অর্থ মন্ত্রীর 'কোভিড' প্যাকেজ প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য

২৬ মার্চ,২০২০,বৃ্স্পতিবার

• অপ্রতুল
• ‘গোষ্ঠী বিস্তার’কে প্রতিহত করার লক্ষ্যকে পরাস্ত করে

নষ্ট করার মত কোন সময় নেই।
দীর্ঘ দুমাস ধরে সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে লকডাউন ঘোষণা করায় বহু জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে ।
‘কোষাগারীয় ঘাটতি’ নিয়ে আচ্ছন্ন থাকার সময় এটা নয়।
যদি ধনীদের ৭.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করার অবস্থা সরকারের থাকে তাহলে স্পষ্টতঃই তাদের সামর্থ্যের কোন অভাব নেই ।
অগ্রাধিকার হল মানুষের জীবন বাঁচানো ও মহামারিকে পরাস্ত করা।


আজ ঘোষিত ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজটিতে নিজেদের রাজ্যে ফিরতে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। বহু দেশ থেকে আমরা নিজেদের ভাইয়েদের ‘এয়ারলিফ্ট’ করে ফেরৎ এনেছি এই পরিস্থিতিতে তারা দেশের যেখানে আছে অথবা তাদের নিজেদের রাজ্যে তারা পৌঁছে গেলে সেখানে তাদের জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল।

উপযুক্ত ব্যবস্থা না করতে পারার ব্যর্থতা ২১ দিনের লকডাউনের উদ্দেশ্যকে পরাস্ত করবে যখন বিশাল জমায়েত একত্রিত হবে এবং সংক্রমণের ‘গোষ্ঠী বিস্তার’এর আশঙ্কা থাকবে। এর অবিলম্বে প্রতিকার প্রয়োজন।

যদিও কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তাব রয়েছে যেমন খাদ্য শস্যের সংস্থান দ্বিগুণ করা । কিন্তু তিন মাসের জন্য বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া , পরিবার পিছু এক কেজি করে ডাল সরবরাহ করা আদৌ যথেষ্ট নয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হল ভাল পুষ্টি। এই ব্যবস্থাপনা সেই উদ্দেশ্য সাধন করে না।

বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের একহাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণাটি যৎসামান্য। এদের প্রত্যেকের তাদের জীবনযাত্রার জন্য সাহায্য এবং সহায়তা প্রয়োজন। একহাজার টাকা কীভাবে যথেষ্ট হতে পারে ?

স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা রাশি বৃদ্ধিতে বা বীমার আওতা বাড়ানোয় সরকারের কোন অতিরিক্ত খরচ নেই। এই বিমায় বেসরকারী ক্ষেত্রে কর্মরতরাও অন্তর্ভুক্ত কিনা কোনও স্পষ্টতা নেই। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবিলম্বে যা প্রয়োজন তা হল প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম, ওষুধ এবং পর্যাপ্ত পরীক্ষার সুযোগ।প্যাকেজে এর কোন উল্লেখ নেই।

সরকার ঘোষণা করেছে যে প্রতিটি কৃষককে ২০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে ঘোষিত পিএমকেওয়াই (প্রধানমন্ত্রী কিসান যোজনা) এর আওতায় তাদের প্রাপ্য বকেয়া টাকার প্রথম কিস্তিই হল এই অর্থ।

মহিলাদের জনধন অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে স্থানান্তর খুবই সামান্য । আমরা প্রত্যেক জনধন অ্যাকাউন্টধারক এবং প্রতিটি বিপিএল পরিবারের জন্য পরবর্তী তিন মাসের জন্য সরাসরি ৫০০০ টাকা করে হস্তান্তর চেয়েছিলাম।

শ্রমিকদের জন্য কোনও যথোপযুক্ত সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তাদের নিজস্ব প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) অ্যাকাউন্টগুলিতে মাসিক মজুরির ২৪% তাদের কোনও বাড়তি ছাড় দেওয় না - এটি তাদের প্রাপ্য, নিজস্ব সঞ্চয়!

সরকারের এখনই যা করণীয়

সমস্ত গরীবদের বিশেষত মিড ডে মিল প্রকল্পের আওতাভুক্ত শিশুদের পরিবারকে রেশন কিট দেওয়ার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও অপুষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কেরালা এটি করছে।

ব্যাপক হারে ছাঁটাই ও কর্মসঙ্কোচনের মুখে সরকারকে পরবর্তী তিনমাসের আগাম মজুরি অবিলম্বে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

কৃষকদের এককালীন ঋণ মকুব করতে হবে ।

এখন ফসল কাটার মরসুম , কৃষকদের নির্বিঘ্নে ফসল ফলানো সুনিশ্চিত করতে পূর্বঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে উৎপাদিত ফসল সংগ্রহ করতে হবে । এটাই এখন অগ্রাধিকার।

মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষত কর্মচারিদের জন্য ঋণ পরিষোধ আপাতত স্থগিত রাখা এবং ইএমআই -এর সময় শিথিল করে সুবিধা দিতে হবে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণের পরিমান বৃদ্ধি করা এর সাথে যুক্ত ৬.৮৫ কোটি পরিবারের কাছে অর্থহীন কারণ বর্তমানে এদের সমস্ত কাজ থমকে গেছে। তাদের টিঁকে থাকতে এবং সুস্থ থাকতে অর্থ সাহায্য প্রয়োজন।

এমএনরেগার মজুরির পরিমাণ ২০ টাকা বাড়ানো হাস্যকর। এখন এই প্রকল্পে কোন কাজ হচ্ছে না । এই মুহূর্তে প্রয়োজন তাদের সরাসরি টাকা দেওয়া অথবা কাজ নির্বিশেষে মজুরি প্রদান করা।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন