লকডাউন পর্বকে ঠিক মত ব্যবহার করা হয়নি - সীতারাম ইয়েচুরি

শনিবার ১১ এপ্রিল ২০২০

প্রেস বিবৃতি লকডাউনের সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এই অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শুক্রবার ফেসবুক লাইভে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়েচুরি বলেন, শুধুমাত্র সব কিছু বন্ধ রাখাই সমাধান নয়। এই সময়ে উচিত ছিল বিপুল হারে পরীক্ষা করা। কোন কোন এলাকায় বেশি সংক্রমণ হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে জায়গাগুলিকে ঘিরে দেওয়া। কিন্তু ভারতে পরীক্ষার হার খুবই কম। লকডাউনের পর্বে তা আদৌ বাড়েনি। হঙকঙেও এক লক্ষে ১৩ হাজার মানুষের পরীক্ষা হয়েছে। ভারতে তা ১৯২। ইয়েচুরি বলেন, এই পরীক্ষা করে ধাপে ধাপে লকডাউন প্রত্যাহার করা উচিত। লকডাউন প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু তার সঙ্গে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজও করা উচিত। কেরালা সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটিও ধাপে ধাপে লকডাউন প্রত্যাহার করতে বলেছে। কিন্তু পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে তা করার পরামর্শ দিয়েছে। কেরালা তা করছে। সব রাজ্য সরকারকেই এ ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে কেন্দ্রকে। সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকারগুলি।

ইয়েচুরি বলেন, দেশের বাস্তব চেহারা অত্যন্ত খারাপ। লকডাউনের ফলে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষের পরিস্থিতি শোচনীয়। প্রথমত, খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। কেন্দ্রের মজুত ভাণ্ডারের খাদ্যশস্য রাজ্যগুলিকে পাঠাতে হবে যাতে তারা তা মানুষের মধ্যে বিলি করতে পারে। গ্রামীণ এলাকায় ফসল তোলা হচ্ছে না, তুললেও তা বিক্রি হচ্ছে না। মান্ডি বন্ধ, এফসিআই শস্য সংগ্রহ করছে না। এর ফলেও খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা তীব্র হবে।

ইয়েচুরি বলেন, বিরাট পরিমাণ মানুষ কাজ খুইয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও মানুষ কাজ হারাবেন। ইতিমধ্যেই বেতন ছাঁটাই করা হচ্ছে। কেন্দ্রকে নিশ্চিত করতে হবে যেন শ্রমজীবীদের মজুরি এই সময়ে হ্রাস করা না হয়। অনেক দেশের সরকার বেতনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দেবার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের এখানো কী করা যায়, কেন্দ্রকে ভাবতে হবে। মধ্যবিত্ত মানুষের ইএমআই পিছিয়ে দেবার কথা বলা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে সুদ সহ তা পরে দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা দরকার।

ইয়েচুরি বলেন, করোনা মোকাবিলার মূল কাজ যাঁরা করছেন সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যথেষ্ট সুরক্ষা নেই। পিপিই নেই। এমনকি এইমসের মতো প্রথম সারির হাসপাতালেও যথেষ্ট সুরক্ষা সামগ্রী নেই। প্রতিদিন ৫ লক্ষ পিপিই দরকার। তার ধারেকাছেও হয়নি। কেন হয়নি? কেননা আমরা দু’মাস সময় নষ্ট করেছি। ৩০ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। পিপিই রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। আবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি আরো শিথিল করা হয়। অথচ দেশে পিপিই’র সরবরাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। আমাদের উৎপাদকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ করা দরকার।

ইয়েচুরি বলেন, কেন্দ্র করোনা মোকাবিলায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলিকে দেবার কথা ঘোষণা করেছে। এই পরিমাণ একেবারেই অপ্রতুল। রাজ্যগুলিকে বর্ধিত সাহায্য দেওয়া উচিত। জিএসটি থেকে প্রাপ্য বকেয়াও রাজ্যগুলি পায়নি। অথচ তাদেরই করোনা মোকাবিলার মূল কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যেও বঞ্চনা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই জানিয়েছে দেশে যত আশ্রয় শিবির চলছে তার ৬৮শতাংশ কেরালায়, যত মানুষ আশ্রয় শিবিরে আছেন তার ৪৭ শতাংশ কেরালায়। অথচ কেরালাকে দেওয়া হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ১.৪ শতাংশ।

ইয়েচুরি বলেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই গোটা দেশের ঐক্যবদ্ধ লড়াই। এই সময়ে কোনও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এই লড়াইয়ের ক্ষতি করবে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ বৃদ্ধির জন্য এই সময়কে ব্যবহার করা বিপজ্জনক হবে। কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা চলতে পারে না। এই প্রসঙ্গেই এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন, দিল্লিতে তবলিগির জমায়েতকে কেউ ভালো হয়েছে বলবেন না। কিন্তু এই বিষয়ে আরও কিছু প্রশ্ন রয়েছে। কে এই জমায়েতের অনুমতি দিল? কেন দিল? এই ঘটনাকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো এই সময়ে আত্মঘাতী কাজ। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য কর্মীদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ তাঁরাই এই লড়াইয়ের যোদ্ধা। এই আচরণ চলতে পারে না।

ইয়েচুরি বলেন, লড়াই যে একসঙ্গেই লড়তে হবে তা কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝতে হবে। আমরা বলেছিলাম সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুন। সেখানে সকলের প্রস্তাব শুনুন। কয়েকটি দলের সংসদীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ভিডিও কনাফারেন্স হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তহবিল খুলেছেন, তার নাম পিএম কেয়ার্স। আসলে ইন্ডিয়া কেয়ার্স।

প্রদীপ জ্বালানো নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন, এইসব প্রতীকী ব্যাপার। এইসব করে করোনা ঠেকানো যাবে না। দরকার বিজ্ঞানকে। কোনো অন্ধ কুসংস্কার এই সময়ে সাহায্য করবে না। বিজ্ঞানই পারে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

সাংসদ তহবিল দু’বছরের জন্য বন্ধ করে দেবার সমালোচনা করে ইয়েচুরি বলেন, সাংসদরা এই অর্থ সংসদীয় ক্ষেত্রেই করোনা মোকাবিলায় ও জীবনজীবিকার জন্য ব্যয় করতে পারতেন। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিকেন্দ্রীকৃতভাবে খরচ করা যেত। লড়াই তো সেই স্তরেই হচ্ছে।

আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য কাঠামো দুর্বল হলে কী হয় তা সারা বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা যে ঠেকাতে পারছে তা সরকারি স্বাস্থ্য কাঠামো শক্তিশালী বলেই। বেসরকারিকরণ করে সাধারণের চিকিৎসার সুযোগকে সঙ্কুচিত করে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার বেসরকারিকরণ আরো বেশি মানুষকে দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো জোরদার করার জন্য পুনরায় উদ্যোগ নিতে হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন