অর্কপ্রভ সেনগুপ্ত
তুষারাবৃত হিমালয় ঘেরা নিষিদ্ধ দেশ তিব্বত। দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করে সেই দেশের পথ ধরে চলেছে সপ্তদশ বর্ষীয় এক বালক। দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত হলেও নিষিদ্ধ দেশের রাজধানীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে তার আনন্দের সীমা নেই। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় সে। সামনে পাহাড়ের গায়ে এ কি দেখছে ? ত্যাগের ধর্ম, পরিমিতির ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম। তিব্বত সেই বৌদ্ধ ধর্মের দেশ। এখানে চারিদিকে অপরিসীম দারিদ্র্যের মাঝে এই গগনচুম্বী প্রাসাদ কার ? প্রশ্ন করতেই উত্তর এল – ‘দলাই লামার’। ‘দলাই লামা কে ?’ প্রশ্ন করল বালক। যে শোনে সেই অবাক হয়। দলাই লামাকে চেন না ? তিনি ঈশ্বর স্বয়ং। তাঁর অঙ্গুলি হেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়। তাঁর আদেশে পাহাড়ে তুষার ঝড় ওঠে, আসে ভূমিকম্প মহামারি। শুনেই হেসে ফেলল বালক। লামার অনুগামীরা কান পেতে শুনছিল। ছেলেটিকে ঘিরে ধরল তারা ‘হাসলে যে ?’ দৃপ্ত কন্ঠে উত্তর এল – ‘দলাই লামা ভন্ড। মানুষ কখনো দেবতা হতে পারে না। এ কেবল বুজরুকি। লামা তোমাদের বোকা বানিয়ে দাসত্বের বেড়ি পরিয়েছন।‘ এত বড়ো পাপ কথা ! অস্ত্র হাতে অনুগামীরা ঘিরে ধরল। এই বিদেশীকে তারা হত্যা করবে। হত্যা হয়তো করতও। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল কয়েকজন তিব্বতি রমণী। তাদের কৃপাতেই সেই যাত্রা রক্ষা পায় সে। কিন্তু অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের এবং সর্বোপরি মানব স্বাধীনতার স্বপক্ষে বালকের সংগ্রাম চলেছিল আজীবন। এই বালক, বিশ্ব পথিক রামমোহন রায়।
উপরের কাহিনীটির রামমোহনের বহু জীবনীতে উল্লেখ থাকলেও এর ঐতিহাসিক ভিত্তি সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে। রামমোহন বাল্যকালে একবার তিব্বতে গেছিলেন একথা সম্ভবতঃ সত্য, অন্তত মেরি কার্পেন্টার উল্লেখ করেছেন তাঁর গৃহে থাকাকালীন রামমোহন তিব্বত ভ্রমণের বহু কাহিনী শুনিয়েছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা সম্বাদ কৌমুদীতে কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছিল বলেও শোনা যায়, যদিও তা আর পাওয়া যায় না। কিন্তু পাকা ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকুক আর নাই থাকুক, রামমোহনের বহু জীবনীকারই যে এই কাহিনী সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার কারণ এই কাহিনী তাঁর চরিত্রের সঙ্গে ভীষণ ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পুরাণে নচিকেতা তাঁর পিতাকে বলেছিলেন ‘শতানামেমি প্রথমঃ’, অর্থাৎ আমি শতজনের মধ্যে প্রথম হতে চাই। শিবনাথ শাস্ত্রী এই কাহিনীর সূত্র ধরে রামমোহন রায় সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন – ‘রামমোহন রায় যে কালে জন্মিয়াছিলেন সে সময়ে এদেশবাসীদিগের মধ্যে লক্ষের মধ্যে – লক্ষের কেন কোটির মধ্যে – তিনি প্রথম হইয়াছিলেন বলিলে কি অত্যুক্তি হয় ?’। এই প্রশ্নের উত্তর – না, হয় না। শুধু সেই কাল কেন? আজ তাঁর জন্মের আড়াইশো বছর পরেও এই দেশে রামমোহনের সম আসনে বসতে পারেন এমন লোকের সংখ্যা কত? বাংলা নবজাগরণের ব্যক্তিত্বদের অসংখ্য তুষারাবৃত গিরি শৃঙ্গের মাঝেও কাঞ্চনজঙ্ঘার ন্যায় আকাশ স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছেন রামমোহন। শিক্ষা থেকে অর্থনীতি, সাংবাদিকতা থেকে ধর্মচিন্তা এমন কোন বিষয় আছে, যেখানে বাঙালি রামমোহনের দেখিয়ে যাওয়া পথে হাঁটেনি? চক্রব্যূহে বেষ্টিত অভিমুন্যুর মতো তিনি সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন সব দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রবল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। তাঁর বহু মিত্র তাকে ত্যাগ করে গেছে, শত্রুরা শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে, সমগ্র বাঙালি হিন্দু সমাজ তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তবু রামমোহন, সেই লামার অনুগামীদের সামনে দাঁড়ানো বালকের মতোই, যা সঠিক মনে করেছেন, যা সত্য মনে করেছেন তা দৃপ্ত কন্ঠে প্রচার করতে কুন্ঠা বোধ করেননি।
শিক্ষা, ধর্ম বা সমাজচিন্তায় অবদান বা সতীদাহ প্রথা আইন করে নিবারণে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকা ব্যতীতও রামমোহন বাঙালি তথা ভারতীয়দের জন্য এক অমুল্য রত্ন রেখে গেছেন। তা হল তাঁর বিশ্বচেতনা, তাঁর আন্তর্জাতিকতাবাদ। রংপুরের কালেক্টর ডিগবি সাহেবের অধীনে কর্মরত অবস্থাতে রামমোহন বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উৎসাহের সঙ্গে খোঁজ খবর রাখে শুরু করেন। এই সময় বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তিনি পত্র আদান প্রদানও করেন। তিনি ছিলেন ফরাসী বিপ্লবের উৎসাহী সমর্থক। স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন সহজেই। নেবেন নাই বা কেন ? তিব্বতের কাহিনী যদি সত্যি হয়, ডিগবির অধীনে কাজ করার এবং ইংরেজি শিক্ষা লাভের বহু পূর্বেই রামমোহন রায়ের মধ্যে বিশ্বচেতনার বীজ উপ্ত ছিল। ইংরেজি শিক্ষা এবং বিভিন্ন দেশের সংবাদ লাভের সুযোগ, সেই বীজকে মহীরুহে পরিণত করে।
স্বাধীনতার আদর্শ রামমোহনের কাছি ছিল একটি বিশ্বব্যাপী আদর্শ। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকে তিনি নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন করতেন। মিরাৎ-উল-আখবার এ দুর্ভিক্ষ পীড়িত আয়ার্ল্যান্ডে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি তীক্ষ্ণ ভাষায় প্রবন্ধ লিখেছেন। শুধু তাই নয়, আয়ার্ল্যান্ডের রিলিফ ফান্ডে তিনি অকাতরে অর্থ দান করেন। ইতালিতে কার্বোনারিদের কার্যকলাপের তিনি উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। নেপলস-এর গণসংগ্রামকে তিনি নিজের সংগ্রাম রূপেই মনে করতেন। তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন – ‘নিয়াপলিটানদের (নেপলস নিবাসী) আমি আপন মনে করি এবং তাদের শত্রুরা আমারও শত্রু।‘ অস্ট্রিয়া নেপলস-এর বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হলে রামমোহন শোকে কয়েকদিন কারুর সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেননি । তাঁর ফরাসী প্রীতির কথা পূর্বেই বলা হয়েছে, এই প্রসঙ্গে আরেকটি কাহিনী বলা যেতে পারে। জাহাজে ইংল্যান্ড যাত্রার সময় উত্তমাশা অন্তরীপে রামমোহন রায়ের পা ভেঙে যায়। তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। কিন্তু বন্দরে ফরাসী জাহাজে উড্ডীন নীল সাদা লাল ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা দেখে কারোর কোনো নিষেধ না শুনে তিনি ভগ্ন পদেই উঠে দাঁড়িয়ে বিপ্লবী পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁর কন্ঠে ধ্বনিত হয় ফ্রান্সের জয়ধ্বনি। এমনই ছিল তাঁর বিপ্লবী ফ্রান্সের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। ১৮৩০-এর ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লবকে তিনি সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছিলেন।
রামমোহন সকল জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের শর্তহীন সমর্থক হলেও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, মানবজাতি প্রকৃতপক্ষে একটিই জাতি। পৃথিবীর যত জাতি রয়েছে তারা এই মহীরুহ সম মানব সমাজেরই শাখা-প্রশাখা। তাঁর ভাষায় - ‘The accurate deductions of scientific research lead to the conclusion that all mankind are but one great family, of which numerous nations and tribes existing are only various branches.’। এই কারণে তিনি বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক বিবাদের বিরোধী ছিলেন। বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন পৃথিবীর বুনিয়াদ গঠিত হবে, এই ছিল তাঁর কামনা। তিনি বলেছিলেন – ‘In society, individuals are constantly driven by their weakness to seek help from their neighbours, above all if the neighbours happen to be stronger than they ; why, then should a nation have the absurd pride of not depending upon another ?’।
এই সহযোগিতা কিভাবে বাস্তবে কার্যকর করা সম্ভব, তা নিয়ে রামমোহন রায়ের সুস্পষ্ট ভাবনা ছিল। তিনি ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও তৎকালীন ব্রিটেনে অবস্থিত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত তালিরঁকে একটি পত্র লেখেন। এই পত্রের প্রতিটি লাইন রামমোহনের আন্তর্জাতিকতাবাদের সাক্ষ্য বহন করে। এই পত্রে রামমোহন শুধু পাসপোর্ট ও সীমান্তরক্ষী বিহীন এক মুক্ত সীমানার পৃথিবীর কল্পনাই করেননি, বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও ভ্রাতৃভাব গড়ে তোলার জন্য একটি জাতিসঙ্ঘের কল্পনা করেছেন। এই সঙ্ঘে বড়ো-ছোটো সকল রাষ্ট্র সমান মর্যাদা লাভ করবে, প্রত্যেকের সব বিষয়ে সমান মত প্রদানের অধিকার থাকবে এবং প্রত্যেকের সম সংখ্যক ভোট থাকবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সভায় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যে কোনো একটি দেশের প্রতিনিধিকে সভাপতি করা হবে। তাঁর এই পদের মেয়াদ হবে এক বছর। যুদ্ধের মাধ্যমে নয়, আলোচনার মাধ্যমে এইভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শান্তিপূর্ণ ভাবে এই আন্তর্জাতিক সভা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। লিগ অফ নেশনস বা ইউনাইটেড নেশনস-এর প্রায় এক শতক পূর্বে এইরূপ চিন্তা প্রমাণ করে রামমোহন রায় কতটা সময়ের তুলনায় অগ্রসর ছিলেন।
এই আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি রামমোহনের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিল। ইংল্যান্ডে রিফর্ম বিলের তিনি এত উৎসাহী সমর্থক ছিলেন, যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই বিল পাশ না হলে সব সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন, ইংল্যান্ড বা ইংল্যান্ডের অধীনস্থ কোনো দেশে আর থাকবেন না। রামমোহনের আন্তর্জাতিকতাবাদের তীব্রতা দেখে অনেকেই আশ্চর্য হতেন। স্পেনের স্বেচ্ছাচার থেকে দক্ষিণ আমেরিকার উপনিবেশ গুলি মুক্তি লাভ করলে সেই সংবাদে উৎফুল্ল হয়ে রামমোহন স্বভবনে বহু ইউরোপীয় বন্ধুকে আমন্ত্রণ করে ভোজে আপ্যায়িত করেন। বিদেশের ঘটনায় তাঁর এত উৎসাহ কিসের প্রশ্ন করলে রামমোহন উত্তর দিয়েছিলেন – ‘What ! Ought I be insensible to the sufferings of my fellow-creatures wherever they are, or however unconnected by interests, religion and language ?’ আদতে তিনি পৃথিবীর সর্বত্র সংগ্রামশীল বিপ্লবীদের নিজের সহযোদ্ধা মনে করতেন। তিনি বাকিংহাম সাহেবকে বলেছিলেন, হয়তো তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন না কিন্তু একদিন শুধু ইউরোপ না, এশিয়ার উপনিবেশগুলিতেও মুক্তির আলো ছড়িয়ে পড়বে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন – ‘Enemies to the liberty and friends of despotism have never been and never will be ultimately successful.’
রামমোহন রায় শুধু আন্তর্জাতিকতার পূজারী ছিলেন না, তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি স্বয়ং হয়ে উঠেছিলেন একজন আন্তর্জাতিক চরিত্র। রামমোহন জীবিত থাকাকালীনই ওয়াশিংটনে আমেরিকান দাসপ্রথা বিরোধী একটি সংগঠনের সম্মেলনে ‘Address to the Members of the Congress on the Abolition of Slavery’ শীর্ষক ইস্তাহারে কোনো এক সভ্য ‘রামমোহন রায়’ স্বাক্ষর করেন। কারণ হিসেবে তিনি লিখেছিলেন ‘In closing this address allow me to assume the name of one of the most enlightened and benevolent of the human race now living, though not a white man, - Rammohun Roy.’ বাঙালি সাম্যবাদীরা তাঁদের আন্তর্জাতিক চেতনার জন্য অনেক সময় কটাক্ষের সম্মুখীন হন। শ্লেষের সঙ্গে তাঁদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য উড়ে আসে – ‘আপনারা তো ল্যাটিন আমেরিকায় বৃষ্টি হলে এখানে ছাতা খোলেন।‘ ভিয়েতনামে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মিছিল থেকে অবরুদ্ধ কিউবার জন্য ত্রাণ সংগ্রহ, যতবার সাম্যবাদীরা আন্তর্জাতিকতাবাদী কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সমালোচিত হতে হয়েছে নানা ভাবে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যারা শ্লেষ, সমালোচনা ও কটাক্ষের আশ্রয় নেন, তাঁরা একবারও ভেবে দেখেন না অন্য অনেক বিষয়ের মতো এই ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক স্বয়ং রামমোহন। তাঁর আন্তর্জাতিকতাবাদের ঐতিহ্যই বাঙালি সাম্যবাদীরা বহন করে চলেছেন। বাঙালির বিশ্বমানবতা নিয়ে অনেকপ্রকার মস্করা টিটকিরি শোনা যায়। কিন্তু এই চেতনা আদতে বাংলার রেনেসাঁর প্রাণপুরুষের সঙ্গে অতপ্রোত ভাবে জড়িত, একে অস্বীকার করা অসম্ভব। এই সময়ে, যখন বাংলার সমাজ ক্রমশ আরও অন্তর্মুখী ও কূপমণ্ডূক হয়ে পড়ছে, তখন নিজের হাতে রোপন করা এই আন্তর্জাতিক চেতনার বীজ তাঁর জন্মভূমিতে আরও শক্ত সমর্থ বৃক্ষে পরিণত হোক, এই প্রত্যাশায় আসুন আমরা সকলে সহমত হই।
*১৮২৯ সালে আজকের দিনে সতীদাহ প্রথা রদের আইন পাশ হয়, বাংলার গভর্নর তখন উইলিয়ম বেন্টিংক।