ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস (পর্ব – ২৫)
বাল গঙ্গাধর তিলক এই গণপতি উৎসব কে কেন্দ্র করে গণেশের বিরাট বিরাট মূর্তির প্রচলন করেন।পুনা শহরে সেইসব বিশালাকৃতি গণেশ মূর্তিই পরবর্তীকালে আজকের মুম্বাই শহরে ছড়িয়েছে।আজ যে রাজনৈতিক প্রচারের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ ভারতে বিশালাকৃতি কাট আউট সংস্কৃতি আমরা দেখতে পাই, সেটি ও তিলক প্রবর্তিত বিশালাকৃতি গণপতিমূর্তি র ই বিবর্তিত সঙ্করণ।
গণেশ পুজোর ধর্মীয় পরিমন্ডলকে অবলম্বন করে বসত জবরদস্ত গানের আসর। বহু গায়ক সমন্বিত গোষ্ঠীর গান পরিবেশন ছিল এই উৎসবের একটা উল্লেখযোগ্য দিক।এইসব গানের দলগুলি ধর্মীয় দ্যোতনাকে একটা সাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়েই পরিবেশন করত।গণেশ কে ঘিরে পৌরাণিক ব্যাখ্যাকে পর্যবসিত করা হতো অপর সম্প্রদায়ের প্রতি কার্যত একটা অসূয়া সূচক অভিব্যক্তিতে।ধর্ম সঙ্গীতের ভিতর দিয়ে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ভারতে তিলক প্রবর্তিত এই গণেশ পুজোতেই প্রথম শুরু হয়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ভিতর আগে মুহররমে যোগ দেওয়ার যে প্রবণতা দেখতে পাওয়া যেত, সেই প্রবণতাকে রোখবার উদ্দেশেই অত্যন্ত রাজনৈতিক হিশেব নিকেশ করেই গণেশ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে এই ধরণের বিশেষ গানের আয়োজন করা হতো।এর আগে কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, কেবলমাত্র মুসলমানদের উৎসবের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করব, এইধরণের একটা বিদ্বেষমূলক মানসিকতার ভিতর দিয়ে কখনো ধর্মসঙ্গীত পরিবেশনের কথা ভাবেন নি।বস্তুত বাল গঙ্গাধর তিলক তাঁর রাজনৈতিক অভিস্পা থেকেই মানুষের ধর্মজনিত আকুলতাকে অপর ধর্মের প্রতি একটা বিচ্ছিন্নতার মানসিকতার দিকে পরিচালিত করবার উদ্দেশ্য নিয়ে ই এগিয়ে দিলেন।গণেশ চতুর্থীকে কেন্দ্র করে এই গানের আসরির আয়োজনের ভিতর দিয়ে হিন্দু সমাজের মুহররমে যোগ দেওয়্র স্বতঃস্ফূর্তাকে একটা সামাজিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আটকালেন তিলক।ফলে সাধারণ হিন্দুরা তখন থেকে দক্ষিণ ভারতের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কার্যত মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে, হিন্দু- মুসলমানের ভিতর সামাজিক মেলামেশার জায়গাটিকেই একপ্রকার রুদ্ধ করে দিল।এই প্রবণতাটিই পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে গোটা ভারতে সংক্রমিত হয়েছে।উনিশ শতকে হিন্দু মুসলমানের ভিতরে সামাজিক মেলামেশার ভিতরে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের কৌশলকে অবলম্বন করে দূরত্ব সূচনা প্রথম শুরু করেছিলেন তিলক।সেই ধারাটিই পরবর্তীকালে গোটা ভারতের মুসলমানেদের উপর প্রয়োগ করে এসেছে সাম্প্রদায়িক হিন্দু শিবির।
১৮৯৫ সাল থেকে এই গণেশ উৎসবের ভিতর দিয়ে হিন্দুধর্মের একটি বারোয়ারি মূর্ছনা উপস্থাপিত করে, সেই ধারাটিকে মুষলমান বিদ্বেষী একটি অভিধারায় পর্যবসিত করা হয়েছিল।পুনা শহর কে কেন্দ্র এই গণেশ পুজোকে অবলম্বন করে হিন্দুধর্মের প্রচলিত বহুত্ববাদী, সমন্বয়ী, পরধর্মসহিষ্ণু ধারাটিকে বিধ্বস্ত করে যে সাম্প্রদায়িক অভিযোজন শুরু হয়, তা অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা দক্ষিণভারত জুড়ে।১৯০৫ সাল, বঙ্গভঙ্গের বছর, সেই বছরেই দেখা গেল, পুনা শহরের বাইরে আর ও বাহাত্তরটি দক্ষিণভারতের শহরে এই গণপতি উৎসব অনুষ্ঠিত হল।
ধারাবাহিক লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুনঃ www.cpimwb.org.in
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস (পর্ব – ২৪)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২৩)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২২)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২১)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২০)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৯)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৮)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৭)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৬)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৫)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৪)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৩)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১২)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১১)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১০)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব- ৯)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (অষ্টম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (সপ্তম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (ষষ্ঠ পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পঞ্চম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (চতুর্থ পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (তৃতীয় পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (দ্বিতীয় পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (প্রথম পর্ব)