ভোজপুরি ভাষায় 'দেহাত।'
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। এর প্রত্যেক গ্রামে আছে জমি আন্দোলন, জমিদার জোতদার, উচ্চবর্ণের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত আন্দোলন। এখানেই ধর্না চলাকালীনই জমিদার বাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হয় কমরেড রামনাথ মাহাতোকে। এ মাটি বীরেন্দর সিং, গুণেশ্বর সিংহ, উদয় সিং, উদয় শংকর সহ ২২ জন শহীদের রক্তে স্নাত।
মনে পড়ছিলো বাংলার বিনপুর ব্লক। শহীদের সংখ্যা ঐ তিন বছরে সম্ভবত প্রায় ৭০। আর শুধু জঙ্গলমহলেই ২০০৯ থেকে ১১’ পর্যন্ত দুশোর বেশি সিপিআই(এম) কর্মী খুন ও নিখোঁজ হয়। এরকমই এক ছোট্ট জনপদ বিভূতিপুরের শাখমোহন পঞ্চায়েতে আমাদের পূর্বাঞ্চল জাঠার গ্রামসভা হলো।
শতছিন্ন জামা, ধূসর চুলের শিশু, খালি পায়ে চলা মানুষদের বাঁচার আশ্রয় ভিন রাজ্যে কাজ। তাঁদের সন্তানদের জন্যে, ভালো স্কুল, দুটো মিড ডে মিল, স্কুলে শিক্ষকের দাবীতে, অগ্নিপথের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই - আমরা তুলে ধরাতে ওনাদের দুহাত তুলে আর্শীবাদ আমাদের প্রাপ্তি। এসএফআই এর পূর্বাঞ্চল জাঠার চতুর্থ দিনে।
রাস্তায় পড়েছে ছাপড়া জেলার বানাপুরের সাতজোড়া গ্রাম। এখানে উচ্চবর্ণের বাবুদের লোভ চরিতার্থ করতে প্রত্যেক রাতে সম্মান যাওয়া দলিত পরিবারের মা বোনেদের নিয়ম হয়ে গিয়েছিলো। পুলিশ প্রশাসন ছিলো বাবুদের পকেটে। সেই সাতজোড়া গ্রামের স্কুলের তিন বোনের কাহিনী এখানেই। এদের ওপরও অত্যাচার হয়। সেই রাতেই সবছেড়ে তারা যোগ দেয় অতিবাম শিবিরে। এর তিন বছর পর এসে বাহুবলীর বাড়ি উড়িয়ে দেয় ডিনামাইটে। খুন হয় সেই অত্যাচারী। এখন জেলে তারা।
কিন্তু এ অঞ্চলে এই ঘটনা গুলো নিয়ে অনেকগুলো 'আর্টিকেল ১৫','ব্যান্ডিট কুইন','মাঝি' নিমেষে তৈরী হয়। এখানেই সংগঠিত বাম আন্দোলনের প্রতিরোধ। জাতের নামি বজ্জাতির বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের চিহ্ন সর্বত্র। পরশু ছোট্ট শিশুর সাথে যে ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানে, তা এখানে সর্বত্র ঘটে আজোও। সামান্য রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করার জন্যে উচ্চবর্ণের মাস্টারের অত্যাচারের ঘটনা আছে। সাথে তার প্রতিবাদে এসএফআই এর টনিকের উদাহরণও আছে।
এই অঞ্চলের স্কুলে এখনোও উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের ছেলে মেয়েদের জন্যে আলাদা রেজিস্টার চলে। হস্টেলেও খাবার আলাদা। তার গুণগত মান কি বোঝাই যায়। ছাপড়ার জেপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলো উঁচু জাতের। তার নেতৃত্বে মহারাণা প্রতাপের জন্ম জয়ন্তী পালন হয় সেনেট হলে। আর সন্ত কবি রবিদাসের জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছিলো গাছের তলায়। এই সব ছোট ছোট, কিন্তু ভয়ংকর ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এসএফআই। তারজন্যে যোগ্য সম্মানের জায়গা পেয়েছে বহু 'পিছড়ে বর্গের' পড়ুয়া।
আজ মনুবাদী বিজেপির নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রয়োগের ফলে আরোও বিপদে পড়বে এই প্রান্তিক পরিবারের সন্তানরা।
তাই রুখে দাঁড়ানো।
তাই তো এই শিক্ষা বাঁচানো, সংবিধান বাঁচানো, দেশ বাঁচানোর শপথ।