ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস (পর্ব – ২৪)
উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিকাশের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক হিন্দুদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার যে পর্যায়টি রচিত হয় ,সেই গোটা কার্যক্রমটি রচনার পেছনে পটভূমিকা ছিল। সেই পর্যায়কে কেন্দ্র করে নানান উপক্রমের ও একটা বিশেষ রকমের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। আর সেই ভূমিকা কে কার্যকরী করে তুলতে গোরক্ষিনী সভা গুলির অত্যন্ত চোখে পড়ার মতো কাজকর্ম ছিল।
এইসব গোরক্ষিনী সভা গুলিকে কিন্তু মূলত আড়াল থেকে পরিচালিত করত স্থানীয় উচ্চবর্ণের হিন্দু জমিদারেরা। ধীরে ধীরে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম যুগের নেতৃত্ব ইংরেজের অর্থনৈতিক শোষণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভেতরেও একটা সচেতনতা তৈরি করে দিতে শুরু করেছিল। এই পর্যায়ক্রম টি কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সঙ্গে সংযুক্ত লোকজনদের মধ্যে একটি সংশয়ী মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছিল ।ফলে তারা ভাবতে শুরু করেছিল যে, তাদের শ্রেণীস্বার্থ জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্বে কর্মকাণ্ডের দ্বারা মারাত্মকরকমের বিঘ্নিত হবে।
এই কারণেই তারা তাদের শ্রেণীস্বার্থ কে সুরক্ষিত রাখবে তাগিদ থেকেই সমাজের বুকে রাখতে শুরু করে।জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব খুব সামান্য হলেও ,যেভাবে জমিদার ,জোরদার, সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের একচ্ছত্র আধিপত্যকে অস্বীকার করার একটা মানসিকতা তৈরী ইঙ্গিত দিচ্ছিল ,সেই ভীতির জায়গা থেকে, নিজেদের একচ্ছত্র সার্বিক অধিকার কে বজায় রাখবার তাগিদ ও তৈরি হচ্ছিল।
জমিদার জোরদারে রা গোরক্ষিণী সভা গুলিকে নানান ভাবে সাহায্য করতে শুরু করে দেয়। অপরপক্ষে ,ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, তাদের ভারত শাসনের কার্যক্রমের ভিতরেও শাসনতান্ত্রিক অদল বদলের একটা ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছিল।সেই ইঙ্গিত টুকু ঘিরে কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক প্রভুরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে অত্যন্ত চিন্তাশীল হয়ে পড়ে।
জমিদার জোতদারদের এমন একটি ধারণা তৈরি হতে থাকে যে ,ব্রিটিশ সরকার হয়তো বা জাতীয় কংগ্রেসের আন্দোলন এবং তার পাশাপাশি খুব ধীরগতিতে হলেও ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের যে দিক চিহ্নগুলি তখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে শুরু করেছে, এসবের ফলে শাসনতন্ত্রে এমন কোন পরিবর্তন আনবে ,যাতে পরিবর্তনগুলি সামন্ততান্ত্রিক শক্তির শ্রেণীর স্বার্থের পক্ষে ইতিবাচক হবে না ।
এই জায়গা থেকে কিন্তু জমিদারেরা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একটা সামাজিক অচলায়তন তৈরি করে, সাম্প্রদায়িকতার ডিমে তা দিয়ে ,গোটা দেশের ভেতর একটা বিভাজন রেখা তৈরি করতে শুরু করে। সেই বিভাজনের ফসল যাতে ইংরেজ উপভোগ করতে পারে সেজন্যে সচেষ্ট হয়।এ জন্যেই এমন একটি ব্রিটিশের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়, যাতে ব্রিটিশ শেষপর্যন্ত সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে যত্নবান হয়।
এই কাজের জন্যই আত্মনিয়োগ করতে শুরু করে কৃষ্ণপ্রসন্ন সেন প্রমূখ হিন্দু পুনর্জাগরণ বাদীরা ।মুঙ্গের কে কেন্দ্র করে যে বিভাজন রেখা টানতে সচেষ্ট ছিলেন কৃষ্ণপ্রসন্ন, সেই বিভাজন রেখা একটা সাম্প্রদায়িক দিনাঙ্ক তৈরি করে।ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের দিক থেকে ইতিবাচক প্রেক্ষিত কিন্তু এইসব কাজ কে কেন্দ্র করে পরিষ্কার ভাবে শুরু হয়ে যায় ।
গোটা হিন্দি বলয় জুড়ে ,হিন্দু পুনরুত্থানবাদীদের গোরু কে কেন্দ্র করে এই কর্মকাণ্ডের জেরে ‘ অহির’ সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু, অর্থাৎ; যাদব সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দুরা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার তাগিদ শুরু করে।এই তাগিদকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে খুব নিবিড় ভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়তে শুরু করে গো রক্ষিণী সভাগুলি।
এগুলিকে কেন্দ্র করে, জমিদার ,জোতদারেরা গোটা উত্তর ভারত, পশ্চিম ভারত, এমন কি পূর্ব ভারতে পর্যন্ত , নিজেরা আড়ালে থেকে কৃষক সম্প্রদায় কে গোরক্ষার নাম করে, সাম্প্রদায়িকতার আগুনে আগুনের দিকে ঠেলে দেয়। যে অংশের কৃষকদের এভাবে সাম্প্রদায়িক ভাবে তারা প্ররোচিত করতে পারে, তাঁরা কিন্তু মূলত ছিল এই ‘অহির’ সম্প্রদায়ভুক্ত ।যাঁদের কাছে গরু একটি জীবিকার অঙ্গ ।অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
এইভাবে একটি গুরুতর কায়েমী স্বার্থ কে সামনে রেখেই সামন্ততান্ত্রিক প্রভুরা গোরু কে কেন্দ্র করে, যাদব সম্প্রদায়ের হিন্দুদের প্ররোচিত করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের ভেতর নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে। এই পর্যায়ে কিন্তু পরবর্তীকালে হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব নির্মাণের লক্ষ্যে যে সমস্ত কর্মকাণ্ড ,বিশেষ করে হিন্দু মহাসভা, তার ও পরে আর এস এস প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ভিতর দিয়ে প্রকট হতে শুরু করে।
কৃষক সম্প্রদায়কে জমিদারেরা, যতই অধিকার সচেতনার দিকগুলি থেকে তাঁদের কে ভুলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে গোরক্ষা নাম করে ,নানা ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেবার চেষ্টা করুন না কেন, কৃষক সম্প্রদায় কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে ,তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানাভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। জমিদার -জোতদার- সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের নানা ধরনের অর্থনৈতিক শোষণ, যেগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রত্যক্ষ মদতে দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলির প্রতিবাদে মুখর হয়। প্রতিরোধের সংকল্পে কৃষক সমাজের ভেতর যে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে, সেই আন্দোলনে কিন্তু কোনোরকম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছিল না। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কোন রকম ইঙ্গিত ছিল না।
হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে, সমাজের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষ ,যাঁরা মূলত কৃষি কেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত ,তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ,জমিদারদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল। এই সংঘবদ্ধতার ভেতরে কিন্তু কোনোরকম সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না ।জমিদার হিন্দু বলে তাঁর বিরুদ্ধে, মুসলমান প্রজা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে, এমন কোনো উপাদান আন্দোলনের এই পর্যায়ে ছিল না।
জমিদার হিন্দু না মুসলমান, এই ভাবনাটি আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যে কোন ভাবে কাজ করেনি। একমাত্র কাজ করেছিল, জমিদারের অর্থনৈতিক শোষণের প্রসঙ্গটি ।তাই হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ,কৃষক সমাজের ভিতর, জমিদারের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে, একটা ঐক্যবদ্ধ লড়াই এর পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করেছিল।
