BJP Govt and Emplyment (2)

Employment: The Era Of Modi Govt. (Part – 2)

ভারতে কাজের নিরাপত্তা এবং বিজেপি সরকার – ২য় পর্ব

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

স্থায়ী কাজের সুযোগ ধ্বংস করতে চাইছে সরকার

উন্নত দেশ বলতে কি বোঝায়? জনসংখ্যার এক কিংবা তারও কম বিন্দুবৎ শতাংশের কতিপয় বিত্তবানের সম্পদ বৃদ্ধির বার্ষিক খতিয়ানই কি উন্নয়নের মাপকাঠি? পাগলেও বোঝে এমনটা নয়। কোন দেশে বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রার গড় মান, খাদ্য সুচক, উপযুক্ত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ, শিক্ষান্তে কাজের পরিসর এগুলোই একটা দেশের স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। অর্থনীতি কোন অতিমানবের মস্তিস্ক প্রক্ষালনের ফল নয় বরং ঠিক তার বিপরীত! অর্থশাস্ত্র হল বহুর হিতসাধনের সমাজবিজ্ঞান। মোদী সরকারের আমলে অর্থনীতির সেই ভিত্তিটাই ভেঙে দেওয়া চলছে – উদ্দেশ্য কর্পোরেটজীবীতা।

প্রথম পর্বে আমরা কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। দ্বিতীয় পর্বে পাশ হওয়া চার শ্রম কোডের আরেকটি আইন “অক্যুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন্স কোড” ব্যাপারটা কি দেখে নেওয়া যাক। ২০২০ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে এই আইন সম্পর্কে An Act to consolidate and amend the laws regulating the occupational safety, health and working conditions of the persons employed in an establishment and for matters connected therewith or incidental thereto বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাজের সময় শ্রমিক- কর্মচারীদের স্বাস্থ্যহানী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সাধারণ সুযোগ- সুবিধাসমূহ এবং কাজের জায়গায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই হল উপরোক্ত আইনের পরিসর। যদিও ছিয়াশি পৃষ্ঠার সেই বিজ্ঞপ্তিতে অনেক জায়গাতেই বিভ্রান্তি রয়েছে। সেইসব বিভ্রান্তির উদ্দেশ্য যদিও স্পষ্ট, মালিকপক্ষকে আইনী জটিলতার সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।

প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় কলকারখানা বা ফ্যাক্টরির সংজ্ঞা। আইনের বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে “factory” means any premises including the precincts thereof— (i) whereon twenty or more workers are working, or were working on any day of the preceding twelve months, and in any part of which a manufacturing process is being carried on with the aid of power, or is ordinarily so carried on; or (ii) whereon forty or more workers are working, or were working on any day of the preceding twelve months, and in any part of which a manufacturing process is being carried on without the aid of power, or is ordinarily so carried on… বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং করে না দুটি ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের সংখ্যা আগে যা ছিল তার দ্বিগুন করে দেওয়া হয়েছে। গোটা দেশে ২০ জনের কম শ্রমিক নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করা ছোট ফ্যাক্টরি বা কাজের জায়গা প্রচুর। নয়া আইনে তারা সকলেই স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা আইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। ফ্যাক্টরিতে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় এবং মোট শ্রমিক – কর্মচারীর সংখ্যা চল্লিশের কম এমন কারখানার সংখ্যাও ভারতে অনেক – এদের সকলকেই জোর করে সুযোগ সুবিধা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। এতে কার সুবিধা হবে? কার উন্নয়ন হবে?

নয়া আইনে অবাধে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পে মোট শ্রমিক – কর্মচারীর পঞ্চাশ শতাংশই অস্থায়ী বা ঠিকায় নিযুক্ত। এমনকি বহু স্থায়ী পদেও এদের কন্ট্র্যাক্টরের অধীনে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। আগে ২০ জনের কম শ্রমিক নিয়োগ করে এমন কোন কন্ট্র্যাক্টরের লাইসেন্স প্রয়োজন হতো না, এখন ৫০ জন অবধি নিয়োগে লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না। এতে কন্ট্র্যাক্ট্রদের হাতে আরও বেশী শ্রমিক শোষণের শিকার হবেন – অথচ দাবী ছিল স্থায়ী কাজে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ না করার, স্থায়ী কাজে নিযুক্ত ঠিকা শ্রমিকের বেতন স্থায়ী কর্মীর দেতনের সমান করার। আইনসম্মত বেতন এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাসহ শ্রমিকদের কল্যানে (ওয়েলফেয়ার) মূল কারখানার মালিক (প্রিন্সিপ্যাল এমপ্লয়ার)-দের যে দায় এতদিন বলবৎ ছিল তাকে নয়া আইনে লঘু করা হল – আইন প্রণয়নের দ্বারা শ্রেণীস্বার্থ চরিতার্থের জ্বলন্ত উদাহরন। পেরেনিয়াল ওয়ার্ক মানে সারা বছর কাজের সুযোগ থাকে এমন কাজে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে ঠিকা শ্রমিক যুক্ত করতে আইনি বাধা ছিল, এখন কোর অ্যাক্টিভিটির আড়ালে সেই বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হল। কোর অ্যাক্টিভিটি কাকে বলা হবে? সরকার ব্যাখ্যা দিচ্ছে –

