্ড ব্যবহার করে বিপুল অর্থ তোলা হয়েছে, জমা হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা শুধুই নির্বাচনের বিষয় না, এধরনের অর্থ সাহায্য কার্যত দাতা গোষ্ঠীগুলিকে এমন সুযোগ দিয়েছে যাতে তারা নিজেদের ইচ্ছামত দান করা অর্থকে যেভাবে হোক ব্যবহার করতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে এধরনের আর্থিক সহায়তা কিংবা অনুদান আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রচারের আর্থিক মূল্য সংক্রান্ত নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমাকে লঙ্ঘন করে। এমন না যে কর্পোরেট রা আগে কোনও রাজনৈতিক দলকে অর্থ সাহায্য করেনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছে যে এমন বন্ডের মাধ্যমে অনুদানের সুযোগ পাওয়ার আগে তারা যে পরিমাণ খরচ যুগিয়েছে বন্ড ঘোষণা হওয়ার পরে তার বিপুল বৃদ্ধি ঘটেছে। একথা স্পষ্ট হয়েছে যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে প্রতারণা করতেই বিজেপি এমন বিরাট পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারে থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কার্যত শুষে নেওয়ার কায়দায় নিজেদের বিপুল আর্থিক সমৃদ্ধির বন্দোবস্ত করা চলে না। একটিমাত্র রাজ্যে ক্ষমতাসীন হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসও নিজেদের তহবিলের ৯৫ শতাংশ আয়ই ঐ নির্বাচনী বন্ড মারফত তুলেছে। এই ঘটনা সকলকে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে বিশেষ মনোযোগী করে তুলতে বাধ্য।

সকলের জন্য সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার প্রসঙ্গে

সুপ্রিম কোর্ট এই রায় ঘোষনা করে আসলে কি করেছে? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলের জন্য নিজেদের বক্তব্য প্রচার করার সমান অধিকার ও সুযোগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে এমন রায় সত্যিই প্রসংশনীয়। যদিও এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে রীতিমত অর্থনৈতিক অসাম্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সাথে সাথেই সে অবস্থা ঘুচে যাবে এমনও না, কিন্তু আইনের নাম করে অনৈতিক কাজটুকু আটকানো গেছে। এবার রাজনৈতিক দলগুলিকেও প্রমান দিতে হবে আগামীদিনে নিজেদের নির্বাচনী তহবিল গড়ে তুলতে তারা কতদূর নীতিনিষ্ঠ থাকতে পারে।

সামনে লড়াই

নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে। যেদিন থেকে ঐ বন্দোবস্ত শুরু হয়েছিল সেদিনই আমরা সংসদের আলোচনায় এর বিরোধিতা করেছিলাম। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আমাদের সেই বিরোধিতা বৈধতা পেয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই এই লড়াইতে আন্তরিক ছিলাম। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সাহায্য গ্রহণ করতে আমরা স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করেছিলাম। ঐ কারণে আমাদের স্টেট ব্যাংকের দ্বারস্থও হতে হয়নি। দেশের প্রধান বিচারপতি নিজের রায় ঘোষনার সময় আমাদের এমন অবস্থানের কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

এমন রায়কে সামনে রেখে আমরা নীতি-নৈতিকতা সমৃদ্ধ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বপক্ষে, সেই লক্ষ্যে স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে, চলতি বন্দোবস্তের উপযুক্ত সংস্কারের দাবির লড়াইতে আরও উৎসাহের সাথে এগিয়ে যাব। এই লড়াইতে যারা আগ্রহী, সে কোনও ব্যক্তি হন বা কোনো রাজনৈতিক দল আমরা তাদের সাথে ঐ লড়াইতে সহযোদ্ধা হিসাবে পাশে দাঁড়াব। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে অক্ষুন্ন রাখতে এই লড়াই জরুরী। স্বচ্ছ, নীতিনিষ্ঠ ও বৈধ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত নির্বাচনী তহবিলের প্রসঙ্গ সেই লড়াইয়ের অন্যতম একটি বুনিয়াদ। জনস্বার্থকে উর্ধে তুলে ধরার সংগ্রামে নীতিনিষ্ঠ থাকার পাশাপাশি কর্পোরেট পুঁজির সাথে রাজনীতির গাঁটছড়াকে ভেঙ্গে দেওয়া সেই সংগ্রামেরই এক অপরিহার্য শর্ত।

Spread the word

Leave a Reply