মনে রাখা দরকার গোটা ভারতবর্ষে কিন্তু সার্বিকভাবে গোরক্ষা কে ঘিরে সাম্প্রদায়িক আন্দোলনটি সামাজিক স্তরের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল এমনটা মনে রাখার কোনো কারণ নেই। তবু অনেক সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করেই গো রক্ষা আন্দোলনের ভিতরে একটা ছদ্ম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে , জাতীয়তাবাদী ধারার বিকাশ হিশেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। এই চেষ্টা সেই সময়ে ও হয়েছিল।আজ ও হয়।মনে রাখা দরকার গোরক্ষাবাহিনীর ,সেই ধারাকে অবলম্বন করে, গোটা জাতীয় আন্দোলনের প্রেক্ষিতকেই একটা সাম্প্রদায়িক গতিপথে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
গোরু কে কেন্দ্র করে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরের কার্যক্রম, উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে বিভিন্ন পর্যায় চলতে শুরু করে।সেই কার্যক্রম সম্বন্ধে কিন্তু কঠোর মনোভাবের পরিচয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম পর্যায়ের নরমপন্থী নেতারা কখনো দেখান নি। তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে গোরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হননি এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ।কিন্তু গোরক্ষা কে কেন্দ্র করে যে ধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার প্রকাশ ও প্রসার ,আস্তে আস্তে ভারতীয় সমাজ জীবনকে গ্রাস করতে শুরু করছে, সে সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা কোনো রকম প্রতিবাদ প্রতিরোধের সংকল্প ঘোষণা করেননি।
বরং তাঁরা একটা অদ্ভুত ধরনের শীতলতা ,অদ্ভুত ধরনের নীরবতা সমস্ত কার্যক্রম টিকে নিয়ে রক্ষা করে গিয়েছেন ।জাতীয় কংগ্রেসের ১৮৯১ সালে নাগপুরে যে অধিবেশন হয়, সেই অধিবেশনের শেষে কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে গোরক্ষণী সভার আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজন টা কিন্তু খুব ছোট মাপের ছিল না। জাতীয় কংগ্রেসের বেশকিছু প্রতিনিধি ‘গো রক্ষণী’ সভার সেই অধিবেশনে দর্শকের আসনে উপস্থিত ছিলেন ।
১৮৯৩ সালে জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশন হয়। সেই অধিবেশনে গোরক্ষা বাহিনীর অন্যতম প্রধান নেতা, শ্রীমান স্বামী যোগ দিয়েছিলেন। লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের সঙ্গে গো রক্ষা বাহিনীর লোকজনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।চরমপন্থী নেতৃত্বের বিকাশ লাভের পর্যায়ে, চরমপন্থীদের সঙ্গে গোরক্ষা ভাবনা নিয়ে চলা সাম্প্রদায়িক শিবিরের লোকজনের যে একটা সংযোগ তৈরি হয়েছিল ,এটা কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে বলতে পারে যায় ।
গোরক্ষা কে ঘিরে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী, উভয় শিবিরের ভেতরে যে একটা মৃদু আকর্ষণ, কখনো কখনো প্রত্যক্ষ আকর্ষণ, সেই গোটা ঘটনাক্রম কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভেতর গভীর বেদনা এবং হতাশা মানসিকতা তৈরি করতে শুরু করে। বস্তুত, এই কারণেই মুসলমান সম্প্রদায় কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করে ।
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশনের পর, জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন দীর্ঘদিন কোনো মুসলমান প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে ছিলেন না ।গো রক্ষার পাশাপাশি ,ভাষাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের সংস্কৃতিক প্রতীক ব্যবহারের ভেতর দিয়ে ,হিন্দু-মুসলমানের ভেতরে বিভাজন রেখাটি কে স্পষ্ট করে তোলার জন্য , উনিশ শতকের শেষ দিকে, পুনরুত্থানবাদীয আন্দোলনের নেতৃত্বের ভেতর যে ধরনের আগ্রহ দেখা দেয়।
এই প্রবণতা পরবর্তীকালে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে, তাদের নখদন্ত বিস্তারের কাজে অনেকখানি সহায়তা করে ।উনিশ শতকের ছয়ের দশকে কে উত্তর পশ্চিম প্রদেশ এবং অযোধ্যা অঞ্চলে হিন্দি উদ্যোগের একটা ভয়ঙ্কর রকমের বিতর্ক তৈরি হয় ।এই প্রবণতার পেছনে সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের যেমন মত ছিল ,তেমনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির একটা জোরদার মাদক ছিল ।
অবিভক্ত পাঞ্জাব ,সেন্ট্রাল প্রভিন্স( আজকের উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড) সহ গোটা উত্তর ভারতে , হিন্দি ভাষা দাপট থাকলে ১৮৮২ সাল নাগাদ ,এই ভাষা বিতর্ক, ভারতবর্ষের সামাজিক প্রেক্ষাপটে, একটা বড় রকমের ঘটনাক্রম হয়ে দাঁড়ায়।
সামগ্রিক সামাজিক প্রেক্ষাপট কে অবলম্বন করে সংস্কারবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব , পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতৃত্ব ইত্যাদিরা , আর্য সমাজ ইত্যাদি সংগঠনগুলি ,একটা প্রান্তিক পর্যায়ে ,ভারতবর্ষের সামাজিক প্রেক্ষিত কে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরদারভাবে কার্যক্রম শুরু করে দেন। বিশেষ করে, এই কাজে ‘প্রার্থনা সমাজ’ একটি বড় রকমের নেতিবাচক ভূমিকা পালন করতে থাকে।
এই গোটা কার্যক্রম ভারতবর্ষের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ইতিহাসে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এবং তার পাল্টা হিসেবে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে প্রসবের ক্ষেত্রে একটা উর্বর জমি দান করে ।উনিশ শতকের নয়ের দশকে ভাষাকে কেন্দ্র করে বড় রকমের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পর্যায় রচিত হয় বারাণসীতে। সেখানে ১৮৯৩ সালে ‘নাগরী প্রচারিনী সভা’ নামক একটি সংগঠন তৈরি হয়। যে সংগঠন টির মূল কাজ ছিল, ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাকে তীব্র করে তুলে ,ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করা।
উত্তর ভারতের বেশিরভাগ মানুষ যে হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় কথা বলেন ,সেই দুটি ভাষার উৎস যে একই, এবং দুটি ভাষার বর্ণমালার লিখিত রূপ, তার ভেতর ভিন্নতা থাকলেও ,তাদের উৎসগত দিকে যে সাযুজ্য আছে ,এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ,এক ধরনের সামাজিক বিভাজন তৈরি করতে, এই প্রচারণী সভা, তার জন্মলগ্ন থেকেই কার্যক্রম শুরু করে দেয়।
দেবনাগরী হরফে লেখা হয় হিন্দি ভাষা। তাই হিন্দি ভাষার ভেতর সংস্কৃত শব্দ বেশি দেখতে পাওয়া যায় ।অপরপক্ষে স্বরবর্ণ বেশি লেখা হয় উর্দু ভাষাতে। তাই ফারসি এবং আরবি শব্দের প্রাবল্য উর্দু ভাষার ভেতরে দেখতে পাওয়া যায় ।কিন্তু কথ্যভাষার জায়গা থেকে বাদ যদি আমরা না ধরি, তাহলে ভাষার এই সার্বিক প্রেক্ষিতে কিন্তু কখনো বুঝতে পারব না।
হিন্দি এবং উর্দুর কথ্যভাষার পারস্পরিক ক্ষেত্রে কিন্তু উভয়ের মধ্যে খুব একটা ফারাক নে।ই লিখিত রূপে কিছু খারাপ থাকলেও, কথ্যরূপের মধ্যে কোনো ফারাক না থাকার ব্যাপারটিকে কার্যত অস্বীকার করে, এই নাগরী প্রচারিনী বারানসি কে ঘিরে যে ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করে ।
এই চেষ্টাটি সামগ্রিকভাবে উত্তর ভারতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে, তাদের সমস্ত রকমের পায়ের নিচে জমি পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময় উর্দু ভাষা র সরকারিভাবে স্বীকৃত ছিল। সেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কেন দেবনাগরী কে সরকারি কাজের উদ্দেশ্যে কেন স্বীকৃতি দেওয়া হবে না –এমন একটি বিষয়, আন্দোলনের ভেতর দিয়ে নাগরী প্রচারিনী সভা ,তাদের ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার প্রেক্ষাপটকে বিস্তৃত করতে শুরু করে ।
এই উদ্দেশ্যে তারা সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয় ।দেশীয় খবরের কাগজ গুলিতে নানা ধরনের চিঠি সম্পাদককে লিখতে শুরু করে ।হিন্দি সাহিত্যের সেসময়ের প্রথিতযশা স্রষ্টা ভারতের হরিশচন্দ্রের মত ব্যক্তিত্বরাও হিন্দি ভাষাতে ধ্রুপদী সংস্কৃত ঐতিহ্যের কথা তুলে ,ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করেন। হিন্দি ভাষার মর্যাদা এবং প্রাচীনত্ব কেন্দ্র করে ভারতের হিন্দি সাহিত্যিক হরিশচন্দ্রের মতো ব্যক্তিত্বরা, প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের নাম করে ,এক ধরনের ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাকে, ভারতবর্ষের বহুত্ববাদী দর্শনের জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন ।
এই পর্যায়ে তাঁরা হিন্দি ভাষার ভেতর যে সমস্ত স্থানীয় পরম্পরা গুলি ছিল এবং লোকায়োত দৃষ্টিভঙ্গির যে প্রভাব ছিল, সেগুলো কে একদম বিযুক্ত করে ,একটি সংস্কৃত নির্ভর হিন্দি ভাষা তৈরীর পক্ষে মত দিতে শুরু করেন ।এভাবেই হিন্দি হয়ে ওঠে কেবলমাত্র হিন্দুদের ভাষা ।আর উর্দুকে তাঁরা প্রতিষ্ঠা করতে চান কেবলমাত্র মুসলমানদের ভাষা হিসেবে। কিন্তু ভারতীয় জনসমাজের একটা বড় অংশ ,তাঁরা কিন্তু হিন্দি, উর্দু দুটি ভাষাকে ই সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে বিশেষ রকমের গুরুত্ব আরোপ করেছিল।
এই আন্দোলনের সঙ্গে মদনমোহন মালব্যের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।তাঁর মতো রাজনৈতিক হিন্দু সাম্প্রদায়িক মানসিকতা সম্পন্ন নেতৃত্ব সংযুক্ত হওয়ার ফলে ,ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকদের এই আন্দোলনটি ,একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য পেতে শুরু করে। রাজনীতি র নিরিখে এই আন্দোলনটি একটি সাম্প্রদায়িক মাত্রা পেতে শুরু করে।
বিশ শতকের একদম সূচনালগ্নে, অর্থাৎ ; ১৯০০ সালের , এপ্রিল মাসে ,উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ এবং অযোধ্যা তে সরকার সিদ্ধান্ত নেন; সেখানে উর্দু র সাথে দেবনাগরীকে সমান সরকারি মর্যাদা দেওয়া হয়। এই জায়গা থেকে উর্দু ভাষাকে যাঁরা প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন ,তাঁরা নিজেদের ভাষার ভাবগত সুরক্ষার জন্য সচেষ্ট হয়ে পড়েন। তাঁরা একটি পাল্টা সংগঠন তৈরি করেন। যে সংগঠন টির নাম হয়’ আজ্ঞুমান তারা কি উর্দু’। উর্দু ভাষার অগ্রগতির লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালিত করবার উদ্দেশ্যে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ।সংগঠনের ব্যক্তিত্বরা মনে করতেন; ১৯০০ সালের ওই সরকারি প্রস্তাবে , যে পর্যায়ে দেবনাগরী কে উর্দু র সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে ,তাতে করে উর্দু ভাষা আগামী দিনে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ।
এই ভাষা ভিত্তিক বিতর্ক কিন্তু পরবর্তীকালে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার লাভের ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের ভূমিকা পালন করেছিল ভারতবর্ষে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক ,সাংস্কৃতিক, প্রেক্ষাপটের যে ভূমিকা ছিল ,সেই ভূমিকার নিরিখে, এই ভাষাভিত্তিক টানাপোড়েন টি বিশেষ রকমের গুরুত্বের দাবি রাখে। এই ভাষা ভিত্তিক টানাপোড়েন টি কিন্তু পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে আরো তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন বিশেষভাবে সাম্প্রদায়িক শিবির তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কারনে ব্যবহার করতে শুরু করে।
গোরক্ষা কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম সুসংবদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত একদম প্রকাশ্যে প্রচলিত হিন্দুদের ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক প্রতীকগুলো ব্যবহারের উদাহরণ কিন্তু ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় সে অর্থে ছিল না। গোরু কে কেন্দ্র করে যে কার্যক্রম ভারতবর্ষের বুকে শুরু হয় এবং সেই কার্যক্রম যেভাবে ধীরে ধীরে একটা রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করে, তার ফলশ্রুতিতে কিন্তু প্রচলিত হিন্দুদের ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক প্রতীক গুলিকে জোরদারভাবে ব্যবহার করার রেওয়াজ শুরু হয়।সেগুলিকে ভারতবর্ষের হিন্দুসমাজের ব্যবহারিক জীবনে অনুপ্রবেশ কাটানোর পরিকল্পনা শুরু হয়। এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়; লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রের যে গণপতি উৎসব সংঘটিত হয়েছিল ,তার গোটা পর্যায়ক্রমটিকে।
এই গণপতি উৎসব রাজনৈতিক অর্থে ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবার ক্ষেত্রে একটা বড় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে আধুনিক ভারতে।আজকের দিনে দশরথনন্দন রামকে ঘিরে যে রাজনৈতিক উদ্যোগ সাম্প্রদায়িকেরা নেয়, সেই উদ্যোগের পর্যায়ক্রমটিই সেদিন রচিত হয়েছিল’ গণেশ’ কে কেন্দ্র করে।
গণেশ কে ঘিরে বিন্ধ্য পর্বতের অপর প্রান্তের মানুষদের ভেতরে আবেগ শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালোবাসা নতুন কোন জিনিস নয় ।বস্তুত পেশওয়ারদের শাসনকাল যখন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জোরদারভাবে শক্তিশালী ছিল, এবং আমাদের প্রচলিত রীতিনীতির প্রভাব সেই অঞ্চলের সামাজিক পরিকাঠামো কে অনেকখানি পরিচালিত করত ,সেই সময় কাল থেকে কিন্তু বোম্বাই প্রেসিডেন্সির ভৌগলিক অঞ্চলে গণেশ কে ঘিরে অর্চনা- আবেগ ইত্যাদি শক্তিশালী ছিল ।
গণেশ কে ঘিরে সেই সময়ে, ওই অঞ্চলের মানুষদের আবেগের ভেতর কিন্তু সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্যের বিষয় এটি ছিল এই যে,চিৎপাবন ব্রাহ্মণ্যবাদী অস্মিতা সম্পন্ন শ্রাবণ মানুষেরা যেমন গনেশ পূজা করতেন ।এই পুজোকে ঘিরে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আবেগ ছিল। তেমনি ই কিন্তু নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের ভেতরে ও এই পুজোকে নিয়ে একটা আবেগ ছিল ।শ্রদ্ধা ছিল ।ভালোবাসা ছিল।
তবে এই সময় কালে গণেশ ছিলেন কিন্তু সম্পূর্ণভাবে গৃহস্থের পূজিত একজন দেবতা। উচ্চ- নিচ- ধনী-দরিদ্র, নির্বিশেষে গৃহস্থ তাঁদের পরিবারের মঙ্গল কামনায় গনেশ পূজা করতেন ।গণেশ কে ঘিরে নানা ধরনের আচার-আচরণ পালন করতেন। সেই গণেশ কে একটা সর্বজনীন আবেগের ভেতর উপস্থাপিত করে ,গোটা পর্যায়ক্রমে ভেতর রাজনৈতিক আবেগকে সম্পৃক্ত করে দেওয়ার তাগিদ কিন্তু ১৮৯৩ সালে বোম্বাইতে গো রক্ষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তারপর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচলিত করে দেয়া হয় ।
এই গোটা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক এবং চিৎপাবন ব্রাহ্মণদের ভূমিকা ছিল। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়; গণেশ পূজো কে একটা গণ উৎসবে পরিণত করে ,ধর্মের একটা বারোয়ারি আবেগ তৈরি করে ,রাজনৈতিক পথে তাকে পরিচালিত করার উদ্যোগ, এই পর্যায়ক্রমে ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠতে দেখা যায়।
গণেশ উৎসবকে ঘিরে তার ভিতরে রাজনীতি কে প্রবেশ করানোর সিদ্ধান্ত লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক এবং চিৎপাবন ব্রাহ্মণেরা পৃথক পৃথকভাবে নিয়েছিলেন ।সেই কার্যক্রমটি কিন্তু ভারতবর্ষের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।তিলক প্রমুখের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ছিল; এর ফলে ব্রাহ্মণ প্রধান কংগ্রেস এবং অব্রাহ্মণ লোকেদের ভিতর ব্যবধান নাকি দূর হবে।
সমকালে এবং সমকাল অতিক্রম করে ভাবীকালের বুকেও সেই সিদ্ধান্ত কতখানি মারাত্মক হয়েছিল ,তা আজকের ভারতবর্ষের প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করলে আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার হয়ে যায়। তিলকের গণেশ উৎসবের ভেতর রাজনীতি প্রবেশ করার পেছনে যুক্তি ছিল এই যে জাতীয় কংগ্রেসের ভেতর তখন ব্রাহ্মণদের আধিপত্য অত্যন্ত প্রবল ।আর সেই জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ব্রাহ্মণ সমাজের বাইরে থাকা জনগনের একটা বড় ধরনের দূরত্ব ।তিলক ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ কংগ্রেসের সঙ্গে ,কংগ্রেসের বাইরে থাকা সাধারণ জনগণ ,যাঁরা উচ্চবর্ণের হিন্দু ছিলেন না তাঁদের ভেতর যে দূরত্ব রয়েছে ,সেই দূরত্বকে দূর করবার জন্যই গনেশ উৎসব কে ,একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ।
এই প্রেক্ষিতে তিলক যে কাজটি করেছিলেন, সেটিও কিন্তু সেই সময়ের ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত নেতিবাচক একটি প্রভাব ফেলেছিল ।সেই প্রভাবের মারাত্মক ফল ভারতবর্ষ আজও কিন্তু ভুগে চলেছে। তিলক দের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল; ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ করছে।
এই অভিযোগের উপর ভর করে তিলক পুনা শহরের মুসলমান সম্প্রদায়ের শোকের উৎসব মহররম বয়কট করার জন্য সেই শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান । সেই আহবানের অঙ্গ হিসেবে ই তিনি বলেন হিন্দুদের গণপতি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে।
গণপতি উৎসব এর ভেতর একটা গোষ্ঠীগত প্রাধান্য কে সু তীব্র করে তুলতে তিলক যে উদ্যোগ ১৮৯৪ সালে নেন, সেগুলো কিন্তু ভারতের সামাজিক প্রেক্ষিতে একটি অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
ধারাবাহিক লেখাগুলি পড়তে ক্লিক করুনঃ www.cpimwb.org.in
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২৩)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২২)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২১)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ২০)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৯)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৮)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৭)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৬)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৫)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৪)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১৩)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১২)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১১)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব – ১০)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পর্ব- ৯)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (অষ্টম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (সপ্তম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (ষষ্ঠ পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (পঞ্চম পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (চতুর্থ পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (তৃতীয় পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (দ্বিতীয় পর্ব)
ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও আর এস এস – (প্রথম পর্ব)