The engagement of contract labour through a contactor in respect of a core activity if :

(a) The normal functioning of the establishment is such that they do not require full time workers for the major portion of the working hours in a day or for longer periods.

(b) The activities are such that they do not require full-time workers for the major portion of the working hours or longer periods.

(c) There is a sudden increase in volume of work in the core activity which needs to be accomplished in a specified time.

একটু ভাবলেই বোঝা যায় আসলে নয়া আইনের নামে একদিনের বৈধ শ্রমসময়কে অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে চাইছে সরকার, এতে শ্রমিকদের আরও সহজে কম পয়সায় বাড়তি কাজ করিয়ে নিতে আইনি বৈধতা পাবে মালিকপক্ষ। ওভারটাইমের পয়সাও খরচ হবে না কেননা শ্রমসময় বাড়িয়ে নিতে পারলে ওভারটাইম বলে কিছু থাকবেই না। আইনের ভাষ্যে ওভারটাইমের কোন সীমার উল্লেখ নেই। এর সাথে সব ধরণের কাজেই যদি ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করা যায় তাহলে স্থায়ী কাজ, স্থায়ী বেতন এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা দিতে মালিকদের কোন দায় থাকবে না। সারাদিন খাটিয়ে নেবার পরেও খুব সহজেই কারখানায় ফুল টাইম ওয়ার্কার প্রয়োজন নেই খাতায় কলমে দেখিয়ে প্রাপ্য মজুরির অনেক কম খরচে কাজ চালানো হবে। আইনের ভাষ্যে একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে সপ্তাহে একদিন ছুটি কিংবা ছয় দিন কাজের কথা, যদিও ঠিক পরের অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিধির ক্ষেত্রে সরকার সিদ্ধান্ত বদলে দিয়ে বিনা ছুটিতে একটানা কাজ করার হুকুম জারী করতে পারে, সেক্ষেত্রে আগামী দুই মাসের মধ্যে কম্পেন্সেটরি ছুটির বন্দোবস্ত করা হবে – নরক গুলজার আর কাকে বলে! মোদী সরকারের আমলে এরই নাম “আচ্ছে দিন”!

দেখে নেওয়া যাক Grievances অর্থাৎ শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে নয়া আইন কি পথ দেখিয়েছে। এতদিন লেবর ইন্সপেক্টর নিজের মতো কোন কারখানা পরিদর্শন করতে পারতেন, এখন থেকে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার! আগাম নোটিশ না দিয়ে কেউ পরিদর্শনে আসতে পারবেন না। নয়া আইনে পরিদর্শকেরা “ইন্সপেক্টর কাম ফেসিলিটেটর” বলে চিহ্নিত হয়েছেন। এরাই পরিদর্শনে আসবেন ঠিকই, কিন্তু সরকারী পোর্টালে প্রাপ্ত তালিকা থেকেই কোথায় যাবেন তা ঠিক করতে হবে। বাস্তব হল সরকারী পোর্টালে নথিভুক্ত রয়েছে সারা দেশে মোট কারখানার মাত্র চল্লিশ শতাংশ সংস্থা। এর বাইরে থাকা বিরাট সংখ্যার শ্রমিক – কর্মচারীরা শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিজেদের অসন্তোষ জানাবেন কোথায়? নয়া আইনে নির্দিষ্ট কোডে উল্লিখিত শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে সিভিল কোর্টে শুনানিতে বাধা রয়েছে। অর্থাৎ শ্রমিক – কর্মচারীরা কাজের জায়গায় পরিদর্শককে পাবেন না, আবার প্রয়োজনে আদালতেও যেতে পারবেন না, এমনকি শ্রমিক সংগঠনও কোন ভূমিকা পালন করতে পারবে না! কোন স্বাধীন দেশে শ্রমিকদের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া হয়!

