গণপরিষদের একমাত্র কমিউনিষ্ট ও সেডিশন আইন
সব্যসাচী চ্যাটার্জী
সেটা ছিল সংবিধানের খসড়া পেশের আগে গণ পরিষদে মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত অন্তবর্তীকালীন রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার দিন।
২৯ শে এপ্রিল ১৯৪৭।
আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে।
গণপরিষদে রাজদ্রোহ আইন সংক্রান্ত প্রথম ইস্যুটি যিনি তুলে ধরলেন, তিনি সোমনাথ লাহিড়ী।
কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিনিধি। আলোচনাটি উত্থাপিত হয়েছিল মূলত বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীণতার সাংবিধানিক গ্যারান্টির প্রেক্ষিতে কারনসঙ্গত নিয়ন্ত্রণের নিরিখে।
আজকে রাজদ্রোহ আইনের প্রয়োগের উপর সুপ্রীম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গণ পরিষদে কমিউনিষ্ট পার্টির এই প্রতিনিধির ভূমিকা স্মরণ করা জরুরি।কারন তাহলেই বোঝা যাবে ভারতের গণতন্ত্রে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীণতায় গণপরিষদে একমাত্র কমিউনিষ্ট সদস্যের ভূমিকা কতটা ঐতিহাসিক ছিল।
কারন যে ইংরেজ রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল সেই ঔপনিবেশিক আইনের যৌক্তিকতা আদৌ আছে কিনা তা বর্ণনা করতে গিয়ে কমরেড লাহিড়ী যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার একটি অংশ তুলে ধরা সঙ্গত।
গণপরিষদে মৌলিক অধিকারের খসড়া পেশ করেছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
প্যাটেলের সঙ্গে সোমনাথ লাহিড়ীর বিতর্কটি প্রণিধান যোগ্য।
সোমনাথ লাহিড়ী প্রতিবাদ করেছিলেন বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় যে কোনো রকম নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে।তিনি চেয়েছিলেন সংবাদপত্রের স্বাধীণতা হবে সর্বোচ্চ বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীণতার মতই।তিনি সর্দার প্যাটেলের প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন যে এই নিয়ন্ত্রণ গুলি একজন পুলিশ কনস্টেবেলের দৃষ্টি ভঙ্গীতে তৈরি। অর্থাৎ অধিকারের সীমাবদ্ধতা।
একটি ঔপনিবেশিক, স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হওয়া স্বাধীন দেশে সংবাদ পত্র নিয়ন্ত্রণ বা বাক ও মত প্রকাশের উপর নিয়ন্ত্রণ কখনো স্বাধীন দেশে থাকতে পারেনা। সোমনাথ লাহিড়ীই প্রথম বলেছিলেন ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪ক ধারা স্বাধীনভারতে অপ্রয়োজনীয়।
স্বাধীনতা মানে সেটাই যেখানে জনগণ স্বাধীন। স্রেফ ব্যক্তির সমালোচনা করেছে বলেই সেখানে রাষ্ট্র্বের সমালোচনা করেছে বলা যাবেনা।স্বাধীনতা মানে মান্টোর মত আলফাজ লেখার স্বাধীনতা,স্বাধীনতামানে প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা। 'তোবা টেক সিং' লেখার স্বাধীনতার জন্য।
এপথের লড়াইয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছি আমরা। সুপ্রীম কোর্ট কেন্দ্রকে বলেছে যতদিন না বিবেচনা করছে স্টে থাকবে।সোমনাথ লাহিড়ীর বক্তব্য আজ আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠিছে সাংবিধানিক আলোচনায়।আর্টিক্যাল ১৯ এর আলোচনায়। গণতন্ত্রের আলোচনায়,বিরোধিতার আলোচনায়।