Site icon CPI(M)

Some Misconceptions About Agriculture

Economy

ভারতে কৃষি সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

মূল প্রবন্ধটি পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকায় ইকোনমিক নোটস হিসাবে ইংরেজিতে “Some Misconceptions About Agriculture” শিরোনামে প্রকাশিত। সেই প্রবন্ধেরই সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ রাজ্য ওয়েবডেস্কের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হল।

প্রভাত পট্টনায়েক

ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই কিছু ভ্রান্ত ধারনা কাজ করে। এই সমস্ত ভ্রান্তি দূর করা না হলে নয়া তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি জনমানসে বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিক স্তরে যে ভ্রান্তি কাজ করে তা হল কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেটদের দখলদারির বিষয়টি নিয়ে কৃষক ও কর্পোরেট এরা দুই পক্ষই মাথা ঘামাক – জনসাধারণের সেই নিয়ে না ভাবলেও চলবে। এমন অবস্থান সততই ভ্রান্ত, কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেটদের দখল কায়েম হলে যে অবস্থা তৈরি হবে তার প্রভাব সবার উপরেই পড়বে – আর তাই জনসাধারনকে অবশ্যই এই নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। কর্পোরেট দখলরাজ বিষয়টি কোন তাত্ত্বিক বিতর্কের বিষয় না, এর ফলে আক্রান্ত হবেন সকলেই। এই জন্যই একটি কলকারখানায় প্রতিবাদ আন্দোলনের ন্যায় কৃষকদের আন্দোলন শুধুই কৃষকদের নিজেদের ব্যাপার নয় – খাদ্যবস্তু নিজেদের দখলে রাখতে (অনেকটা খাদ্য সংক্রান্ত সাম্রাজ্যবাদের মতো) কর্পোরেট শক্তির বিরোধিতায় দেশের, সমাজের অন্যান্য অংশকেও কার্যকরী রুপে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কেন এই পদক্ষেপ জরুরি –

কৃষক নির্ভর কৃষিব্যাবস্থাকে কর্পোরেটরা দখল করতে চলেছে মানে এই নয় তারা কৃষকদের রোজগারে ভাগ বসাতে চলেছে কিংবা ঘুরপথে তাদের ঘাড়ে কম আয়ের বোঝাটুকু চাপিয়ে দিতে চাইছে – কার্যত এই দখল আসলে কৃষিজমির উপরে কায়েম হবে। পৃথিবীর উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলি নিজেদের দেশে খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত অবস্থায় থাকে, সেই উদ্বৃত্তকেই তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাছে বিক্রি করতে চায় – এই বন্দোবস্ত পাকা হবে যদি আমাদের মতো দেশে কৃষিজমিতে খাদ্যপন্য উতপাদন ক্রমশ কমতে থাকেম আমরা খাদ্যে স্বনির্ভরতা হারাই- তখন বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে আমাদের। এমনটা করা যাবে যদি কৃষিজমিতে খাদ্যশস্য চাষ বন্ধ রেখে অর্থকরী ফসল (যা খাদ্যশস্য নয় এমন) চাষ করতে কৃষকদের বাধ্য করা যায় তবেই। উন্নত দেশগুলি আমাদের দেশের কৃষিজমিকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রয়োজনের অর্থকরী ফসলের যোগান পাকা করতে চায় – এই সব অর্থকরী ফসল তারা নিজেদের দেশের মাটিতে সারা বছর চাষ করতে পারে না বলেই তাদের নজর ভারতের কৃষিজমির উপরে ন্যস্ত।

কৃষক নির্ভর কৃষিব্যবস্থার উপরে কর্পোরেট আগ্রাসনের লক্ষ্যই হল ভারতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস করা এবং উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশসমুহের প্রয়োজনে অন্যান্য অর্থকরী ফসলের যোগানের জন্য আমাদের দেশের কৃষিজমির চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের অর্থনীতিকে বৈদেশিক নির্ভরতার দিকে আরও ঠেলে দেওয়ার জন্যই তারা চাইছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের যে সরকারি ব্যবস্থাটুকু (যা প্রধানত খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) আমাদের দেশে টিকে রয়েছে, তাকে একেবারে অকেজো করে দিতে। মোদি সরকার যতই চিৎকার করুক যে কৃষিতে এমএসপি (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) অব্যাহত থাকবে, একথা ভুললে চলবে না সংশ্লিষ্ট নিশ্চয়তাকে আইনি রূপ দেওয়ার জন্য নয়া আইন সংশোধন করার কোন প্রতিশ্রুতিই তারা দেয়নি। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার: এমএসপি’র বন্দোবস্তকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা, যার ফলে খাদ্যশস্য চাষ করেন এমন কৃষকদের ফসল বিক্রি সম্পর্কিত ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে এবং খাদ্যশস্য চাষে সম্ভাব্য লাভের সুযোগ আরও কমে যাবে। এর ফলে খাদ্যশস্যের চাষ কমতে থাকবে। আমাদের দেশে কৃষকরা ফসল বেচার কাজে সম্ভাব্য এমন ঝুঁকির বোঝা বইতে পারবেন না, এমনিতেই তারা অত্যন্ত দরিদ্র, এমএসপি না থাকলে তাদের সেই দুর্দশা আরও বাড়বে। এইভাবে, দুদিক থেকে তাদের উপরে ভয়ানক চাপ নেমে আসবে – একদিকে কর্পোরেটরা খাদ্যশস্যের বদলে অর্থকরী ফসল উৎপাদনের উপরে জোর দেবে এবং আরেকদিকে দেশের সরকার খাদ্যশস্য উৎপাদনে এমএসপি’র সুরক্ষা ব্যবস্থা খারিজ করে দেবে। সবটা মিলে কৃষকরা ক্রমশ খাদ্যশস্য চাষ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হবেন।

কারোর মনে হতে পারে যদি আমাদের দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমেও যায় তবে অর্থকরী ফসল রপ্তানি বাড়িয়ে সেই থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা আমরা কেন খাদ্যশস্য আমদানি করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারবো না? প্রথমত, খাদ্যশস্য আমদানির করার জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের থাকতে হবে, যা নানা কারনে সবসময় উপলব্ধ নাও হতে পারে। দ্বিতিয়ত খাদ্যশস্য এবং অর্থকরী ফসলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সূচকে প্রতিনিয়তই ওঠা নামা চলতে থাকে – এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে গেল অথচ অর্থকরী ফসলের দাম গেল কমে, তখন অর্থকরী ফসল রপ্তানি করে খাদ্য আমদানি করার মতো যথেষ্ট অর্থ জূটবে না অথচ তার প্রয়োজন থাকবে। মনে রাখতে হবে ভারতের মতো কোন দেশ যখন বিশ্ববাজারে ক্রেতা হিসাবে হাজির হবে তখন খাদ্যশস্যের দামের সূচক উপরে উঠবেই, আরও নিরদিস্ট করে বললে বলতে হয় নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্যশস্য আমদানির চাপের কারনেই আমাদের বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে।

দ্বিতীয়ত, যদিও খাদ্যশস্য আমদানির জন্য আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা যদিও বা থাকে ঐ একই সময়ে সেই আমদানিকৃত খাদ্যশস্য কেনার জন্য দেশের জনগণের উপযুক্ত ক্রয়ক্ষমতাও থাকতে হবে। যখন একটি দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদন কমিয়ে দেয় সেই অবস্থায় জনগনের ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ নিয়মেই সঙ্কুচিত হয়। খাদ্যশস্যের পরিবর্তে উত্পাদিত বিকল্প ফসলগুলিতে (অর্থকরী) চাষের কাজ খাদ্যশস্য চাষের তুলনায় অনেক কম শ্রম এবং কর্মসংস্থান নিবিড়, তাই এহেন অর্থকরী ফসল চাষের বৃদ্ধির অর্থ কৃষিতে কর্মসংস্থান ক্রমাগত হ্রাস পাবে (অনেকেই চাষের কাজে যুক্ত হতে পারবেন না, কারন অপেক্ষাকৃত কম মানবীয় শ্রমেই অর্থকরী ফসল চাষ হয়)। এই অবস্থায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবেই। জনসাধারণের বেশিরভাগেরই আমদানিকৃত খাদ্যশস্য কেনার সামর্থ্য থাকবে না।

কৃষি এবং খাদ্যশস্যের স্বনির্ভরতা আলোচনায় উপরের কারণগুলির সাথেই সম্ভাব্য সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হয়। উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলির কাছ থেকেই যেহেতু খাদ্যশস্যের আমদানি করতে হবে সেক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া উচিত না যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনায় যদি আমরা তাদের বিরুদ্ধাচারন করি তাহলেই তারা আমাদের খাদ্যশস্য বিক্রি করা বন্ধ করে দেন। খাদ্যশস্যে নিজেরা স্বনির্ভর না হয়ে তাদের থেকে আমদানি করার বিপদ এখানেই – এতে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবার সুযোগ থেকে যায়। এই সরল সত্যের উপলব্ধিই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায় হিসাবে সবুজ বিপ্লবের পথে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। নয়া কৃষি আইনের নামে মোদী সরকার নির্লজ্জের ন্যায় দেশকে পুনরায় পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যদিও আমাদের দেশে খাদ্য স্বনির্ভরতার বর্তমান অবস্থা সত্বেও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। এর উপরে যদি সেটুকু স্বনির্ভরতাও হারিয়ে যায় তখনকার অবস্থা সহজেই অনুমেয়, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অনেকদিন ধরেই ভারতের কৃষিব্যবস্থাকে কব্জা করতে চাইছে – মোদীর রাজত্বে সেই চাপের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দেওয়া হল।

দেশের কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধেই কৃষকরা আন্দোলন করছেন। বিনা বাধায় কর্পোরেটদের কৃষিক্ষেত্রে ঢুকতে দিয়ে চাষের আয়ে কৃষকদের কত ভাগ থাকবে আর কর্পোরেটদের কত ভাগ থাকা উচিত হবে সেই নিয়ে দর কষাকষির আলোচনায় সময় নস্ট করার অর্থ গোটা ব্যাপারটায় রাজনীতির প্রধান বিষয়টিকেই পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া। সেই এড়িয়ে যাওয়ার অর্থ হবে সাম্রাজ্যবাদের চাপের সামনে দেশের সার্বভৌমত্বের যতটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুও বিক্রি করে দেওয়া। সহজেই বুঝে নেওয়া যায় পরবর্তী ধাপে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার ন্যুনতম ব্যবস্থা হিসাবে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন (রেশনিং) সিস্টেমটুকুও বাতিল হয়ে যাবে। খাদ্যের গনবন্টন বা রেশনিং ব্যবস্থা আমদানির মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা যায় না কারন আমদানির পরিমাণে অনিশ্চয়তা থাকে।

আমাদের দেশে এমএসপি (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) সহ প্রকিউরমেন্ট (উৎপাদন)-এর ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় বলে প্রচার করা হচ্ছে। এ হল কৃষিকাজ সম্পর্কে দ্বিতীয় ভ্রান্ত ধারণা। যেহেতু ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া শুধুমাত্র তিনটি অঞ্চল – পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশ থেকে যে পরিমান খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে, তা গোটা দেশকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট; তাই দেশব্যাপী এমএসপি-কাম-প্রকিউরমেন্ট-এর ফলে বাড়তি মজুত কোন কাজে লাগবে না – এমন একটা যুক্তিকে হাজির করানো হয়েছে। এত বিপুল পরিমান মজুত সরকারের খরচ বাড়ায় এবং সেই কাজে ব্যাঙ্কগুলির থেকে নেওয়া অগ্রিম ঋণের সুদও গুনতে হয় যার প্রভাবে বাজেটে টান পড়ছে – এই হল সরকারের যুক্তি। তাই তাদের বক্তব্য এহেন বন্দোবস্তকে আরও বাড়ান হলে অহেতুক সরকারি অর্থের দ্বিগুণ অপচয় হবে। সরকারী গোডাউনে শস্যের অপচয় এবং খাদ্যশস্য ক্রয় ও স্টোরেজের ফলে অর্থের অপচয় বন্ধ করতে এমএসপি এবং প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রমের পরিধি কমানোই শ্রেয় বলতে চান তারা।

এই যুক্তিটি আদ্যন্ত ভুল এবং ভারতীয় কৃষিব্যবস্থা সম্পর্কে মোদী সরকারের অজ্ঞানতাই এতে প্রকাশিত হয়। এফসিআই (ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) কোনোদিনই অন্যান্য রাজ্য থেকে খুব বেশি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে না তাই এমএসপি বাড়লেই মজুতের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যাবে এমনটা না। ন্যুনতম সহায়ক মূল্য হল ফসলের দাম সংক্রান্ত এমন একটি বুনিয়াদি ব্যবস্থা যার ফলে খোলা বাজারে ফসলের দাম বাড়ে। তাই এমএসপি বাড়ানো হলে কৃষকদের আয় বাড়ে। ন্যুনতম সহায়ক মূল্য আছে বলেই সরকারকে ফসল না বিক্রি করেও কৃষকরা খোলা বাজারে ফসল বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পান। সুতরাং উৎপাদিত ফসলের সরকারি ক্রয় না বাড়লেও কৃষকদের লাভজনক দাম পাওয়ার সুযোগ থাকে।

তাহলে খোলা বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়লেও মোটের উপরে চাহিদা কমে না কেন? তাহলে কি এফসিআই (ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) মোট উৎপাদিত ফসলের অনেকটাই মজুত হিসাবে কিনে নেয় বলেই দাম বাড়ে? কিন্তু এফসিআই তো সারা দেশ থেকে শস্য মজুত করে না! এই ধাঁধার উত্তর খুবই সহজ। রেশন ব্যবস্থার উপরে নির্ভরশীল নন যারা (উচ্চ আয় করেন এমন), তাদের খাদ্যশস্যের মোট চাহিদা সাধারনভাবে বাজারের দামের সাথে পাল্টায় না (অর্থাৎ দাম বেড়ে গেলে তারা কম খাদ্যশস্য কিনবেন এমন হয় না)। সুতরাং বাজারে দাম বাড়লেই মোট চাহিদায় খুব বেশি ঘাটতি হতেই হবে এমনটা না। সেই অবস্থায় গরিব মানুষ কিসের ভরসায় বাঁচবেন? তারা ভরসা করবেন সরকারি রেশনিং এর উপরেই। তাই ন্যুনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর ফলে খোলা বাজারে ফসলের দাম যদি বেড়েও যায় তবুও ফুড কর্পোরেশনের গুদামগুলিতে সেই অজুহাতে অবিক্রিত খাদ্যশস্য পড়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

আসলে ন্যুনতম সহায়ক মুল্য হল সেই ব্যবস্থা যার কারনে কেন্দ্রীয় খাদ্যভান্ডারে খুব বেশি প্রভাব না ফেলেই সারা দেশজূড়ে ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকদের লাভজনক দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা বজায় থাকে। ফসলে সহায়ক মূল্য বাড়ানো হলে সরকারী গুদামে চাপ বেশি না বাড়িয়েও কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায়। ঐ তিনটি রাজ্য (পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ) বাদে সারা দেশে নিজেদের গুদাম স্থাপনের কাজে এফসিআই’র অকর্মণ্যতা নিশ্চই রয়েছে। সেই কারনেই কয়েকটি রাজ্য সরকার খাদ্য মজুত করার কাজে নিজস্ব সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাতে বাধ্য হয়েছে। যেখানেই রাজ্য সরকারের সংস্থাগুলি সেই কাজ পরিচালনা করেছে, মজুতের কাজে খুব সফল না হলেও এদের কারনেই সেই সব রাজ্যে কৃষকরা লাভজনক আয় করতে পেরেছেন। তাই উচিত হবে গুটিকয়েক রাজ্যে নিজেদের কাজে পরিধিকে সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বভারতীয় স্তরে এফসিআইকে আরও সক্রিয় করে তোলা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় খাদ্য মজুত প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত করা। 

সুতরাং কর্পোরেটদের হাতে কৃষিক্ষেত্রকে তুলে দেওয়ার বিষয়টি কেবলই দুই পক্ষের বিষয় নয়, সারা দেশের জনসাধারণের চিন্তার বিষয়। একইসাথে ফসলের দামে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থা এবং গনবন্টন (রেশনিং) ব্যবস্থাকে সরকারি অর্থ অপচয়ের অজুহাতে বাতিল করার যুক্তিটিও অসার। এই দুটি ধারনা জনমানসে যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে, ততই ক্ষতি হবে কৃষক আন্দোলনের – এমনটা হতে দেওয়া যাবে না।

ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ

শেয়ার করুন