Indian Freedom Struggle And RSS – A Retrospective (Part-9)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ৯)

ধারাবাহিক রচনায়ঃ গৌতম রায়

কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভোজন পটু মানসিকতা যে তার রাজনৈতিক  প্রগ্গা,বিচক্ষণতা,  ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হতে পারে এবং সেই ভজনপুটু সত্তাকে যে আগামী প্রজন্মের রাজনীতিকদের , সমর্থকদের কাছে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে -এটা হেডগেওয়ারের  জীবনকে কেন্দ্র করে আরএসএসের যে প্রচার সেই পর্ব, সেটাকে না দেখলে,  না জানলে ভারতবাসী কেন, গোটা বিশ্ববাসী জানতে, বুঝতে পারত না।
             

কুড়ি বছর বয়সের প্রায় শুরুতে হেডগেওয়ার নাগপুর থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে আসেন ।সেই সময়ের প্রায় প্রতিটি ছাত্র- যুবের ভেতরেই শরীরচর্চা ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই সময় কালের এমন কোনো ভারতীয় কিশোর- যুবককে পাওয়া যাবে না ,যিনি তাঁর প্রথম যৌবনে শরীরচর্চা কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে নেন নি ।এক্ষেত্রে হেডগেওয়ার কোনো ব্যতিক্রম ছিলেন না ।গীতা পাঠের অপেক্ষা শরীরচর্চার মাধ্যমে ,ফুটবল খেলা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে শরীর চর্চার ভিতর দিয়ে শরীর কে উপযুক্ত ভাবে তৈরি করে ,গীতার প্রদর্শিত নিষ্কাম কর্মের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ ।
               

সেই লক্ষ্যই  তখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সকল ভারতীয় ছাত্র-যুব কাছে একটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল ।হেডগেওয়ার যে তার  ছাত্র জীবনের প্রথম পর্বে, বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম ও শরীর চর্চার ভেতর দিয়ে, শরীর কে তৈরি করেছিলেন, সেই ধ্যান-ধারণা তৈরীর ক্ষেত্রে হেডগেওয়ারের  উপর বিন্দুমাত্র বিবেকানন্দের ভূমিকা কাজ করেছিল -এমন কোন তথ্য প্রমাণ আমাদের সামনে নেই ।অথচ হেডগেওয়ারের স্বাস্থ্য চর্চার বিষয়টিকে আরএসএস, তাদের বৌদ্ধিক চর্চার ক্ষেত্রে, এমন গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত করে যে, হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপনের লক্ষ্যে ,ব্রিটিশ কে এদেশ থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে, হেডগেওয়ার এভাবে শরীর চর্চা কে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছিলেন ।
             

এমন দৃষ্টিভঙ্গি যে আদৌ  হেডগেওয়ারের ছিল ,তার কিন্তু কোনো তথ্য-প্রমাণ হেডগেওয়ারের   নিজের লেখায় বা তার সেই সময়ের বন্ধু-বান্ধবদের কোনো স্মৃতিচারণার  ভেতরে আমরা পাই না ।সেই সময়ের ভারতীয় যুবকদের সাধারণ, স্বাভাবিক অভ্যাস অনুযায়ী শরীর চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হতো। সেই ধারা অনুসরণ করে ই  কিন্তু হেডগেওয়ার শরীরচর্চার বিষয়টিকে নিজের দৈনন্দিন যাপন চিত্রের সঙ্গে অংগীভূত করেছিলেন। তার এই  শরীরচর্চার গোটা কার্যক্রমটি সঙ্গে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, বা কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায় ছিল না। বরঞ্চ ছিল ,  মুসলমানদের প্রতিহত করবার জন্য শারীরিক কসরতের   ভেতর দিয়ে শরীরকে তৈরি করার একটা তাগিদ।
                

সশস্ত্র বিপ্লবী রা  যখন ব্রিটিশ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে শরীর গড়ার কথা বলতেন, শারীরিক ব্যায়াম ইত্যাদির ভেতর দিয়ে শরীরকে তৈরি করে ,সেই তৈরি শরীরের ভেতর দিয়ে ব্রিটিশ কে সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধের কথা তাঁরা বলতেন ।সেই সময় কিন্তু হেডগেওয়ার শরীর গড়ার লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিলেন ব্রিটিশ প্রতিরোধ নয়, মুসলমান প্রতিরোধ। আর হেডগেওয়ারের  শরীরচর্চার যে বিষয়টি আরএসএস তাদের কর্মী সমর্থকদের ভেতরে সঞ্চারিত করতে চায়, তার মূলে ও  রয়েছে শরীর চর্চার ক্ষেত্রে তৈরি করে, চর্চিত  শরীরিক শক্তির  ভেতর দিয়ে মুসলমান প্রতিরোধের সংকল্পের বিষয়টি ।
                  

হেডগেওয়ার কে সামনে রেখে, কর্মী সমর্থকদের জীবনচর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংস্করণ এবং মুসলিম বিদ্বেষের একটা সামাজিক বাতাবরণ তৈরি ই হচ্ছে আরএসএসের   মূল লক্ষ্য এবং কর্মসূচি। সেই কর্মসূচীকে রূপায়িত করবার লক্ষ্যে তারা চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যায়নরত হেডগেওয়ারের কাছে বিবেকানন্দ প্রদর্শিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ,পেশীবহুল মানুষ আর লৌহ কঠিন স্নায়ুর তত্ত্বের অবতারণা করেছিল।
               

স্বামী বিবেকানন্দ যেখানে বৈদান্তিক মস্তিস্ক এবং ইসলামী দেহের  কথা বলেছেন ,চিরন্তন ভারতবর্ষের বহুত্ববাদী দর্শন ,সমন্বয়বাদী চেতনার প্রতীক বিবেকানন্দের সেই গভীর প্রজ্ঞা অনুরাগ কে বিকৃত করে, পেশীবহুল মানুষ আর লৌহ সদৃশ্য স্নায়ুর কথা বলে ,এই অনুধ্যান কে বিবেকানন্দের অনুধ্যান হিসেবে বিকৃতভাবে চালানোর ক্ষেত্রে আরএসএস ডাক্তারি ছাত্র হিসেবে হেডগেওয়ারের  জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করে আসে ।
            

যে পেশির বাহুল্যের কথা আরএসএস উল্লেখ করে, সেই পেশিকে তারা ভারতবর্ষের ঐক্য ভাবনাকে আরো সুদৃঢ় করবার লক্ষ্যে পরিচালিত করবার উদ্দেশ্যে কখনো ব্যবহারের কথা ভাবে না। সেই পেশীশক্তির ভেতর দিয়ে তারা বহুত্ববাদী ভারতবর্ষকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যে, সমন্বয়বাদী ভারতবর্ষের চেতনাকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত করার কথাই ভাবে ।বৈদান্তিক মস্তিষ্ক আর ইসলামিয়া দেহ শব্দের বোধের সমন্বয়ে  ভারতীয় জাতিসত্তা ,প্রতিটি ভাষাগত, ধর্মগত ,লিঙ্গ গত ,সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে বিকশিত করবার যে স্বপ্ন বিবেকানন্দ দেখেছিলেন ,সেই স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে থেকেই ,পেশী বাহুল্য ,যাকে কার্যত পেশিশক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে ,অর্থাৎ ;গুন্ডামি র  জন্য ব্যবহার করা হবে-  সেই রকম মানসিকতার ভেতর দিয়েই যে হেডগেওয়ার কলকাতায় শিক্ষা জীবনকে পরিচালিত করেছিলেন এটাই সঙ্ঘ বোঝাতে চায়।
                   

আর সেই পরিচালনার কার্যক্রমকে সঙ্ঘ অনুসরণ করে প্রতিটি কর্মী-সমর্থকদের নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করা দরকার — এটাই বৌদ্ধিক দর্শনের তকমা দিয়ে আরএসএস তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে মস্তিষ্ক প্রক্ষালনের   উদ্দেশ্যে তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে প্রচারিত করে ।আর সেই কর্মী-সমর্থকরা এই ধারণাকে ,এই দৃষ্টিভঙ্গি কে ই তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং কর্মসূচি ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিস্তার বিকাশ ও প্রয়োগের উদ্দেশ্যে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগ করে থাকে।
               

যে ইস্পাতকঠিন স্নায়ুর কথা আরএসএসের   পক্ষ থেকে হেডগেওয়ার কে উদ্দেশ্য করে বলা হয় ,সেই স্নায়ুকে তারা ব্যবহার করতে চায় ,ভারতীয় বোধের বহুত্ববাদী চিন্তাচেতনা র সম্যক বিকাশের উদ্দেশ্যে নয় ।সেই ধারণাকে তারা ব্যবহার করতে চায়, ভারতবর্ষের সমন্বয়বাদী চেতনাকে খন্ড-বিখন্ড করবার উদ্দেশ্যে ।সেভাবেই হেডগেওয়ারের  জীবনকে একটা লক্ষ্যবস্তু হিসেবে স্থির করে ,সেটিকে   জীবন চর্চার বিভিন্ন পর্যায়ক্রম হিশেবে  নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যায় আর এস এস।
                       

এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে  কর্মী-সমর্থক নেতৃত্ব ,সেই সেই চিন্তাধারা,দৃষ্টিভঙ্গি কেই  তথাকথিত আদর্শ হিশেবে ভারতবর্ষের সমাজের প্রতিটি স্তরে বিকেন্দ্রীকৃত দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়ে ,চিরন্তন ভারতবর্ষের ধারাবাহিক প্রবণতাকে খন্ড-বিখন্ড করে দিতে চায় ।হেডগেওয়ার  কলকাতা মেডিকেল কলেজে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হওয়ার পর, তার সঙ্গে নাকি কলকাতা সন্নিহিত অঞ্চলের সশস্ত্র বিপ্লবীদের একটি সংযোগ গড়ে উঠেছিল বলে ,আরএসএস তার কর্মী সমর্থকদের কাছে প্রচার করে ।
                  

হেডগেওয়ার কে ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকান্ডের একজন বিপ্লবী নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করতে চায় এভাবেই সঙ্ঘ। একথা সত্যি যে অনুশীলন সমিতির প্রার্থী প্রথম পর্যায়ে  বীর বিপ্লবী ত্রৈলোক্য মহারাজের সঙ্গে আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের সামান্য পরিচয় হয়েছিল ।কিন্তু হেডগেওয়ারের   বিভাজনের মানসিকতা, মুসলিম বিদ্বেষ এবং রাজনৈতিক হিন্দু দৃষ্টিভঙ্গি আর  সেই চিন্তা-চেতনার প্রচার-প্রসার প্রয়োগের লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড বিস্তারের ভাবনাকে ত্রৈলোক্য মহারাজ বিন্দুমাত্র সমর্থন করতে পারেননি ।
                    

তাই অনুশীলন সমিতির পর্যায়ক্রমে সামান্য দু চারদিন হেডগেওয়ার যাতায়াত করলেও, অনুশীলন সমিতির অন্তরঙ্গ পরিষদের সঙ্গে চরম বিভাজনের মানসিকতাসম্পন্ন হেডগেওয়ারের কোনদিনই কোন রকম সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি ।অথচ ত্রৈলোক্য মহারাজের সঙ্গে এই পরিচয়ের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, আরএসএস হেডগেওয়ার কে একজন অনুশীলন সমিতির দলভুক্ত বিপ্লবী হিসেবে দেখিয়ে , যে  ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাদের( সঙ্ঘের)  কোন ইতিবাচক ভূমিকা নেই ,বরঞ্চ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে বিভাজনের কৌশল অবলম্বন করতে সবথেকে বেশি সাহায্যের ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেই যাদের অবদান সবথেকে বেশি– সেই আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার কে অসত্য ,বিকৃত ধারনার উপর উপস্থাপিত করে ,তাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একটি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরতে চায় আরএসএস।
                 

এই সময়ে যে সমস্ত বিপ্লবীদের সঙ্গে  হেডগেওয়ারের পরিচয়ের কথা আরএসএস বলে, তাদের একজনের নাম ও তারা আজ পর্যন্ত উপস্থাপিত করতে পারে নি ।কেবলমাত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে হেডগেওয়ারের  খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল-  এই শব্দ বলেই তারা হেডগেওয়ার কে একজন ব্রিটিশবিরোধী আইকন হিসেবে উপস্থাপিত করবার চেষ্টা করে থাকে। অথচ কোন্ কোন্  সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে হেডগেওয়ারের  সংযোগ, সম্পর্ক ,ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছিল –সে সম্পর্কে একটি শব্দ তারা উচ্চারণ করে না ।
              

এইসময় অনুশীলন সমিতির সঙ্গে সংযুক্ত ,প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমস্ত ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কেই ব্রিটিশ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। সেই সব তথ্যের কোন একটিতেও হেডগেওয়ারের  নামের উল্লেখ নেই। তাহলে কোথা থেকে হেডগেওয়ারের  সঙ্গে অনুশীলন সমিতি বা সেই সময়ের ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন বিপ্লবীদের সংযোগের এই তত্ত্ব আরএসএস উপস্থাপিত করে?
                     

সশস্ত্র বিপ্লবীরা সশস্ত্র উপায়ে ইংরেজদের প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতেন ।আরএসএস এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে ,কলকাতা মেডিকেল কলেজে যখন হেডগেওয়ার ছাত্র ছিলেন, সেই সময় তিনি সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে মিশে, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে, সশস্ত্র প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নিয়েছিলেন ।কিন্তু মজার কথা হল ;সেই সময় কালে অনুশীলন সমিতি বা যুগান্তর দল কিংবা অন্যান্য বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠী, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র উপায়ে ব্রিটিশকে মোকাবিলা করার তাগিদ থেকে বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতেন ,বোমা তৈরি করার প্রশিক্ষণ নিতেন,  তাঁদের কারো কোনরকম স্মৃতিচারণায় কিন্তু একটি বারের জন্যও হেডগেওয়ারের  প্রশিক্ষণ নেওয়া তো দূরের কথা, হেডগেওয়ার এর নাম পর্যন্ত উল্লেখ নেই।
             

অপরপক্ষে ব্রিটিশ গোয়েন্দা এবং পুলিশের বিভিন্ন নথিপত্রে সেই সময় যে সমস্ত যুবকরা কলকাতা শহর কে বা শহরতলী কে কেন্দ্র করে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকমের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতেন ,বোমা তৈরি করা শিখতেন, তাঁদের সম্পর্কে যে ফাইল আছে ,যে সমস্ত তথ্য আছে, সেখানে একটি বারের জন্যও হেডগেওয়ারের  নাম উল্লেখ পর্যন্ত নেই  ।
              

তাহলে এটা খুব পরিস্কার ভাবেই প্রমানিত হয়ে যায় যে; ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে হেডগেওয়ার কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র অবস্থায় অনুশীলন সমিতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ,ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আরএসএসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সে দাবি শুধু মিথ্যাই নয় ,সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আরএসএসের এই দাবির উদ্দেশ্য হল; যেহেতু সঙ্ঘ তার প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার  আরএসএস কে ব্রিটিশের  পক্ষে আদর্শগত অবস্থান দিয়ে তৈরি করেছিলেন, সেই হেডগেওয়ার কে বিকৃত অসত্য ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে ,ব্রিটিশ বিরোধী নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করা। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার যাবতীয় চিন্তা-চেতনা, তথাকথিত আদর্শবাদের  একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ;রাজনৈতিক হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলমান বিদ্বেষ কে একটা ভয়াবহ আকার আকৃতি দিয়ে ,ব্রিটিশের ভাজক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা ।সেই হেডগেওয়ার কে মহিমান্বিত করতেই, তার ইতিহাসের নিরিখে নেতিবাচক ভূমিকা কে, ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপিত করে,  তাকে ইতিহাসের’ নায়ক ‘ হিসেবে উপস্থাপিত করতে চেয়ে আরএসএসের এই সমস্ত কর্মকান্ডের উদ্যোগ এবং আয়োজন  করে।

মহারাষ্ট্রের কোনো বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হেডগেওয়ারের  কখনো কোন সংযোগ ছিল না ।বাংলার কোনো বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ও হেডগেওয়ারের  কোন সংযোগ ছিল  না।নিছক কৌতুহলবশত তিনি অনুশীলন সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বিপ্লবীবীর ত্রৈলক্য মহারাজের কাছে এক দুবার যাওয়া-আসা করেছিলেন। ব্যাস এইটুকুই। এর থেকে বেশি ত্রৈলোক্য মহারাজ বা অনুশীলন সমিতির সার্বিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে হেডগেওয়ারের পক্ষ কোনরকম মানসিক নৈকট্য ,আদর্শগত নৈকট্য ,শারীরিক নৈকট্য গড়ে ওঠেনি।

ধারাবাহিক লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুনঃ www.cpimwb.org.in

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (অষ্টম পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (সপ্তম পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (ষষ্ঠ পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পঞ্চম পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (চতুর্থ পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (তৃতীয় পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (দ্বিতীয় পর্ব)

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (প্রথম পর্ব)

Spread the word

Leave a Reply