ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) – র পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করেছেঃ
নতুন একটি “স্টিমুলাস” প্যাকেজের ঘোষণাঃ জনস্বার্থে ব্যয়বরাদ্দের কোন বর্ধিত সংস্থান ছাড়াই
জনগণের হাতে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দেওয়া কিংবা জনস্বার্থে কোনোরকম ব্যায়বরাদ্দ ছাড়াই আবার একটি “স্টিমুলাস” প্যাকেজের ঘোষণা করা হল।
ইতিপূর্বে ঘোষিত তিনটি প্যাকেজের সাথে সদ্য ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজের সম্মিলিত মূল্যমান দেশের জিডিপি-র ১৫ শতাংশের সমান বলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বড়াই করে বলা হচ্ছে। যদিও নিতান্ত কাঁচা হিসাবেও দেখা যাচ্ছে সদ্য ঘোষিত আর্থিক স্টিমুলাস প্যাকেজের দ্বারা সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩,৭২,২৯৫ কোটি টাকা যা জিডিপি-র মাত্র ১.৯ শতাংশ। সারা পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনিতিগুলিতে এধরণের স্টিমুলাস প্যাকেজে সেইসব দেশের জিডিপি-র ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ অবধি বরাদ্দ করা হয়ে থাকে সেই তুলনায় এই স্টিমুলাস প্যাকেজ অতি তুচ্ছ।
এই ঘোষণায় বর্ধিত ব্যয়বরাদ বলে দেখানো হচ্ছে এমন অনেককিছুই আসলে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিভিন্ন খাতের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ বণ্টন ছাড়া আর কিছুই নয়। ঐ সব খাতের হিসাবে সেই পরিমানের অর্থ এমনিতেই বরাদ্দ করতে হতো, ফলে ঘোষিত প্যাকেজের মুল্যমান জিডিপি-র ১.৯ শতাংশেরও কম হয়ে যাচ্ছে।বাজেটের সেই সব ব্যয় বরাদ্দ বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর উচিত দেশের জনগণকে পরিস্কারভাবে জানানো যে ঘোষিত অর্থমূল্য ঠিক কত। তবেই আর্থিক ঘোষণার চিত্রটি স্পষ্ট বোঝা যাবে।
দেশের অর্থনীতির গভীর মন্দার প্রকোপে পড়া নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার বিবৃতি দেওয়ার একদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই স্টিমুলাস প্যাকেজের ঘোষণা করা হল। যদিও এই ঘোষণার পরেও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবনের কোনো পরিকল্পনা খুঁজে পাওয়া গেল না।
প্যাকেজের বাকি অংশে যা রয়েছে অন্যান্য তিনটি ঘোষণার মতোই তা বস্তুত ঋণগ্রহনের প্রস্তাব ব্যাতিত কিছুই নয়। ধারণা করা হচ্ছে এরই ফলে বিনিয়োগ বাড়বে, কাজের সুযোগ তৈরি হবে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। যদিও এমন কিছুই হবার সুযোগ নেই কারন উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি হতে হবে এবং ভারতে বাজার ব্যাবস্থা মন্দার প্রকোপে যাওয়ার প্রধান কারণই হলো জনগণের ক্রমহ্রাসমান ক্রয়ক্ষমতা।
অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হতে পারে একমাত্র জনস্বার্থ খাতে পরিকাঠামোর উন্নতিকল্পে খরচ করলে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা গেলে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে পারলে।
সরকারের ঘোষিত প্যাকেজে আসলে দেশি এবং বিদেশী পুঁজির স্বার্থরক্ষা হচ্ছে, এতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ক্রমবর্ধমান বেরোজগারিতে জনগণের দুর্দশা আরও বাড়বে, অনাহার এবং দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের উপরে আরও চেপে বসবে দারিদ্র এবং বঞ্চনা।
সিপিআই(এম)-র পলিট ব্যুরো পুনর্বার দাবী জানাচ্ছে মানবিকতার খাতিরে এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাড়াতে অবিলম্বে জনগণের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে হবে এবং বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে। এই একমাত্র উপায় যাতে অর্থনীতিতে চাহিদার বৃদ্ধি ঘটবে এবং তারই ফলে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্ভব হবে।
শেয়ার করুন