পলিট ব্যুরো কমিউনিক
তারিখঃ ৫ মে, ২০২১ - বুধবার
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পলিট ব্যুরোর অনলাইন সভার কাজ শেষ হয়েছে। নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করা হয়েছেঃ
কোভিড সংক্রমণ নিরবিচ্ছিন্ন রুপে বৃদ্ধি পাচ্ছে
সারা দেশেই কোভিড মহামারী ক্রমশ ভয়ানক মাত্রা নিচ্ছে, নিজেদের প্রাণ হারিয়ে সেই মূল্য চোকাতে হচ্ছে জনসাধারনকে। মৃতদের উদ্দেশ্যে পলিট ব্যুরো গভীর শোক প্রকাশ করছে, এই মানুষদের জীবনহানি এড়ান যেত। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায় পলিট ব্যুরো।
বহুবার কেন্দ্রীয় সরকারের সমীপে আবেদন করা হলেও তারা জনসাধারনকে রক্ষার জন্য অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করতে ব্যার্থ হয়েছে। সমস্ত হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং যারা ঘরে থেকেই সুস্থ হতে পারেন প্রত্যেকের জন্য অক্সিজেনের যথোপযুক্ত নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে আরও একবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছে পলিট ব্যুরো।
সারা দেশের জন্য এখনি বিনামূল্যে টিকাকরন কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষেধক নির্মাণে সক্ষম এমন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে সেই লক্ষ্যে যুক্ত করতে হবে। প্রতিষেধক নির্মাণে উপযুক্ত প্রতিটি সরকারী সংস্থাকেই ব্যবহার করতে হবে। অতি দ্রুত সারা দেশে সর্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচী প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত ৩৫০০০ কোটি টাকার সংস্থানকে অবিলম্বে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
জীবনজীবিকার প্রসঙ্গ
কোভিড মহামারী এবং লকডাউনের কুপ্রভাবে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। মহামারীর পর্বে মানুষের জীবিকার নিশ্চয়তা রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। পলিট ব্যুরো দাবী জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনসাধারনের কাজের রক্ষাকবচের বন্দোবস্ত করতে হবে।
আয়কর সীমার বাইরে থাকা প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রতি মাসে নগদ ৭৫০০ টাকার সংস্থান করতে হবে। এই কাজ এখনই শুরু হতে হবে।
মজুত খাদ্যশস্য প্রসঙ্গে
কেন্দ্রীয় গুদামগুলিতে কয়েক কোটি টন খাদ্যশস্য মজুত থেকে নষ্ট হতে চলেছে। এই খাদ্যশস্য প্রয়োজন আছে এমন সবার জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।
সেন্ট্রাল ভিস্টা নির্মাণকাজ এখনই বন্ধ হোক
জনজীবনের এমন সংকটের সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যেভাবে সেন্টাল ভিস্টা নির্মাণ চলছে তা অত্যন্ত আপত্তিকর। এই নির্মাণের যাবতীয় কাজ এখনই বন্ধ করতে হবে এবং সেই অর্থকে অক্সিজেন, প্রতিষেধক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে।
বিধানসভা নির্বাচন
কেরালা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম চারটি রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে যথেচ্ছভাবে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার এবং দলীয় নির্বাচনী কলাকৌশলীদের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সত্বেও তারা মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারেনি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পরাজিত হয়েছে।
ভারতের সাধারণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুরক্ষিত রাখতে জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামকে সামনের দিকে আরও এগোতে এই ফলাফল সাহস এবং শক্তি যোগাবে এবং দেশে সাধারণ জনজীবনের মান উন্নত করতেও ভরসা দেবে।
কেরালাঃ কেরালায় এলডিএফ জোটের অসাধারণ জয়কে পলিট ব্যুরো অভিবাদন জানাচ্ছে। পুনর্বার রাজ্য সরকার পরিচালনার জন্য কেরালার জনগণের স্পষ্ট বার্তায় পলিট ব্যুরো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে। রাজ্যে পুনর্বার একই দলের সরকার ক্ষমতাসীন হতে চলেছে, কেরালায় চার দশকেরও বেশী সময় পরে এমন ঘটল। শেষ বিধানসভা ভোটের ফলাফলের থেকেও এবারে এলডি এফ জোটের ফল ভালো হয়েছে।
কেরালায় জনগণ ক্ষমতাসীন সরকারের কাজ বিচার করেই নিজেদের ভোট দিয়েছেন, বিকল্প নীতির যে পরিকল্পনা এলডিএফ'র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তাকে তারা গ্রহন করেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের কর্মসূচি, জনকল্যানের কর্মসূচি এবং ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং সংহতির রাজনীতির প্রতি কেরালার সমাজ অবস্থান নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গঃ বিপুল অর্থ এবং জনগণের মতামত ঘুরিয়ে দেবার বহু চেষ্টা সত্বেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ধরাশায়ী হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মতাদর্শকে সরাসরি প্রতাখ্যান করেছেন।
বাম এবং সংযুক্ত মোর্চার নির্বাচনী ফলাফল খুবই হতাশাজনক। রাজ্যের মানুষ যে কোন মূল্যে বিজেপি'কে রুখে দিতে চেয়েছেন - সেই উদ্দেশ্যেই চূড়ান্ত একমুখী ভোট হয়েছে যার ফলে সংযুক্ত মোর্চার এমন ফলাফল। এই ফলাফল সম্পর্কে পার্টি আত্মসমালোচনামূলক পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা আত্মস্থ করে সামনে এগোবে।
তামিলনাড়ুঃ ডিএমকে'র নেতৃত্বে ফ্রন্ট তামিলনাড়ুতে আশাব্যাঞ্জক ফল পেয়েছে। তামিলনাড়ুর জনগণ এআইএডিএমকে - বিজেপি জোটের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার সাথেই রাজ্যের এআইএডিএমকে সরকারকে পরাজিত করেছে।
অসমঃ বিজেপি অসমে নিজেদের সরকার টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। যদিও মহাজোট নির্বাচনে ভালো লড়াই করেছে।
নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনা
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে তৃনমূল কংগ্রেস আমাদের পার্টি কর্মী এবং সদস্যদের উপরে আক্রমন নামিয়ে এনেছে, পলিট ব্যুরো এই ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে। এমন হিংসার ঘটনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে এবং ইতিমধ্যেই কাকলি ক্ষেত্রপাল নাম্নী একজন পার্টি কমরেড এবং হাসানুজ্জামান – একজন আইএসএফ কর্মীকে নিজের প্রাণ হারাতে হয়েছে। তৃনমূল কংগ্রেসকে অবিলম্বে হিংসাশ্রয়ী এবং সন্ত্রাসের এই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাদের এই রাজনীতির প্রতিরোধ হবে এবং তাকে পরাস্ত হতে হবে।
সম্প্রতি ত্রিপুরায় এডিসি (অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল) নির্বাচনে হারের পরেই সিপিআই(এম)-এর কর্মী সমর্থকদের উপরে জঘন্য আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি।
কৃষকদের বিক্ষোভ
দীর্ঘ ছয় মাস ধরে লড়াই করে চলা কৃষক বিক্ষোভ প্রশমিত করতে কোভিড মহামারীর আক্রমনে তীব্র সংকটের সময়ে তাদের দাবিসমুহকে স্বীকৃতি দিয়ে মেনে নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের।
আন্দোলনরত কৃষকদের নেতৃত্বের সাথে এখনই আলোচনা করে কৃষি আইন বাতিল সম্পর্কে তাদের দাবীকে মান্যতা দিক কেন্দ্রীয় সরকার।