It’s All About Us or Economy: A Report

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

সরিৎ মজুমদার

২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটে স্ট্যাচু অব ইউনিটি উদ্বোধন করেন, তার কিছুদিন পরেই কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী পীযুশ গোয়েল জোর গলায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন- “আমি দেখতে পাচ্ছি যে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি আগামী বছরগুলিতে অন্তত এক লক্ষ কোটি টাকার অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করবে।” তারপরে নর্মদা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, বিনা চিকিৎসা,অপুষ্টি,কোভিড মহামারীতে অগুণতি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আম্বানি,আদানি আরো ধনী হয়েছে, ‘ভাইব্রান্ট গুজরাট’ শুনলেই সেই রাজ্যের গরীব মানুষের আতঙ্কে থরহরিকম্প অবস্থা। তার মধ্যেই চলে এল গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন।

স্রেফ মোদি গুজরাটে গিয়ে কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করে আবার জনদরদী মুখোশ চাপাবে বলে হিমাচলের সাথে একসাথে গুজরাটের নির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশ করা হয়নি।গুজরাটের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল ৫ নভেম্বর। হিমাচলের প্রায় ৩ সপ্তাহ পরে। অথচ দুই রাজ্যের ভোট গণনা হবে একই দিনে- ৮ ডিসেম্বর ২০২২!

গুজরাট মডেলের ফানুসটা আবার ফেটে গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সদ্য প্রকাশিত একটা রিপোর্টে।কী বলা হয়েছে সেই রিপোর্টে – গুজরাট এবং মধ্যপ্রদেশ এই দুটি রাজ্যের কৃষির সাথে যুক্ত মানুষরা বর্তমান সময়ে দেশের সর্বনিম্ন দৈনিক মজুরি পান যখন মূদ্রাস্ফীতির হার আকাশ ছুঁয়েছে এবং সুদের হারও ক্রমাগত বাাড়ছে ৷

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) দ্বারা সংকলিত তথ্য অনুসারে, মধ্যপ্রদেশে, কৃষির সাথে যুক্ত পুরুষরা দৈনিক গড়ে মজুরি পেয়েছিলেন মাত্র ২১৭.৮ টাকা করে একই সময়ে গুজরাটে, ২০২২ সালের মার্চে শেষ হওয়া বছরে এই মজুরির পরিমাণ ছিল ২২০.৩ টাকা।উল্লেখযোগ্যভাবে,উভয় রাজ্যেই দৈনিক মজুরি জাতীয় গড় ৩২৩টাকা ২০ পয়সার নিচে ! এবং দুটি রাজ্যেই সরকার চালায় বিজেপি । সেই বিজেপি -ই আবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া (EWS – Economically Weaker Section) মানুষের মাপকাঠি ঠিক করে বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকা উপার্জনকে! অর্থাৎ এই হিসাবের নিরিখে বছরে ৩০০ দিন কাজ করা একজন মানুষের দৈনিক উপার্জন মোটামুটি ২,৬৬৬ টাকা হলেই দিনি অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল ও সংরক্ষণের সুবিধা পেতে পারেন -কোথায় ২১৭ টাকা দৈনিক আর কোথায় ২,৬৬৬ টাকা!

যদি একজন  কৃষির সাথে যুক্ত শ্রমিক গুজরাটে মাসে ২৫ দিনের জন্য কাজ পেয়ে থাকেন, তাহলে তার মাসিক আয় হবে প্রায় ৫,৫০০ টাকা প্রতি মাসে । যা চার বা পাঁচজনের পরিবারের খরচ মেটাতে কোনভাবেই যথেষ্ট হতে পারে না । অন্যদিকে বাম শাসিত কেরালায় একজন গ্রামীণ কৃষি কর্মী মাসে ২৫ দিনের কাজের জন্য গড়ে ১৮,১৭০ টাকা পেয়ে থাকেন। সমস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে কেরালাই সর্বোচ্চ মজুরি দিয়ে থাকে – বামপন্থীরা নয়, দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্কই এই কথা বলছে।

২০২১-২২ আর্থিক বছরে কোভিড মহামারী কাজ এবং আয়ের মাত্রাকে ভয়াবহ ভাবে আঘাত করেছিল। গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব ছিল ভয়াবহ ।পূর্বোক্ত হিসাব অনুসারে মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে একজন কৃষি শ্রমিকের মাসিক মজুরি প্রায় ৫,৪৪৫ টাকা হয় । অন্যান্য কম মজুরি দেওয়া রাজ্যগুলির মধ্যে, উত্তর প্রদেশে, গ্রামীণ কৃষি কর্মীরা ২০২১-২২ অর্থবর্ষে গড় দৈনিক মজুরি ২৭০ টাকা, মহারাষ্ট্রে ২৮৪.২ টাকা এবং উড়িশ্যায় ২৬৯ টাকা ৫০ পয়সা পেয়েছেন ।

কেরালা ক্ষেতমজুরদের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে । কেরালায় গড় মজুরি শ্রমিক প্রতি ৭২৬.৮ টাকা। কেরালায় উচ্চ মজুরি অন্যান্য কম মজুরি প্রদানকারী রাজ্যের ক্ষেতমজুরদের আকৃষ্ট করেছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ২৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কেরালায় বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

কেরালার পরেই ক্ষেতমজুরদের মজুরির হারে এগিয়ে আছে জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও তামিলনাড়ু । এই তিনটি রাজ্যে গড় দৈনিক মজুরি হল যথাক্রমে ৫২৪টাকা ৬০ পয়সা , ৪৫৭ টাকা ৬০ পয়সা ও ৪৪৫ টাকা ৬০ পয়সা।

একই অর্থবর্ষের জন্য আরবিআই-এর তথ্য অনুসারেই, কৃষি বহির্ভূত কাজে পুরুষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে, সর্বনিম্ন দৈনিক গড় মজুরি ছিল মধ্যপ্রদেশে – ২৩০.৩ টাকা যেখানে গুজরাটের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি পেত ২৫২.৫ টাকা এবং ত্রিপুরা ২৫০ টাকা – সবই জাতীয় গড় ৩২৬.৬ টাকা থেকে কম!

অন্যদিকে, কেরালা কৃষি বহির্ভূত কাজে পুরুষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মজুরি প্রদানেও প্রথম। কেরালায় জনপ্রতি এই মজুরির পরিমাণ দৈনিক ৬৮১.৮ টাকা। ২০২২ সালের মার্চে শেষ হওয়া বছরের জন্য কেরালা এর পরেই স্থান জম্মু ও কাশ্মীর এর, ৫০০.৮ টাকা/ দৈনিক, তামিলনাড়ু ৪৬২.৩ টাকা এবং হরিয়ানা ৪০৯.৩ টাকা  গড়ে মজুরি দিয়েছিল।

গ্রামীণ পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মজুরি প্রদানকারী রাজ্যের তালিকটা মোটামুটি একই রকম। গুজরাটের গ্রামীণ নির্মাণ শ্রমিকরা গড় মজুরি পেয়েছে ২৯৫.৯ টাকা, মধ্যপ্রদেশে ২৬৬.৭ টাকা এবং ত্রিপুরায় ২৫০ টাকা – সবকটিই এইক্ষেত্রের জাতীয় গড় ৩৭৩ টাকা ৩০ পয়সার থেকে অনেকটাই নীচে। RBI-এর তথ্য অনুসারে গ্রামীণ নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি কেরালায় সর্বোচ্চ – ৮৩৭.৭ টাকা, এর পরেই স্থান জম্মু ও কাশ্মীর-এর – ৫১৯.৮ টাকা, তামিলনাড়ুতে ৪৭৮.৬ টাকা এবং হিমাচল প্রদেশে ৪৬৭.২ টাকা।

daily wages

ক্রিসিল – এর সমীক্ষা অনুসারে, গ্রামীণ রোজগারের সম্ভাবনা আবহাওয়ার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। একই সাথে তারা বলেছে ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এবং এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের আরো পর্যবেক্ষণ ‘হ্রাসমান মজুরি গ্রামীণ চাহিদার তৈরির ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয়’।

বিজেপির শাসনে গ্রাম শহর নির্বিশেষে গরীব মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে, কমেছে ক্রয় ক্ষমতা, চাহিদা কমেছে, কিন্তু পুঁজি উৎপাদন কমায়নি মুনাফার লোভে – অতি উৎপাদন সমস্যার আকার নিয়েছে। মোদির বিজ্ঞাপনের দুই আদর্শ রাজ্যের পরিসংখ্যান ও তার সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটে কেরালার বাম সরকারের ভূমিকাই দেখিয়ে দিচ্ছে যে দেশের দরিদ্রতম অংশের ও সামগ্রিক ভাবে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত উন্নয়ন কোন পথে আসতে পারে।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

Spread the word

Leave a Reply