Modi Bibi and Sangh Cover

মোদী, বিবি এবং সঙ্ঘ

শান্তনু দে

পশ্চিম এশিয়া নিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের কূটনৈতিক বোঝাপড়া সটান পরিত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরাসরি নিলেন ইজরায়েলের পক্ষ।

মোদীর এই একতরফা অবস্থান রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, বিশ্ব শান্তি এবং ভারতের স্বার্থের বিরোধী। নিজেদের ভূখণ্ডে ইজরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্যালেস্তিনীয় জনগণ। স্বাধীন ভারত বরাবর দাঁড়িয়েছে প্যালেস্তাইনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বরাবর রেখে এসেছে দূরত্ব। যেমন রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী জমানার সময়।

‘এই কঠিন সময়ে আমরা ইজরায়েলের পাশে আছি।’ হামাসের প্রত্যাঘাতের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরব হয়েছেন মোদী। দাঁডিয়েছেন ইজরায়েলের ফ্যাসিস্ত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ‘বিবি’ নেতানিয়াহুর পাশে। সাধারণ রীতি অনুযায়ী বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতির জন্য অপেক্ষা না করে বেছে নিয়েছেন অনলাইন কূটনীতির পথ। এই হামলাকে তুরন্ত ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) মোদী লিখেছেন, ‘নিরীহ যাঁদের প্রাণ গিয়েছে, তাঁদের পরিবারের প্রতি আমাদের প্রার্থনা রইল। এই কঠিন সময়ে আমরা ইজরায়েলের পাশে আছি।’ নিরপেক্ষতার কোনও ভান না রেখে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর ভারত কোন পক্ষে।

Modi Israel

স্বাভাবিক। মোদী ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারত এই প্রথম ইজরায়েলের বিরুদ্ধে, প্যালেস্তাইনের পক্ষে আনা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে। বিজেপি সরকার ও তাঁর মেন্টর আরএসএসের সঙ্গে আধুনিক যুগের জায়নবাদের রয়েছে স্বাভাবিক অনুরাগ। সেকারণেই ইজরায়েলে তাঁদের মতাদর্শের স্বজনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সাহচার্য নিয়ে সঙ্ঘের গর্বের শেষ নেই।

প্যালেস্তাইনের প্রতি ইজরায়েলের মনোভাব সাম্প্রতিক সময়ে আরও আগ্রাসী হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের দূতাবাস সেখানে স্থানান্তরিত করেছে। মার্কিন প্রশাসনের এই প্রকাশ্য মদতে তুমুল উৎসাহিত হয়ে ইজরায়েল সরকার সংসদে আইন এনে ইজরায়েলকে ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই আইনের অর্থ আরব প্যালেস্তিনীয়দের নাগরিক অধিকারকে বেপরোয়া অস্বীকার, যারা ইজরায়েলের জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। শুধু তাই নয়, হিব্রু ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে আরবদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আরবি হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা। আরব প্যালেস্তিনীয়রা এখন আক্ষরিক অর্থেই ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’। এই আইনের ফলে প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাতের হার বাড়ছে। ‘বর্ণবিদ্বেষী প্রাচীরের’ ঘেরাটোপে তাঁরা এখন ‘উন্মুক্ত কারাগারে’ বন্দি। নিজের ভূখণ্ড, স্কুল-কলেজ, উপাসনাস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন।

মোদীর স্বপ্নের ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ এক অনন্য মডেল!

অথচ, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই ভারত ছিল প্যালেস্তিনীয় জনগণকে দেশছাড়া করা এবং ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে। ভারতীয়রা বরাবরই প্যালেস্তিনীয় দাবিগুলিকে সমর্থন করে এসেছে। প্যালেস্তাইনের উপরে অবৈধ দখলদারির বিরোধিতা করেছে। আগাগোড়াই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজা ভূখণ্ডের উপরে অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে।

ইয়াসের আরাফত ছিলেন ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা।

গান্ধীজী ১৯৩৮ সালের নভেম্বরে হরিজন পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলেছিলেন, ‘ইংল্যান্ড যেমন ইংলিশদের, ফ্রান্স যেমন ফরাসীদের, প্যালেস্তাইনও সেভাবে আরবদের। সে কারণে আরবদের উপরে ইহুদিদের চাপিয়ে দেওয়া ভুলও অমানবিক। প্যালেস্তাইনে যা চলছে তাকে কোনওরকম নৈতিক আচরণবিধি দ্বারা বৈধতা দেওয়া যায় না।’

১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্যালেস্তাইনের পার্টিশনের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ভারত।

১৯৫০ সালে শুধুমাত্র ইজরায়েলের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে। আরবীয় নয় এমন দেশগুলির মধ্যে ভারতই সবার আগে, ১৯৭৪ সালের প্যালেস্তিনীয় জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসাবে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-কে স্বীকৃতি দেয়। আরব দুনিয়ার বাইরে ভারতই প্রথম, যারা ১৯৮৮ সালে প্যালেস্তাইনকে দেয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি। প্যালেস্তাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সালে প্যালেস্তাইনের রামাল্লায় ভারত খোলে তার প্রতিনিধি অফিস।

বস্তুত, রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার বহু আগেই প্যালেস্তিনীয় জনগনের জন্য ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনে পূর্ণ সমর্থন জানায় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৩৬, প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। ওই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতে পালিত হয় ‘প্যালেস্তাইন দিবস’। ১৯৩৭, কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশন। ‘সন্ত্রাসের রাজত্বের সঙ্গেই প্যালেস্তাইন সংক্রান্ত পার্টিশন প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ’ করে অধিবেশন। সেইসঙ্গেই, আরব জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে জানায় পূর্ণ সংহতি। পরের বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লি অধিবেশন। শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের সমস্যার সমাধান ইহুদি এবং আরবদের নিজেদের মধ্যে করার লক্ষ্যে ব্রিটেনের ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে নেওয়া হয় প্রস্তাব। সেইসঙ্গেই ইহুদিদের প্রতি আরজি জানানো হয়, তারা যেন ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয় না নেয়।’ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ইন্দিরা গান্ধী ইজরায়েলের আক্রমণের শিকার প্যালেস্তিনীয় জনগণ ও আবর দেশগুলির স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে নেন জোরালো অবস্থান।

সেই ভারত এখন ইজরায়েলের মিত্র দেশ। ১৯৯৮, বিজেপি সরকারের আমল থেকে দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা শুরু। বিশেষ করে এল কে আদবানির ইজরায়েল সফরের পর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইজরায়েলি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভারতের অনুরূপ সংস্থাগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইজরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভারতে খুলেছে তাদের অফিস।

বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তার পিছনে রয়েছে সঙ্ঘের ‘ভারত-মার্কিন-ইজরায়েল অক্ষরেখার’ প্রতি কট্টর অবস্থান। হিন্দুত্ব আর জায়নবাদ স্বাভাবিক মিত্র। তাদের সাধারণ শত্রু মুসলিমরা। আরএসএসের দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক চরিত্র থেকেই এর উৎপত্তি। হিন্দুত্ববাদীরা বরাবরই আমেরিকার ঘনিষ্ঠ হওয়ার দৌড়ে টেক্কা দিতে চেয়েছে ইজরায়েলকে।

হিন্দুত্বের জনক বিনায়ক দামোদর সাভারকারই ভারতের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইহুদিদের নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ সাভারকার বলেন: ‘এটা লক্ষ করে আমি আনন্দিত যে, বিশ্বের সামনের সারির দেশগুলি বিস্ময়কর সংখ্যাধিক্যের সমর্থনে ইহুদি জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্যালেস্তাইনে একটি স্বতন্ত্র ইহুদী রাষ্ট্র গঠিত হবে। এবং একে বাস্তবে ঘটিয়ে তুলতে সশস্ত্র সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী অবর্ণনীয় যন্ত্রণা, আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের পর ইহুদিরা খুব শীঘ্রই প্যালেস্তাইনে তাদের জাতীয় আশ্রয় ফিরে পাবে। সন্দেহাতীতভাবে এটি তাদের পিতৃভূমি এবং পবিত্রভূমি। ভালোই হলো। সম্ভবত, তারা এই ঘটনাকে তাদের ইতিহাসের আর একটি গৌরবোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে তুলনা করবে, যেদিন মোজেস তাদের ইজিপ্টের দাসত্ব আর মরুভূমি থেকে উদ্ধার পাবার পথে পরিচালিত করলেন, দুধ আর মধুতে ধোওয়া সেই পরিশ্রুত ভূমি যেদিন তাদের দৃষ্টিপটে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল...

কাজেই, ন্যায়বিচারে সমগ্র প্যালেস্তাইন ইহুদীদের থাকা উচিত। কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘে শক্তিশালী দেশগুলির পরস্পরের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেকথা বিবেচনা করে বলা যায়, যে কোনও মূল্যে প্যালেস্তাইনের একটি অংশে যেখানে ঘটনাচক্রে ইহুদিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে ইহুদি রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই দেশগুলির সমর্থন, এটাই ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।

সেইসঙ্গে রাষ্ট্রসঙ্ঘে আমাদের হিন্দুস্থান সরকারের যে প্রতিনিধি রয়েছেন, এই ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে তাঁর ভোট দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। শ্রীমতী বিজয়লক্ষী (পণ্ডিত, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রথম মহিলা প্রতিনিধিদের মধ্যে যিনি ছিলেন অন্যতম, ব্রিটিশ শাসনে যিনি দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন, বহু লড়াইয়ে দিয়েছেন নেতৃত্ব) তাঁর ভাষণে যখন অতিনাটকীয় ভঙ্গিমায় ঘোষণা করেন যে, একটি পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের একতা ও সংহতিকে ভারত সরকার পিছন থেকে ছুরি মারতে পারে না, বিশেষত তখনই তাঁর ভাষণগুলি হাস্যকর হয়ে ওঠে।’

আর ১৪ মে, ১৯৪৮ ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পর সাভারকার বলেন, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুর্ভোগ, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের পর ইহুদীরা এখন শীঘ্রই প্যালেস্তাইনে তাদের স্বদেশকে পুনরুদ্ধার করবেন, যা নিঃসন্দেহে তাদের পিতৃভূমি।’

এবং বিজেপি বরাবরই আমেরিকার পক্ষে। সাম্রাজ্যবাদের কট্টর সমর্থক। কারণ, বিজেপি’র নাড়ি যেখানে বাধা, সেই আরএসএস আগাগোড়াই সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অনুভূতির বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নয়, আরএসএস উদ্বিগ্ন ছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে। ১৯২৫-এ, প্রতিষ্ঠার সময় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের গোটা পর্বে কোথাও কখনও অংশ নেয়নি আরএসএস। শুধু অংশ নেয়নি বললে কম বলা হবে, ওদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারতীয় জনগণের মেরুকরণ। উত্তেজনা তৈরি। দাঙ্গা বাধানো। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের। যেকারণে তাদের প্রশংসায় ব্রিটিশরা ছিল পঞ্চমুখ। কোনও দিন তাই নিষিদ্ধও করেনি। ভারত যখন দুনিয়ার দেশে-দেশে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন জানিয়েছে, এককাট্টা হয়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছে, তখন আরএসএস, জনসঙ্ঘ দাঁড়িয়েছে আমেরিকার পাশে। ছয়ের দশকে ভিয়েতনামে মার্কিন সামরিক আগ্রাসনকে তারা প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে।

সেই কবে ১৯২৩ সালে তাঁর ‘হিন্দুত্ব’ গ্রন্থে সাভারকার লিখেছিলেন, ‘যদি জায়নবাদীদের স্বপ্ন পূরণ হতো, যদি প্যালেস্তাইন ইহুদীদের একটি রাষ্ট্র হতো, তবে আমরাও আমাদের ইহুদী বন্ধুদের মতো সমান খুশি হতাম।’

যদিও, ইজরায়েলের উগ্র দক্ষিণগন্থী জমানার বিরুদ্ধে দেশের ভিতরে-বাইরে জারি রয়েছে লড়াই। ইজরায়েলের জনগণ তাদের দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এবং বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অবিরাম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সংগ্রামে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যারা এই গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে ব্যবহার করে তুলে ধরছে প্যালেস্তিনীয়দের ওপর ইজরায়েলি রাষ্ট্রের নৃশংসতাকে। এমন শক্তিগুলির মধ্যে একটি হলো ইজরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টি। এ কারণে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী। নামিয়ে দিয়েছে দপ্তরের ওপর উড়তে থাকা প্যালেস্তাইনের পতাকা।

এবছর নাকবা’র পঁচাত্তর। আরবিতে ‘নাকবা’ অর্থ বিপর্যয়। প্যালেস্তাইনের বুক চিরে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পরপরই ১৯৪৮ সালের ১৫ মে সাড়ে সাত লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে তাঁদের স্বদেশভূমি থেকে উৎখাত করা হয়, যখন জনসংখ্যা ছিল উনিশ লক্ষ। প্যালেস্তিনীয়রা এই দিনটিকে দেখেন ‘আল-নাকবা’ হিসেবে। ইজরায়েলে ‘নাকবা’ শব্দের ব্যবহার, কিংবা প্যালেস্তাইনের পতাকা ওড়ানো এখন ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’। এ ধরনের দমনপীড়নের মুখেও মুহূর্তের মধ্যে সেখানে জড়ো হন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা। সামরিক বাহিনীর সামনেই আবারও তাঁরা আকাশে উড়িয়ে দেন প্যালেস্তাইনের পতাকা। একইসঙ্গে ব্যক্ত করেন ইজরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি।

এবারই প্রথম নাকবা দিবসকে স্মরণ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। আর এই স্মরণ অনুষ্ঠান বয়কট করা ৪৫টি দেশের মধ্যে একটি ছিল ভারত। জেরুজালেম পোস্টের খবর, ইজরায়েল, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ইউক্রেনের মতো দেশগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। এর আগে গত ডিসেম্বরে প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ড ইজরায়েলের দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখার আইনি পরিণতি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতকে প্রশ্ন তোলা নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘে আনা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ভারত। যদিও প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ৮৭। বিরুদ্ধে ২৬। ভোটদানে বিরত থাকে ভারত-সহ ৫৩টি দেশ।

আর এই অবস্থানই বুঝিয়ে দেয় ভারতের বিদেশ নীতির অভিমুখ: মধ্যপ্রাচ্যে দিল্লি এখন ‘আই-টু ইউ-টু’ (ইন্ডিয়া, ইজরায়েল, ইউএস, ইউএই) জোটের অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল দুই দেশের সঙ্গেই স্ট্র্যাটেজিক জোটে রয়েছে ভারত। দুই দেশের সঙ্গেই রয়েছে গভীর সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক। সেকারণে মোদী সরকার এখন দুই দেশের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলেছে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন