প্রভাত পট্টনায়ক
বিগত সহস্রাব্দে বিজ্ঞানের যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে তার মূলে একটি প্যারাডক্স রয়েছে। যদিও, এই অভূতপূর্ব অগ্রগতি মানুষের স্বাধীনতাকে অপরিসীম বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে, এটি ‘মানব বনাম প্রকৃতি’-র দ্বান্দ্বিকতার মধ্যে মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বৈজ্ঞানিক অনুশীলনের লক্ষ্য হল, অবিরাম আত্ম-জিজ্ঞাসার মাধ্যমে “সীমা” অতিক্রম করা, শুধুমাত্র একবারের জন্য নয় বরং একটি চিরস্থায়ী গতি হিসাবে, যাতে এই অনুশীলন সম্মিলিত মুক্তির একটি কাজ হিসাবেই পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতা বা মুক্তির এই প্রতিশ্রুতি উল্লেখযোগ্যভাবে অপূর্ণ রয়ে গেছে; বিজ্ঞানের এই ক্রমানুশীলনের ফল পুরোপুরিভাবে কেবলমাত্র মানব-কল্যাণে নিয়োজিত হয়নি উল্টে বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে, কেউ কেউ আধিপত্য বিস্তারের জন্য অনেকাংশে ব্যবহার করেছে, অন্যান্য মানুষ এবং অন্যান্য সমাজের উপরে। প্যারাডক্সটি এই সত্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে, “বৈজ্ঞানিক অনুশীলন যা প্রয়োগ করে মানুষের স্বাধীনতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা আধিপত্য প্রয়োগের জন্য, অর্থাৎ, মানুষের স্বাধীনতাকে হ্রাস করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে”।
ঐতিহাসিকভাবে দেখত গেলে এই প্যারাডক্সের শিকড় নিহিত রয়েছে সেই ঘটনাক্রমে যার মাধ্যমে একসময়ে সমাজের উপর চার্চের দমন-পীড়ন (গ্যালিলিওকেও তার ধারণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল) এমন অবস্থায় ছিল কিন্তু বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য সমাজের উপরে চার্চের প্রভাবের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন ছিল। এবং এই উৎখাত ঘটতে পারত শুধুমাত্র সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অতিক্রম করে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করার অংশ হিসেবে, অর্থাৎ বুর্জোয়া বিপ্লবের অংশ হিসেবে, যার মধ্যে ১৬৪০ সালের ইংলন্ডের বিপ্লব একটি প্রধান উদাহরণ হিসাবে গণ্য করা যায়। ইউরোপে আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশ তাই প্রথম থেকেই এর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ছিল পুঁজিবাদের বিকাশ; এবং এই সত্যটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ব্যবহারের উপর তার অমলিন ছাপ রেখে গেছে।
এই বুর্জোয়া ছাপটিরও বিশাল জ্ঞানগত প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ‘আকিল বিলগ্রামী’-র মতো দার্শনিকদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে, যেমন প্রকৃতিকে ‘জড় পদার্থ’ হিসাবে বিবেচনা করা এবং বিশ্বের দূরবর্তী অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকেও অনুরূপ ‘জড়তা’ হিসাবে তাদের বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করা, ‘কোনো ইতিহাস নেই এমন মানবগোষ্ঠী’-কে অধিগ্রহণ করা যা ইউরোপীয় দৃষ্টিতে ‘ন্যায়সঙ্গত’, যতটা বেশি পারা যায় প্রকৃতির উপর ‘প্রভুত্ব’ করা, এবং তথাকথিত অসভ্য জনজাতিকে সভ্য করার নামে সাম্রাজ্যবাদের ঘটনাকে “ন্যায়সঙ্গত” হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বিজ্ঞানীরা এই সত্য সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন, যে বিজ্ঞানের স্বাধীনতা-বর্ধক ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা যেতে পারে শুধুমাত্র পুঁজিবাদকে অতিক্রম করে সমাজতন্ত্রিক সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে। সেইজন্যই ঐতিহাসিক এজেন্ডায় সেই যুগের সেরা বিজ্ঞানীরা এই ধরনের সীমা অতিক্রম করে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের অপব্যবহার রোধ করার জন্য নাগরিক হিসাবে এটি তাদের জন্য অপরিহার্য ছিল না; বিজ্ঞানী হিসেবে এটি তাদের জন্য একটি নৈতিকভাবে বাধ্যতামূলকও ছিল: তাদের জন্য সর্বোত্তম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তাদের নিজস্ব অনুশীলনের (যা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দ্বারা তৈরি হয়েছিল) অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ক্ষেত্রে আলবার্ট আইনস্টাইনের উদাহরণ সুপরিচিত। তিনি শুধুমাত্র একজন স্বীকৃত সমাজতন্ত্রী ছিলেন না, রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন, যার কারণে আমেরিকান এফবিআই তাকে “সর্বদা অনুসরণ” করার জন্য এজেন্ট রেখেছিল এবং তার উপর একটি গোপন (যদিও এখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত) ফাইলও রেখেছিল; প্রকৃতপক্ষে তার সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসের কারণে তাকে ম্যানহাটন প্রকল্পে (যা পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছিল) অংশ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি! একইভাবে ব্রিটেনে, বিংশ শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানীরা (জে.ডি. বার্নাল থেকে জোসেফ নিডহাম, জে.বি.এস. হ্যালডেন, হাইম্যান লেভী, জি.এইচ. হার্ডি, ডরোথি হজকিন এবং আরও অনেকে) বামপন্থীদের অংশ ছিলেন।
নয়া-উদারীকরণের বিশ্বব্যাপী এই প্রক্রিয়াতে বিজ্ঞানেরও বাণিজ্যিকরণ- ‘কমোডিটাইজেশন’ হয়েছে, যার অধীনে গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থ যোগানের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়- ‘পাবলিক’ থেকে বেসরকারি, প্রধানত কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। এর অর্থ এই যে বিজ্ঞানীদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা (যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদকে বদল করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়) তা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে। যদি একজন বিজ্ঞানী একটি গবেষণা প্রকল্পে নিযুক্ত হতে চান, তবে তাকে কর্পোরেট দাতাদের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য হতে হবে; এটি বিজ্ঞানীকে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ঠেলে দেয়, যদি সেই বিজ্ঞানী সমাজতান্ত্রিক ভাবনায় বিশ্বাসী হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা হয় ঐ বিজ্ঞানীর দ্বারা দাতাদের কাছ থেকে দান আকর্ষণ করার ক্ষমতা আছে কি না। একই রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা তাই এমন ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যেখানে কিছুদিন আগে পর্যন্ত শিক্ষাবিদদের বিভিন্ন বিশ্বাসের কথা বলার স্বাধীনতা ছিল। বিজ্ঞানের ‘বাণিজ্যিকরণ’, এইভাবে উদাকরীকরণের একটি অবশ্যসম্ভাবী ফলাফল হিসাবে, বিজ্ঞানীদের কাছ থেকেও রাজনৈতিক বশ্যতার দাবী করে, এবং এর ফল হিসাবে তৈরী হয় সামাজিক দায়িত্বজ্ঞানহীন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীর যে সহজাত বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে প্রচলিত সমাজের থেকে এগিয়ে যাবার প্রচেষ্টা, তাকে পুঁজিবাদের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করার “বিলাসিতা” বলে আখ্যা দেওয়া হয়। বৈজ্ঞানিক অনুশীলনকে মানব মুক্তির জন্য অবদান রাখার একটি চেষ্টার বদলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার ফলে ইন্ডাস্ট্রী-র প্রফিট হলো কিনা – এতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নব্য উদারতাবাদের যুগে বিজ্ঞানীর কাছে ফলাফলের পর্যাপ্ত আলোচনা (এর ফলে সমাজের কোন স্তরে কি ধরণের প্রতিক্রিয়া হবে, বা প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কি প্রতিক্রিয়া হবে) ছাড়াই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে গ্রহণ করা বোঝায়।
এই ধরনের চিন্তাহীন প্রয়োগের অনেকগুলির মধ্যে দু’একটি স্পষ্ট উদাহরণ ‘যুদ্ধ’ এবং ‘পারফরমিং আর্ট’ ক্ষেত্রে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত, যা আমাদের চোখের সামনে আজ ঘটছে। উদাহরণ স্বরূপ AI-এর প্রয়োগের ফলে যে ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি, এবং তার বিরুদ্ধে হলিউডের চিত্রনাট্যকারদের সাম্প্রতিক ধর্মঘট আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একথা সত্য যে একটি যান্ত্রিক শ্রম যখন মানব শ্রমকে প্রতিস্থাপন করে, তখন ঐ শ্রমের দ্বারা সৃষ্ট পণ্যের গুণ, উৎকর্ষতা এবং পরিমাণের বৃদ্ধি হয়। এটি মানষের কাজের পরিশ্রম কমাতে পারে, অথবা বিকল্পভাবে, আগের মতো শ্রম স্থাপনের সাথে আউটপুটের মাত্রা বাড়াতে পারে, এবং সেইজন্য জনসংখ্যার জন্য পণ্য ও পরিষেবার সহজেই উপলব্ধিকরণ সম্ভব হয়। কিন্তু পুঁজিবাদের অধীনে, যান্ত্রিক শ্রমের দ্বারা মানব শ্রমের প্রতিস্থাপন সবসময়েই মানুষের দুর্দশাকে বাড়িয়ে তোলে, কারণ বর্তমান ব্যাবস্থার চালিকাশক্তি হচ্ছে আরও বেশী মুনাফা অর্জন। উদাহরণস্বরূপ ধরুন একটি বৈজ্ঞানিক বা কারিগরি উদ্ভাবন শ্রম উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করে, পুঁজিবাদের অধীনে, প্রতিটি পুঁজিপতি এই উদ্ভাবনকে ব্যবহার করবে আগের তুলনায় অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করতে। এই বাস্তবতাই ‘শ্রমের রিজার্ভ আর্মি’-র আপেক্ষিক আকার বাড়িয়ে দেবে, যার কারণে যারা তখনও নিযুক্ত থাকবেন তাদের প্রকৃত মজুরিতে কোন বৃদ্ধি হবে না। মজুরি বিল অর্ধেক হবার কারণে উদ্বৃত্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে যদি আগের মতন পরিমানেই পণ্যোৎপাদন হতে থাকে, কিন্তু মজুরি থেকে উদ্বৃত্তে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে, চাহিদা হ্রাস পাবে (যেহেতু মজুরির একটি বৃহত্তর অংশ উদ্বৃত্তের তুলনায় খরচ করা হয়, শ্রমিক তার মজুরির অধিকাংশই ব্যয় করে বিভিন্ন পণ্য/পরিষেবা ক্রয়ের জন্য অথচ পুঁজিপতি তার মুনাফার অত অংশ খরচ করে না), তাই আগের মত পরিমানে পণ্য উৎপন্ন হবে না ফলে চাহিদার হ্রাসের কারণে আরও শ্রমিক ছাঁটাই হবে। এইভাবে পুঁজীবাদী সমাজে উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি, চক্রবৃদ্ধি হারে ছাঁটাই শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে থাকে।
ইংরেজ অর্থনীতিবিদ ডেভিড রিকার্ডো চাহিদার ঘাটতির কারণে অতিরিক্ত বেকারত্বের এই ধারণাকে স্বীকৃতি দেননি। তিনি Say’s Law ধরে নিয়েছিলেন, সেটা হল, সামগ্রিক চাহিদার কোন ঘাটতি হয় না, এবং সবটুকু মজুরিই খরচ হয় আর যে অংশ খরচ হয় তার অতিরিক্ত সমস্ত উদ্বৃত্তটুকুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ হয়। এই অনুমান থেকে, তিনি এই উপসংহারে উপনীত হন যে মজুরি থেক উদ্বৃত্তে পরিবর্তনের ফলে যদিও এটি পূর্বের আউটপুট থেকে মোট খরচ কমিয়ে দেবে, কিন্তু মোট বিনিয়োগ বাড়াবে, ফলে শুরুতে আগের আউটপুট অপরিবর্তিত রেখে দেবে; এবং বিনিয়োগের এই অংশ বৃদ্ধি, আউটপুট বৃদ্ধির হার বাড়াবে এবং তাই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারও বাড়বে। কাজেই, যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যদিও এটি তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসংস্থান কমাতে পারে, তবে যেহেতু এটি বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেবে, তাই কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি কিছু সময়ের পরে ঐ কর্মসংস্থানের হ্রাসকে অতিক্রম করে যাবে।
Say’s Law এর অবশ্য কোন বৈধতা নেই। পুঁজিবাদের অধীনে বিনিয়োগের বৃদ্ধি বাজারের প্রত্যাশিত বৃদ্ধির দ্বারা নির্ধারিত হয়, উদ্বৃত্তের পরিমাণ দ্বারা নয় (যদি না সেখানে অব্যবহৃত ঔপনিবেশিক বাজারগুলি অ্যাক্সেস করা যায় বা সেই রাষ্ট্র সামগ্রিক চাহিদার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক থাকে)। ঐতিহাসিকভাবে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন মহানগরগুলির মধ্যে ব্যাপক বেকারত্বের কারণ না হওয়ার কারণ ছিল দ্বিমুখী: প্রথমত, তখন ঔপনিবেশিক বাজারগুলি উপলব্ধ ছিল, যার কারণে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বেকারত্বের বেশিরভাগই উপনিবেশগুলিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল (ডি-ইনডিস্ট্রিয়ালাইজেশনের আকারে); অর্থাৎ মেট্রোপলিস থেকে বেকারত্ব রপ্তানি হয়েছে উপনিবেশগুলিতে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় বেকারত্ব যা কিছু তৈরি হয়েছিল তা দীর্ঘায়িত হয়নি, কারণ বেকাররা বিদেশে চলে গেছে। “দীর্ঘ ঊনবিংশ শতাব্দী” ধরে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত) পঞ্চাশ মিলিয়ন (পাঁচ কোটি) ইউরোপীয়রা কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো শ্বেতাঙ্গ বসতির নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।
যদিও আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুধু যে ঔপনিবেশিকতার অস্তিত্ব নেই তা নয়, তবে মেট্রোপোলিসগুলির সামগ্রিক চাহিদার কোনো ঘাটতি মোকাবিলায় তৃতীয় বিশ্বের বাজারগুলি অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছে। একইভাবে, রাষ্ট্র ঐ সামগ্রিক চাহিদার ঘাটতি মোকাবেলা করতে পারে না কারণ এটি এফ.আর.বি.এম. আইনের (ফিস্ক্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট) সীমার বাইরে তার রাজস্ব ঘাটতি বাড়াতে পারে না বা তার ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ধনীদের উপর কর বসাতে পারে না (ব্যয় বাড়ানোর জন্য শ্রমজীবী জনগণের উপর ট্যাক্স বসালে সামগ্রিক চাহিদা খুব কমই বৃদ্ধি পায়)। ফলে, আজকের পুঁজিবাদের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সহ যান্ত্রিকীকরণ অনিবার্যভাবে ব্যাপক বেকারত্বের জন্ম দেবে।
এর বিপরীতে, একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কী ঘটবে তা বিবেচনা করা যাক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সহ যে কোনও যান্ত্রিকীকরণের ফলে কর্মসংস্থান, আউটপুট এবং শ্রমিকদের মজুরি বিল (এগুলো সবই কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হবার কারণে) হ্রাস না করেই “কাজের পরিশ্রম” হ্রাস করবে । দুটি সিস্টেমের মধ্যে এই মৌলিক পার্থক্য ব্যাখ্যা করে কেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার শুধুমাত্র সমাজতন্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপনা করেই করা সম্ভব হবে।
মূল লেখাটি ১৭ই মার্চ ২০২৪ তারিখে ‘পিপলস্ ডেমোক্রেসী’ পত্রিকায় Capitalist Trap for Scientific Advances শিরোনামে প্রকাশিত