দুনিয়ার তিন নম্বর ও লুটেরা পুঁজির কেরামতি (১ম পর্ব)

সৌভিক ঘোষ

খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে... না গৌতম আদানি এখনও এঁড়ে গরু কিনে ফেলেননি, কিন্তু আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরাতে হয় এটুকু যারা জানেন- তারা ইতিমধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দিয়েছেন। ব্যাক্তিমালিকানার খতিয়ানের ভিত্তিতে দুনিয়ার তিন নম্বর চেয়ারটি যার দখলে ছিল সেই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আসলে যা করেছে তাকে সোজা কথায় ধাপ্পা বলাই সঠিক। আদানি গোষ্ঠী এমন ধাপ্পা দিল কেন এটা আলোচনার বিষয়ই নয়। আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স পুঁজির চরিত্রই তাই, ওতে কেউ অবাক হলে বলতে হয় তার শিশুসুলভ গুণাবলী বজায় রয়েছে। আসল প্রসঙ্গ এক এবং আরও তিন-

ভারতে কর্পোরেট ফিন্যান্স পুঁজি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির হাতে হাত মিলিয়ে নিজের চলার পথ সুগম করেছে, দিনে দিনে আরও করছে। একে অন্যের পিঠ চুলকে (ইংরেজিতে যাকে প্যাট্রোনাইজ করা বলে) আর কতদিন চলবে? এই প্রশ্নের সাথেই বিবেচনা করতে হবে-

১) এহেন ধাপ্পাবাজির ধাক্কায় আমাদের দেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতদূর প্রভাবিত হতে পারে?

২) আদানির উন্নতি’কেই দেশের উন্নয়ন বলে ঢাক পেটানো মোদী সরকার কি পদক্ষেপ নেবে?

আর

৩) গৌতমের ব্যবসা যদি অনেকটা ডুবেও যায় তাহলে পরবর্তী অবস্থাটি কেমন হতে পারে?

আমাদের দেশে পুঁজিবাদের অগ্রগতি কতদূর কি হয়েছে সেই নিয়ে কথা বলতে গেলেই যেটা চলে আসে তাকেই ধান্দাবাজি বলতে হয়- পণ্ডিত নেহরুকেও সেই নিয়ে বিশেষ বিরক্তি প্রকাশ করতে হয়েছিল। স্বাধীনতার ঠিক পরে দেশীয় পুঁজিকে সহায়তা দিতেই অর্থনীতি প্রসঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনার অনেকটা গৃহীত হয়। তৎকালীন পরিকল্পনাকারেরা মনে করেছিলেন বিবিধ বুনিয়াদী ক্ষেত্রে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বেসরকারি পুঁজিকে উৎসাহ দেবে, তারা হই হই করে ময়দানে নেমে পড়বেন এবং সরকারী প্রকল্পের পরিসর সমাজে যতদূর অবধি পোঁছতে পারল বাকিটায় এনারাই কামাল করে দেবেন, দেশ এগোবে। যা ঘটল তাতে দেখা গেল ভারতে বেসরকারি পুঁজির এক বিরাট অংশই চটজলদি মুনাফায় যতটা উৎসাহী, বিরাট আকারের উৎপাদনী ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠায় ততটাই নিমরাজি। এমন মনোভাবের পিছনে দেশীয় পুঁজির শিকড়ে দীর্ঘযুগ ধরে চলে আসা রাজা-সামন্ত-জমিদারী শোষণের প্রভাব আছেই। বিনিয়োগ থেকে মুনাফা অবধি অর্থ সঞ্চালনের চক্র ঘুরে এসে কত দ্রুত সিন্দুকে ঢুকে পড়া যায় কিংবা হালের ফ্যাশন মেনে হস্তান্তরযোগ্য ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেটে রূপান্তরিত হওয়াই এই পুঁজির প্রধান প্রবণতা। ভারতে দেশীয় পুঁজির মেজাজ কখনো (দুয়েকটি ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে) বড় উৎপাদনমুখী ছিল না। গৌতম আদানির ব্যবসা (বা ঐরকম যা কিছু জানা যায়) সেই মেজাজেরই চূড়ান্ত নিদর্শন বই আর কিছু নয়।

Adani 1

১৯৮৮ সালে গৌতম পণ্য কেনা-বেচার ব্যবসা (কমোডিটি ট্রেডিং) শুরু করেছিলেন। খেয়াল রাখবেন কর্মকাণ্ডটি পণ্য আদান প্রদানের (আমদানি-রপ্তানি নির্ভর)- উৎপাদন না। পরে তারা কয়লায় বিনিয়োগ করে এবং আরও কিছুদিন পরে বিদেশী উইলমার কোম্পানির সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার হিসাবে ভোজ্য তেল পরিশোধন করে বিক্রি করতে শুরু করে। মুন্দ্রায় এদের নিজস্ব পণ্য আদান-প্রদানকারী বন্দর ছিল। ভারতে সবচেয়ে বেশি কয়লা আমদানি করত এরাই। কোম্পানির সুত্রপাত ঘটেছিল ৫ লক্ষ টাকা মূলধনের জোরে। সেই ব্যবসার বৃদ্ধির হার ৮৯১% শুনে চমকে যেতে হচ্ছে কেননা যে সময়ে গৌতমের এমন লক্ষ্মীশ্রী (এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও প্রকল্প না) প্রাপ্তি সেই একই সময়ে ভারতে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা ঐতিহাসিকভাবে অভূতপূর্ব দারিদ্রসীমায় পৌঁছে গেছে। দেশীয় বাজারে পণ্যের চাহিদায় বিপুল ঘাটতি, নোটবাতিল ও জিএসটি’র ধাক্কায় এমএসএমই (ক্ষুদ্র,কুটির ও মাঝারি উদ্যোগসমূহ) বিষয়টি আজকের ভারতে শুধুমাত্র অর্থনীতির বইতেই টিকে রয়েছে- বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে, এর উপরে করোনা সংক্রমণের মোকাবিলায় আচমকা লকডাউন ঘোষণার ফলে কাজের বাজারে হাহাকার তৈরি হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’ গোছের একটা কিছুর কথা খুব জোরে জোরে বলতেন- আজকের ভারত দেখিয়ে দিয়েছে হাতে পয়সা না থেকেও মানুষ কিভাবে বেঁচে রয়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম আগুন, উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ নেই, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগটুকুও হাতে ডিজিটাল ডিভাইস থাকলে তবেই মিলবে এবং দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে রেশনের চাহিদা যত বাড়ছে মোদী সরকার ঠিক সেই অনুপাতেই সরকারী ব্যয়বরাদ্দে কাটছাঁট ঘোষণা করছেন। ভারতে এখন সবচাইতে গতিশীল বস্তু দুটি- একটি আদানির ব্যবসায় অর্থলাভ (কিংবা লোকসান) আরেকটি বন্দে ভারত নামের ট্রেন! বাকি সবকিছু কার্যত হয় থমকে রয়েছে নাহলে যেটুকু যা ছিল সেই থেকে ক্রমশ পিছিয়ে চলেছে।

এই যখন অবস্থা তখন বেছে বেছে একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতেই বিপুল সম্পত্তি জুটছে কি করে? এখানেই অর্থনীতি (ম্যাক্রো) ও শেয়ার বাজারের আন্তঃসম্পর্ক। শেয়ার বাজারের ওঠা-নামা, ভালো-মন্দের উপরে ভিত্তি করে যতই দেশের শ্রীবৃদ্ধির গল্প শোনানো হোক না কেন আসল কথাটি একই আছে- যাদের অনেক আছে তাদের হাতের তালু গলে চুঁইয়ে কিছুই নামে না, সেটুকুও তারা নিজেরাই আত্মসাৎ করে নেন। উল্টে বেইল ইন এবং বেইল আউটের মতো হাতিয়ারগুলির ব্যবহার করে সরকারের থেকেই ব্যাক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায় ক্ষতিটুকু সর্বজনীন দায়ে পর্যবসিত হয়। ব্যাপারটা কিছুটা এমন- বাবু ব্যবসা করবেন, শখ হয়েছে! নামলেন- কিছুটা লাফালেন এবং লক্ষ্মী-গনেশ সমেত উল্টে গেলেন। যতক্ষণ ব্যবসায় লাভের সুযোগ ছিল ,মানে বাবু লাফাচ্ছিলেন) ততক্ষণ মুনাফাটি ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার পবিত্র অধিকার সম্পর্কিত ছিল। যেই না বাবু হড়কালেন তখনই তার মনে পড়ে গেল আরে! রাষ্ট্র বলে তো একটা ব্যাপার আছে! সে কেন দায় নেবে না! অতএব বাবুর চোখের জল মুছে দিতে সরকারী অর্থভাণ্ডার থেকে তার ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হল। সুতরাং মুনাফা হল ব্যক্তিগত আর ক্ষতি হল সর্বজনীন- এমন বন্দোবস্তেরই কেতাবি নাম ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট।

তবু এই প্রশ্নটি থেকেই যায় ওরা এত পয়সা পেল কোথা থেকে? বাজারে যখন চাহিদার ঘাটতি তখন যদি পণ্য বিক্রিই না হয়ে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে কেন? হিন্ডেনবার্গ সংস্থার তরফে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ আসছে এখানেই। পয়সা জোটাতে ( ভালো কথায় যাকে ক্যাপিটাল জেনারেশন বলে) গৌতম যা করেছেন হিন্ডেনবার্গ তাকেই ধাপ্পা বলছে। ধাপ্পা কেননা গৌতম আদানির অসামান্য কীর্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে আদৌ বিদেশ থেকে কেউ বিনিয়োগ করেন নি! বিদেশে নিজের লোক (বেশ কিছু ক্ষেত্রে একেবারে পরিবারের লোক) বসিয়ে রেখে অন্য নামে কোম্পানি খুলে নিজেরই শেয়ারকে বারংবার কেনাবেচা করা হয়েছে, অথচ বাজারে মোট শেয়ারের পরিমাণ এক থেকেছে। সুতরাং শেয়ারের দাম বেড়েছে- কেননা দেখানো হয়েছে চাহিদা বাড়ছে। শেয়ার কেনাবেচায় নিয়ামক সংস্থা সেবি’র (সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) আইন আছে এমন কায়দায় শেয়ারের দাম বাড়িয়ে কোনও কোম্পানি যদি বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে চায় তবে সেই কাজকে জালিয়াতি বলা হবে। আদানিরা ঠিক সেটাই করেছেন। বাজারের অবস্থা যখন একেবারেই ভালো না অথচ সামনের নির্বাচনে সরকারী দলের প্রচার তহবিলের জন্য বিরাট পরিমানে নির্বাচনী বন্ড কিনতে বাধ্য হতে হবে তখন একটি বহুজাতিক বিলিওনেয়ার সংস্থার পক্ষে আর কিই বা করার ছিল? মোদী সরকারও অবশ্য নিজেদের কথা রেখেছে- আদানিদের শেয়ার কিনতে তারা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে (স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, এলআইসি ইত্যাদি) বাধ্য করেছে। এখন যদি আদানি’র ব্যবসা পড়ে যায় তবে তাদের শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করেছে এমন সমস্ত সংস্থারই ‘ক্যাপিটাল লস’ হবে।

কেউ বলতে পারেন ভারতে কতজন শেয়ার বাজারের ওঠা-নামায় প্রভাবিত হবেন? আসলে এই প্রশ্নের গোড়ায় একটা গলদ আছে। পৃথিবীর কোনও দেশেই জাতীয় অর্থনীতি স্বতন্ত্র কোনও বিষয় নয়, কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে তার ঘনিষ্ঠতম যোগসাজশ রয়েছে। আমরা তাই বিষয়টিকে ইকোনমি বলি না, বলি পলিটিক্যাল ইকোনমি। মোদী সরকার নিজের দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষ বাজেট পেশ করছে আজ- তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে আরও এক বছর বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী? কেউ তাকে বলুক, এমন করছেন মানেই তো ব্যাপারটার প্রয়োজন আছে? ঐটুকু না পেলে লোকজনের চলবে না বলেই তো বরাদ্দ ঘোষণায় রাখছেন? তাহলে তো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আদৌ ভালো না! কিন্তু বাজেট ঘোষণার শুরুতেই সীতারামন বলে ফেলেছেন আমাদের দেশের বিকাশের দিকে নাকি গোটা পৃথিবী তাকিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ গরীব জনসাধারণকে লকডাউনের সময় ন্যুনতম আর্থিক সহযোগিতা (মাসিক ৭৫০০ টাকা) করতে কিছুতেই রাজী হলেন না যারা, তারাই মানবিকতার খাতিরে প্রবল চাপ স্বীকার করেই রেশন দেবেন- এবং মনে করবেন একথা কেউ বিশ্বাস করবে!

ক্যাপিটাল জেনারেশনের জন্য শেয়ার বাজারকে ব্যবহার করতেই হয়। প্রথমে আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) পরে এফপিও (ফলো অন পাবলিক অফার) করে সকলকেই নিজেদের ব্যালান্স সিটের হাল ফেরাতে হয়। কিন্তু এসবে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, সেবি’র মতো সংস্থাগুলির কাজই হল এমন ক্ষেত্রে বেআইনি কাজের হদিশ রাখা। হর্ষদ মেহতার সময় তারা সেই ভুমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু তখনও আমাদের দেশে নয়া-উদারনীতি সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি। হর্ষদ’কে দেশীয় আইনেরই ফাঁকফোকর খুঁজে বের করতে হয়েছিল। বাইরে থেকে বিনিয়োগ আসছে দেখানোর সুযোগ ছিল আদানি’দের। তারা সেই সুযোগকে ব্যবহার করেছেন ষোল আনার উপরে আঠেরো আনা। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট তারই বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য চারটি।

প্রথম- আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের বাজারমূল্য যা দেখানো হয়েছে আসলে তা ঝুটা। নিজেরাই নিজেদের শেয়ার কেনাবেচা করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে এখন বিনিয়োগ করলে পরে বাড়তি দাম মিলবে এই প্রলোভনে অন্যরাও শেয়ার কিনতে বিনিয়োগ করে। এমন কাজ চুরি করারই সমান।

দুই- গোটা ব্যবসায় ‘পাবলিক’ ও ‘প্রাইভেট’ মালিকানার যে শর্ত আইনানুগ তাকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিরাট বিরাট অংকের একাধিক ঋণ (লোন) নিয়েছে আদানিরা। এধরণের আর্থিক লেনদেনে কারেন্ট রেশিও হিসাব করেই ঋণ গ্রাহ্য হয়। কারেন্ট রেশিও মানে কারেন্ট অ্যাসেট ও কারেন্ট লায়াবেলিটির অনুপাত। স্কুল পড়ুয়া শিশুও জানে যে কোনও অনুপাতের মান একের চাইতে কম হওয়ার মানে ভগ্নাংশের লব হরের চাইতে কম। সুতরাং কারেন্ট রেশিও একের কম মানে কোম্পানির সম্পত্তি (অ্যাসেট) তার দায়ের (লায়াবেলিটিজ) চাইতে কম। এমন হলে অনেক সময়েই ঋণ (বিশেষত ব্যবসায়িক শর্ট টার্ম লোন) পাওয়া যাবে না, কেননা ঋণ শোধে ঝুঁকি থাকবে। কিন্তু আদানিরা ঋণ পেয়েছেন কেননা তারা নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার জোরে অনেক সম্পত্তি রয়েছে এমন প্রমাণ দাখিল করেছেন- যা আসলে মিথ্যা। এমনিতেই ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে এমনকি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস অবধি তাদের কোম্পানির মাথাদের কারও কারও ক্রেডেনশিয়াল।

তিন- বিদেশ থেকে যে সমস্ত কোম্পানি আদানিদের শেয়ারে বিপুল বিনিয়োগ করেছে সেইসব সংস্থার মালিকানা ঘুরপথে তাদেরই হাতে রয়েছে। এইসব কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগই অন্য কোথাও বিনিয়োগ করেনি, শুধু আদানির শেয়ারেই তাদের রুচি। ফিনান্স মার্কেট সম্পর্কে যারা এতটুকুও জানেন তারা এটুকু শুনেই বলে দেবেন এই প্রবণতা আসলে বোঁচকার দিকেই মনযোগী করে তোলে। হিন্ডেনবার্গ নিজেরাই দেখিয়েছে কোন কোন বহির্দেশিয় বিনিয়োগকারী কোম্পানি কার্যত আদানিদেরই হাতে আছে।

চার- বিনিয়োগ টেনে আনার এই গোটা প্রক্রিয়ায় আদানিদের পক্ষে যেসমস্ত নথি প্রকাশ করে হয়েছে তার বেশিরভাগই স্রেফ ভুয়ো।

এখনও কেউ বলবেন আদানির উন্নতিতে ভারতের শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব?

মোদী এখনও কিছু বলেন নি। আজকের বাজেটে নির্মলা সিতারামন যা বলেছেন তাতে স্পষ্ট তারা সামনের বছর সাধারণ নির্বাচন জিততে মরিয়া।

আদানিদের ব্যবসা যে আসলে মিথ্যার বেসাতি হিন্ডেনবার্গ সেটুকুই বলেছে। আমরা বলছি এসবই জানা কথা। ফিন্যান্স পুঁজি দেশের সীমার এদিক ওদিক করতে বাধাহীন ক্ষমতার দাবী করেছিল এই জন্যই। যতক্ষণ মুনাফা ততক্ষণই পুঁজি একটি নির্দিষ্ট দেশের বাজারে থাকবে, এতটুকু বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে তুরন্ত অন্যত্র চলে যাবে- এটাই আধুনিক সভ্যতার সবচাইতে অসভ্য বন্দোবস্তের সার কথা। এই লক্ষ্যেই বিকাশের ঢাকঢোল, এই উদ্দেশ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ক্যাশলেস ইকোনমি। বাকি সব ছাইপাঁশ।

দেশের মানুষের পেটে খাবার জুটুক আর নাই জুটুক, কর্মসংস্থান হোক আর নাই হোক, পুঁজির এসবে কোনও দায় নেই- এটুকু নিশ্চিত করতেই তারা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির পিছনে সমর্থন দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছাড়া যাদের আর কিছুই দেওয়ার নেই- তারাও আর কোথাও ঠাঁই না পেয়ে এমন লুটেরা পুঁজির ধামাধরা হয়েছে। এই লেখার আগামী দুই পর্বে আমরা সেই রাজনীতি, সেই অর্থনীতির সম্ভাব্য পরিণতি প্রসঙ্গে কিছু কথা আলোচনা করব।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন