গত ৩ এবং ৪ জানুয়ারি,২০২১ সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা হয় কলকাতায়। এই সভায় রাজ্য কমিটির সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সভার শেষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, অতিমারি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা, জাতীয় অর্থনীতির অধোগতি, দিল্লিতে কৃষকদের আন্দোলন নানা প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির একটি সাক্ষাতকার আয়োজন করা হয় CPIM Digital’র পক্ষ থেকে।
ইংরেজি ভাষায় কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির সাথে কথা বলেছেন কমরেড শমীক লাহিড়ী। তাদের আলোচনা পার্টি কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের জানার প্রয়োজন। সেই কারনে সাক্ষাতকারের ভিডিও পার্টির ডিজিটাল মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আপলোড করা হয়েছে। বাংলায় স্বচ্ছন্দ যারা তাদের সুবিধার্থে সেই কথোপকথনের পুর্নাঙ্গ অনুবাদ মোট তিনটি পর্বে রাজ্য পার্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।
প্রথম পর্ব
১. দিল্লিতে কৃষকদের আন্দোলন চলছে। উদারবাদের শেষ তিন দশকে কর্পোরেটরা পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে এমন লড়াইয়ের সম্মুখীন হয় নি, একে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
কৃষকদের এই লড়াই কর্পোরেটদের জন্য সত্যিই এক বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের উপরে চাপিয়ে দেওয়া দুর্দশা এক অভূতপূর্ব অবস্থায় পৌঁছেছে – এই আন্দোলন আসলে সেই অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি ক্রান্তিকাল চিহ্নিত করছে। ভারতে গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেন কৃষকেরা। সারা দেশে জনগণের তিন ভাগের দুভাগ গ্রাম ভারতে বসবাস করেন। উদারবাদ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার উপরে যে আক্রমন নামিয়ে এনেছে তার সবচেয়ে আঘাত পেয়েছেন গ্রামে বসবাসকারীরাই। শহরাঞ্চলে শ্রমজীবী মানুষ এবং বিশেষ করে পরিযায়ী মজদুরেরাও সেই আক্রমনের শিকার হয়েছেন। নয়া কৃষি আইনগুলির জোরে মোদী সরকার গোটা দেশের কৃষিব্যবস্থাকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে তুলে দিতে চাইছে। নয়া উদারবাদের চাহিদাও তাই, সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে যেকোনো লুটতরাজকেই আইনি বৈধতা দেওয়া। এই সময়ে গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকট চলতে থাকায় মুনাফার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি কিছুটা অকেজো হয়ে পড়ায় তারা দেশের কৃষিক্ষেত্রকে নিজেদের করায়ত্ত্ব করতে চায়।
২. কর্পোরেট লুটের বিরুদ্ধে এর আগেও আমরা নানা লড়াই-আন্দোলন দেখেছি। শ্রমিক সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন)গুলি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে চলেছে, বিক্ষোভ, ধর্না এমনকি তিনদিন ব্যাপি অবস্থান আন্দোলনও হয়েছে। এবারের আন্দোলনের চরিত্র সেসবকিছুর থেকে আলাদা – এমন কেন?
কর্পোরেট লুঠের ফলে এখন দেশের জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে – এবারের আন্দোলন চরিত্রগতভাবে সেই কারনেই আলাদা। জনগণের উপরে নামিয়ে আনা আক্রমন যেমন আগের তুলনায় বহুগুণ তেমনই তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেহারাও অভূতপূর্ব। এটাই হওয়ার ছিল। সারা ভারত সংযুক্ত কিষান সংঘর্ষ মোর্চার জন্ম হালে হয় নি, তিন বছর আগে সারা দেশের কৃষকেরা নির্দিষ্ট লড়াইয়ের কর্মসূচীর ভিত্তিতেই একজোট হয়েছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন। আমি নিজে সাংসদ থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল তিনটি দাবির কথা – এক, সারা দেশেই ন্যুনতম সহায়ক মুল্যে (MSP) কৃষকদের ফসল বিক্রি করার আইন প্রনয়ন করতে হবে। দুই, কেউ যদি ন্যুনতম সহায়ক মুল্যের (MSP) চেয়ে কমে ফসল কেনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তিন, ন্যুনতম সহায়ক মুল্যে (MSP) ফসল কিনে নেবার এবং খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। কোন প্রশ্নেই প্রধানমন্ত্রীর কিংবা সরকারের তরফে কোন উত্তর কিংবা পদক্ষেপ পাওয়া যায় নি। আসলে সেই সময় থেকেই কর্পোরেটরা দেশের কৃষিব্যবস্থাকে দখল করার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিল।
৩. এসবের কিছুকাল আগে থেকেই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণে কর্পোরেটরা ঢুকে পড়েছিল…
একেবারেই তাই – কর্পোরেটরা যে শুধু কৃষিক্ষেত্রকে দখল করতে শুরু করেছিল তাই নয় সেই দখলদারির কাজে তারা সরকারের সহায়তাও পেয়েছিল। তাদের নিজস্ব গোডাউন ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে, এমনকি সেই কাজে ভর্তুকি অবধি দেওয়া হয়েছে। আসলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিকাঠামো নির্মাণ করতে কর্পোরেটদের ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচারের প্রয়োজন ছিল – সব মিলিয়ে সাত হাজার কোটি টাকা মুল্যের সেই সুবিধা মোদী সরকার তাদের পাইয়ে দিয়েছে। এখন তাদের লক্ষ্য ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI) দখল করা। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের পুরোটাই নিজেদের দখলে রাখতে চায় তারা।
৪. দখল করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে…
হ্যাঁ – শুরু হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে গনবন্টন (Ration) ব্যবস্থার পুরোটাই এদের হাতে চলে যাবে। সেই উদ্দেশ্যেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে পরিবর্তন করা হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিক্রি করা খাদ্যদ্রব্যের উপরে সরকারের তরফে কোন নিয়ন্ত্রন থাকবে না – বেআইনি হোর্ডিংকে বৈধতা দেওয়ার সাথে সাথে বাজারে খাদ্যের যোগানে ইচ্ছাকৃত ঘাটতি সৃষ্টি করা হবে। দুর্ভিক্ষের ন্যায় পরিস্থিতি তৈরি করা হবে। জনগণের ভুখা পেটের যন্ত্রণার বিনিময়ে কর্পোরেটদের বিরাট মুনাফার রাস্তা খুলে যাবে। ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে খাদ্য সূচকের ভিত্তিতে ভারতের অবস্থান অনেকটাই নিচে নেমে গেছে।
৫. খাদ্য সূচকের ভিত্তিতে ভারতের অবনমন এখনও জারি রয়েছে…
হ্যাঁ – আমরা ক্রমশ খারাপ থেকে আরও খারাপ অবস্থার দিকে চলেছি। এভাবেই চললে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এই ব্যবস্থায় একদিকে জনগণ ভুখা পেটে থাকতে বাধ্য হবে, না খেতে পেয়ে মারা যাবে – অথচ অন্যদিকে খাদ্যের ব্যবসা করেই কর্পোরেটরা মুনাফায় ফুলে উঠবে।
৬. তাহলে সংকটের আবর্তে শুধু কৃষকরাই নয়, গোটা দেশের জনগণই তার শিকার হবেন?
অবশ্যই! মূল্যবৃদ্ধির ফলাফলে সকলেই আক্রান্ত হবেন। অতিমারির সময়ে লকডাউন চলাকালীন পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ঘটনাকে মাথায় রাখলেই সেই অবস্থার কথা স্পষ্ট বোঝা যায়। এখন রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে চলেছে। সারা পৃথিবীতে রান্নার গ্যাসের দাম কমলেও আমাদের দেশে সাত দিনের ব্যবধানে রান্নার গ্যাসের দাম একশো টাকা বেড়েছে। জনগণের থেকে বাড়তি শুল্ক (Tax) আদায় করে সেই টাকায় কর্পোরেটদের ছাড় দিচ্ছে, ভর্তুকি দিচ্ছে। ডিজেলের দাম বেড়ে চলেছে – এতে চাষআবাদের খরচ বেড়ে যাবে, পরিবহন খরচ বাড়বে। আগে থেকেই মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব ছিল – তার ফলে সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। নির্দিষ্টভাবে কৃষিক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখেও বলা যায় গোটা দেশের জনগণের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে।
৭. দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে অথচ অদ্ভুতভাবে শেয়ার বাজারের সূচক (Sensex) বেড়েই চলেছে – এমন কেন?
এই থেকেই আরও স্পস্ট করে বলা যায় কর্পোরেট সংস্থাগুলির উন্নতির সাথে দেশের প্রকৃত অর্থনীতির কোন সম্পর্কই নেই। সবটাই ফাটকা আর্থিক লেনদেন এবং ধান্দাবাজির ব্যবস্থা। বিশ্বায়নের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল সারা পৃথিবীর শেয়ার বাজারে মোট প্রায় তিনশো ট্রিলিয়ন ডলার আবর্তিত হয় – ঐ একই সময়ে সারা বিশ্বের মোট জিডিপি (Global GDP) ছিল পঞ্চাশ ট্রিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও কর্পোরেটদের মুনাফার পরিমান প্রকৃত আর্থিক অবস্থার ছয়গুণ বেশী ছিল। আজকের দিনে শোষণের হার, মুনাফা লুটে নেবার হার অনেকটাই বেশী – আমাদের দেশের শেয়ার বাজারের সূচক সেই ছবিকেই স্পষ্ট করছে।
৮. অতিমারির সময়ে জনগণকে সুরক্ষা দিতে দেশের সরকারের আরও কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে দেখা গেল তারা কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষায় ব্যাস্ত থাকছে। ধান্দার ধনতন্ত্র (Crony Capitalism)- এর এমন নগ্ন চেহারা আগে কখনো ছিল না…
ঠিকই – আগে কখনই শোষণের চেহারা এই উচ্চতায় পৌঁছায় নি। পূঁজির আক্রমনের আসল চেহারা এমনই হয়। একদিকে গোটা দেশের উপরে কর্পোরেট পূঁজির নিয়ন্ত্রন কায়েম হয়েছে, আরেকদিকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে এমন একজন বসেছেন যার একমাত্র লক্ষ্য হল কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষা। এই দালালির যেটুকু অংশ তার হাতে আসছে তার সবটাই ব্যায় হচ্ছে তার দলের যাবতীয় অনৈতিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থে। দেশের যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে, ভোটে যে দলই জয়ী হোক না কেন সরকারে আসছে বিজেপি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কি উদ্দেশ্যে অর্থব্যায় করা হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমরা (বামেরা) দাবী জানিয়ে আসছি অন্তত ছয় মাসের জন্য আয়কর দেন না এমন সমস্ত পরিবারের হাতে প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা তুলে দেওয়া হোক। সরকার সেই ব্যবস্থা করে নি। কানাডার সরকার লকডাউনের সময়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল – তারই ফলে সেখানকার অর্থনীতি এখন ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে অর্থনীতি কিংবা বাজার কিছুতেই ভালো থাকতে পারে না। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI) – এর গুদামে প্রায় সাড়ে দশ কোটি টন খাদ্যশস্য পচছে, আমরা দাবী করেছিলাম সেই খাদ্যশস্য গনবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হোক। সরকার সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে খাদ্যশস্য তুলে দিচ্ছে কর্পোরেটদের হাতে যাতে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সেই খাদ্যের সওদা (রপ্তানি) করে মুনাফা করতে পারে।
৯. বামেরা অনেকদিন ধরেই এই দবিগুলি জানিয়ে এসেছে। এখন আরও অনেকেই যেমন রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর, নোবেল পুরস্কার প্রাপকেরাও একই দাবী তুলছেন…
এটা খুশির কথা। বামেরা প্রথম থেকেই বাস্তব সমস্যার প্রসঙ্গে সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য এবং মানবিক সমাধানের দাবী জানিয়ে এসেছে। সুতরাং যুক্তিবাদী মানুষজন সেইসব দাবীসমূহের সাথে একমত হবেন এটাই স্বাভাবিক। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব যাদের মোদী নিজেই নিয়োগ করেছিলেন তারা সকলেই বামেদের দাবির সাথে সহমত পোষণ করেছেন। তারা সকলেই রাজনৈতিক ভাবে ‘বাম’ হিসাবে পরিচিত হতে চান এমন নয়। আমরাও মেধাসম্পদের রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে। আমরা চিরকালই বলে এসেছি মেধার কোন পেটেন্ট হয় না। আমাদের বক্তব্য পরিস্কার, জনজীবনের বাস্তব এবং প্রকৃত সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী যুক্তিগ্রাহ্য এবং মানবিক সমাধানের লক্ষ্যে সকলের একজোট হওয়া প্রয়োজন। সবারই লক্ষ্য হওয়া উচিত যাতে দেশের জনগণ সুরক্ষিত থাকেন।
১০. ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত নয়া আইন প্রণয়ন ইত্যাদির সাহায্যে দেশের গনতান্ত্রিক পরিসরকে ক্রমশ সংকুচিত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলি গত ২৬শে নভেম্বর ব্যাপক ধর্মঘট আয়োজন করেছে। এই ধর্মঘট সারা দেশেই বিরাট সমর্থন পেয়েছে। কৃষক আন্দোলনের বর্তমান লড়াইয়ের সাথে ট্রেড ইউনিয়নের সংগ্রাম-আন্দোলনকে কিভাবে একই সুত্রে ফেলা যায়?
এই সমস্ত লড়াই – সংগ্রাম – আন্দোলনগুলি ইতিমধ্যেই একসুত্রে গ্রথিত রয়েছে। কারন এইসবগুলিই দেশের কর্তৃত্বকারী শ্রেণী এবং শ্রেণীশাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সেই কথাই বারে বারে বলছি। কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের নামে সরকার যা কিছু করছে, শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রেও উদ্দেশ্য একই। পুরোটাই শ্রেণীস্বার্থে পরিচালিত। জনগণকে এই সত্যের বিষয়ে অবহিত করতে হবে, এই কথা তাদের কাছে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের কাজ, বামপন্থীদের কাজ।
ট্রেড ইউনিয়নের অর্জিত অধিকারগুলির উপরে আক্রমন হচ্ছে – কারন কর্পোরেট শক্তি আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ লুঠ করতে চায়। সেই কারনেই বেসরকারিকরণের হিড়িক তোলা হচ্ছে। জাতীয় ক্ষেত্রগুলির বেসরকারিকরণ করতে গেলে সংগঠিত শ্রমিক ইউনিয়ন বাধা দেবে, তাই শ্রম আইন সংশোধন। দেশের খনিজ সম্পদ (আমাদের দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একথা মাথায় রাখতে হবে), পেট্রোলিয়ম ইত্যাদিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে গেলে ব্যাপক শ্রমিক বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হবে – তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই করবেন সেই কারনেই সংস্কারের নামে শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের উপরে আক্রমনের চরিত্রও একই উদ্দেশ্যে – কর্পোরেটদের মুনাফা যোগানো। জনগণের উপরে নামিয়ে আনা আক্রমনের বিরুদ্ধে যেকোনো লড়াইকেই দেশবিরোধী তকমা দিচ্ছে সরকার। সরকারের কাজের সমালচনা করলেই UAPA, NSA এবং সিডিশন আইনের প্রয়োগে মামলা করা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে।
সুতরাং শুধুমাত্র শ্রমিক–কৃষক–মেহনতি মানুষই নয় সারা দেশের জনগণের উপরেই সার্বিক আক্রমন নামিয়ে আনা হচ্ছে। এই লড়াইতে জনগণের পাশে থাকছেন যারা তারা সবাই সরকারের চোখে অপরাধী।
ওয়েবডেস্কের পক্ষে সাক্ষাতকারের অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