madan ghosh

ইতিহাসের শিক্ষার নতুন নজীর সৃষ্টি করবে এবারের ব্রিগেড

কৃষকেরা আমাদের রাজ্যে দুর্দশার শিকার – এই অবস্থার বদল চাইতেই তারা ব্রিগেডে আসবেন

১) ওয়েবডেস্কঃ ২৮শে ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ। সেই সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের অংশগ্রহণ কেমন হবে?

কৃষকেরা অবশ্যই ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেবেন। আমাদের রাজ্যে কৃষক আন্দোলনের ঐতিহ্য অম্লান। তারা আজও বঞ্চনার শিকার। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত অপরিকল্পিত লকডাউন দেশের জনসাধারনকে চরম দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, তার উপরে নয়া কৃষি আইনের নামে কর্পোরেটদের হাতে কৃষিব্যবস্থাকে তুলে দিতে চাইছে সরকার। আমাদের রাজ্যে অনেক টালবাহানার পরে বিধানসভায় রাজ্য সরকার নয়া কৃষি আইন বলবত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু উপযুক্ত বিকল্প আইন এখনও গৃহীত হয়নি। স্বাভাইকভাবেই কৃষকরা রাজ্য সরকারের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই আন্দোলন সারা দেশে শুরু হয়েছে গত বছরের শেষদিকে, আমাদের রাজ্যে কৃষকেরা অনেক আগে থেকেই ন্যুনতম সহায়ক মূল্যের দাবীতে আন্দোলনে রয়েছেন। বাজারে কৃষিজাত পণ্যের আগুন দাম, জনগন বাজারে অনেক বেশি দামে খাদ্য-সবজি এসব কিনতে বাধ্য হচ্ছে অথচ কৃষকেরা সেই অনুযায়ী দাম পাচ্ছে না! এ রাজ্যে কৃষকেরা আদৌ ন্যুনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারেছেন না, শাসকদলের প্রভাবশালী বিভিন্ন ফড়ে এবং গোষ্ঠীগুলি কৃষকদের থেকে কম দামে চাষের ফসল কিনে নিচ্ছে, পরে চড়া মুনাফায় বাজারে বিক্রি করছে। গ্রামে গ্রামে কৃষকদের দুর্দশার চিত্র একইরকম। গোটা রাজ্যে তৃনমূল কংগ্রেসের উপরে তৈরি হওয়া ক্ষোভের একটা বড় কারন এটাই।

কৃষকদের জন্য লড়াইয়ের ময়দানে কেবল বামপন্থীরাই রয়েছে। সারা দেশেও তাই, এই রাজ্যেও তাই। এরা যন্ত্রণার নিরসন চান, চাষের কাজে প্রকৃত মজুরি আগের মতো মিলছে না। জমি রয়েছে এমন কৃষকরাও অন্য কাজের দিকে ঝুঁকছেন, নিজের জমিতে ছোট কিংবা ভূমিহীন কৃষকদের মৌখিক কিছু চুক্তির ভিত্তিতে চাষের কাজ করছেন। ঐসব ছোট চাষিরা রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষিত সুযোগ সুবিধার কিছুই পাচ্ছেন না, কেননা চাষের জমির মালিকানা তাদের হাতে নেই। মনে রাখতে হবে অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে ছোট কৃষি জমির পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এইসব ছোট, মাঝারি কিংবা ভূমিহীন কৃষকদের হাতে কাজ নেই, বিকল্প রোজগারের কোনও সুযোগ নেই। লকডাউনের কারনে বাইরের রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা গ্রামে একশো দিনের কাজে যুক্ত চাইলেও কাজ পাচ্ছে না। কৃষিকে লাভজনক করে তুলতে হবে। কৃষিকাজের পাশাপাশি খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণের কাজে সরকারকে সঠিক নীতি প্রনয়ন করতে হবে, বামফ্রন্ট আমলে গ্রামে মহিলাদের সেলফ হেল্প গ্রুপ তৈরি করে সেই কাজে কিছুটা এগোন হয়েছিল, বর্তমান সরকার সেই ব্যাবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কৃষিতে উপযুক্ত ফসলের দাম, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ এবং চাষের কাজে প্রকৃত সরকারী নীতি আজকের পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের দাবী। এই দাবিতেই তারা ব্রিগেডের সমাবেশে যুক্ত হবেন, যুক্ত হবে গোটা বাংলার মেহনতি জনতা।

২) ওয়েবডেস্কঃ তৃনমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার দুতরফেই দাবী করা হচ্ছে এ রাজ্যে কৃষকেরা ভাল আছেন, বর্তমান সরকারের শাসনে তারা খুশি। বাস্তব পরিস্থিতি কেমন?

পশ্চিমবঙ্গে কৃষকের আত্মহত্যা রাজ্যের মানুষ ভুলে গেছিল। বর্তমান রাজ্য সরকারের ভূমিকা এমনই যে সেই ঘটনা আবার ফিরে এসেছে। যে কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায় নি সে কিভাবে খুশি থাকবে? যে কৃষক পরিবারটি ঋণ নিয়ে চাষের কাজে সারা বছর পরিশ্রম করেছে, পরে দাম না পেয়ে রাস্তায় ফসল ফেলে রেখে চলে যেতে হয়েছে তাদের মুখে হাসি খুঁজতে চাইছে রাজ্য সরকার! গ্রামে গ্রামে ফড়েরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, উৎপন্ন ফসলে কব্জা করতে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে তারা তৃনমূল কংগ্রেসেরই সাহায্য পেয়েছে, পাচ্ছে। এই অবস্থায় রাজ্যের কৃষক ভাল অবস্থায় রয়েছেন বলা যায়? যারা এমন বলছেন তারা হয় আসল সত্য গোপন করছেন অথবা তারা কৃষকদের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে জানেন না। দুবছর আগেই সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পদযাত্রায় হাজার হাজার কৃষক যোগ দিয়েছিলেন। ভাল থাকলে এমন হতো না। আসলে এই রাজ্যে তৃনমূল জমানায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠরা ছাড়া আর কেউই ভাল নেই। এবারের ব্রিগেডে সেই মেজাজের প্রতিফলন দেখা যাবে। ঐতিহাসিক সমাবেশ হতে চলেছে এবারের ব্রিগেডে। প্রতিদিন আরও বেশি মানুষ এই সমাবেশে যুক্ত হতে চাইছেন, সংখ্যাটা প্রতিদিন বাড়ছে – মানুষ এই দুর্দশার পরিত্রান চাইছেন সেটাই আসলে খুশির খবর, ভাল খবর। 

৩) ওয়েবডেস্কঃ এই ব্রিগেড সমাবেশকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি বলা যায়? সেক্ষেত্রে আপনাদের বার্তা কি? 

Red Flag CPIM

নির্বাচনে লড়াই একটা ব্যাপার, কিন্তু তার আগে এই সমাবেশ আসলে পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারনের মেজাজের প্রতিফলন। বামপন্থীরা মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবন জীবিকার লড়াইতে ছিল, রয়েছে – থাকবে। করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনের পরিস্থিতি এই কথা আরও বেশি করে প্রমান করে দিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ, জনতা কেন্দ্র, রাজ্য উভয় সরকারের জনবিরোধী সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট নিপীড়িত হয়েছেন। কাজের দাবী, মাথ তুলে বেঁচে থাকার দাবী সকলেরই – সেই দাবিতেই মানুষ সমবেত হবেন, অতীতেও হয়েছিলেন। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার হোক বা রাজ্য সরকার দুই ক্ষেত্রেই গোড়ার কথাটা একই – এরা গরীব, নিপীড়িত, ভুখা পেটে থাকা মানুষের সরকার নয়। সারা দেশ সহ আমাদের রাজ্যেও দুর্দশাগ্রস্থ মানুষই সংখ্যায় বেশি, তারা একজোট হতে চাইছেন। সেই জোট যে কোনও জনবিরোধী কার্যক্রম রুখে দিতে সক্ষম – ইতিহাসের শিক্ষা তাই।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন