খাদ্য আন্দোলন প্রসঙ্গে পার্টি চিঠি (১৯৫৮)

১৯৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশের মেহনতি মানুষের লড়াইতে এক অনন্য নজীর। তৎকালীন খাদ্য সংকটের জন্য প্রাদেশিক সরকারের অপদার্থতাই ছিল মূলত দায়ী। সেই সময় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক কমিটি রাজ্যের সমস্ত পার্টি ইউনিটকে আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় নির্দিষ্ট পথনির্দেশ দেয়। পার্টি চিঠির আকারে সেই নির্দেশ পার্টি ইউনিটগুলিতে পাঠানো হয়। রাজ্য ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে সেই পার্টি চিঠিই প্রকাশ করা হল। এই চিঠি শুধুই এক ঐতিহাসিক দলীল না, আজকের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা, কর্মসূচি গ্রহণ এবং মোকাবিলায় কমিউনিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতেও সহায়ক।

*মূল লেখাটির বানানরীতি যতদূর সম্ভব বজায় রাখা হয়েছে।

আগামী দুর্ভিক্ষের বিপর্যয় প্রতিরোধের জন্য পার্টির আশু কর্তব্য

পার্টি চিঠি - ১

১৯৫৮

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

১৯৫৭ সালের খাদ্য সংকটের জের এখনো চলছে। তার উপর এবার যেরূপ শস্যহানি ঘটেছে তাতে ১৯৫৮ সালে অতি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের আশঙ্কা বাস্তব বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বনগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলনের প্রস্তাব আপনারা স্বাধীনতায় পড়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে কৃষকসভার প্রাদেশিক কমিটি এ সম্বন্ধে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়েছে, গত আইনসভার অধিবেশনে পার্টির পক্ষ হতে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে এবং তারপর পার্টির পশ্চিমবঙ্গ কমিটি যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে তাও আপনারা স্বাধীনতায় দেখেছেন। এইসব প্রস্তাব, বক্তব্য ও বিবৃতি হতে আপনারা আগামী সংকটের ভয়াবহ গভীরতা ও তার প্রতিকারের পথ সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। এ সম্বন্ধে পার্টি হতে এক প্রচার পুস্তিকা ও প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে বিস্তারিতভাবে অবস্থান ব্যাখ্যা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলির প্রয়োজনীয়তা জানতে পারবেন। সেই জন্যই এই চিঠিতে সেসব সম্বন্ধে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই।

এখানে শুধু সংকট ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে কয়েকটি আশু প্রধান বক্তব্য সংক্ষেপে উল্লেখ করা হচ্ছে। গতবছর খাদ্যের ঘাটতি ছিল তিন লক্ষ টন (চাল), এবারে ১২ লক্ষ টন (সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী)। তার উপর ১৯৫৭ সালের সংকটের আঘাতে জনসাধারণের ক্রয় শক্তি এবারে আরো কমেছে। এই অবস্থায় সরকারকে গতানুগতিক পদ ছাড়তে বাধ্য করতে না পারলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হতে বাধ্য। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে সরকার প্রকৃতির ও বাজারে নিয়মে দোহাই দিয়ে এই ঘাটতি জনিত সংকটের দায়িত্ব এড়াতে এবং জনসাধারণের কাছে নিজেদের ত্রুটি ও অপদার্থতা ঢাকতে চাইছেন। কিন্তু আমরা জানি যে বাস্তবে এতো বিরাট ঘাটতির জন্য সরকারি নীতির ব্যর্থতা ও ত্রুটি কম দায়ী নহে। তাছাড়া সরকারের নীতি খাদ্যের বাজারে ফাটকাবাজি ও মুনাফাখোরী কার্যকলাপকে শক্তিশালী করেছে।

দ্বিতীয়তঃ আগামী সংকটের আঘাত গরীব কৃষকদের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়লেও জনসাধারণের কোন অংশ বাদ যাবে না। এত বিরাট ঘাটতির উপর মজুদদারী কার্যকলাপ অবাধে চললে এবং সরকারি সরবরাহ না থাকলে খাদ্যের দর অত্যন্ত বেশি হবে (এখনই বেশি আছে, ২/৩ মাস পরে সাধারণ চাষির ধান বিক্রি শেষ হয়ে গেলে দর আরও অনেক বাড়বে); তাতে শ্রমিক, কর্মচারী ও শহরের ক্রেতারাও বিপর্যস্ত হবে। অর্থাৎ এই সংকটে সমগ্র জাতির উপর প্রচন্ড আঘাত পড়বে। কি হবে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় বিপর্যয়। এতে দেশের পূনর্গঠনের প্রচেষ্টা ও বিশেষ ভাবে আঘাত খাবে।

তৃতীয়তঃ ঘাটতি অত্যন্ত বেশি হওয়ার ফলে বাজারের উপর নজরদারি ও কার্যকলাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং হলে আসল ঘাটতির তুলনায় অনেক বেশি কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হবে, যার পরিণতি হবে সাংঘাতিক খাদ্য সংকট।

চতুর্থত এই পরিণতি নিশ্চয়ই রোধ করা যায়। যার জন্য যেসব আশু ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজনীয় সেগুলি হলো : -

(১) রাজ্যের বাইরে থেকে আমদানি এর দ্বারা ঘাটতি পূরণ করা; (২) কৃষকেরা যে ধান চাল বিক্রি করবে (বেশিরভাগ সাধারণ কৃষক অবস্থার চাপে, অনেকে এমনকি খোরাকি না রেখেও বিক্রি করতে বাধ্য হবে এবং যে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে), সেই ধান চাল সম্পূর্ণভাবে বড় বড় ব্যাপারীদের কুক্ষিগত না হতে দেওয়া এবং সরকারের হাতে পর্যাপ্ত স্টক তৈরি করা; (৩) সরকার হতে সর্বত্রই এখন হতে ন্যায্য ধরে আংশিক রেশনের দোকানে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনমতো ঋণ ও রিলিফ ব্যবস্থা (খয়রাতি, টেস্ট রিলিফ ইত্যাদি) চালু রাখা ও সম্প্রসারিত করা; (৪) এই সমস্ত কাজে পরামর্শ ও সাহায্যের জন্য সর্বস্তরে ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধিত্বমূলক খাদ্য কমিটি গঠন করা।

এছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচ, সার, ভূমি সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে আশু ও মৌলিক ব্যবস্থার প্রয়োজন এবং তার জন্যও আন্দোলন করা দরকার। কিন্তু তাতে এবারের সংকট রোধ করা যাবে না। তা করার জন্য প্রয়োজন উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলি।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

সামগ্রিকভাবে এইসব ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তবেই সংকটকে কাটিয়ে ওঠা যায়, এর কোনোটিকে বাদ দিলে চলে না। এত বড় ঘাটতির মুখে এখন হতেই রেশন দোকানে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় দিলিপের ব্যবস্থা না করলে ফাটকাবাজি প্রবণতা সংযত হতে পারে না। অন্যদিকে সরকারের হাতে প্রয়োজনীয় স্টক না থাকলে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ ও চলতে পারে না। গত বছরের অভিজ্ঞতা এর যথার্থতা প্রমাণ করেছে। এইজন্যে বর্তমানে আমদানি ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কিন্তু এই উভয় ব্যাপারেই সরকার গড়িমসি করছে। কেন্দ্রীয় সরকার পুরা ঘাটতি এমনকি ঘাটতির বেশিরভাগ পূরণ করবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। যা খাদ্যের দেবেন তার মধ্যেও চাল সামান্যই হবে। প্রথমে শোনা গিয়েছিলো যে কেন্দ্র হতে ১০ লক্ষ টন চাল পাওয়া যেতে পারে; এখন শোনা যাচ্ছে যে তাও মিলবে না।

নতুন ফসল বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তাই সরকারি ক্রয় এর প্রশ্ন এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সরকারকে নামমাত্র কিনলে চলবে না, কারণ স্টক যথেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো, সরকার কিনবে কী ভাবে? প্রকাশ্য বাজারকে বন্ধ করে দিলে ফল কারো পক্ষে ভালো হবে না; বরং প্রকাশ্য বাজার রেখে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রধানত সরকারি ক্রয় ও সরবরাহের দ্বারাই তা কার্যকরীভাবে হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ কৃষক যাতে এখন ন্যায্য দর পায় এবং পরে যাতে দরবারে আয়ত্বের বাইরে চলে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়তঃ মজুতদারী সংযত করতে হবে। তাই অভ্যন্তরীণ ক্রয় সফল করতে হলে নিম্নরূপ ব্যবস্থা প্রয়োজন :- (১) সরকারকে প্রকাশ্য বাজারে কিনতে হবে এবং এখনই বাজারে নামতে হবে, যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে; (২) ধানের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সরকারি ক্রয় মূল্য ঠিক করতে হবে এবং এই দুই দরের মধ্যে কিনতে হবে। সর্বনিম্ন দর মণ প্রতি ১১ টাকা কম হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে; তাতে সংকট আরও বাড়বে এবং সরকারের পক্ষে ধান পাওয়া ও দুষ্কর হবে। তাই সরকারি তহবিল হতে সাবসিডি দিয়েও ন্যায্য দর দিতে হবে। এই দর ১১ টাকা ও ১৩ টাকা হওয়া উচিত। কোন কোন পার্টি ইউনিট সর্বনিম্ন দর ১২ টাকা ও সর্বোচ্চ দর ১৪ টাকার কথা তুলেছেন। আমাদের মতে সব দিক বিবেচনা করে ১১/১৩ টাকাই সমীচীন। সরকার যখন মাত্র ৯/১০ ঢাকার মধ্যে কেনার কথা ভাবছেন তখন সর্বনিম্ন ১১ টাকা দরে ভিত্তিতে আন্দোলন বাস্তবানুগ ও হবে। (৩) ব্যাংক হতে ধান চাল মজুদ করার জন্য মহাজনদের দাদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং বাজারদর সর্বোচ্চ দর এর উপরে চলে গেলে বড় বড় মসজিদের ধান-চাল হুকুম দখল করতে হবে। (৪) সরকারকে সাবসিডি দিয়ে ১৭ টাকা দরে চাল সরবরাহ করতে হবে। এত বড় সংকটে এই সাবসিডি র প্রয়োজন। (যদি পাঁচ লাখ টন চাল এমনি সাবসিডি দিয়ে দেওয়া হয় তাহলেও আন্দাজ মাত্র ১ কোটি হতে ৪ কোটি টাকার মতো লাগতে পারে, অবশ্য চুরি না হলে।)

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের অভ্যন্তরে কর্ডনের প্রশ্ন আসে। সরকার হতে ন্যায্য দরে সুষ্ঠু ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করলে সেই অবস্থায় কর্ডন থাকতে পারে কি পারে না বা তার যৌক্তিকতা আছে কিনা তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু মতভেদ বা সংশয় আছে। কিন্তু সরকার কর্তৃক আরোপিত বর্তমান করেন ব্যবস্থার ফলাফল সম্বন্ধে আমাদের কোন সন্দেহ নাই যে এতে জটিলতা সৃষ্টি হয়, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব বাড়ে, দরের অস্বাভাবিক পার্থক্য বাড়ে, কৃষকের বিক্রির ধানের দর কমিয়ে দেওয়া হয়, আর যেখানে ঘাটতি সেখানে কেনার দর বেশি থাকে। বাস্তবে তাই ঘটছে।

নতুন ফসল বিক্রি ভালোভাবে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয় নাই। ৬ই জানুয়ারি প্রাদেশিক খাদ্য উপদেষ্টা কমিটির যে সভা হয়েছে ও তার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে আতঙ্কিত হবার কথা। কোন বিষয়ে কোনো কার্যকরী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় নাই, অথচ এই সময়ে প্রতিটি দিন মূল্যবান। ঘাটতি পূরণ ও সরকারি ক্রয় সম্বন্ধে এখনো নির্দিষ্ট কিছু হয় নাই। ধানের ক্রয় মূল্য সরকার যা ভাবছেন তা খুবই কম এবং তাতে সরকারের পক্ষে ধান বিশেষ পাওয়া ও সম্ভব হবে না। এমনি কমদর করার অর্থ হবে সরকারি ক্রয় দাবিকে বানচাল করা ও কৃষক দিগকে সরকারের বিরোধী করে তোলা। কৃষক ধান বিক্রির জন্য ব্যস্ত, অথচ সরকারি ক্রেতা নাই, অনিশ্চয়তার জন্য ব্যাপারীরা ও অনেক স্থানে কেনার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছেনা ফলে কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রেশনের দোকানগুলি সরবরাহের অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। টেস্ট রিলিফ এর কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ, অথচ অনেক স্থানে এর প্রয়োজন এখনই। এইসব এর ফলে যারা কিনে খায় তাদের কাছে দর বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবলতর হয়েছে। জেলা বা মহাকুমা স্তরে কোন খাদ্য কমিটি এখনো করা হয় নাই। প্রাদেশিক স্তরে যে কমিটি হয়েছে তাকেও অকার্যকরই ও লোক-দেখানো করে রাখা হয়েছে। এসব হতে বোঝা যায় যে সংকটের মুখে ও সরকার কিরূপ আত্মম্ভরী ও সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে চলেছেন। এটা খুবই বিপজ্জনক।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

এই অবস্থায় খাদ্যসংকট প্রতিরোধের জন্য আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি তার ভিত্তিতে এখন হতেই ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। গত বছরে বা তারও আগে খাদ্যসংকট ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে যাবার পরে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। ফলে তখন আর সরকারকে অভ্যন্তরীণ ক্রয় বাধ্য করার উপায় থাকে নাই এবং তারই স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ আদায় করা দুষ্কর হয়েছে। এবারও যদি সরকারকে খাদ্য ক্রয় করতে ও খাদ্য আমদানি করতে বাধ্য না করা যায় তাহলে পরে খাদ্য ও রিলিফের দাবি আদায় করা আরও দুষ্কর হবে এবং মজুতদারী প্রাধান্য অনেক বেশি হবে।

তাই আর দেরি না করে এখনি আন্দোলন শুরু করতে হবে। বিরাট ঘাটতির ফলে সরকার যে রূপ বেকায়দায় আছে তাতে এখন হতে প্রবল জনমত ও আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারলে কিছু ফল হতে বাধ্য। এখন পর্যন্ত আমরা বিশেষ আন্দোলন করি নাই, তবুও কৃষকসভার বনগাঁ সম্মেলনের সময় হতে আমরা যতটুকু বক্তব্য জনসমক্ষে হাজির করতে পেরেছি এবং সরকারি দায়িত্ব সম্বন্ধে যত টুকু বক্তব্য জোরের সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছি তাতেই দেখা যাবে যে সরকার প্রথমে সম্বন্ধে কোন কথা না বললেও বর্তমানে ও সরবরাহের কথা কিছুটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। তাই ভরসা নিয়েই আমাদের অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

একথা সত্য যে সংকট পুরোপুরি শুরু হয়ে গেলে অল্প প্রচেষ্টায় যত সহজে জনসাধারণের সাড়া পাওয়া যায় এখন তত সহজ হবে না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হবেনা বলেই এখন সচেতনভাবে পরিকল্পনা করে আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে এবং এখন হতে তা করার উপরই ভবিষ্যতের আন্দোলন অনেকটাই নির্ভর করছে।

এই প্রসঙ্গে গতবছরের আন্দোলন সম্বন্ধে কিছু আলোচনা প্রয়োজন। কত খাদ্য আন্দোলন এবং বিশেষ করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ও তার নীরব পরিসমাপ্তি সম্বন্ধে কমরেডদের মধ্যে শুধু নানা প্রশ্নই নয়, তাদের মধ্যে কিছুটা হতাশা এবং কিছু অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের পর জেলায় জেলায় দেরিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কার্যত পূর্বপরিকল্পনা অপেক্ষা অবস্থার চাপ এই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। অবশ্য নির্বাচনে ব্যস্ত থাকায় আগে আন্দোলনে নামা সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলেও জেলায় জেলায় আন্দোলন অত্যন্ত ব্যাপক ও তীব্র হয়েছিল। কিন্তু তাও যখন দাবি আদায়ে বেশিদুর অগ্রসর হতে পারছিল না তখন প্রাদেশিক ভিত্তিতে আন্দোলনের ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের প্রশ্ন বিশেষভাবে দেখা দেয়। কিন্তু তৎপরতার সঙ্গে কিছু না করে অনেক সময় কাটিয়ে সত্যাগ্রহ শুরু হলো শেষ সময়ে, তাও পূজার জন্য স্থগিত রাখতে হলো এবং পূজার পর তা আর শুরুই হলো না। ফলে এই সত্যাগ্রহ হতে কার্যকরী সাফল্য অতি সামান্যই হয়েছে।

ছবিঃ পিপলস ডেমোক্র্যাসি

প্রাদেশিক কমিটি এই আন্দোলন সম্বন্ধে বিস্তারিত পর্যালোচনা না করলেও এ হতে কিছু শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করেছে। প্রথমত সংকট এর গভীরতা নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আগে হতে বোঝা যায় নাই, তাই পরিকল্পনা অপেক্ষা ঘটনাপ্রবাহে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। দ্বিতীয়তঃ প্রদেশব্যাপী সংগ্রাম অনেক আগে শুরু করা উচিত ছিল এবং মাঝপথে তা ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল না; কিন্তু বাস্তবে তা হয় নাই। এই প্রসঙ্গে পার্টির ও গণসংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগ এবং সর্বদলীয় কমিটির পরিচালনার মধ্যে সামঞ্জস্যের প্রশ্ন এসে পড়ে। এর আগে বিশেষত ১৯৫৩ সালে আমাদের পার্টি ও কৃষক সভা উদ্যোগ নিয়ে প্রাদেশিক ভিত্তিতে আন্দোলনে নেমেছে ও তার ভিত্তিতে সর্বদলীয় ঐক্য' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গত বারের আন্দোলন ঠিক তেমনভাবে হয় নাই। প্রাদেশিক ভিত্তিতে কোন আন্দোলন শুরু করার প্রশ্ন গতবার প্রথম হতেই সর্বদলীয় কমিটির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং আমাদের তা মেনে নিতেও হয়েছিল। আমাদের প্রতিনিধিরা সর্বদলীয় কমিটির মধ্যে চেষ্টা করেছেন যাতে সময় মতো শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রিত সত্যাগ্রহ শুরু করা হয় এবং সত্যাগ্রহ স্থগিত থাকার পরও যাতে পুনরায় পূজার পর তা শুরু হয়। কিন্তু সর্বদলীয় কমিটির মধ্যে নানা মত থাকায় তা কার্যকরী হয় নাই। প্রদেশব্যাপী যে কোন আন্দোলন করার উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত একবার সর্বদলীয় কমিটি ঐক্যমত্যের উপর ছেড়ে দেওয়ার পর তা হতে পৃথক ভাবে কিছু করা আর সম্ভব ছিল না। ভাষাভিত্তিক আন্দোলন ও নির্বাচনী ঐক্যের পটভূমিকায় কৃষক সভা ও আমাদের এই ধারনাতেই অগ্রসর হয়ে ছিলাম যে সর্বদলীয় কমিটির সিদ্ধান্তের দ্বারাই আন্দোলন শুরু করা দরকার এবং প্রথমদিকে তার ভরসাও ছিল। নির্বাচন পরবর্তী অবস্থায় ও কেরালায় আমাদের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রশ্ন যে জটিলতর হয়েছে তা তখনও পরিষ্কার হয় নাই। কমিটির মধ্যে মতভেদ এর দ্বারা আন্দোলন দেরি হতে পারে বা মাঝপথে পরিতক্ত হতে পারে এমন ধারণা আমাদের প্রথমে ছিল না।

অবশ্যই হতে এই শিক্ষা নেওয়া ভুল হবে যে সর্বদলীয় ঐক্য' এর প্রয়োজন বা গুরুত্ব নাই। আন্দোলনের অগ্রগতি ও সাফল্যের জন্য এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে এবং তার জন্য আমাদের নিরন্তর চেষ্টা করে যেতে হবে। কিন্তু এ হতে আমাদের যে শিক্ষা নেওয়া দরকার তা হলো পার্টি ও কৃষক সভার মত গণসংগঠনের আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে, এবং তা শুধু আলোচনার ক্ষেত্রে নয়, আন্দোলন শুরু করার ব্যাপারেও। সমস্ত বামপন্থী দলগুলো এক না হলে কোন আন্দোলন শুরু করা যাবে না। এইরূপ মনো ভাবনা নিয়ে আমাদের অবস্থানুযায়ী আন্দোলনে উদ্যোগ ও নিতে হবে এবং সেইসঙ্গে বামপন্থী ঐক্যের জন্য ও সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের এইরূপ উদ্যোগ নেবার উপরও এই ঐক্য অনেকটা নির্ভর করে। প্রাদেশিক কমিটি মোটামুটি এই ভাবেই চিন্তা করেছে। আপনারা জানেন যে বর্তমানে বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রশ্নে জটিলতা আরও বেড়েছে। কোন কোন দলের মধ্যে কমিউনিস্টবিরোধী প্রবণতা বেড়েছে। এমনকি তাদের দ্বারা প্রাদেশিক স্তরে বিভেদ সৃষ্টির ও আশঙ্কা আছে। এই অবস্থায় পার্টির ও গণসংগঠনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রশ্ন আরও গুরুত্ব লাভ করেছে এবং এইরূপ উদ্যোগ নিয়ে শক্তিশালী আন্দোলন করার উপরই উক্ত বিভেদ প্রচেষ্টা বানচাল করে সর্বাধিক ঐক্য গঠনও অনেকাংশে নির্ভর করছে। ১৯৫৩ সালের খাদ্য আন্দোলনের ও নির্বাচনের সময় এর অভিজ্ঞতা হতেও তা বোঝা যায়। পার্টি ও গণ সংগঠনগুলি উদ্যোগ নিলে এবং সমস্ত কর্মীরা সচেষ্ট হলে নিশ্চয়ই ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি করা যায়, বিভেদ প্রচেষ্টা কে ও বিচ্ছিন্ন করা যায় এবং সরকারের উপর ও প্রবল চাপ সৃষ্টি করা যায়। সমস্ত কমরেডরা কাজে নামলে আমরা ব্যাপক আন্দোলন সংগঠিত করতে পারি, এ বিশ্বাস আমাদের আছে এবং তা কল্পনা নয়, বাস্তব সত্য। তাছাড়া এই উদ্যোগ নেওয়া ও আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে কৃষক সভা ও অন্যান্য গণ সংগঠনগুলির ভূমিকার গুরুত্ব আরো বেড়েছে তাও আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। গতবারের আন্দোলনে আরো এক লক্ষনীয় দুর্বলতা ছিল, তা হল এই আন্দোলন প্রধানত কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, কলকাতার জনসাধারণকে এবং বিশেষ করে শ্রমিকশ্রেণীকে এর মধ্যে কমই অংশগ্রহণ করানো গেছে।

গতবারের আন্দোলনের ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে এ মনে করা ভুল হবে যে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের ফলে কিছু দাবি আদায় হয়েছে এবং সেই অনুপাতে সংকটের গভীরতাও কমানো গেছে। এই সাফল্যকে ছোট করে দেখলেও ভুল হবে।

গতবারের আন্দোলন হতে শিক্ষা নিয়ে এবং এবারের বাস্তব অবস্থা বুঝে আমাদের এখন হতেই উদ্যোগ নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে। আর দেরী করা খুব ক্ষতিকর হবে। দাবি আদায়ের জন্য ভবিষ্যতে আন্দোলনের রূপ কখন কি নেবে বা কি হওয়া উচিৎ তা এখন হতে বলা মুশকিল। এখনকার কাজ ও পরের অবস্থা বিবেচনা করে এবং নিজেদের মধ্যে আরো আলোচনা করে তা স্থির করতে হবে। এখন এই সময়ের যা কাজ হল - অবিলম্বে দাবিগুলোকে জনপ্রিয় করা, জনগনকে সচেতন করা এবং যেখানে যে আংশিক দাবি বড় হয়েছে তা আদায়ের জন্য সচেষ্ট হওয়া। প্রচার পুস্তিকা বিক্রয়, বৈঠক, সভা, সমাবেশ, রেলি প্রভৃতির মাধ্যমে ই তা করতে হবে। বর্তমানে সরকার কর্তৃক ক্রয় ও কৃষকের ন্যায্য দর পাওয়ার উপর বিশেষ জোর দেওয়া উচিত। কৃষককে ন্যায্য দর হতে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। রেশন দোকানে খাদ্য সরবরাহ ও যেখানে প্রয়োজন টেস্ট রিলিফ এর কাজের জন্য ও জোর দিতে হবে।

এবারের খাদ্য আন্দোলনে শুধু সভা-সমিতি, সমাবেশ, সত্যাগ্রহ প্রভৃতির দ্বারা খাদ্য ও রিলিফের দাবি আদায় করাই একমাত্র কাজ হবে না। নিজেদের ও গণসংগঠনের দ্বারা রিলিফ সংগঠিত করা, পারস্পরিক সাহায্যের ব্যবস্থা করাও এবারের আন্দোলনের অচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়া উচিত। বিরাট সংকটের মুখে এর যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। কারণ এইরূপ কাজ শুধু কিছু লোককেই বাঁচায় না, এতে জনসাধারণের মনে ভরসা বাড়ে, পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ে, আন্দোলন শক্তিশালী হয়। নিজেদের চেষ্টায় ধান কর্জের ব্যবস্থা করা, ধর্মগোলা করা প্রভৃতির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। সচেষ্ট হলে ধান কর্জের কিছু ব্যবস্থা করা যায় তা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। অনুরূপ অন্যান্য ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। তাছাড়া বাজারের অখাদ্য চলাচলের উপর নজর রাখা, মজুতের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা, ও প্রয়োজন হলে মজুত উদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রভৃতি কাজও খুব গুরুত্ব লাভ করেছে। এইসব কাজের জন্য এবং ঋণ, রিলিফ ও রেশন বিতরণের তালিকা প্রস্তুত ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য এখন হতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা প্রয়োজন।

কমরেডগণ, দেশের সামনে খাদ্য সমস্যা আজ গুরুতর। কমিউনিস্ট পার্টির উপর গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে। জনসাধারণ পার্টির নিকট বিরাট আশা রাখে। এই আশা পূরণ করার মতো ও দায়িত্ব পালন করার মতো শক্তি ও আমাদের আছে, যদি আমাদের সমস্ত কমরেড এই কাজকে তেমনি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেন। পার্টির প্রভাব ও জনসমর্থন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এই অবস্থায় আমাদের সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই কথা মনে রেখে এখনই প্রত্যেক জেলা কমিটি ও পার্টি ইউনিটকে নিজেদের আলোচনা করে নির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এখনই সভা-সমিতির ব্যাপক পরিকল্পনা করে ক্যাম্পেইন শুরু করুন। বিশেষ করে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস যেন প্রত্যেক জেলায় অসংখ্য মিটিং সংগঠিত হয় তা দেখা দরকার। পার্টি ও গণসংগঠনের পক্ষ হতে সভাগুলিতে আমাদের বক্তব্য উপস্থিত করুন। জেলার বক্তাদের পরিকল্পনা করে কাজে লাগান। ক্যাম্পেইনের সংবাদ নিয়মিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠান। পার্টি হতে যে পুস্তিকা প্রকাশিত হচ্ছে তা ব্যাপকভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করুন। আপনাদের প্রোগ্রাম প্রাদেশিক কমিটিকে জানান। প্রাদেশিক কমিটিও জেলাগুলির ক্যাম্পেইনে সাধ্যমত সাহায্যের চেষ্টা করবে বলে ঠিক করেছে।

এই আন্দলনে কমিউনিস্ট পার্টিকে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনগুলি যাতে অগ্রণী হয় তার জন্যও আমাদের কমরেডদের সচেষ্ট হতে হবে। মফঃস্বলে কৃষক সংগঠনের দায়িত্ব অত্যন্ত বেশী। যেসব কমরেড এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তাদের এবং সামগ্রিকভাবে পার্টির উচিত কৃষক সংগঠন যাতে শক্তিশালী হয় - খাদ্য আন্দোলনে জাতীয় গ্রনি হয় তা দেখা ও সে বিষয়ে সর্বতোভাবে সাহায্য করা।

কলকাতা ও শিল্পাঞ্চলের পার্টি ইউনিট ও কমরেডদের এই আন্দোলনে বিশেষ দায়িত্ব আছে। খাদ্য সংকট শুধু কৃষকদের সংকট এইরূপ ধারণা নিশ্চয়ই কারোর নাই বা থাকাও উচিত নয়। কিন্তু একথা অস্বীকার করা যাবেনা যে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের যেরূপ সচেষ্ট হওয়া উচিত ছিল সেরূপ তারা হয়নি। এই ব্যাপারে আমাদের সাংঘাতিক দুর্বলতা আছে। কৃষকদের তুলনায় কম হলেও খাদ্যসংকট কলকাতার মানুষ ও শ্রমিকদের বিশেষ ভাবে আঘাত করে। দ্বিতীয়তঃ এত বড় সংকটে সরকারকে সরাতে হলে কলকাতার মানুষ ও শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এদের অংশগ্রহণ আন্দোলনকে গুণগতভাবে শক্তিশালী করতে পারে। সরকার তা বুঝে এবং সেই জন্য তার পক্ষ হতে এমন চেষ্টাও হতে পারে যে কলকাতার মানুষের দাবী কিছুটা পূরণ করে মফস্বলের উপর সংকটকে বেশি করে চাপিয়ে দেওয়া এবং এইভাবে শ্রমিক ও কৃষককে, কলকাতা ও মফ:স্বলকে বিচ্ছিন্ন করা। এ সম্বন্ধে আমাদের খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা তখনই সম্ভব যখন শ্রমিক শ্রেণী শুধু নিজের জন্যই লড়ে না, দেশের সকল এর স্বার্থে ও বিশেষ করে দেশের যারা অধিকাংশ সেই কৃষকের স্বার্থে সংগ্রাম করে। দেশ যখন প্রথম শ্রেণীর বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখন তা প্রতিরোধ করার সংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণীকে এগিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হওয়া আমাদের গুরুদায়িত্ব। আমাদের যেসব কমরেড শ্রমিক ফ্রন্টের কাজ করেন তারা এ সম্বন্ধে নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবেন। কলকাতা ও শিল্পাঞ্চলে ও জাতীয় পরিকল্পনা করে আন্দোলন শুরু করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট পার্টি ইউনিট গুলি আলোচনা করে প্রোগ্রাম নিন।

কমরেডগণ, আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা সম্বন্ধে নিশ্চয়ই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পার্টির উপর যে গুরু দায়িত্ব রয়েছে এবং জনসাধারণ আমাদের কাছে যে আশা করে তা খেয়াল রেখে আসন্ন সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলন আমাদের সংগঠিত করতে হবে। সকলের উদ্যোগী হয়ে কাজে নামলে নিশ্চয়ই আমরা দ্বায়িত্ব পালন করতে পারি। প্রকৃত দেশ গঠনের জন্য ও সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য এবারের খাদ্য আন্দোলন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

প্রত্যেক জেলা কমিটি কী প্রোগ্রাম নিলেন তা প্রাদেশিক কমিটিকে নিশ্চয়ই জানাবেন।

সুত্রঃ বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন (৩য় খন্ড)


শেয়ার করুন

উত্তর দিন