Higher education cover

Higher Education: The Status

শ্রুতিনাথ প্রহরাজ

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মুষল পর্ব শুরু হয়েছে। মহাভারতে মুষল পর্ব বলতে আমরা  জেনেছিলাম শেষের দিকটা যেখানে একের পর এক হিংসা হানাহানির মধ্য দিয়ে ধ্বংসের ষোল কলা পূর্ণ হয়। একইভাবে, এ রাজ্যে এখন প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত  সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, নৈরাজ্য, অপশাসনের মধ্য দিয়ে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় মুষল পর্ব অর্থাৎ ধ্বংসের ষোল কলা পূর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রীর চরম স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক আচরণের মূল্য দিতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ তার সাথে যুক্ত অগণিত ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষাকর্মী ও অভিভাবকদের। বিদ্যালয় শিক্ষা এখন আদালতের এক্তিয়ারে আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা লাটসাহেব অর্থাৎ রাজ্যপাল তথা আচার্যের মর্জির অধীন। শিক্ষা দুর্নীতি এখন আদালতের রোজনামচা, অন্যদিকে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের দড়ি টানাটানির খেলা এখন পাড়া ক্রিকেট বা পাড়া ফুটবলের পর্যায়ে নেমে এসেছে। কেউ উপভোগ করছে, কেউ রোজ এই খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তবে এর মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে কতজন ওয়াকিবহাল সেটাই এখন প্রধান বিচার্য বিষয়। ধান্দার ধনতন্ত্রের যুগে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবসায়ীরা চাইবে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় এধরণের নৈরাজ্য, অনাচার  উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক। কারণ, এইভাবে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থার পথ প্রশস্ত করতে না পারলে, শিক্ষার বাজারে বল্গাহীন মুনাফার লক্ষ্যে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষায় সরকারি বরাদ্দ ধারাবাহিক ভাবে কমছে, বাণিজ্যিক বিনিয়োগ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ছাত্র নেই বা কম এই অজুহাতে সরকারি স্কুল বন্ধ হচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মত বাড়ছে। ‘কে জি টু পি জি’– সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে। এককথায় এই মুষল পর্বে  শিক্ষায় বিনিয়োগকারী কর্পোরেট পুঁজির পৌষ মাস আর  রাজ্যবাসীর সর্বনাশ। সারা দেশ জুড়ে এই এক চিত্র. এ রাজ্য তার ব্যতিক্রম নয়। বিজেপি তৃণমূল দু’দলই এই কর্পোরেট পুঁজির দেওয়া ইলেক্টোরাল বন্ডের অর্থে পুষ্ট– কেউ কম আর কেউ বেশি। তাদের লক্ষ্যটা একই।

এ রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় বর্তমানে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার আঁতুড় ঘর নির্মাণ হয় ২০১১ সালের ২ নভেম্বর। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে আসার ৬ মাসের মধ্যেই একটা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে একসাথে ১৩ টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট/সিন্ডিকেট, কোর্ট/কাউন্সিল ভেঙে দেয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক প্রশাসনের জায়গা নেয় দলতান্ত্রিক দখলদারির একদলীয় প্রশাসন। নৈরাজ্যের মহড়া শুরু হয় তখন থেকেই। ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন  তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে। ব্রিটিশ যুগ থেকে চালু হাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তনীদের প্রতিনিধিত্ব (রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট কেন্দ্র) তুলে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে মনোনীত সদস্যের সংখ্যা বাড়িয়ে দলীয় দখলদারির পথ প্রশস্ত করা হয়। তবু ভয় না কাটায়, ওই আইনে যেটুকু নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের কথা বলা ছিল তা আজ  পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। আজও   বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কোর্ট/কাউন্সিল, সিনেট/সিন্ডিকেট-এ ছাত্র-শিক্ষক শিক্ষাকর্মী আধিকারিকদের আইনানুগ কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইন মেনে দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় বিধি বা স্ট্যাটুটের। ২০১২ সালে  নতুন আইন চালু  হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটুট তৈরি হয়নি। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে কিভাবে? গত ১২ বছর রাজ্য যেভাবে চলছে একজনের বিধি বা খেয়ালখুশিতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। সবটাই চলছে তেনার ইচ্ছেতে। এমনকি ইউ জি পিজি কোর্স সহ সার্বিক পঠনপাঠন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য যে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল তৈরি হওয়ার কথা, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও   তা আইন মোতাবেক তৈরি হয়নি। সবটাই চলছে অনেকটা ‘গো অ্যাজ ইউ লাইক’ ঢঙে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আজকের যে সার্বিক সংকট তৈরি হয়েছে তার মূল কারণ এটাই।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক প্রশাসন না থাকায় অধ্যক্ষ থেকে উপাচার্য সর্বক্ষেত্রেই পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অসহায়তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের একাংশ দক্ষ প্রশাসকের থেকেও নির্বোধ স্তাবক হওয়াটাকেই সময়ের দস্তুর বলে মেনে নিয়েছেন। কারণ, শিরদাঁড়া সোজা করে মাথা উঁচু রেখে শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনা করাটা এ রাজ্যে এখন কার্যত অপরাধ ও অসম্ভব। তাই সম্মান ও স্বাস্থ্যহানির ভয়ে যোগ্য শিক্ষকদের অধিকাংশই এখন কলেজের অধ্যক্ষ পদে আবেদন করার ঝুঁকি নেননা। অপরদিকে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় চলছে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত উপাচার্যদের দিয়ে। প্রথমদিকে যাদবপুর, কলকাতা, গৌড়বঙ্গ, রবীন্দ্রভারতী বা মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত উপাচার্যগণ মাথা উঁচু রেখে কাজ করতে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। মাঝপথে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাঁদের। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর দখলদারি হারানোর ভয়ে এরা আর স্থায়ী ভাবে উপাচার্য নিয়োগের কোনো ঝুঁকি নেয়নি। কলে কারখানায় যেভাবে স্থায়ী শ্রমিকের জায়গায় অস্থায়ী বা ঠিকা শ্রমিক নিযুক্ত করা হয় আর্থিক ও নিয়ন্ত্রণের সুবিধার কথা ভেবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনায় বর্তমান রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটা সেই একই ধাঁচার।  সংকটের এটিও একটি কারণ।

এলাকাভিত্তিক শাসক দলের ছোট বড় মাঝারি নেতারা এই সুযোগে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে দখলদারি ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। নেত্রীর প্রত্যক্ষ মদতে ক্যাম্পাসগুলি কার্যত অনাচারের মৃগয়া ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নৈরাজ্যে বাধা দিতে গিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চরম নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী ছাত্র-ছাত্রীদের অনেককেই। যাদবপুর  বা প্রেসিডেন্সির মতো দু একটি প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে অধিকাংশ  উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অনাচার এখন রোজনামচা বলা যেতে পারে। এটাই অনিবার্য ধরে নিয়ে গা সওয়া হয়ে গেছে অনেকের। ফলে দৈনন্দিন লেখাপড়ার ক্ষতি সহ সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুক্ত জ্ঞানচর্চার অঙ্গন এখন বদ্ধ জলার রূপ নিয়েছে।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতি বিধানে শিক্ষক শিক্ষা কর্মী ছাত্র-ছাত্রীদের মত বিনিময়ের সুযোগ কার্যত না থাকায় এদের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ এই সম্পর্কের শক্তিশালী ভিত্তিই পারে অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলে ক্যাম্পাসগুলিকে রক্ষা করতে।

২০১৭ সালে এই অবৈধ দখলদারির আইনানুগ বৈধতা পেতে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন  প্রণয়ন করে রাজ্য সরকার। শিক্ষা প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে সরকার তথা শাসক দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত করতে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার কেড়ে নেওয়া হল। অথচ ১৯৪৮ সালে গঠিত স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষত উচ্চশিক্ষায় স্বাধিকার রক্ষার প্রশ্নে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে উচ্চশিক্ষায় গুণমান রক্ষা ও উন্নত করার পূর্বশর্তই হল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা করা। এ রাজ্যে সেই স্বাধিকার আজ   বিপন্ন। বর্তমান জেলে থাকা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এই আইন  লাগু করতে গিয়ে সদর্পে বলেছিলেন, ” আমরা টাকা দিই মাথা গলাবো বেশ করব”। এই কদিন আগে রাজ্যপালের সাথে লড়াই লড়াই খেলা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও প্রায় একই ঢঙে বললেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করব”। অর্থাৎ বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বানানো ঢাকের চামড়ায় যে যার মত চাঁটি মেরে যাচ্ছে! শিক্ষার উন্নয়ন নয়, উভয়পক্ষের মূল লক্ষ্যই হলো ক্যাম্পাসের দখলদারি। রাজ্যপাল তথা আচার্যের এজেন্ডায় অবশ্য শিক্ষা নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের বিষাক্ত পরিকল্পনা যুক্ত থাকাটা বাড়তি বিপদের কারণ।

২০১৭-র এই আইনের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবার গণতান্ত্রিক অধিকার টুকুও কেড়ে নিতে চায় বর্তমান শাসক দল। গত সাত বছর নির্বাচিত ছাত্রসংসদ নেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কোথাও। বাধ্য হয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন করবার কথা এখন আদালতকে বলতে হচ্ছে। তবু কবে হবে বা আদৌ ছাত্রসংসদ নির্বাচন হবে কিনা কেউ জানে না। কারণ সবই তেনার ইচ্ছা। অবশ্য এ বিষয়ে রাজ্যপালের দল বিজেপিও একই পথের পথিক। ত্রিপুরায় ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটিও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদের নির্বাচন  হতে দেয়নি তারা। সেখানেও একইভাবে বহিরাগত ভাড়াটে গুন্ডাদের দখলে চলছে সবটা। আসলে  তৃণমূল বিজেপি উভয় দলই ভয় পায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মত প্রকাশের অধিকার টুকু কেড়ে নিয়েছে ওরা। উচ্চশিক্ষায় বর্তমান সংকটের এটিও একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

ইউজিসির নিয়ম মেনে রাজ্যপাল আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তার সবটা ভালোভাবেই জানে তৃণমূল কংগ্রেস দল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য যেই হন না কেন, আচার্যের চেয়ারে বসেন কেবলমাত্র ঐ সংস্থার মালিক। নতুবা নিয়ন্ত্রণের রাস আলগা হতে বাধ্য।  এসব জেনে বুঝেই তো তৃণমূল কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীকেই আচার্য করবার বিল এনেছিল বিধানসভায় যা এখন রাজভবনের ঠান্ডা ঘরে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাচার জিইয়ে রাখতে উপাচার্য নিয়োগে চরম অনিয়ম করেছে রাজ্য সরকার তথা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।  এখন আবার একই লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিকে ঢোকানো হয়েছে। সেই বিলও রাজভবনে আটকে থাকায় স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ। যেহেতু দক্ষ শিক্ষকরা আসতে চাইছেন না, তাই আইন বদল করে অযোগ্যদের একাংশকে সরকার বসিয়েছে কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে। এ নিয়ে মামলাও শুরু হয়েছে উচ্চ আদালতে।

রাজ্যপাল এখন আচার্যের ক্ষমতা বলে পাল্টা অনিয়ম শুরু করেছেন, একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের একতরফা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে উপাচার্যের পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করে। একাধিক ব্যক্তিকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করে দিয়েছেন তিনি। সঙ্ঘ পরিবারের আশীর্বাদ ধন্য মানুষদের খুঁজে এনে বসিয়ে দিচ্ছেন উপাচার্যের চেয়ারে। আচার্য হিসেবে এই অধিকার তাঁর আছে একথা সর্বোচ্চ আদালতেও স্বীকৃত হয়েছে। এমনিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনায় উপাচার্য মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের দায়িত্ব পালন করলেও তাঁকে তা করতে হয় আচার্যের পরামর্শ মেনে। আর সেই আচার্য পদে পদাধিকার বলে দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে কেউ যুক্ত হলে সমস্যা বাধবে এটাই বাস্তব। কেরালা তামিলনাড়ু সর্বত্রই এক অভিজ্ঞতা। তফাৎ শুধু এই, এখানে দুপক্ষই নৈরাজ্যের কারিগর, নিজের নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে মরিয়া। তাই সবটাই নিছক পাগলামি ভাবলে ভুল হবে। রাজ্য সরকার  কার্যত মেনে নিলেও, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি হুবহু কার্যকর করে কর্পোরেট ও হিন্দুত্বের শক্তির স্বার্থ রক্ষা করার প্রশ্নে রাজ্যপাল তথা আচার্য যে বাড়তি দায়বদ্ধ তা নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। তাই তিনি মরিয়া হয়ে পাল্টা দখলদারির খেলায় নেমেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক প্রশাসন তছনছ করে দিয়ে জমি তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই জমিতে এখন রাজ্যপালের পদ-কে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার তাদের লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে চাষ করতে নেমেছে। মাঝখান থেকে এ রাজ্যের উচ্চশিক্ষার এখন প্রাণান্তকর দশা। এক কথায় অন্তর্জলী যাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থা পাকা।  উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক প্রশাসন সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি আচার্যের পদে রাজ্যপালের বদলে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা বিশিষ্ট কোনো শিক্ষাবিদের নিযুক্তি কতটা জরুরী তা এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।

Spread the word

Leave a Reply