কাজের পরিসর বাড়িয়ে নেবার অজুহাত দিয়ে মহিলাদের সবধরণের কাজে যুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি রাতে কাজ করতে হয় সেইসব ক্ষেত্রেও মহিলাদের নিয়োগ করা যাবে। যদিও আইনে লেখা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কাজে ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে হলে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতে হবে সংস্থাকেই। ধরে নেওয়া যায় এই অজুহাতে বেশিরভাগ সংস্থাই বাড়তি সমস্যা কিংবা বাড়তি খরচের দোহাই দিয়ে মহিলাদের নিয়োগ আটকে দেবে, আবার কাজের দোহাই দিয়েই সেইসব পদে পুরুষদের নিয়োগ করবে। ফলে আখেরে এতে মহিলাদের কাজের সুযোগ বাড়ল না, বরং সরকার নিজের দায় ঝেড়ে ফেলায় উপযুক্ত যোগ্যতা থাকা সত্বেও মহিলাদের কাজের সুযোগ কমে গেল, ফলে সমান কাজে সমান বেতনের ন্যায্য দাবিও দুর্বল হল।

ভারতের মতো দেশে আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক কোন বিশেষ ঘটনা নয়, ঘোরতর বাস্তব। যদিও করোনা মহামারির সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের লজ্জাজনক ভূমিকায় গোটা পৃথিবীতে ভারতের মাথা হেঁট হয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার প্রকাশ্যেই বলেছেন লকডাউন চলাকালীন ঘরে ফেরার পথে এবং অন্যান্য কারনে মৃত্যু হয়েছে এমন শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনোরকম তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেই – এতটা নির্লজ্জ সরকার আগে কখনো ভারতে ক্ষমতায় বসেনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে নয়া শ্রম আইন কি বলছে? দেখা যাক।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে নয়া আইনে ৫০ জন অবধি শ্রমিক নিয়োগে কন্ট্র্যাক্টরের কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না। এর সবেচেয়ে বেশী সুবিধা পাবে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়োগকারী কন্ট্র্যাক্টররা। আগের আইনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ছবি সহ পাশবুকের নিদান ছিল, কন্ট্র্যাক্টরদের সরকারের কাছে নিযুক্ত শ্রমিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট রেজিস্টারের (জাবেদা খাতা) মাধ্যমে জমা করতে হত। এখনকার আইনে এই সুযোগই নেই। আইনে লেখা রয়েছেঃ It shall be the duty of every contractor or the employer, of an establishment employing inter-State migrant workers in connection with the work of that establishment—

(i) to ensure suitable conditions of work to such worker having regard to the fact that he is required to work in a State different from his own State.

(ii) in case of fatal accident or serious bodily injury to any such worker, to report to the specified authorities of both the States and also the next of kin of the worker.

(iii) to extend all benefits to such worker which are available to a worker of that establishment including benefits under the Employees’ State Insurance Act, 1948 or the Employees’ Provident Funds and Miscellaneous Provisions Act, 1952 or any other law for the time being in force and the facility of medical check-up as available to a worker under clause (c) of sub-section (1) of section 6.

একদিকে পঞ্চাশজন অবধি শ্রমিক নিয়োগে লাইসেন্সের বাধ্যতা না থাকা, আরেকদিকে নিয়োগ সম্পর্কিত কোন তথ্য় নিরীক্ষণের ব্যবস্থা নেই – বোঝাই যায় মালিক এবং কন্ট্র্যাক্টররা শ্রমিকদের স্বার্থে কেমন ডিউটি পালন করবে। আসলে শ্রম আইনের নামে আগাগোড়া ব্যাবস্থাটাই মালিকদের স্বার্থ চরিতার্থ করা হয়েছে। এ হল সেই শ্রেণীস্বার্থ যাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এঙ্গেলস বলেছিলেন “Actually, each mental image of the world system is and remains limited, objectively by the historical situation and subjectively by its author’s physical and mental constitution.”… মোদী সরকার কেন শ্রমিক-মজুর-গরিব মানুষের সরকার নয় তা বুঝতে পন্ডিত হতে হয় না, অন্য দল থেকে বিধায়ক কিংবা সাংসদ কেনার উদ্দেশ্যে বিজেপি যেভাবে বিপুল অর্থব্যায় করে সেই টাকার সংস্থান কোথা থেকে হয় এটুকু জানলেই চলে। অন্তত সেই ব্যাপারে সরকার সৎ তো বটেই!

ওয়েবডেস্কের পক্ষে – সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply