“Those who do not move, do not notice their chains”: The WB Chapter

লাশ পড়ছে গণতন্ত্রের

শমীক লাহিড়ী

একটা নির্বাচন। ৫ জন মৃত। ৪৪ জন প্রার্থী আক্রান্ত। আক্রান্ত সাংবাদিকের সংখ্যা জানা যায়নি। আর আক্রান্ত ভোটার? ওদের নিয়ে আবার আলোচনা হয় নাকি!

কে নেবে দায়িত্ব?  সন্ধ্যাবেলায় সেজেগুজে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা বলবেন শান্তিপূর্ণ ভোট, ঐ ৫টা লাশ বাদে। না মরলে ভালো হ’তো, কিন্তু মরেছে যখন, কি আর করা যাবে!

অযথা হৈচৈ করবেন না। এখন  উৎসব চলছে গণতন্ত্রের!

লাশের মালিকানা কার, টানাহেঁচড়া চলবে। প্রধানমন্ত্রী- মূখ্যমন্ত্রী- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাপানউতর চলবে। বাকি ৪দফা নির্বাচনের দফায় দফায় কে বেশি ফায়দা তুলতে পারে, তার প্রতিযোগিতা  চলতে থাকবে। সন্ধ্যায় সেজেগুজে  টিভি-র সঞ্চালকরা হৈ হৈ করে, রে রে রব তুলে, ঝগড়া বাঁধিয়ে, TRP বাড়াবার জন্য গলা কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে তুমুল আলোচনায় মেতে উঠবে। লাশের পাশে মা-বৌদের আছাড়ি পিছাড়ি কান্না, যে যত নিখুঁত সম্পাদনায় উপস্থাপিত করতে পারবে, তার বিজ্ঞাপনও তত মিলবে।

সবার মুনাফা – কিন্তু ঐ পাঁচের বাপ-মা-ভাই-বোনের কি হবে! ভোটের আইনের প্যাঁচে ইচ্ছা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিপূরনের অঙ্ক ঘোষণা করে সহানুভূতি আদায়ের প্রতিযোগিতায় নামতে বা ফায়দা তুলতে পারছেন না।

তাই বেচারা লাশগুলো অনেককেই অনেক মুনাফা তোলার সুযোগ দিলেও,  ওদের বাপ-মা-বৌ- সন্তানদের হাতে রইল শূণ্য।

আসলে লাশ তো পড়েছে গণতন্ত্রের।

নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে থেকেই নানা উস্কানিমূলক কথা বলেই চলেছেন দুই শাসকদলের চুনোপুঁটি নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন অভিযোগ জমা পড়ার বা  দিল্লির ইশারার অপেক্ষায় না থেকে, নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে পারতো না?

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০/৫১ এর ৩২৪ নং ধারায় নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া আছে অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করার। ক্ষমতার কোনো অভাব নেই। তাও নখ-দন্তহীন এই দৈন্য চেহারা কেন?

যারা উত্তেজক বক্তৃতা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারতো না নির্বাচন কমিশন? ৭২ ঘন্টার জন্য তাদের প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারতো না?

প্রধানমন্ত্রী ৮ দফার নির্বাচনের প্রতিটি দিন এসে ভাষন দিচ্ছেন, আর তার সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে টিভি তে। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে সেই বক্তৃতা শুনছে ভোটার। একই কথা মুখ্যমন্ত্রী সহ সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা হোক, অথবা প্রতি দফার নির্বাচনের ৪৮ ঘন্টা আগে সব সভার অনুমতি  দেওয়া বন্ধ করা হোক। কিছু একটা রাস্তা বলুক।

কসবায় আজ নির্বাচন। রাস্তার ওপারে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে পরে নির্বাচন। এপারে মাইক খাটিয়ে ইচ্ছেমতো প্রচার চলছে, বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

৪৮ ঘন্টা আগে প্রচার বন্ধ, ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাইক মিছিল বন্ধ – এইসব ফাজলামির মানে কি? আসলে লাশ তো পড়ছে নির্বাচন বিধির।

আকাশে বাতাসে কোটি কোটি টাকা উড়ছে। আকাশময় বিজেপি- তৃণমূলের হেলিকপ্টার রোজ চক্কর কাটছে। এলি-তেলি যে খুশী ফাঁকতালে উড়ে নিচ্ছে। দেখছে না নির্বাচন কমিশন? কে দিচ্ছে টাকা? বিজেপি ১০০০ টাকার কুপন বিলি করছে, তৃণমূল ১০০০টাকা ভোট মিটলেই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিফলেট বিলি করছে। কমিশন নিজে তো কিছু করছেই না, অভিযোগ জমা পড়লেও সেগুলোর স্থান হচ্ছে কমিশন দপ্তরের ডাস্টবিনে। আসলে প্রতিদিন লাশ ছড়িয়ে পড়ছে ঐ ডাস্টবিনগুলোয়।

বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বন্ডের টাকার সিংহভাগই  জমা পড়ছে বিজেপি-তৃণমূলের ভান্ডারে। কে দিচ্ছে জানতে চাওয়া নাকি অপরাধ! এই প্রকাশ্য ঘোষিত দুর্নীতির স্বপক্ষে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের সীল মোহর পড়েছে!

লাশ তো গণতন্ত্রের পড়েছে সেইদিনই।

প্রকাশ্যে নির্লজ্জভাবে অর্থের বিনিময়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে অনেকগুলো বড় বড় সংবাদমাধ্যমে। যাকে বলে খোলামেলা Paid News। দেখছে না নির্বাচন কমিশন? গণতন্ত্রের ৪র্থ স্তম্ভ এখন ফ্যাসিস্ট আর স্বৈরাচারের মুখপত্র। গণতন্ত্রের লাশ তৈরি হচ্ছে কর্পোরেট মিডিয়ার প্রতিটি অক্ষরে প্রতিদিন। গণতন্ত্রের  লাশে বিপুল উৎসাহে রোজই ফুল মালা চড়াচ্ছে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত টিভি  আর খবরের কাগজের খবর।

নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থাও যদি সরকারের পেটোয়া হয়ে যায়, তাহলে গণতন্ত্রের শ্রাদ্ধশান্তির তারিখটাও ঘোষণা করে দেওয়া হোক।

৭৩ বছর আগে অর্জিত স্বাধীনতা, স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্টদের হাতে লাশ হতে পারে না। জীবন- জীবিকা-রুটি-রুজির লড়াই ব্যর্থ হয় না।

ভোট দিন। সবাই ভোট দিন। দলবদ্ধভাবে ভোট দিন। শান্তি সম্প্রীতি জীবন জীবিকা শিক্ষা স্বাস্থ্যের লড়াইয়ের পক্ষে ভোট দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়ান। গণতন্ত্রকে লাশ হতে দেওয়া যায়না।

Spread the word

Leave a Reply