‘The world is not such an innocent place as we used to think, Petkoff’- The Nation Named India

নীলোৎপল বসু

দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুকে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না, সেই কাজ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই। এমন সিদ্ধান্তে জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। শেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় বিজেপি’র তরফে দ্রৌপদি মুর্মুকে মনোনীত করা হলে কর্পোরেট মিডিয়া (যাদের গোদি মিডিয়া বলেই সবাই চেনে) একে মোদীর মাস্টারস্ট্রোক বলে ঢালাও প্রচার চালিয়েছিল। এখন তাদের মুখে একটি শব্দও শোনা যাচ্ছে না। একজন মহিলা যার দলিত পরিচিতিও রয়েছে তাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করা হলে মোদী বিরোধীদের চুপ করিয়ে দিয়েছেন বলা হল, অথচ নির্লজ্জের ন্যায় তাকেই সংসদ ভবনের উদ্বোধনে বাদ রাখা হলে সেই নিয়ে কোনও আওয়াজ নেই। এই হল প্রচারের ব্লিৎক্রিগ কায়দা। তখন বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোটের ফলাফল হবে ভয়াবহ। যদিও তা হয়নি। দেখা গেল বিরোধী প্রার্থী বরং হিসাবের চাইতে কিছু ভোট বেশিই পেয়েছিলেন। সংসদে ইদানিং যে কায়দায় বিজেপি নিজের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে সেই অভিঘাত আদৌ পড়েনি।

এই পরিস্থিতিতে চুপ করে রয়েছে বলে গোদি মিডিয়ার ভূমিকা ভুলে গেলে চলবে না। দেশের সংসদ কার্যত ভারতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্গ বিশেষ। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী একে সেই চোখে দেখেন না, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন সমারোহ তার জন্য ট্রফি জেতার মতোই একটা কিছু। তাই সমস্ত সাংবিধানিক প্রথা জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি নিজেই উদ্বোধক, নিজেই বক্তা।

এই ভবনের শিলান্যাস করার সময় দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন রামনাথ কোবিন্দ। তাকেও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমন বেহায়া আচরণের কারণ কি? কারণ আরএসএস’র রাজনীতি। এই রাজনীতি সামাজিক পরিচিতিকে ভিত্তি করে নির্লজ্জ বিভাজনে আস্থাশীল, বিভাজনের বিষে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। আরএসএস চাইছে দেশের সর্বত্র সেই বিষ প্রোথিত হোক। 

আরএসএস পরিচালিত মোদী সরকার প্রথম থেকেই দেশের সংবিধান ও সাংবিধানিক কাঠামোকে ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছে, সেই কাজে তারা বেশ কিছুদুর সফলও হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রপতিকেই সংসদ ভবন উদ্বোধনের দায়িত্ব থেকে ছেঁটে ফেলা সেই কর্মসূচিরই সাম্প্রতিক সাফল্য। সংবিধান বলছে ভারতে সংসদীয় ব্যবস্থার তিনটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হল ‘রাষ্ট্রপতি’র পদ যাকে রাষ্ট্রপতি ভবন বলে চিহ্নিত করা হয়। ভারতে সাধারণ নাগরিক তো দূর দেশের রাষ্ট্রপতির অধিকারও আর সুরক্ষিত থাকছে না, মোদী সরকারের ফ্যাসিস্ত সুলভ আচরণ এমনই চেহারায় পৌঁছেছে।

পিছিয়ে যাওয়ার খতিয়ান

অমিত শাহ’ই হলেন মোদীর সমস্ত যুদ্ধের সেনাপতি। ইদানিং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশের ক্ষমতায়নের প্রতীক বলে চিত্রিত করতে তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন। তার বক্তব্য মোদীর ‘পিছড়ে বর্গ’ পরিচিতির কারণে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি বাড়তি সুবিধা পাবে। স্বাধীনতার পরে দেশের সংবিধানের বিরোধিতায় যারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল তারাই এখন সংবিধান স্বীকৃত অধিকারকে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যবহার করতে চাইছে। আরএসএস ও তাদের মতাদর্শ (যা হিন্দুত্ব নামে পরিচিত) বরাবরই মনুস্মৃতি’কে দেশের সংবিধান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, সেই লক্ষ্যে লাগাতার প্রচারও করেছে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে দেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে এরা কোথাও ছিল না। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের কোনও অবদান নেই- হিন্দুত্বের নামে তারা দেশের মানুষকে ভেদ-বিভেদের সংকীর্ণ রাজনীতিতে বিবেচনা করে। এদের মুখপত্র অর্গানাইজারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলিতে তারা নিজেরাই সেই কথা বারে বারে উলেখ করেছে।

আমাদের দেশে সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের লড়াই এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উন্নীত হয়েছে। সেই সংগ্রামই দাবী জানিয়েছিল দেশের জনগণনার সাথেই জাতিভিত্তিক গননাও প্রয়োজন। মোদী সরকার সেই কাজ ফেলে রাখছে। এই ঢিলেমির কারণ তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ। হিন্দুত্ব সকলের সমানাধিকারে বিশ্বাস করে না। সবাইকে সমান মর্যাদা দিতে চায় না বলেই তারা জাতিভিত্তিক জনগণনার কাজটি এড়িয়ে যেতে চাইছে। হিন্দুত্বের শক্তি হিসাবেই মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে। সময়োপযোগী গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হিসাবেই জাতিভিত্তিক জনগণনাকে বিচার করতে হয়। পিছিয়ে থাকা মানুষদের সমান সামাজিক মর্যাদা অর্জনে সাহায্য করবে এই পরিসংখ্যান। আরএসএস’র মতাদর্শে সেই অনুভব নেই বলেই মোদী সরকার এহেন আচরণ করছে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দুইই গুরুতর চেহারা নিয়েছে। হিন্দুত্বের আদর্শে সেই প্রসঙ্গে কোনও কর্মসূচি নেই, তারা যেন তেন প্রকারেণ নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সফল হতে চাইছে।     

RSS_meeting

আমাদের সংবিধানে দেশের জনসাধারণের জীবনে যে বৈচিত্র্য রয়েছে তাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার কথা রয়েছে। সকল সহনাগরিকের সমানাধিকার ভারতের সংবিধান স্বীকৃত বিধি। আরএসএস কোনোদিন সেই মূল্যবোধের সাথে একাত্ম হতে পারেনি, আজও পারে না।

নির্বাচনের সময় এলেই সেই রাজনীতি জনসাধারণকে বিবিধ সামাজিক পরিচিতির ভিত্তিতে আলাদা আলাদা করে রাখতে চায়। একেক গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া কিংবা কারোর প্রাপ্য সুযোগকে কেড়ে নিয়ে সংকীর্ণ রাজনৈতিক প্রচার চালানো হয়। এর কোনটিই দেশ অথবা মানুষের স্বার্থে পরিচালিত হয় না। এসবের লক্ষ্য থাকে মানুষের ঐক্য ভেঙ্গে দিয়ে ভোট জিতে নেওয়া। তাই দরকার হয় ভাড়াটে মেধার, দালাল মিডিয়ার। পেশাদার কলমজীবীরা পয়সার বিনিময়ে মোদীর মাস্টারস্ট্রোকের ইতিবৃত্ত রচনা করেন, কর্পোরেট মিডিয়া নির্লজ্জের মতো ঢাক পিটিয়ে যার নাম দিয়েছে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।  

অতিসক্রিয় ব্রাহ্মণ্যবাদ

রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে না দেওয়া কিংবা জাতিভিত্তিক জনগণনায় অরুচি আসলে কিসের পরিচয়? ওটাই হল হিন্দুত্বের মতাদর্শ। যে মতাদর্শ দলিত, আদিবাসীদের সমানাধিকার মানে না। আজকের দিনে যারা সাভারকরের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন তাদের চাইতে সাভারকর আর কিছু না হোক অনেক বেশি স্পষ্টবাদীটুকু ছিলেন। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের সাথে হিন্দুত্বের কোনও সম্পর্কই নেই। হিন্দুত্ব যে আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার হাতিয়ার একথা বলতে সাভারকরের আটকায়নি। তার লেখজোখা পড়লেই বোঝা যাবে তিনি যে জাতীয়তাবাদের কথা বলতে চেয়েছিলেন তা আসলে সংকীর্ণ সাংস্কৃতিক পরিচিতির ভিত্তিতে নির্মিত এক সামাজিক আধিপত্যের ধারণা। ওটুকুই সাভারকরের তাত্ত্বিক বোঝাপড়া। ব্রাহ্মণ্যবাদই ভারতের জাতীয় সংস্কৃতি, ব্রাহ্মণ্যবাদী মূল্যবোধই হল আমাদের দেশের ধর্ম- এই ছিল তার বক্তব্য।

গোলওয়ালকর’ও মোটের উপরে সাভারকরের দেখানো পথেই চলেছিলেন। জাতীয়তাবাদকে রাজনৈতিক উপলব্ধি হিসাবে বিবেচনা করতে অস্বীকার করার কারণ সেটাই। জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় পরিচিতিকে সমার্থক দেখাতে চাইতেন বলেই দেশের সংবিধানকে তারা মেনে নিতে পারেননি। এমন মানসিকতা সম্পন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী (অর্থাৎ আরএসএস) যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে নিজেদের আলাদা রাখবে এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই, তা না হলে যে সংগ্রামের ময়দানে সবার সাথে মিলে যেতে হত! সেই সময়টুকু তারা হিন্দুদের সামরিক শিক্ষা দিতে ব্যস্ত ছিলেন।

আজকের ভারতে উগ্র-দক্ষিণপন্থী রাজনীতির তিনটি স্পষ্ট কর্মসূচি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে যে কোনও অন্যায়কে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। দুই, পুনরুজ্জীবনবাদ অর্থাৎ মোদী জমানা আসলে হিন্দুদের জন্য নিজেদের অতীত গৌরবকে পুনরার্জনের সুযোগ দিয়েছে বলে প্রচার এবং তিন মায়াবাদী চিন্তাভাবনার প্রসার। জনসাধারণকে বিজ্ঞান চেতনার থেকে দূরে রাখতেই তৃতীয় হাতিয়ারটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রভাবে যেমন জনমানসে বিভিন্ন গোঁড়ামি, কুসংস্কার বেড়ে চলেছে তেমনই নিজেদের অতীত সম্পর্কে ভ্রান্তসব ধারনাও ব্যপক প্রচার পাচ্ছে। হিন্দুত্ব চায় আজকের ভারত নিজেদের বহুত্ববাদী সত্তা ভুলে যাক। সেই ঐতিহ্য যা দীর্ঘকাল যাবত আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম আধার। এই রাজনীতি শুধু ভারতেই নয় সারা পৃথিবীজুড়েই মাথাচাড়া দিচ্ছে। সম্প্রতি মনিপুরের ঘটনা আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ঘৃণাপ্রচারের ফলাফল কতটা ভয়ংকর হতে পারে। এমন ঘটনা গোটা দুনিয়ার সামনে আমাদের মাথা হেঁট করে দেয়। তাই লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে মোদীকে বলতে হয়েছে আমাদের দেশ নাকি গণতন্ত্রের জন্মদাত্রী যা বিগত পাঁচ হাজার বছর ধরে টিকে রয়েছে! এর চাইতে হাস্যকর মিথ্যা সম্ভবত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।  

আইসিএইচআর’র হলঘরে আয়োজিত সভায় ইউজিসি’র চেয়ারম্যান সেই ঝুটা ইতিহাসকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যদিও সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পাঁচ হাজার বছর ধরে যে দেশ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা করে এসেছে তার ইতিহাস, সংস্কৃতিতে বর্ণাশ্রমের মতো জঘন্য নিপীড়নের ঐতিহ্য কিভাবে যুক্ত হল এর কোনও উত্তর মেলেনি। জাতিবিদ্বেষের ঘৃণাকে ভিত্তি করে যে রুচির জন্ম, দলিতদের উপর ভয়ানক আক্রমণ নামিয়ে এনেই যে ব্যবস্থার উত্থান তার ছত্রে ছত্রে নাকি গণতান্ত্রিক চেতনা ছিল! একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যারা দলিত পরিচিতির জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু কিংবা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কবিন্দ’কে সংসদ ভবন উদ্বোধনের সুযোগটুকু দিতে পারে না (যে কাজ তাদের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার) তারাই আমাদের অতীত গৌরবের গাথা শোনাতে চান।

বোঝাই যাচ্ছে এই রাজনীতি দেশের সংবিধান ও সাংবিধানিক কাঠামোকেই তছনছ করে দিতে চায়। বিজেপি’র রাজনীতিতে মুর্মু কিংবা কবিন্দ পরিচিতিগুলি ভোটের বাজারে কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়। দলিত আদিবাসীদের প্রকৃত উন্নয়নের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আগামী নির্বাচনে মোদীর ‘পিছড়ে বর্গ’ পরিচিতিকে বাজি রেখে হয়ত কিছু হইছই হবে, যদিও সামাজিক ন্যায় ও পিছিয়ে থাকা অংশের ক্ষমতায়নের বিষয়ে কাজের কাজ কিছুই করা হবে না।

সুতরাং পরিস্থিতির মূল চরিত্রটি কেমন? সরকারের তরফে প্রচুর ঢক্কা-নিনাদ সহ যে ‘নিউ ইন্ডিয়া’র কথা বলা হচ্ছে তা আসলে হিন্দুত্বের পরিচিতি ভিত্তিক আধিপত্যবাদকেই পাকাপাকি করার বন্দোবস্ত। গোটা দুনিয়ায় ভারত বলতে যা বোঝায় তার তুলনায় এই ব্যবস্থা একেবারেই আলাদা। এই অবস্থা আমাদের গর্ব করার মতো অতীত কিংবা ঐতিহ্য কোনটাই নয়।

সবটাই হতাশার এমন না

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটগ্রস্থ, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের যন্ত্রণাই সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের ন্যুনতম ব্যবস্থা না করেও মোদী-শাহের পক্ষে কিভাবে নির্বাচনে জিতছে। ২০১৯-র সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ জনগণের প্রধান জিজ্ঞাসা এটাই। মিডিয়ার গলা চেপে ধরে প্রচার চালানো হচ্ছে গরীব জনসাধারণের দুর্দশা যতই বাড়ুক, সামাজিক অন্যায়ের যত বড় ঘটনাই ঘটুক না কেন নির্বাচনে বিজেপি’ই জিতবে।   

সম্প্রতি যে সমস্ত নির্বাচনগুলি হয়েছে তার মধ্যে কর্ণাটকের ফলাফলই বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করেছে হিন্দুত্বের ভাবাবেগ কার্যকরী হচ্ছে না, তার স্রোতে ভাঁটা দেখে দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট, রোজগার হারিয়ে দুর্দশার কবলে পড়া জনসাধারণ নিজেদের সামাজিক পরিচিতির বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে আর রাজী হচ্ছেন না। তারা সংকট থেকে মুক্তি চাইছেন। আর তাই বিজেপি পরাজিত হচ্ছে। অবশ্য নির্বাচনে জিততে নতুন পন্থা হিসাবে বৃহত্তর হিন্দুত্বের পরিচিতিকে ভেঙ্গে ফেলতে চাইছে আরএসএস। ইদানিং তাদের লক্ষ্য উঁচু নিচু বর্ণের ভেদকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের পক্ষে সমর্থনকে দুর্বল করে দেওয়া। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে তারা এই কায়দাতেই জয়ী হয়েছিল। তা হলেও মোটের উপরে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট সামাজিক বা অর্থনৈতিক কারণে যারা নিপীড়িত তারা সবাই একজোট হয়ে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

আরএসএস-বিজেপি’র রাজনীতিকে পরাস্থ করার জন্য এটাই সঠিক সময়। কর্পোরেট পুঁজির সাথে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে আঁতাত আমাদের দেশকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে তাকে প্রতিহত করতে আমাদের একজোট হতে হবে, একজোট করতেও হবে। এই লড়াই শুধু রুটিরুজির বিষয়েই সীমাবদ্ধ না, এ হল গরীব মধ্যবিত্ত মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন। ২০২৪ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে। পরিচিতি স্বত্বার কানাগলি থেকে বেরিয়ে এসে ঘৃণার রাজনীতির রাস্তা আটকে দাঁড়াবেন দেশের জনসাধারণ। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষই আরএসএস-বিজেপি’র প্রাণভোমরা। সেই বিষাক্ত মনোভাবকে প্রতিরোধ করা গেলে আরএসএস পরাস্থ হবে, তখন বিজেপি’ও হারবে, হারবেই।   

Spread the word

Leave a Reply