Logo oF Communism

সিপিআই(এম), পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভার প্রেস বিবৃতি

১১জুন, ২০১০, কলকাতা

সিপিআই(এম), পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু।

সভায় পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র সদ্য-অনুষ্ঠিত পলিট ব্যুরোর বৈঠকের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেন। পশ্চিমবঙ্গে করোনা মহামারীজনিত পরিস্থিতি, লকডাউন ও তার ফলাফল, পার্টি ও বামপন্থীদের ত্রাণ ও রিলিফে ভূমিকা, ঘুর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ ও বামপন্থীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত ভাবে যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তাদের কথাও। অভিনব পরিস্থিতিতে পার্টির কাজের ধারা নিয়েও তিনি রূপরেখা হাজির করেন।

রাজ্য কমিটির সদস্যরা তাঁদের আলোচনায় জানিয়েছেন, রাজ্যে করোনা সংক্রমণ প্রসারিত হচ্ছে। গোড়া থেকেই রাজ্য সরকারের ঔদাসীন্য, প্রশাসনিক গাফিলতি, চিকিৎসা কাঠামোকে উন্নত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, বাস্তবকে অস্বীকার করার চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরো ঘোরালো করে তুলেছে। এখন নতুন করে বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিড-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের চিকিৎসার দুর্ভোগ ক্রমে বাড়ছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কালক্ষেপ করেছে, অনীহা দেখিয়েছে। পরিযায়ীরা যখন ফিরছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কোয়ারান্টিন কেন্দ্র গড়ে তোলায় চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে। কোয়ারান্টিন কেন্দ্রগুলির অবস্থা দুর্বিষহ। অনেক জায়গায় পার্টি ও গ্রামের মানুষই কার্যত কোয়ারান্টিন কেন্দ্র চালাচ্ছেন। পরিযায়ীদের বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিজেপি-ও এই কাজে শরিক। অন্যদিকে, লকডাউনে গরিব মানুষের অবস্থা শোচনীয়। রাজ্য সরকার নিষ্ক্রিয় থেকেছে। রেশনে যেটুকু খাদ্যশস্য গেছে, তা থেকেও শাসক দল চুরি করেছে। বহু জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে শাসক দলের নেতাদের এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের। কোথাও কোথাও তৃণমূলের নেতারা দোতলা বাড়ির মালিক হলেও কুঁড়ে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন বাড়ি মেরামতির টাকা নিতে।

রাজ্য কমিটির সদস্যরা জেলাগুলির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, পার্টি, বামপন্থী গণসংগঠনগুলি এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সব জেলায় খাদ্য বিলি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সরঞ্জাম বিলি, অনেক জায়গায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার কাজ করা হয়েছে। আটকে পড়া মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করা হয়েছে। হাসপাতালে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে যাওয়া, রক্তদান, বয়স্ক মানুষকে সাহায্য করার কাজ করেছেন বামপন্থী কর্মীরা। সাধারণ মানুষ সাহায্য দিতে এগিয়ে এসেছেন। কোথাও জনগণের রান্নাঘর, কোথাও কমিউনিটি কিচেন, কোথাও বিনামূল্যে সবজি বিলি করা হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বামপন্থীদের এই কাজে সাহায্য করেছেন। কোথাও কোথাও তৃণমূলের সমর্থকরাও বামপন্থীদেরই হাতে সাহায্য তুলে দিয়েছেন। অসংখ্য তরুণ স্বেচ্ছায় এই কাজ করেছেন দিনরাত। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকাতেও বামপন্থী কর্মীরা ত্রাণ নিয়ে পৌঁছেছেন। পুনর্গঠনের কাজে মানুষকে সাহায্য করেছেন।

রাজ্য কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, একই সঙ্গে জনগণের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডেপুটেশন, বিক্ষোভ, প্রতীকী প্রতিবাদ করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক ও খেতমজুর সংগঠন কৃষকদের দাবি নিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলন করেছে। এই সময়পর্বে প্রতিবাদের নতুন আঙ্গিক তৈরি হয়েছে।

আলোচনার উপসংহারে রাজ্য সম্পাদক বলেন, আন্দোলনকে আরো প্রসারিত, আরো শক্তিশালী করতে হবে। সেই স্তরে আমরা পৌঁছেছি যেখানে সংগ্রামের রাজনৈতিক অভিমুখ তৈরি করতে হবে। আন্দোলনের নতুন ধাপে ১৬ জুন রাজ্যব্যাপী ১৬ দলের ডাকে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। কলকাতায় রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউতে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করেই এই বিক্ষোভ হবে। জেলাগুলিতেও এই বিক্ষোভ হবে।

সূর্য মিশ্র বলেন, এখন এক নম্বর দাবি খাদ্য। দেশে দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সরকার খাদ্য সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা দেবে না। জনগণকেই আন্দোলন করে খাদ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি করতে হবে। আরেকটি বড় দাবি কাজ। কাজের তীব্র আকাল তৈরি হয়েছে। রেগার কাজ বহুগুণ বৃদ্ধি এবং শহরেও কর্মসংস্থান প্রকল্প চালুর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সময়ে জনস্বাস্থ্যের আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেবলমাত্র সচেতনতা প্রচার নয়, জনগণের চিকিৎসায় সরকারকে বাধ্য করার আন্দোলন, কোয়ারান্টিন কেন্দ্র সঠিক ভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করতে হবে। আশু সমস্যা হিসেবে সামনে আসছে জিনিসপত্রের দাম, রাজ্যজুড়ে পরিবহনের অভাব, বিদ্যুৎ মাসুল কমানোর দাবি। এই সব প্রশ্নে ধারাবাহিক প্রতিবাদী কর্মসূচি গড়ে তোলা হবে।

মিশ্র বলেন, ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে কারা আসল বিকল্প। সরকার খাদ্য দেয়নি, বামপন্থীরা যথাসাধ্য দিয়েছে, বিকল্প রেশনের ব্যবস্থা করেছে। সরকার রিলিফ দেয়নি, বামপন্থীরা সাধ্যমত রিলিফ দিয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিকল্প কাজ করেছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে ওষুধ সরবরাহ করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য রাজ্যে যোগাযোগ, তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা, ফেরার পরে তাঁদের পাশে থাকার কাজ করছে বামপন্থীরা। সরকার কন্ট্রোল রুম খোলেনি, খোলার পরেও তা কাজ করেনি, কন্ট্রোল রুম চালিয়েছে বামপন্থীরাই। মনে রাখতে হবে এই সময়ে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিজেদের বিকল্প হিসাবে তুলে ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিজেপি কখনোই তৃণমূলের বিকল্প হতে পারে না। বামপন্থীরাই যে তৃণমূলের একমাত্র বিকল্প তা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। লড়াইয়ের ময়দানে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে।

মিশ্র বলেন, উদারনীতির সবচেয়ে সোচ্চার সওয়ালকারীরাও এখন বিশ্বজুড়ে বলছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র সরকারের হাতে রাখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। আবার জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের কথা শোনা যাচ্ছে। পুঁজিবাদের ব্যবস্থাই যে গভীর সঙ্কটে, এই মহামারীর সময়ে তা প্রমাণিত হচ্ছে। সমাজতন্ত্র ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই দেশে, এই রাজ্যেও বামপন্থাই যে বিকল্প তা জোরের সঙ্গে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন