মোদী সরকারের রাজস্ব আদায় নীতি – এক বিরাট মুর্খামি
মূল প্রবন্ধটি ইকোনমিক নোটস হিসাবে পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকায় ইংরেজিতে "Fiscal Folly" শিরোনামে প্রকাশিত। সেই প্রবন্ধের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ রাজ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল।
প্রভাত পট্টনায়েক
মোদী সরকার পেট্রোপন্যে ক্রমাগত বাড়তি কর চাপিয়ে সেই টাকায় সরকারি ব্যয় নির্বাহের রাস্তায় চলছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালনের বদলে তার ক্ষতিই করছে বেশি। পেট্রোপন্যে বাড়তি করের বোঝায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। বিকল্প রাজস্ব আদায়ের নীতি হিসাবে ধনীদের উপরে বাড়তি কর চাপিয়ে ( সম্পত্তি কর এমন একটি উপায় ) সরকারি ব্যয়বরাদ্দের পরিসর বৃদ্ধি করা যেত, এই পথে যেমন দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারত আবার মুদ্রাস্ফীতির হারকেও নিয়ন্ত্রনে রাখা যেত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথে চলতে চায় না।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পেতে একটি উদাহরণের সাহায্য নেওয়া যায়। ধরা যাক সরকার বাড়তি ১০০ টাকা ব্যয়বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিল, সেই অনুযায়ী পেট্রোপন্যে কর বাড়িয়ে দেওয়া হল। এর ফলে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম বেড়ে যাবে এবং সেই অভিঘাতে (কস্ট পুশ এফেক্ট অনুসারে) যাবতীয় পন্যে পরিবহণ খরচ বাড়বে। এছাড়াও বর্ধিত কর আদায়ের চাপে রান্নার গ্যাসের দামও যাবে বেড়ে, যার ফলে বেঁচে থাকতে মাথাপিছু খরচ বাড়বে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের খুব সমস্যা না হলেও বিরাট অংশের শ্রমজীবী মানুষের উপরে এর ফলে বাড়তি চাপ নেমে আসবে, যেভাবেই হোক না কেন বাড়তি রোজগার করে তাদের খরচ এবং আয় সংক্রান্ত সেই ঘাটতি মেটাতে হবে অথবা বাস্তবে যা ঘটে সেইমতো প্রকৃত আয় কমার ফলে তাদের কেনার ক্ষমতা কমবে – বাজারে পন্য বিক্রি সংক্রান্ত মোট চাহিদায় ঘাটতি আসবে। সুতরাং পেট্রোপন্যে বাড়তি ১০০ টাকার কর চাপানোর ফলে বাজারে ক্রেতাদের মোট চাহিদায় ১০০ টাকার সমতুল্য ঘাটতি তৈরি হল অথচ সরকারি হিসাবে ঐ টাকার অনুসারি চাহিদা বৃদ্ধি হবার কথা (কারন সরকারি ব্যয়বরাদ্দ বাড়ছে)। এহেন নীতিতে যোগ – বিয়োগ করার পরে চাহিদা যদি বাড়েও তবে তার পরিমান হবে অতি অল্প। এই কারনেই মোদী সরকারের রাজস্ব আদায় নীতিতে দেশের অর্থনীতিতে কোন সমস্যারই সমাধান হয় না।
একই সময়ে বাজারে সমস্ত পন্যের দাম বেড়ে চলে, তার প্রভাবেও চাহিদায় ঘাটতি দেখা দেয়। লেখার শুরুতেই আমরা মোদী সরকারের রাজস্ব আদায় নীতির দ্বিবিধ নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছিলাম – এই হল সেই দ্বিতীয় প্রভাব। মনে রাখতেই হয় মুদ্রাস্ফীতির হার যখন ঊর্ধ্বমুখী (অর্থাৎ বাজারে যখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে) সেই অবস্থায় অর্থনীতি চাঙ্গা থাকতে পারে না। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কেমন দেখা যাক - গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় এবছর মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে ৪.৪৮ শতাংশ, শিল্পস্থাপনের কাজ থমকে রয়েছে এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া নিজেদের গুদামগুলিতে বিরাট পরিমানে খাদ্যশস্য মজুত করে রেখেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ যে অবস্থা ছিল তার তুলনায় শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের হার ৩.১ শতাংশ বাড়লেও এবছরেরই আগস্ট মাসের তুলনায় তা ২.৬ শতাংশ কমে গেছে।
মোদি সরকার অনুসৃত অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে যার ফলে বিরাট অংশের শ্রমজীবী মানুষের মাথাপিছু প্রকৃত আয় যেমন কমেছে তেমনই কর্মসংস্থানও বাড়ে নি। শিল্পোৎপাদনের উপযোগী সক্ষমতা সত্বেও যখন উৎপাদনের হারে শ্লথতা দেখা দেয় এবং খাদ্যশস্যের ভান্ডারে বিরাট মজুত বজায় থাকে সেই অবস্থায় সরকারের এমন নীতি অনুসরণ করা অনুচিত। এই পরিস্থিতিকে অর্থনীতির ভাষায় "নন-জিরো-সাম গেম" (অর্থাৎ, এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে কারোর সুবিধা হওয়া মানেই অন্যের উপরে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপবে এমনটা না) বলে। এই অবস্থায় নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা গেলে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব। পুঁজিপতিদের মুনাফা এবং সম্পদের উপরে বাড়তি চাপ না দিয়েও, সরকার যদি এখনও পরিকাঠামো নির্মাণের খাতে আরও বেশি ব্যয় করে তাহলেই বৃহত্তর কর্মসংস্থান হতে পারে। পরিকাঠামো নির্মাণে বাড়তি ব্যয়বরাদ্দের পরিবর্তে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান "মন্থরতা"র সুযোগকে ব্যবহার না করে মোদী সরকার শ্রমজীবী মানুষকেই বাড়তি ব্যয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে (সরকারি ব্যয় আরও কমিয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে সাধারন মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে), জাতীয় অর্থনীতির মন্থরতাকে গ্রাহ্যই করা হচ্ছে না – ফলে আর্থিক অবস্থার কোন উন্নতিই হচ্ছে না।
এখন একটি বিকল্প নীতির কথা ভাবা যাক। ধরা যাক সরকার পেট্রোপণ্যের উপর বাড়তি কর কমিয়ে দিল। আগে সরকারি ব্যয়বরাদ্দে যে পরিমাণ খরচ করা হত (পেট্রোপণ্যে বাড়তি করের টাকায়), রাজস্ব ঘাটতি স্বত্বেও সেই একই পরিমাণ খরচ বজায় রাখা হল; এর ফলে নিশ্চিতভাবেই সামগ্রিক চাহিদার সম্প্রসারণ হবে। যেহেতু সরকারী ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে (পূর্বোক্ত উদাহরণে যাকে ১০০ টাকা মূল্যের সমান ধরা হয়েছে) এবং সেই বৃদ্ধি অন্য কোথাও কোনো হ্রাস দ্বারা মিলিয়ে যাবে না কারন সম্পদ সংগ্রহে কোনো কর চাপানো নেই সুতরাং এই বিকল্প নীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কমার পাশাপাশি অর্থনীতিতে সক্রিয় কার্যকলাপ এবং কর্মসংস্থানের মাত্রা বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এহেন আর্থিক নীতি একটি উপযুক্ত বিকল্প হবে। মুদ্রাস্ফীতির নিম্নহার এবং উচ্চহারে কর্মসংস্থান উভয় দিক থেকেই শ্রমজীবী মানুষ লাভবান হবেন।
রাজস্ব ঘাটতি স্বত্বেও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি জনিত সমস্যা অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক। এর ফলে সম্পদের বৈষম্যে অবাঞ্ছিত বৃদ্ধি ঘটে। রাজস্ব ঘাটতি মানে হল দেশীয় বেসরকারি খাত থেকে নেওয়া মোট ঋণের পরিমান (আলোচনার সুবিধার্থে বিদেশ থেকে ধার নেওয়াকে এক্ষেত্রে বাদ রাখা হল), যার অর্থ মূলত দেশীয় ধনী, যেমন পুঁজিপতিরা সহ ধনবাদী জগতের লোকেদের কাছ থেকে যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এইসব দেশীয় ধনীদের কাছ থেকে যে ১০০ টাকা (আমাদের উদাহরণ অনুযায়ী) ধার করা হল পরিকাঠামো নির্মাণ সংক্রান্ত সক্রিয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার তাদের হাতে সহজেই তাকে ফেরত দিতে পারে। সরকারী ব্যয় ১০০টাকা বাড়ানোর এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে বুনিয়াদি পরিস্থিতিতে যে অবস্থা ছিল তার তুলনায় খরচ কমিয়ে কোথাও সম্পদের সংরক্ষণ করা হয় না। সরকারের হাতে থাকা এই ১০০টাকা সঞ্চয় হবে নতুন আর্থিক সক্রিয়তার মাধ্যমেই, এবং বুনিয়াদি পরিস্থিতির তুলনায় সরকারের খরচ বাড়লেও তার হেরফের হয় না। এই কারনেই রাজকোষ ঘাটতি সহ্য করে সরকারী ব্যয়ের নীতিতে দেশীয় ধনীদের জন্য সৌভাগ্যের দরজা খুলে যায়: তারা বিনা বাধায় নিজেদের খরচ এবং সম্পদ উভয়ই বাড়াতে পারে (যেহেতু সঞ্চয়ের মানে সম্পদের সংযোজনই বোঝায়)। জাতীয় অর্থনীতিতে মন্থরতার কারনেই এমনটা হয়, এক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষকে বাড়তি বোঝার চাপ দিতে হয় না।
এখানেই প্রত্যক্ষ করের প্রসঙ্গ আসে। যদি দেশীয় ধনীদের উপর প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ১০০ টাকা বৃদ্ধি পায়, তাহলে সরকারী বাজেটে ভারসাম্য বজায় থাকে। সরকারি ব্যয়ের অতিরিক্ত ১০০ টাকা প্রত্যক্ষ কর বাবদ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের থেকেই চলে আসে। এর ফলে দেশীয় ধনীদের কাছ থেকে কিছু ধার নেওয়ার কিংবা তাদের সঞ্চয় বৃদ্ধির (কারন আয়ের একটি নির্দিষ্ট অনুপাতেই সঞ্চয় হয়) প্রশ্নই আসে না। পুঁজিপতিদের আয় বাড়ে না বলেই তারা খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বিভিন্ন প্রত্যক্ষ করের মধ্যে এখনও অবধি সবচেয়ে কার্যকরী হল সম্পদ কর। এই নীতিতে সরাসরি ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের বৃদ্ধিকেই আক্রমণ করা হয় যা অন্যথায় সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশীয় ধনীদের পকেটে ঢুকত। ধনীদের ব্যয়ে প্রত্যক্ষ করের রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থান বাড়ে, মুদ্রাস্ফীতি কমে এবং অনায়াসে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনাকে আটকানো যায়। সম্পদ কর বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের অতিরিক্ত সুবিধা হল এর ফলে সরাসরি লক্ষ্যে আঘাত করা যায় – সম্পদ বন্টনের ভয়াবহ বৈষম্য কমাতে যা খুবই কার্যকরী। দেশীয় ধনীদের ঘরে থাকা সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয় এমনটা নয়; এই নীতির ফলে লাগামছাড়া সম্পদ বৃদ্ধিকে বাধা দেওয়া যায়। তাই সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির সংস্থান হিসাবে এই নীতি মোদী সরকার যা করছে (পেট্রোপণ্যের উপরে বর্ধিত করের আকারে পরোক্ষ কর বাড়ানো) কিংবা রাজস্ব ঘাটতি বাড়িয়ে বাড়তি আর্থিক সংস্থান খোঁজা - উভয় পন্থার চাইতেই অনেক বেশি কার্যকরী।
সরকারি নীতিতে বেকারত্ব বজায় থাকছে, মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে এবং মাথাপিছু প্রকৃত আয় হ্রাস পাচ্ছে। সবদিক থেকেই শ্রমজীবী মানুষকে আক্রমনের সামনে পড়তে হচ্ছে। তা স্বত্বেও সরকার বিকল্প ভাবনা বাস্তবায়িত না করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার নামে মূর্খতার পথ অনুসরণ করছে কেন? এর কারন লুকিয়ে রয়েছে বিশ্বায়িত পুঁজির চাহিদা এবং IMF-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির পছন্দসই আর্থিক মডেলের প্রস্তাবের মধ্যেই। বিশ্বায়িত লগ্নী পুঁজি (গ্লোবালাইজড ফিন্যান্স ক্যাপিটাল) সম্পদ করের বিরোধি, কারণ এর ফলে দেশীয় কর্পোরেটদের একচেটিয়া অর্থনৈতিক ক্ষমতায় আঘাত নেমে আসে এবং মোদি সরকার আসলে সেই একচেটিয়া শক্তির প্রতি নমনীয়তার নীতিকেই আন্তরিকভাবে সমর্থন করে। বিশ্বায়িত (গ্লোবালাইজড ফিন্যান্স) লগ্নী আবার রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি করে সরকারি ব্য্যবরাদ্দ বাড়ানোর বিরোধিতা করে, এই কারণেই আমাদের দেশে FRBM’র মতো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে উৎপাদিত মোট পণ্যের মূল্যের একটি নির্ধারিত শতাংশের মধ্যেই রাজস্ব ঘাটতির সর্বোচ্চ সীমাকে বেঁধে রাখা যায়। এহেন অবস্থায় একটাই রাস্তা খোলা থাকে আর তা হল পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। এই কারনেই মোদী সরকার পরোক্ষ করের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য একটি সহজ পথের আবিষ্কার করেছে। সেইমতো পেট্রোপণ্যের উপর ক্রমাগত বাড়তি কর চাপানো হচ্ছে যা আসলে পরোক্ষ কর। বলা চলে মোদি সরকার অনুসৃত অর্থনৈতিক মুর্খামি আসলে বিশ্বায়িত আর্থিক পুঁজির আগ্রাসী চাহিদার সাথে সম্পূর্ণরুপে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আর্থিক নীতি।
কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথেই মোদী সরকারের রাজস্ব আদায় নীতি অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতির হারকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। সরকার যদি সেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তবে বিশ্বের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় পেট্রোপণ্যের দাম না বাড়িয়ে তাদের উপরে চাপানো বর্ধিত কর কার্যকরীরূপে কমাতে হবে (যেমনটা তারা সম্প্রতি করেছে)। কিন্তু তারপরেও সরকারী ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে সেই ঘাটতির ভারসাম্য বজায় রাখা হবে যাতে রাজস্ব ঘাটতি সীমার মধ্যে থাকে এবং বিশ্বায়িত পুঁজির স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে। এর ফলাফল হবে অত্যন্ত হাস্যকর যখন মোদী সরকার জাতীয় অর্থনীতির মন্থর অবস্থার মধ্যেও বেকারত্বকে আরও ভয়াবহরূপে বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে।
ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