প্রভাত পট্টনায়েক
আধুনিক সমাজ বলতে যতরকম বন্দোবস্ত বোঝায় তাদের প্রত্যেক কাঠামোতেই বিচ্ছিন্নভাবে ফ্যাসিবাদের উপাদানসমূহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। সমাজ জীবন পরিচালনায় এরা মূলত প্রান্তিক মতামত হিসাবেই নিজেদের জিইয়ে রাখে। সংকটগ্রস্থ না হওয়া অবধি একচেটিয়া পুঁজি প্রগতিশীল হওয়ার ভান করে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব পুঁজিবাদের সমস্যাকে গভীর করতে থাকে, একটা সময় আসে যখন জনমানসে পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতে শুরু করে। তখনই আসরে নামে ফ্যাসিবাদ, আসলে একচেটিয়া পুঁজিই তাকে রাজনৈতিক মঞ্চের একেবারে সামনে তুলে আনে। এই কাজে যেমন বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান লাগে তেমনই প্রতিনিয়ত খবরের শিরোনামে উঠে আসাও সেই পরিকল্পনারই অংশ। সংকটের ঐ অবস্থায় ফ্যাসিবাদের প্রাথমিক কাজই হল জীবনযাপনের প্রকৃত সমস্যাগুলি থেকে বিদ্যমান রাজনৈতিক বিতর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। সংকটের আসল কারন হিসাবে বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আড়ালে রেখে সংখ্যালঘু সামাজিক গোষ্ঠী, জনজাতি কিংবা ধর্মীয় পরিচিতির মানুষজনের প্রতি ভয়ানক ঘৃণার প্রচার চলে। এমন একটা অবস্থার দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয় যখন মূল সমস্যা কি সেদিকে আর কারোর নজর নেই, সবই যেন কতিপয় সামাজিক সংখ্যালঘুদের দায়। ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় আসে এমনই পরিস্থিতিতে। ক্ষমতাসীন হলে ঘৃণাপ্রচারের সাথে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নও নামিয়ে আনা হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করতে, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী হিসাবে জনসমাজে পরিচিতদের হেনস্থা করতে এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে একদল দুর্বৃত্তকে লেলিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতে ঠিক এমনই ঘটছে। তবে ফ্যাসিস্ত ধাঁচের এই রাজনীতিতে কিছু নতুন উপাদানেরও সন্ধান মিলছে। একচেটিয়া পুঁজির মালিকদের মধ্যে থেকেই আরেক গোষ্ঠী নির্মিত হয়েছে যাদের ‘নয়া একচেটিয়া বুর্জোয়া’ বলা চলে। ফ্যাসিস্ত গোষ্ঠীসমুহের সাথে সংযোগসুত্র স্থাপন করেছে এরাই। ‘ফ্যাসিজম অ্যান্ড বিগ বিজনেস’ বইতে প্রখ্যাত অ্যানার্কো-মার্কসবাদী ড্যানিয়েল গ্যুয়েরিন এমন কথাই লিখেছিলেন। সেইসময় জার্মানির শিল্প উদ্যোগের মধ্যে মূলত স্টিল, উৎপাদনী কাজের মেশিনারি এবং যুদ্ধাস্ত্র কারবারিরাই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন যোগায়। জার্মান শিল্প-উদ্যোগের ক্ষেত্রে এগুলি সবই ছিল একচেটিয়া পুঁজির নয়া গোষ্ঠী, বনেদি বুর্জোয়ারা কিছুটা সতর্কই ছিল। অভিজাত বুর্জোয়ারা ফ্যসিবাদের পক্ষ নেয়নি এমন ভাবলে ভুল হবে, ফ্যাসিবাদী রাজনীতির প্রতি সমসাময়িক শিল্পমালিকদের সমর্থন ব্যখ্যায় অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্যালেকি জার্মান বুর্জোয়াদের মধ্যে কোনোরকম গোষ্ঠীর উল্লেখ করেননি। তবে একথা সত্য যে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের মধ্যেকার এক নয়া গোষ্ঠীই অনেক বেশি সক্রিয় ও আগ্রাসী সমর্থন জানিয়েছিল। জাপানেও একইরকম ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। সেদেশে শিল্পায়নের মূল কাজে মিতসুই, মিতসুবিশি ও সুমিতোমো’র মতো শিল্পসংস্থাগুলির (এদের একত্রে যাইবুৎসু গোষ্ঠী বলা হয়) ভূমিকাই ছিল প্রধান। ৩০’র দশকে জাপানে ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনী ও ফ্যাসিস্ত শক্তির সংযুক্ত সরকারের প্রতি নিশান ও মোরি’র মত কিছু শিল্পসংস্থাই সবার আগে এগিয়ে আসে। সেনা সরকারকে পুঁজিপতিদের প্রাচীন গোষ্ঠী সমর্থন জানায়নি এমন না, মিতসুবিশি’রাই তো তাদের জাহাজ ইত্যাদির নির্মাতা ছিল- কিন্তু ফ্যাসিবাদকে জোরালো সমর্থনের প্রাথমিক হুজুগটা তোলে ঐ নব্য গোষ্ঠীই। জাপানে দেশীয় বুর্জোয়াদের দমন করতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে মার্কিন জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের পরিকল্পনা মাফিক যাইবৎসু গোষ্ঠীকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, বেশ কিছু বছর পরে অন্য পরিচয়ের আড়ালে তারা নতুন করে সংগঠিত হয়।
আজকের ভারতে আমরা কি দেখছি? মোদীর শাসন সাধারণভাবে কর্পোরেট পুঁজির জন্য বহুবিধ সুযোগসুবিধারই বন্দোবস্ত করেছে। এই পরিস্থিতিতে আদানি, আম্বানিদের মতো নয়া একচেটিয়া গোষ্ঠীগুলি যেমন মোদী শাসনের প্রতি আগ্রাসী সমর্থন যুগিয়েছে, তেমনই ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই আঁতাতের সুবাদে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় ব্যাপকভাবে উপকৃতও হয়েছে। ভারতের একচেটিয়া পুঁজির বনেদি গোষ্ঠীরাও তাই আর পিছিয়ে থাকতে চাইছে না। সম্প্রতি টাটা গোষ্ঠীর প্রধান নাগপুরে হাজির হয়েছিলেন। হিন্দুত্বের শাসনের প্রতি নিজেদের আনুগত্য প্রমাণেই তারা আরএসএস’র সদর দপ্তরে উপস্থিত হন।
সাধারনভাবে একচেটিয়া পুঁজির সাথে এবং বিশেষ করে নয়া একচেটিয়া মালিকগোষ্ঠীর সাথে মোদী সরকারের এহেন আঁতাতই ভারতে ‘ধান্দার ধনতন্ত্র’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। ধান্দা বললে অবশ্য একচেটিয়া পুঁজির ঐ নব্য গোষ্ঠীর সাথে ক্ষমতাসীন রাজনীতির ফ্যাসিস্ত উপাদানগুলির মধ্যেকার বিশেষ সম্পর্কটি কিছুটা আড়ালে চলে যায়। এর প্রকৃত চরিত্র তুলে ধরতে কর্পোরেট-হিন্দুত্ব আঁতাত বলেই একে অভিহিত করা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা একচেটিয়া পুঁজির সাথে ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ত উপাদানগুলির ক্রমবর্ধমান বিপদকে সঠিক ও নির্দিষ্ট রূপে তুলে ধরি। অর্থনীতি ও রাজনীতির বিশ্বপরিস্থিতি প্রসঙ্গে ব্যবহৃত শব্দবন্ধে (যেমন ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) সেই সত্য কিছুটা হলেও চাপা থাকে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ‘ধান্দা’র বন্দোবস্তটি সর্বদাই সক্রিয়, সেই অর্থে ধনতন্ত্র মানেই ধান্দার ধনতন্ত্র। এহেন ব্যবস্থায় মুনাফা লুটের কিছু নির্দিষ্ট ‘নিয়ম-কানুন’ রয়েছে যা সবার ক্ষমতায় কুলোয় না, ধান্দার কৌশলে দড় অংশই দাঁও জিতে নেয়। ধরা যাক, একটি নির্দিষ্ট ‘কাজ’র জন্য দরপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে ঐ কাজের উপযুক্ত নৈপুণ্য রয়েছে এমন অনেকেই আবেদন জানায়, কিন্তু শেষ অবধি শিকেটি ছেঁড়ে কতিপয়ের হাতেই। এরা কারা? যাদের ‘যোগাযোগ’ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী বা যাদের পায়ের তলার জমি অন্যদের তুলনায় বেশি মজবুত। দরপত্রের পুরস্কার জিতে নেওয়ার ব্যবস্থাটি কোনোদিনই অন্ধ ছিল না, বরং জরুরী অন্ধত্বের বেশ কিছুটা অভাব, পক্ষপাতদুষ্ট ব্যবস্থার যে কায়দা সেসব খেলার নিয়মেই অন্তর্ভুক্ত।
একচেটিয়া পুঁজিবাদী শাসনে একচেটিয়া মালিকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের সম্পর্কটি ক্রমশই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ‘দাস ফিনান্সক্যাপিটাল’ বইতে রুডলফ হিলফার্ডিং উল্লেখ করেছিলেন ব্যংক পুঁজি ও শিল্প পুঁজির মধ্যে এক ধরণের ‘গোপন সমঝোতা’ নির্মিত হয়, তার ভিত্তিতেই মাথাচাড়া দেয় অর্থনৈতিক অভিজাত গোষ্ঠী। সেই গোষ্ঠীর সাথেই রাষ্ট্রের এক বিশেষ সম্পর্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে, এই ছিল হিলফার্ডিং-এর বক্তব্য। ঐ পরিস্থিতিতে কর্পোরেট ব্যবসার কার্যকরী পদাধিকারী ও রাষ্ট্রীয় উচ্চপদসমুহে কর্তব্যরত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অদল-বদল ঘটতে থাকে। ব্যবসায়ী কাজে পারদর্শী এমন ব্যক্তিরা যেমন রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নানা পদে নিযুক্ত হন, তেমনই রাষ্ট্রের পরিচালনায় অভিজ্ঞ আমলারাও রাতারাতি ব্যবসায়ী সংস্থার মাথা হয়ে বসেন। একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থরক্ষার জন্যই এসব হয়। এমনসব নিয়োগ কিংবা নিযুক্তির ঘটনায় উপযুক্ত সকলের সমান সুযোগ বলে কিন্তু আদৌ কিছু নেই। পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্যকে বজায় রাখার কাজে কোনও ব্যক্তি যত যোগ্যই হন না কেন, নির্দিষ্ট বৃত্তের বাইরের কেউই মাথা গলাতে পারেন না।
এমন বন্দোবস্তের উদাহরণ হিসাবে দুটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। গুয়াতেমালার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জ্যাকোবো আরবেঞ্জ। তিনি সেদেশে ভূমিসংস্কারে বিশেষ উদ্যোগী হন। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে মার্কিন সংস্থা ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির লোকসান হতো, তাই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সিআইএ’র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা নেয়। দ্বিতীয় ঘটনাটি ইরানের। ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেক’কে উৎখাত করতে সিআইএ এবং এমআই-সিক্স একসাথে ষড়যন্ত্র করে। মোসাদ্দেক ইরানের তৈলসম্পদের জাতীয়করণ করেছিলেন। এর ফলে ইরানের তৈলউৎপাদন শিল্পে একচেটিয়া কারবারি হিসাবে ব্রিটিশ অয়েল কোম্পানি ও অ্যাংলো-ইরানি সংস্থার কর্তৃত্ব ঘুচে যায়। যদিও সেই কৃতকর্মের কোনোরকম দায় তারা আজও অস্বীকার করে চলেছে। এহেন অস্বীকারের কারণ ঐ নির্দিষ্ট বৃত্তের গোপনীয়তা রক্ষা ছাড়া অন্য কিছু না। মোসাদ্দেকের বদলে শাহ’কে ইরানের ক্ষমতায় বসানো যে রাজনৈতিক কর্মসূচি, ষড়যন্ত্রমূলক অভ্যুত্থানের দায় ঝেড়ে ফেলাও তারই অঙ্গ।
এসবই হল একচেটিয়া পুঁজির সাধারণ অভ্যাসের কথা। ফ্যাসিস্ত শক্তির উপাদানগুলি ক্ষমতাসীন হলে সে কাহিনীর বদল ঘটে। তারা প্রথমেই একচেটিয়া মালিকগোষ্ঠীর সাথে সংযোগরক্ষার অমন গোপনীয় ব্যাপারটায় ইতি টেনে দেয়। একে অন্যকে সমর্থনের পুরোটাই তখন প্রকাশ্যে আয়োজিত হয়। আজকের ভারতে ঠিক সেটাই হচ্ছে। রাফালে বিমানের দেশীয় নির্মাতা হিসাবে ন্যুনতম যোগ্যতার মাপকাঠির ভিত্তিতে দরপত্র, বিজ্ঞাপন কিংবা আবেদনের প্রথাসম্মত কোনও ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তরফে ফরাসী সরকারের সামনে সরাসরি অনিল আম্বানির সদ্যগঠিত সংস্থাকেই বরাত দেওয়ার সুপারিশ জানানো হয়। আধুনিক যুদ্ধবিমান নির্মাণে বহু পরীক্ষিত ভারতের সরকারী সংস্থা (হ্যাল)-কে এমন সুপারিশ তো দূর, পরিকল্পনা সম্পর্কেও কেউ অবহিত করেনি। এমন অভূতপূর্ব বন্দোবস্তের কারণ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যখ্যা দেওয়া হয়নি। আদানি গোষ্ঠীর বেলায়ও তেমনই ঘটল, হিন্ডেনবার্গের পেশ করা যাবতীয় তথ্য স্বত্বেও অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে কোনও তদন্তই হল না। এ হল খেলায় হেরে যাওয়ার উপক্রম হলে খেলার নিয়মকেই বদলে দেওয়ার কৌশল। বিদেশী ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে কতিপয় দেশীয় কোম্পানিকে ‘বাছাই’ করে সরকারী মদতে বিশেষ যত্নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এমন পরিকল্পনায় একচেটিয়া পুঁজি বা আরও বিশেষ করে বলা চলে একচেটিয়া মালিকানার নয়া গোষ্ঠীর সাথে রাষ্ট্রের আঁতাতই আরও পাকাপোক্ত হবে। ‘বাছাই’র নামে আসলে যা ঘটবে তা হল একচেটিয়া পুঁজিবাদীদের একাংশকে সরকারী মদতে আরও ফুলেফেঁপে উঠতে রসদ যোগান দেওয়া। পুঁজিবাদীদের ঐ একাংশের সাথেই হিন্দুত্বের রাজনীতি গাঁটছড়া বেঁধেছে।
এহেন সরকারী মদতের প্রতিদানে হিন্দুত্বের ঝুলিতে কি মিলবে? কর্পোরেট মিডিয়ার তরফে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার, সমর্থন। এটাই দেনাপাওনার আসল হিসাব। তাই স্বাধীন, স্বতন্ত্র গণমাধ্যম বলে যেটুকু যা পড়ে রয়েছে সেসবই কিনে নিতে আদানিরা মরিয়া হয়ে উঠলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার খুব একটা কিছু নেই। কর্পোরেট-হিন্দুত্ব আঁতাতকে নিরঙ্কুশ করতে, হিন্দুত্বের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে গণমাধ্যমের ঢক্কানিনাদ সুনিশ্চিত করতেই এমন পরিকল্পনা।
মুসোলিনি নিজের শাসনকে ‘কর্পোরেট ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যৌথ আধিপত্য’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। মোদী সরকারের কাজকর্ম অনেকটা সেই পরিকল্পনারই অবশেষসমুহকে আশ্রয় করে এগোচ্ছে। এমন শাসনকে নিছক ‘ধান্দার ধনতন্ত্র’ বলে ছোট করা চলে না। ধান্দার পুঁজিবাদ বললে ধান্দাবিহীন পুঁজিবাদ বলে কিছু একটা ছিল এমন ধারণা তৈরি হতেই পারে। অতীতের নিরীহ গোছের পুঁজিবাদ অধুনা হিন্দুত্বের শাসনে রূপান্তরিত হয়ে ‘ধান্দা’ শিখে নিয়েছে, এমন ভাবলে ভুলই হবে। পুঁজিবাদ কখনোই অমন নিরীহ পশুর মতো কিছু ছিল না। রাষ্ট্রের সাথে পুঁজির সম্পর্ক বহু পুরানো, বিভিন্ন পর্যায়ে সেই সম্পর্কে সময়োপযোগী বদল ঘটে। একচেটিয়া পুঁজির শাসনে সেই আন্তঃসম্পর্ক এক বিশেষ মাত্রায় পৌঁছায় যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও পুঁজির জোর অভূতপূর্ব কায়দায় একে অন্যের সাতেহ জড়িয়ে পড়ে। ফ্যাসিবাদ ক্ষমতাসীন হলে ঐ দুই শক্তির হৃদ্যতা আরও এগোয়, গাঁটছড়ার বাঁধনটির গুণগত পরিবর্তন ঘটে। এমন অবস্থায় যে শাসন চলে ভারতের ক্ষেত্রে কর্পোরেট-হিন্দুতের আঁতাত ঠিক সেটাই করতে চাইছে।
অনুবাদ – সৌভিক ঘোষ
মূল প্রবন্ধটি What We Have “Crony Capitalism”? শিরোনামে পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকার ৯ই জুলাই, ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত