Buddhadev Bhattacharya on Engels

সমাজ বিকাশের ইতিহাসে এঙ্গেলসের মূল প্রতিপাদ্য

সমাজ বিকাশের ইতিহাসে এঙ্গেলস

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

সোভিয়েতে বিপর্যয়ের পর ‘পণ্ডিতের দল’ মার্কসবাদীতত্ত্বের ওপর একটির পর একটি অস্ত্র ছুঁড়ে মারছেন। তাদের বক্তব্যের সার কথা হল – সভ্যতা মানেই শৌর্য, বীর্য, বীরের সভ্যতা। উঁচু-নিচু মানুষ চিরকালই ছিল, ছিল ব্যক্তিগত মালিকানা, সম্পত্তি পুঁজি। খোলা হাওয়ার মুক্তঅর্থনীতি (লে জে ফেয়ার)–র পথ ধরেই আমরা এগিয়েছি। সমাজের সবল এবং দুর্বল প্রকৃতিরই নিয়ম। মানুষে মানুষে প্রভেদ ছিল, থাকবে। সে প্রভেদ সাদা-কালো মানুষে, বর্ণভেদে, শ্রেণীভেদে, উপনিবেশ এবং উপনিবেশবাদীদের মধ্যে। এক অদৃশ্য শক্তির বলেই ব্যক্তির জয়জয়কার হয়। কোন সভ্যতা এগিয়ে যায়, কোন সভ্যতা পেছিয়ে যায়, কিন্তু সমস্ত সভ্যতারই চিরসত্য হল ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

ডারউইন যেমন জৈব প্রকৃতির বিকাশের নিয়ম আবিষ্কার করেছিলেন, তেমনি মার্কস আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের ইতিহাসের বিকাশের নিয়ম। এইপ্র সঙ্গেই আজ থেকে ১১০ বছর আগে ১৮৮৪ সালে লেখা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের ‘পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ বইটির গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যায় এই বইটি মার্কসবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

ডারউইনের আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে বানর থেকে মানুষের বিবর্তনে শ্রমের ভূমিকাকে এঙ্গেলস বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পা থেকে হাতের কাজের ভিন্নতাই বানর থেকে মানুষে উত্তরণের চূড়ান্ত পদক্ষেপ। উক্ত হাত শুধু শ্রমের অঙ্গ নয়, শ্রমের সৃষ্টিও। হাত, বাক্‌যন্ত্র আর মস্তিষ্কের সহযোগতায় মানুষ ক্রমশ উন্নততর লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হল। এইখান থেকেই মানুষ প্রাণী থেকে বিচ্ছিন্ন হল। প্রকৃতিকে ব্যবহার করা থেকে প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব করতে সক্ষম হল।

মর্গানের প্রাচীন সমাজ সংক্রান্ত গবেষণাগুলি মার্কস-এঙ্গেলসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। (পরবর্তীতে যদিও মর্গানের অনেক মতামত সংশোধিত এবং পরিত্যক্ত হয়েছিল) এঙ্গেলস এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে ছিলেন যে প্রাগৈতিহাসিক স্তরে মানুষের সমাজ তিনটি অবস্থা অতিক্রম করে এসেছে।

(১) বন্য অবস্থা – এই যুগে মানুষ শুধু প্রাকৃতিক সম্পদগুলির কিছু আহরণ করতেই শিখেছিল আর সেই আহরণ করার জন্য তার ছিল কিছু হাতিয়ার।

(২) বর্বরতা- এই যুগে পশুপালন এবং কৃষির প্রাথমিক প্রচলন হয়। মানুষ উৎপাদন বাড়াবার ক্ষমতা কিছুটা আয়ত্তে আনে।

(৩) সভ্যতা- খানিকটা শ্রমশিল্প এবং ললিতকলার জ্ঞান অর্জন করে। উৎপাদন বাড়াবার প্রক্রিয়া উন্নততর হয়।

গাছ থেকে নেমে মাটিতে আসা, ফলমূল খাওয়া, ভাষার প্রাথমিক প্রকাশ, তারপর মাছ, কাঁকড়া, শামুখ ধরা, শেকড়-বাকড় খুঁড়ে বার করা, অমার্জিত পাথর থেকে মার্জিত পাথরের অস্ত্র, ধনুক-তীর, কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি, তারপর মৃৎশিল্প আবিষ্কার, পশুপালন, চাষবাস, লোহার তরোয়াল, কাঠের বেড়া দেওয়া ঘেরা গ্রাম, পশুকে পোষ মানানো, মাংসের সঙ্গে দুধের ব্যবহার, বর্ণমালা লিপির আবিষ্কার, লোহার ফলাওয়ালা লাঙল, হাপর, যাঁতা, কুমোরের চাকি, যুদ্ধের রথ, জাহাজ নির্মাণ, স্থাপত্য, মহাকাব্য – এই পথ ধরেই এগিয়েছে সভ্যতার ঊষাকাল। প্রাগৈতিহাসিক উপাদানগুলিকে জড়ো করলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কিছু বিভিন্নতা সত্ত্বেও সভ্যতার প্রাথমিক যুগের মোটামুটি কাঠামো ছিল এইরকমই।

কোন সময়ে ঠিক পরিবারের উদ্ভব হয়েছিল? সেই যুগে নৃতত্ত্ববিদদের বহু মতের মধ্য থেকে এঙ্গেলস কয়েকটি সাধারণ সূত্র গ্রহণ করেছিলেন।তাঁর মত ছিল অব্যবস্থা ও বর্বরতার সীমারেখার যুগে জোড় বাঁধা পরিবারের সৃষ্টি। সমষ্টি বিবাহ যেমন ছিল বন্য অবস্থার বৈশিষ্ট্য, বর্বর যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল জোড় বাঁধা পরিবার। আর এক পতি-পত্নি প্রথা ছিল সভ্যতার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এর কারণ কি? ইতমধ্যে পশুকে গৃহপালিত করে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে মানুষের হাতে অপ্রত্যাশিত সম্পদ জমা হয়েছে। আগে ছিল কিছু ঘরবাড়ি, পরিধেয়, অলঙ্কার – এখন এসেছে বিশাল পশুবাহিনী নিয়ে অগ্রসর দল। এই সম্পদ কাদের অধিকারে যাবে? প্রথমে তা ছিল দল বা গোত্রের হাতেই। যেখানে দলপতির পদমর্যাদা সবচেয়ে বেশী। কিন্তু তারা আধুনিক অর্থে সম্পত্তির মালিক তখনো নন। কিন্তু এই অতিরিক্ত সম্পত্তি জোড়-বাঁধা পরিবারের ভিত্তিকে ভেঙে দিল। পরিবারের মধ্যে স্ত্রীলোকের থেকে পুরুষের গুরুত্ব বাড়তে লাগলো। কারণ গৃহস্থালির কাজের থেকে বাইরে খাদ্য সংগ্রহের কাজ অনেক গুরুত্বপুর্ণ। “স্ত্রীজাতির এক বিশ্ব ঐতিহাসিক পরাজয়” সূচিত হলো। মার্কসবলেছিলেন, “শ্রমের প্রথম বিভাগ হচ্ছে সন্তান উৎপাদনের জন্য স্ত্রী ও পুরুষের বিভাগ।” এঙ্গেলস তাঁর সঙ্গে যুক্ত করলেন যে এটাই প্রথম “শ্রেণী-পীড়ন”। ইতিহাসে এক বিবাহ প্রথা এসেছিল সম্পত্তির অধিকার ও তাকে রক্ষা করার বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা থেকেই।

মানুষের সভ্যতার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই পরিবারভিত্তিক সমাজের গোত্র-সংগঠন। তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বাস করতো, তাঁদের ছিল নিজস্ব উপভাষা, তাদের নিজেদের গোত্রের একটা নিজস্ব নাম বা চিহ্ন ছিল। পশুদের নামেই বেশি। নিজেদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও ছিল। গোত্রের একজন দলপতি ছিল। গোত্রে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সকলেই মতামত দিতে পারতো। নিজেদের পরস্পর সাহায্য ও রক্ষা করতো, বিজাতীয়দের গ্রহণ করার সিদ্ধান্তও নিতো। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি গোত্রের হাতে আসত। নিজেদের গোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই গোত্র সংগঠন সৈন্য, সেপাই, রাজা, বিচারক ছাড়াই চলত।

সমাজের মূল একক হিসাবে এই গোত্র সংগঠন ক্রমান্বয়ে একটি উপজাতি ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একাধিক গোত্র নিয়ে এই উপজাতি। উপজাতি সংগঠন ছিল গোত্র সংগঠনেরই ব্যাপকতর ও উন্নততর সংগঠন। কিন্তু এই উপজাতি সংগঠন ও টিকতে পারে নি। তাঁদের মধ্যে চলত নিরন্তর যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল বৈষয়িক স্বার্থে। হীন লোভ, সম্পদ লুণ্ঠন ক্রমান্বয়ে এর ভিত্তি ভেঙে দিল আড়াই হাজার বছরের শ্রেণীহীন প্রাচীন গোত্র সমাজ। গোত্র সংগঠন বিলুপ্তির সূত্রপাতের ভিত্তি হল পিতৃ-অধিকার ও সন্তানদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার। সম্পদের অসাম্য। পরাজিত গোত্রের সদস্যদের দাসত্ব বন্ধনে বাঁধা। অভিজাত রাজতন্ত্রের প্রাথমিক ভ্রূণ সৃষ্টি হলো।

এই যুগ থেকেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রশস্তি শুরু হলো। তাকেই মানব সমাজের শ্রেষ্ঠ কল্যান বলে সম্মান করা হলো। জোর করে সম্পদ লুণ্ঠনকে সমর্থনের জন্য, ব্যক্তিগত মালিকানাকে পবিত্রকরণের জন্য সামাজিক অনুমোদন পাওয়ার জন্য এলো নতুন প্রতিষ্ঠান। তারা শুধু লুণ্ঠনকারী উদীয়মান শ্রেণীর স্বার্থই সক্ষা করবে না, তারা বিত্তশালী শ্রেণী হিসাবে বিত্তহীণ শ্রেণীগুলিকে শোষণ করার চিরস্থায়ী অধিকার পাবে এবং সেই প্রতিষ্ঠান হল রাষ্ট্র।

প্রাচীন সমাজে আত্মরক্ষা পরায়ণ সশস্ত্র জনগণের জায়গায় এলো সরকারী ক্ষমতা। একদিনে নয়, সেই ক্ষমতা ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগলো। এলো আইন, মুদ্রা, বলপূর্বক ঋণ আদায়, নিজস্ব যুদ্ধ বাহিনী এবং ব্যক্তিগত মালিকানার সাংবিধানিক অধিকার। এই প্রক্রিয়ায় সভ্যতা একদিকে যেমন এগিয়েছে অন্যদিকে সার্বজনীন দারিদ্র্য, কৃষির অধঃপতন এবং জনসংখ্যার হ্রাসও পাশাপাশি ঘটে চলেছে। শ্রম বিভাগের এই যুগে আইন, রাজনীতির পাশাপাশি এলো মানবিক ব্যাপারেও অতিকল্পিত বিশ্ব-ধর্ম। শ্রম বিভাগের ফলেই সভ্যতার কৃতিত্ব আরোপ করা হলো মনের ওপর। প্রয়োজন দিয়ে কাজের ব্যাখ্যা না করে চিন্তা দিয়ে কাজের ব্যাখ্যা শুরু হল। এলো পৃথিবী সম্পর্কে ভাববাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

অবশ্য বর্বর যুগ থেকেই পশুপালক উপজাতিগুলির মধ্যেই প্রথম বিরাট আকারে সামাজিক শ্রমবিভাগ দেখা গিয়েছিল। স্ত্রী লোকের মালিকানায় ছিল ঘরের জিনিসপত্র, তৈজসপত্র। গৃহস্থালি ছিল সাম্য ভিত্তিক। পুরুষদের মালিকানায় ছিল অস্ত্রশস্ত্র, শিকার ও মাছ ধরার হাতিয়ারগুলি। মানুষের শ্রমশক্তি তার প্রয়োজনের থেকে বেশি জিনিস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই সামাজিক শ্রমবিভাগের ফলে এলো মালিক, ক্রীতদাস এবং শোষক ও শোষিত। এই প্রক্রিয়াতেই গোত্র বা উপজাতির যৌথ সম্পত্তি পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হলো। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সূত্র। দ্বিতীয় বিরাট শ্রমবিভাগ হলো কুটির শিল্প থেকে কৃষি বিচ্ছিন্ন হবার পর ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য আরো ব্যাপ্তি পেল।

পুরনো সাম্যতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলি ভেঙে পড়লো। জমি বিভিন্ন পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট হলো। প্রথমে সাময়িকভাবে, পরে চিরস্থায়ী ভাবে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলো। জোড় বাঁধা পরিবার থেকে এক পতি-পত্নির যুগে উত্তরণের মধ্যে দিয়ে। এইভাবে গোত্র ও উপজাতির মধ্যে জনগণের যে শেকড় ছিল তাঁর মূলোচ্ছেদ হলো। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ও একের ওপর অন্যজনের শাসন পীড়ন স্থায়ী হয়ে উঠলো। সভ্যতার যুগে শ্রমবিভাগ আরো উন্নত হলে এমন একটি শ্রেণীর উদ্ভব হলো যারা উৎপাদনে কোন অংশ না নিয়েও গোটা উৎপাদনের পরিচালনার ভার গ্রহণ করলো। গোত্র প্রথার উপযোগিতা ফুরিয়ে গিয়ে এলো শ্রমবিভাগ এবং শ্রেণীবিভাগ। তার ওপরেই প্রতিষ্ঠিত হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অনন্তকাল ধরেই ছিল না। শ্রেণী বিরোধকে সংযত করার জন্যই শ্রেণী বিরোধের মধ্যেই রাষ্ট্রের জন্ম। প্রভুত্বকারী শ্রেণীর রাষ্ট্র। (রাষ্ট্র সম্বন্ধে পূর্নাঙ্গ ধারণা মার্কস-এঙ্গেলস অন্য রচনায় বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন)।

এঙ্গেলসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল – সভ্যতার ঊষাকালে মানব সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে আবিষ্কার করা এবং ইতিহাসের বিকাশের চালিকাশক্তিকে চিহ্নিত করা। মানুষের সমাজে সামাজিক উৎপাদনের মধ্যে মানুষ যুক্ত হয় কয়েকটি অনিবার্য ও ইচ্ছা নিরপেক্ষ সম্পর্কে। বৈষয়িক জীবনের উৎপাদন পদ্ধতি সাধারণভাবে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন প্রক্রিয়াকে নির্ধারণ করে। মানুষের সত্তা তার চেতনার দ্বারা নির্ধারিত নয়। বিপরীতে মানুষের সামাজিক সত্তাই নির্ধারিত করে তার চেতনাকে।

বর্তমান দুনিয়ায় যারা ‘বাজার অর্থনীতি’ (ব্যক্তি মালিকানাভিত্তিক পুঁজিবাদ) অর্থনীতির প্রবক্তা তারা মনে করেন সভ্যতার শুরু এবং শেষ ব্যক্তি মালিকানার পতাকা উড়িয়েই। মানুষের সত্তাই হলো ব্যক্তিগত সম্পত্তির জোগফল। এঙ্গেলস এর প্রতিপাদ্য ছিল তার বিপরীত। সভ্যতার প্রাথমিক স্তরে মানুষের সম্পত্তি সমাবেশ করার দক্ষতাও ছিল না। প্রকৃতির সঙ্গে অসম লড়াইয়ের যুগ। পরবর্তিতে মানুষের শ্রমই অতিরিক্ত উৎপাদনের মাধ্যমে সম্পত্তি সৃষ্টি করে। তার পর থেকেই ‘স্বর্গ থেকে পতন’ হয় মানবগোষ্ঠীর। শ্রমবিভাগ, ব্যক্তি মালিকানা এবং শ্রেণী শোষণের ইতিহাস শুরু হয়। শুরু হয় শ্রেণী-সংগ্রাম। মানব সভ্যতার ইতিহাস শ্রেণী-সংগ্রামেরই ইতিহাস। কোন অলৌকিক শক্তি নয়, উৎপাদনের উপাদানের নিরন্তর পরিবর্তন ঘটিয়ে উৎপাদন সম্পর্ককে মানুষের সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে চলেছে দাস প্রথা, সামন্ততন্ত্র পুঁজিবাদী সভ্যতার যুগ পর্যন্ত। সমাজতন্ত্রই এই ইতিহাসের পরিনতি। ব্যক্তিগত মালিকানা ও শ্রেণীশোষণের চূড়ান্ত অবসান।

কিন্তু বিরোধী ‘পন্ডিত’ রা মার্কসবাদকে আক্রমণ করছেন। কারণ মার্কসবাদীরা চুড়ান্তভাবেই ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ র বিলোপের প্রবক্তা। তাদের এই জ্ঞান ইতিহাস চেতনা থেকেই। ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানব সভ্যতার চিরন্তন সত্য নয়। বিশেষ ঐতিহাসিক সন্ধি লগ্নে এর জন্ম। যার ফলাফল মানবিকতার অধঃপতন। তার থেকে মানবসমাজকে মুক্ত করাই ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সাধন করাই মার্কসবাদীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

কিন্তু ‘হাতুড়ে’ সমাজবিজ্ঞানীরা তা মানতে অপারগ। পুঁজি এবং পুঁজিবাদের পক্ষে তারা ইতিহাস, বিজ্ঞান এবং দর্শনকেও কলুষিত করছে। আমাদের জানা, পৃথিবী যে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে বহু যুগ লেগেছিল। কিন্তু কোপারনিকাস এবং গ্যালিলিওরাই জিতেছেন। প্রাণের বিকাশ যে জড় পদার্থ থেকেই এবং সেই প্রাণের বিকাশের একটা পর্যায়ে বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি। এই অবমাননাকর বিধর্মী মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। কিন্তু ডারউইন-ই শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন। পৃথিবী এক অনড় কচ্ছপের মতন স্থির, সেই পৃথিবীতে ঈশ্বর নেমে এসে মানুষ সৃষ্টি করলেন, আর সেই মানুষের দু’পকেটে ভরে দিলেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি – এই ধারনা শুধু অনৈতিহাসিক নয়, অবৈজ্ঞানিকও।

সুত্রঃ গনশক্তি পত্রিকা


শেয়ার করুন

উত্তর দিন