পলাশ দাশ
উত্তর ২৪ পরগণায় ভোট হবে দু'দফায় পঞ্চম দফায় ব্যারাকপুর ও বনগাঁ এবং সপ্তম বা শেষ দফায় হবে বাকি ৩ টি কেন্দ্র দমদম, বসিরহাট ও বারাসাতে। দু'মাসের বেশি সময় বাম কর্মীরা তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই নির্বাচনী সংগ্রাম চালিয়েছেন। এবার বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের বোঝাপড়া আগের থেকে আরো নিটোল। সীমান্তবর্তী কেন্দ্র বনগাঁয় এবার কংগ্রেসের প্রার্থী। দমদম, বসিরহাট, ব্যারাকপুরে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী সিপিআই(এম)-র। বারাসাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বামফ্রন্টের ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী।
এই নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপি কিছু নির্দিষ্ট বিষয়কে প্রধান ইস্যু করে তুলতে মরীয়া। তবে সর্বত্রই মেরুকরণ অন্যতম লক্ষ্য। আলাদা আলাদা অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে একেক জায়গায়। যেমন বনগাঁ সহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু পকেটে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। ব্যারাকপুর সহ হিন্দীভাষী সব এলাকায় রামমন্দির নির্মানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করতে চাইছে বিজেপি। সংখ্যালঘু ভোট পেতে মরীয়া প্রচেষ্টায় বিজেপির বাড়বাড়ন্তকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। বসিরহাট কেন্দ্রের প্রধান ইস্যু সন্দেশখালি। সন্দেশখালির আন্দোলনের মূল বিষয়বস্তু হারিয়ে যাচ্ছে, বিজেপি আন্দোলনকে হিন্দু-মুসলমানে বিভাজন করতে উদ্যত। দুজনেই মেতে আছে পুরোনো বাইনারি ফেরাতে। বারাসাতে প্রথম থেকেই প্রচারে নেই বিজেপি, তাদের ভোট থাকলেও। তৃণমূল এখানে মেরুকরণ, সন্ত্রাসের ওপর নির্ভর করছে। দুই শাসকদলের কাছে মানুষ জীবন-জীবিকার সমস্যার কথা শুনছেন না। বিকাশ, উন্নয়ন ওদের মুখে নেই। তৃণমূলের মুখে একটিই কথা “লক্ষ্মীর ভান্ডার”। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতি, জুলুমবাজি, অত্যাচার, অপরাধকে তারা ঢেকে রাখতে পারছে না। আবার বিজেপির মুখেও আর চৌকিদার, না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা - এসব ডায়লগ নেই। বামপন্থীদের জোরালো প্রচার চলেছে গোটা হেলা জুড়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। নিয়োগ, রেগা, আবাস, পঞ্চায়েত, পৌরসভার লাগামছাড়া দুর্নীতিতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইলেকটোরাল বন্ডের দুর্নীতি মানুষ শুনছেন বামপন্থীদের কাছে। মোহ ভাঙছে বিজেপি সম্পর্কেও। বেকারি, দারিদ্র্য, বৈষম্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রের অজস্র সমস্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখার চেষ্টা সফল হচ্ছে না বামপন্থীদের তীব্র প্রচারের জন্য। মানুষ বুঝছেন কে তার বন্ধু, কে তার অসহায়তার জন্য দায়ী। দলবদলও দেখছেন মানুষ। বিশ্বাস হারাচ্ছেন তৃণমূল ও বিজেপির এই দেউলিয়া রাজনীতির চেহারা দেখে। প্রচারের সব আঙ্গিকেই বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই করছে। লিফলেটের পর লিফলেট, মাইকের নিবিড় প্রচার, সব বাড়িতে একাধিকবার যাওয়া, নিয়মিত স্কোয়াড, প্রচুর পথসভা, মিছিলের জনস্রোত, মাঠ উপচানো সমাবেশ ভরসা যোগাচ্ছে দোদুল্যমান মানুষকে বন্ধু চিনতে।
জেলায় শিল্পাঞ্চল বলতে এখন ব্যারাকপুরই প্রধান। বাকি কিছু শিল্প ধুঁকতে ধুঁকতে টিকে আছে দমদমে। বারাসাত কেন্দ্রের মধ্যে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সেক্টর ফাইভ। শ্রমিকের অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে জুট মিল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অথবা ছোটোখাটো কলকারখানা, অসংগঠিত সব ক্ষেত্রেই আছে লাল ঝান্ডার ইউনিয়ন। মজুরি বৃদ্ধি, ন্যূনতম বেতন, সম কাজে সম মজুরির দাবির লড়াইয়ে সারা বছর শ্রমিকদের বিশ্বস্ত সাথী বামপন্থীরা। কোভিড লকডাউনের অসহায় অবস্থার দিনে শ্রমিকদের বেতন সহ নিরন্ন পরিবারের পাশে সেদিন বামপন্থীরা ছিলো। দুই শাসক দলের টিকি কেউ দেখেনি সেদিন। বিরাট সংখ্যক রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি শিল্প, কল-কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। শ্রমিকদের নানা প্রতিশ্রুতি, ভোট এলে নিয়ম করে দিয়েছে দুই শাসক দল। কিন্তু শ্রমিকরা যে তিমিরে ছিলেন, সেখানেই আছেন। সেক্টর ফাইভ এবং নিউটাউন দুই-ই বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য। কয়েক লাখ ছেলেমেয়ে সেখানে কাজ করেন। হাজার হাজার মানুষের স্থায়ী, অস্থায়ী রুটিরুজির ঠিকানা এটাই। নতুন কোনো ইন্ডাস্ট্রি আসেনি, বরং অনেকেই চলে গেছে। প্রতি বছর রিক্রুটমেন্ট কমছে। বাড়ছে টোটো, ই-রিক্সা, মোবাইল এপ নির্ভর বিভিন্ন সার্ভিসে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা। শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের পাওয়া যাবে এখানেই। গ্রামের দিকে গেলে দেখা যাবে বহু গ্রাম উজাড় করে পুরুষেরা কাজ করতে গেছে ভিন রাজ্যে। এই চিত্র স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত এলাকাতেও। কাজ নেই বাংলায়, কাজ নেই জেলায়।
একসময়ের নাম করা কলেজগুলো এখন মাছি তাড়াচ্ছে। অনার্সে ভর্তি হয়নি নামী দামী সাবজেক্টে কেউ। ভীড় বাড়ছে বেসরকারি কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে। স্নাতকস্তরের খরচ ৪ লাখ থেকে ১০ লাখ। ছিটকে যাচ্ছে শিক্ষার আঙিনা থেকে গরীব, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। সরকারি স্কুলগুলোর অবস্থা খারাপ। কোথাও শিক্ষক বেশি ছাত্র কম, কোথাও তার উলটো। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা টোটো চালাচ্ছে, বাইকে সওয়ার নিয়ে ছুটছে বা খাওয়ার পৌঁছে দিচ্ছে। এসব স্কুল পড়ুয়াদেরও পড়াশোনায় আগ্রহ কমাচ্ছে।
জেলার প্রায় অর্ধেক গ্রামাঞ্চল। কৃষি অলাভজনক, সঙ্কটে। গ্রামীন শ্রমজীবী মানুষের সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে তৃণমূলের পাহাড় প্রমান দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কারণে। বসিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমি এখন জলকর হয়ে গেছে। সন্দেশখালির ৯০ ভাগ জমিতেই এখন মাছ চাষ হচ্ছে। পাট্টা দেওয়া জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএলআরও দপ্তর থেকে জমির পাট্টা বদলে দেওয়া হয়েছে। ভয়ভীতির এক রাজত্ব তৃণমূল তৈরি করেছে। শাহজাহান অসংখ্যের মধ্যে একটি নাম। সীমাহীন জোরজুলুম, ভোটের অধিকার কেড়ে বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত, পৌরসভা স্থাপনের কারণ হলো অফুরন্ত চুরি, লুটের বন্দোবস্ত। বিডিও থেকে থানার বড়বাবু তৃণমূলের মাফিয়া রাজত্বের নাটবল্টু এরা। অসম্ভব অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে দীর্ঘ এক দশক। শহরের বহু এলাকাতেও এই সন্ত্রাসের সাক্ষী উত্তর ২৪ পরগণা।
বদলিয়েছে পরিস্থিতি। জেলার এক নম্বর নেতা ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় রেশন দুর্নীতিতে জেলখানায়। সেই দুর্নীতির টানেই এসেছে শেখ শাহজাহান। আর তা থেকে মানুষ জেনেছেন সন্দেশখালি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেলখানায়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এই জেলার, এসএসসি আজও চাল থেকে কাঁকর বাছতে পারলো না। বরং চাকরি কেনা অযোগ্যদের রাখতে মমতার ক্যাবিনেট অতিরিক্ত পদ তৈরি করতে গেলো। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সেই সিদ্ধান্তের শরীক। দমদমের প্রার্থী সৌগত রায়ের ঘুষ নিয়ে “থ্যাঙ্ক য়ু” এখন ভাইরাল। সন্দেশখালিতে নেচে আসা মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুরে তৃণমূলের প্রার্থী। অর্জুন সিং, পার্থ ভৌমিকদের কারণে ব্যারাকপুর হয়ে উঠেছে এক ভয়ংকর ভয়ের জায়গা। গুলি, বোমা, খুন, দাঙ্গা নিত্যদিনের ব্যাপার এখানে। আইনশৃঙ্খলা উধাও। এ জেলার গ্রাম বা শহরে বহুকাল মানুষ নিজের ভোট দিতে পারেননা তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদদের দৌরাত্ম্যে। এরাই সব অসামাজিক জীবদের প্রকৃত নেতা। চোরাচালান থেকে লুটপাট, তোলাবাজি, বে-আইনি নির্মান। কোটি কোটি টাকার সম্পদ চুনোপুঁটি কাউন্সিলার, প্রধানরাই করেছে। বিধায়ক, সাংসদরা দুর্নীতির শিরোমণি। গোটা বসিরহাট মহকুমা জুড়ে সব অপরাধমূলক কাজের নেপথ্যে তৃণমূলের মন্ত্রীরা। ভেড়ি, ইঁট ভাটা, চোরা চালান, তোলাবাজির স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছে এরা। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হয়েছে মানুষকে বহু বছর, আজ সেই মানুষ মুখ খুলছেন বসিরহাটে, বারাসাতের সন্ত্রাসদীর্ণ অঞ্চলে।
তৃণমূলের দৌরাত্ম্য আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিপুল খরচ করে তাসা, ব্যান্ড, ঢাক দিয়ে মিছিলের বহর ভাড়া করা লোক দিয়ে বড় করা হলেও আগের সেই কর্মীদের ঢল উধাও। প্রকল্প কর্মীদের বাধ্য করা হচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মিছিলে। কিন্তু তাতেও একশোর গন্ডি পেরোচ্ছে না। পৌরসভা নির্বাচনে, ভোট না দিতে পারার স্মৃতি এখনও টাটকা। ভয় ভেঙেছে দ্রুত। সন্দেশখালির দ্বীপ থেকে বারাসাত, ব্যারাকপুরের শিল্পাঞ্চল বা গ্রামাঞ্চলে অথবা দমদমের বিস্তীর্ণ সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় এখন পতপত করে লাল ঝান্ডা উড়ছে। যে পথে ৮/১০ বছর বামেদের মিছিল হয়নি এখন সেখানেও দৃপ্ত মিছিলে পা মেলাচ্ছে গ্রামের মানুষ। স্বপ্ন দেখছে আবার নতুন করে অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় ৩ টি আসনে বামপন্থীরা জিতেছিলো, তার দুটিই ছিলো দমদম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ব্যাপক সন্ত্রাস, ছাপ্পা, বুথ দখলের জন্য হারতে হয়েছিলো বহু আসনে সামান্য ভোটে। এখান থেকেই তৃণমূল ও বিজেপির যৌথ পরিকল্পনা এবং মিডিয়ার সহায়তায় বিভাজনের রাজনীতির সূত্রপাত ঘটলো রাজ্যের মতো এই জেলাতেও। সীমান্তবর্তী বনগাঁ কেন্দ্র যা নদীয়ার দুটি বিধানসভা কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত সেখানের সংখ্যাধিক্য মতুয়া ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে “সিএএ” কে সামনে আনা শুরু হয়। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতির সংগ্রামকে তৃণমূল ও বিজেপি নিজেদের সঙ্কীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে। বিজেপির মাটি তৈরি হয় সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর ভর করে। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে আনা আইন বিভাজন ঘটাতে ভূমিকা নেয়। আজ সেখানেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। সিএএ লাগু হলেও ঠাকুরবাড়ি বা বিজেপির নেতারাও কেউ সিএএ-তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি। ভয় যেমন বিজেপি দেখাচ্ছে, তেমন তৃণমূল দেখাচ্ছে। আবার দুজনেই রক্ষাকারী হতে চাইছে। আর্থিক দুর্গতিতে থাকা মানুষ আজ তিতিবিরক্ত দুই শাসকদলের ওপর। নি:শর্ত নাগরিকত্বের ঘোষণার দাবি উঠছে। সিএএ ধাপ্পাবাজি, একবার আবেদন করলে হয়ে যেতে হবে বে-আইনি অনুপ্রবেশকারী - এই ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে গরীব উদ্বাস্তু মানুষদের। পিসি-ভাইপো বেমালুম সিএএ কে সমর্থন করেছেন, মতুয়া ভোট পেতে। এনআরসি-র ভয় আছে মানুষের। এ রাজ্যেও ডিটেনশন ক্যাম্পের জমি চিহ্নিত করতে গেছলো সরকার বনগাঁ ও নিউটাউনে, যা বাতিল হয় বামপন্থীদের আন্দোলনে। বাম ও কংগ্রেস মনে করাচ্ছে সেই কথাও। “আগে রাম পরে বাম” আরএসএসের সেই প্রচার আজ উধাও। লড়াই বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির। এবার লড়াই হবে সর্বত্র প্রতি বুথে।
জীবন-জীবিকার সংগ্রামের কথা শুধু বামপন্থীরাই বলছে, অন্যরা নয়। চুরি আর দুর্নীতিতে যে দুই দলই নিমজ্জিত এ ধারণা স্পষ্ট হয়েছে এবার। সাংঘাতিক সন্ত্রাসের কবলে থাকা বসিরহাট উঠে দাঁড়াচ্ছে। অনেকদিন পরে এখানে সিপি আই(এম) প্রার্থী আদিবাসি নেতা নিরাপদ সর্দার। সন্দেশখালির লড়াইয়ের জন্য জেল খেটেছেন। ২০১৩ সাল থেকে অবর্ণনীয় সন্ত্রাসে এখানে মানুষ ছিলো অসহায়। ভোট দেওয়ার অবস্থা ছিলো না সন্দেশখালি, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদের প্রায় সর্বত্র। আজ এমন দ্বীপ নেই সন্দেশখালিতে যেখানে লাল ঝান্ডা উড়ছে না। তৃণমূল ও বিজেপি তাদের বাইনারি তৈরির চেষ্টায় স্টিং ভিডিও নিয়ে মত্ত। বিজেপি সন্দেশখালির মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে ভেঙেছে। পুলিশ আর মিডিয়া সঙ্গত দিচ্ছে এদের। বামেদের একসময়ের দুর্গে মানুষ আবার ভালোবাসার ঝান্ডা দেখছে। জমি ফেরতের স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বস্ত সঙ্গী হতে পারে বাম প্রার্থী নিরাপদ সর্দার। বসিরহাটে লড়াই এবার ত্রিমুখী। বামপন্থীরা এগোচ্ছে তা এখন স্পষ্ট।
তৃণমূল ও বিজেপির সেটিং মানুষ ধরে ফেলেছেন গত বিধানসভা ভোটের পরেই। যতদিন যাচ্ছে, অজস্র ঘটনায় তা বারবার প্রমাণিত। শাহজাহানের গড়ে মার খেয়ে ফিরে আসার ২১ দিন পরে ইডি ফের তল্লাশিতে গেছে। সব তথ্য, প্রমান ততদিনে লোপাট। ইডি চালায় বিজেপি। ওদের দরকার শাহজাহানের নাম। ক্রাইম, দুর্নীতি থামানো ওদের লক্ষ্য নয়। দলে দলে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতারা এবারেও যোগ দিয়েছে বিজেপিতে এবং দিব্যি প্রার্থী হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে রোজ। কতবার ডিগবাজি খেয়েছে অর্জুন সিং। ব্রিগেডের মাঠ থেকে দিল্লি হয়ে ব্যারাকপুরের মাফিয়া নেতা তৃণমূল থেকে আবার বিজেপি। মানুষ এখানে শান্তি চান। অজস্র সমস্যা নিয়ে আছে শ্রমিকরা, তার সমাধান চায় তারা। দলবদল আর সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আবহ সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র ব্যারাকপুরে। বিশিষ্ট অভিনেতা দেবদূত ঘোষকে মানুষ দেখেছেন মেরুদন্ড না বিকিয়ে নির্ভীক থাকতে। আগ্রহ, উৎসাহ, আবেগ সৃষ্টি হয়েছে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থীকে ঘিরে।
দমদমে বিজেপির নিষ্প্রভ প্রার্থী হয়ে ব্যালট পেপারেই শুধু নাম তুলেছে তৃণমূলের শীলভদ্র। চারিদিকে রব এবার জিতবে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দমদম যে এককাট্টা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। হাটে বাজারে মানুষের মুখে মুখে বাম প্রার্থীর জয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। বারাসাত কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী এক দাগী আসামী। মাদক পাচারে ধরা পড়ে আসামে জেল খেটে এসেছে। সেটিংয়ে এই কেন্দ্র তৃণমূলের, তাই গোটা কেন্দ্রের এমাথা থেকে ওমাথা মানুষকে বিজেপির প্রার্থীর নাম জিজ্ঞেস করলে প্রায় কেউই বলতে পারছে না। শাসন সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। মেরুকরণের রাজনীতিও এনেছে বিজেপিকে নিয়ে। পঞ্চায়েত ভোটে সাহসী লড়াই মানুষের মনে আছে। বোমা, বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে লড়েছিলো বামপন্থীরা। এ ভোট, পঞ্চায়েত, পৌরসভার ভোট নয়। বাইনারির দিন শেষ। দল বদলের নাটক মানুষ চাক্ষুষ করছেন। বদলাচ্ছে পরিস্থিতি। লড়াই এবার হবে বারাসাতের সর্বত্র। বনগাঁয় তৃণমূলের প্রার্থী বিজেপির বিধায়ক। এবারের নির্বাচনে একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো একদলের বিধায়ক হয়েছেন অন্য দলের প্রার্থী। দুই দলের অদ্ভুত যোগসাজশ, যাওয়া আসা দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত ও বিরক্ত। মানুষ বদলাতে চান।
সমস্যা অনেক। সমাধানের কথা একমাত্র বাম-কংগ্রেসের মুখে। খড়কুটো ধরে বাঁচতে ঘটের ছবি আঁকছে তৃণমূল আর বিজেপি প্রাণপণে মেরুকরণের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়েছে আইএসএফ। এতে লাভ হবে হয় বিজেপির নয় তৃণমূলের। এই সত্য জেলার সর্বত্র মানুষ বুঝছেন। লড়াই এখন তৃণমূল-বিজেপি বনাম বা-কংগ্রেসের। নির্বাচনী প্রচারে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটছে। অজস্র নতুন মানুষ আসছেন, নতুন কর্মীরা যোগ দিচ্ছেন। ২০১১ -র পর এমন পরিস্থিতি এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। মানুষের আস্থা, ভরসা ফিরে পাচ্ছে বামপন্থীরা। বাকি কটা দিন জানকবুল লড়াই করতে হবে। অতন্দ্র প্রহরায় বুথ রক্ষা করতে হবে লুটেরাদের হাত থেকে। এবার রা সম্ভব হবে বহুলাংশেই। বাম আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী উত্তর ২৪ পরগণার মানুষ এবার বামপন্থীদের অগ্রগতি ঘটাতে ঐতিহাসিক ভূমিকা নেবেন। মানুষের কাছে বাম-কংগ্রেসের আহ্বান, “ভরসা রাখুন বদলে যাবে”।