Purba Midnapur GE 2024 Cover

‘To Begin, Begin’: The Stage

অমল কুইল্যা

জেলার বাম পার্টি নেতা, কর্মী ও সমর্থদের উপর অকথ্য নির্যাতন, মারধর, ৭২জন খুন, যখম, বাড়ি লুটপাট, কোটি কোটি বর্গা ও পাট্টা জমি জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া, জরিমানা, মিথ্যা মামলায় যুক্ত করে হাজার হাজার বাম কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। জেলার ২৫টি ব্লক, ২২৩টি গ্রামপঞ্চায়েত ও ৫টি পৌরসভা এবং ১০১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পরিকল্পিত আক্রমণ সংগঠিত করা হয়েছে। যার ফলে বিগত বছরগুলিতে সারা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা এবং তা মোকাবিলা করতে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও নিষ্ঠাপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়েছে আমাদের।

বাম আমলে কৃষি প্রধান এই জেলায় কৃষিকাজে যুক্ত ছিল প্রায় ৩৯২৩ শতাংশ মানুষ। জেলার শুধুমাত্র দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করত ৪৭.০৭ শতাংশ সাধারণ মানুষ। অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। আজ এদের অধিকাংশকে কাজের খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে।

একদিকে বাম আমলে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল পণ্য পরিবহণের প্রধান কেন্দ্র হিসাবে বন্দর কেন্দ্রীক অনেকগুলি ভারি শিল্প গড়ে তোলা হয়েছিল। হলদিয়া বন্দর থেকে রাজ্য কেন্দ্র সরকার ১৪ হাজার কোটি টাকা আয় করত। বর্তমানে বন্দরের নাব্যতা কমে গিয়ে ভারি জাহাজ আসতে পারছে না। পারাদ্বীপ বন্দরে চলে যাচ্ছে। ফলে রাজ্য আর্থিক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি তৈল শোধনাগার সহ অধিকাংশ কারখানা তোলা বাজির দাপটে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। প্রশাসনের নিরব দর্শকের ভূমিকার ফলে বহু মালিক কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ফলত কোন লগ্নিকারি নুতন কারখানা গড়তে চাইছে না। অন্য দিকে বাম আমলে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। যেখানে ৬টি ইউনিট ২১০মেগা ওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করত সেখানে আজ ২টি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। সিমেন্ট কারখানা সহ জেলা জুড়ে ক্ষুদ্র শিল্প ও স্ব-নিযুক্তি ক্ষেত্রে যে কাজের সুযোগ গড়ে উঠেছিল তাও আজ কন্ট্রাক্টর ও এজেন্টদের দখলে চলে গেছে। শ্রমিকেরা প্রকৃত মজুরিও পাচ্ছে না। শ্রমিকদের বছরের পর বছর চাটার্ড ডিমান্ড এবং বোনাসের দাবী মালিক পূরণ করছে না। এইসব শিল্পপতিদের থেকে ইলেক্ট্রোরাল বন্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তোলা তুলছে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল। পাশাপাশি বাম আমলের পঞ্চায়েত ও পৌরসভার উন্নয়ন কর্মসূচীর বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা ও পদ্ধতি আজ প্রায় স্তব্ধ। শুধু তৃণমূলী নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি লুটপাট- তোলাবাজি- দখলদারী রাজনীতি সর্বশান্ত করেছে জেলার মানুষকে। অথচ বাম আমলে হলদিয়ার সঙ্গে তেরপেখ্যায় ব্রীজ যুক্ত করে নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা, জেলিংহামে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরি কারখানা, গেঁওখালীতে জাহাজ মেরামতির কারখানা, জুনপুটে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি সহ অনেকগুলি ছোট বড় কারখানা গড়ে তোলার যাবতীয় সম্ভবনাকে শুধুমাত্র সংকীর্ণ বাম বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির স্বার্থে ধুৎস করা হয়েছে মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে। এই জঘন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস যা শুধু আমাদের জেলা নয় সারা রাজ্যকে ধ্বংসের কিনারায় এনে ফেলেছে।

এই সময়ে এর বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক মানুষকে সমবেত করার প্রচেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক স্তরে গ্রহন করা হয়েছে। সামগ্রিক এই প্রচেষ্টা থাকলেও অসৎ পথে সংগৃহীত ব্যাপক কালো টাকার বিনিময়ে দলবদলের রাজনীতির প্রভাবে দুই দলের যোগসাজশ অনেকটাই ধরা পড়েছে।

তাই তমলুকের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, অধিকার রক্ষা করা, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের পুনঃনির্মাণ সহ জেলা জুড়ে কর্মসংস্থানের সমস্ত সম্ভবনাকে কার্যকারী করার গ্যারেন্টি আজ বামপন্থীদের প্রচারের মূল অভিমুখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আমাদের শ্লোগান “জিতবে এবার সায়ন, হলদিয়ায় হবে আবার শিল্পায়ন, তমলুক জুড়ে হবে প্রকৃত উন্নয়ন’। এই নির্বাচনে তমলুকের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকল মানুষ বামপন্থীদের সমর্থন করার দৃঢ় ভূমিকা পালনের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও লড়াই জারি রেখেছেন।

এবার সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলে যে যে কাজগুলি অগ্রাধিকার পাবে:

১) যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান হবে,

২) নন্দীগ্রামে রেলের বাস্তবায়ন,

৩) হলদিয়া থেকে নন্দীগ্রাম, কুঁকড়াহাটি থেকে রায়চক, তেরপেখ্যায় হলদি নদীর উপর ব্রীজ,

৪) ফুল, পান, সবজির হিমঘর, বাজার,

৫) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং মহা বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন,

৬) সেচ ও নিকাশী সংস্কার,

৭) রাস্তা ঘাট সংস্কার, পাণীয় জলের ব্যবস্থা গ্রহন ও বিদ্যুৎ হীন গ্রামের প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুতায়ন সুনিশ্চিত করণ,

৮) ৭টি বিধানসভায় ছোট ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন,

৯) প্রতি সপ্তাহে ২দিন জনগণের জন্য শনি ও রবিবার লোকসভার মধ্যে সাংসদ অফিসে মানুষের সমস্যা শোনা ও সমাধানের চেষ্টা করবেন।

Spread the word

Leave a Reply