গোটা রাজ্যে নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে সন্দেশখালি

প্রশ্ন: নিরাপদ সর্দার কি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন?

নিরাপদ সর্দার: আমি সবসময়ে গণআন্দোনের প্রথম সারিতেই ছিলাম, প্রত্যক্ষভাবে হোক বা পরোক্ষভাবে। আগামী দিনেও আন্দোলনের সামনের সারিতেই থাকব।


প্রশ্ন: থানায় পুলিশ কী জানতে চেয়েছিল?

নিরাপদ সর্দার: বাঁশদ্রোণী থানা আমায় আটক করে। তারপর বসিরহাট থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ১২ ফেব্রুয়ারি আদালত তিন দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয়। হিসাব মতো আমার সন্দেশখালি থানায় থাকার কথা। কিন্তু আমায় রাখা হয় বসিরহাট থানায়। এই তিন দিন কোনও প্রশ্নই করা হয়নি আমায়। কী কারণে পুলিশ হেপাজতে নেওয়া হলো, বোঝা গেল না।

প্রশ্ন: অভিযোগকারী ভানু মণ্ডল কে?

নিরাপদ সর্দার: ভানু মণ্ডল শেখ শাহজাহানের অনুচর শিবু হাজরার ঘনিষ্ঠ।

প্রশ্ন: বিধায়ক থাকাকালীন আপনি একাধিকবার বিধানসভায় সন্দেশখালির মানুষের উপর চলতে থাকা অত্যাচারের কথা তুলে ধরেছেন। আর কোথায় এই কথা আপনি জানিয়েছিলেন?

নিরাপদ সর্দার: বিধানসভায় বহুবার এই কথা বলেছি যে, সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতারা জমি লুঠ করছে। এক জন বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় এই কথা জানানো আমার কর্তব্য। আমি তাই করেছি। অন্য কোথাও বা সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা বলিনি। বিধানসভায় যখনই এই কথা বলতে গিয়েছি, তখন সোনালী গুহ এখন যিনি বিজেপি নেত্রী, আমার মাইক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কথা বলতে বাধা দেওয়া হতো শাসক দলের পক্ষ থেকে।

প্রশ্ন: বিজেপি সন্দেশখালির আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। শুভেন্দু বলছেন, যারা ইডি’র উপর হামলা চালিয়েছে, তারা ‘বাংলাদেশী রোহিঙ্গা’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, সংখ্যালঘুদের দ্বারা হিন্দু মহিলারা অত্যাচারিত হয়েছেন। বিজেপি-আরএসএস’র এই প্রচারকে কীভাবে দেখছেন?

নিরাপদ সর্দার: রেশন দুর্নীতির অনেক তথ্য ও ওদের সম্পদ প্রকাশ্যে চলে আসবে বলে শেখ শাহজাহান পরিকল্পিতভাবে ৫ জানুয়ারির ঘটনাটা ঘটায়। এখানে কোনও ধর্মের বিষয় নেই। মানুষের জমি লুঠ হয়েছে। রুটি-রুজির স্বার্থে আজ মানুষ পথে নেমেছেন। বিজেপি-আরএসএস তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই সব প্রচার করছে।

প্রশ্ন: জমি লুঠ, মহিলাদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সন্দেশখালির মানুষ যেভাবে পথে নেমেছেন, তা সন্দেশখালির মানুষ হিসাবে এবং গণআন্দোলনের নেতা হিসাবে আপনি কীভাবে দেখছেন?

নিরাপদ সর্দার: আগেও বলেছি, আবারও বলছি, মানুষের এই আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। জমির অধিকার ও রুটিরুজির স্বার্থে তাদের যে লড়াই, তা আজ গোটা রাজ্যে এক নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। গোটা রাজ্যে এর আগে যখন কোনও আন্দোলন হয়েছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্রতিনিধি পাঠিয়ে সেটা সমাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

প্রশ্ন: আপনি জেলে থাকাকালীন দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন ও মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তাঁরা শাহজাহানের কাজের কথা জানতেন না। শেখ শাহজাহান তৃণমূলের নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য। তৃণমূলের নেতারা তার এই সব কাজের কথা জানতেন না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

নিরাপদ সর্দার: শেখ শাহজাহান এই কাজ করছে, এটা তৃণমূল জানত না— তা মিথ্যা। মুখ্যমন্ত্রী আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, কাটমানির কিছু অংশ পৌঁছে দিতে হবে। তাই গোটা রাজ্য জুড়ে এই কাজ চলছে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন পুব দিকে যেতে, তাহলে ভাবতে হবে যে, উনি পশ্চিম দিকে যেতে বলছেন। তাঁর দলের লোকরা এই কথা ভালোভাবেই জানে।

প্রশ্ন: কৃষক সভা, খেতমজুর ইউনিয়ন ব্লকের ভুমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে। সেখানে যে দাবিগুলি রাখা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, গ্রামের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। এই সরকার কি সেই কাজ করতে পারবে?

নিরাপদ সর্দার: এই সরকার জমি লুঠ করার সরকার। এদের পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয় জমি ফিরিয়ে দেওয়া। জমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে, সেগুলো মেনে জমি ফেরত দিতে হয়। জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে তা চাষের অযোগ্য করে তোলা হয়েছে। সেই জমির আগের চরিত্র ফিরিয়ে আনাতে গেলেও অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: গোটা রাজ্য জুড়ে ১০০ দিনের কাজের টাকা লুঠ হয়েছে। সন্দেশখালির পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে আবাস যোজনা, ১০০ দিনের টাকা লুঠের অভিযোগ আনছেন গ্রামবাসীরা। খেতমজুর আন্দোলনের নেতা হিসাবে এই বিষয় আপনি কী বলবেন?

নিরাপদ সর্দার: শুধু সন্দেশখালি নয়। গোটা রাজ্যেই এই লুঠ চলছে। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অরূপ বিশ্বাস একটা হিসাব দিয়েছিলেন। বিভিন্ন জেলা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলাম যে, মন্ত্রী অসত্য কথা বলেছেন। আবাস যোজনার টাকা সেই সময় থেকে চুরি করা হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একাধিকবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অসত্য কথা বলেছেন। এই নিয়ে আমার সাথে ওঁর অনেক তর্কবিতর্কও হয়েছে। ১০০ দিনের টাকার ক্ষেত্রেও ভুয়ো জব কার্ড বানিয়ে টাকা লুঠ করা হচ্ছে। যিনি কাজ করেছেন, তিনি টাকা পাচ্ছেন না। অন্য এক জনের কাছে সেই টাকা চলে যাচ্ছে। এক জন গ্রামের মানুষ তাঁর শ্রম দিয়েছেন, অথচ তিনি তাঁর মজুরি পাবেন না, এটা হতে পারে না। তৃণমূলের এই চুরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবার বাজেটে রেগার বরাদ্দ কমিয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদও আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে করেছি।

প্রশ্ন: সন্দেশখালিতে কবে থেকে এই লুঠ চলছে?

নিরাপদ সর্দার: যেদিন থেকে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে, সেদিন থেকে এই লুঠ চলছে।

প্রশ্ন: তাহলে এত দিন পর কেন সন্দেশখালির মানুষ প্রতিবাদ শুরু করলেন?

নিরাপদ সর্দার: মানুষ ভয়ে ভয়ে থাকতেন। লক্ষ্য করে দেখবেন, ৫ জানুয়ারি শাহজাহান পলাতক হওয়ার পর থেকে মানুষ একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কারণ তাঁরা বুঝেছেন, এবার আর চুপ করে থাকলে হবে না।

প্রশ্ন: পুলিশ মানুষের অভিযোগ জমা নিচ্ছে ক্যাম্প করে। গ্রামের লোকরা বলছেন, আগেও অনেক অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আপনার কী মত?

নিরাদপ সর্দার: পুলিশ এখন অভিযোগ জমা নিচ্ছে। তাদের এই পদক্ষেপ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের কী ভূমিকা ছিল। সন্দেশখালি থানার আধিকারিকদের সঙ্গে তৃণমূলের গুণ্ডারা পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। আর যাঁরা এই অন্যায়ের, লুঠের প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের জেলে বন্দি করা হয়েছে।

প্রশ্ন: আগামী দিনে সন্দেশখালির এই লড়াই কোন পথে পরিচালিত হবে?

নিরাপদ সর্দার: জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে, রুটিরুজির দাবিতে, ভোটাধিকার ফেরতের দাবিতে, সর্বোপরি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন চলবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন