The Way Ahead – Niti Ayog’s Report On WB

নীতি আয়োগের সূচকে পশ্চিমবঙ্গ

Shantanu Dey

শান্তনু দে

দরিদ্রতম রাজ্যের তালিকায় ১২-নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ।

জানাচ্ছে নীতি আয়োগ। রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছেন বিহারে। দ্বিতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড। তিন-নম্বরে উত্তরপ্রদেশ। চারে মধ্যপ্রদেশ। আর সবচেয়ে কম কেরালায়।

বিহারে দারিদ্রের হার ৫১.৯১ শতাংশ। যেখানে কেরালায় এক শতাংশও নয়, মাত্র ০.৭১ শতাংশ! আর পশ্চিমবঙ্গে এই হার ২১.৪৩ শতাংশ।

গোয়া, সিকিম, মণিপুর, মিজোরাম থেকে হরিয়ানা, পাঞ্জাবের মতো ছোট রাজ্য তো রয়েছেই। এমনকি তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মতো বড় রাজ্যগুলিও পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে এগিয়ে।

গতবছর নভেম্বরে নীতি আয়োগ প্রথম প্রকাশ করে বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক। অপুষ্টি, শিশু-কিশোর অবস্থায় মৃত্যু, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, স্কুলে উপস্থিতি, জ্বালানি, নিকাশি, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, বাড়ি, অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট— এরকম এক ডজন মাপকাঠির বিচার করেই এই মাল্টিডায়মেনশানাল পভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই)।

পশ্চিমবঙ্গে তিন ভাগের এক ভাগ পরিবারই (৩৩.৬ শতাংশ) অপুষ্টির শিকার। এখনও ৬১.৬ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাসের বদলে ব্যবহার করে কাঠ বা কয়লা। শতকরা প্রায় ৪৭টি পরিবারের নেই পাকা বাড়ি। নিকাশির সুযোগ থেকে বঞ্চিত ৩২ শতাংশ। আর এই সমস্ত মাপকাঠিতে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা বিচার করেই রাজ্যের ২১.৪৩ শতাংশ মানুষকে দরিদ্র বলে চিহ্নিত করেছে নীতি আয়োগ।

নীতি আয়োগের সূচক অনুযায়ী, রাঢ় বঙ্গের পুরুলিয়ার প্রায় অর্ধেক (৪৯.৬৯ শতাংশ) মানুষই দরিদ্র। তারপরে রয়েছে উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা। সবচেয়ে কম কলকাতায়, ২.৮ শতাংশ।

যদিও, ‘ভদ্রস্থ কাজের (ডিসেন্ট ওয়ার্ক) সুযোগ এবং আর্থিক বৃদ্ধির’ মাপকাঠিতে সারা দেশে ৫৬টি ডাকসাইটে শহরের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে কলকাতা। সবচেয়ে এগিয়ে বেঙ্গালুরু। বলছে নীতি আয়োগ। এই সূচকে বেঙ্গালুরু ১০০-তে পেয়েছে ৭৯। আর সেখানে কলকাতা সবার নিচে। ডাহা ফেল। ১০০-র মধ্যে নম্বর মাত্র তিন!

যতই জাঁক করে বড়াই করা হোক, নীতি আয়োগের সূচকে বেআব্রু শহর কলকাতায় ভাল কাজের সুযোগ ঠিক কতটুকু! সেইসঙ্গেই প্রকট আর্থিক উন্নতির বেহাল দশা। রাজ্যে নতুন শিল্প নেই। একের পর এক কারখানায় ঝাঁপ বন্ধ। বেকারত্ব হ্রাস, নতুন সংস্থায় কর্মসংস্থান, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের মতো ১২টি লক্ষ্যের ভিত্তিতে এতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই কলকাতা একশ’তে পেয়েছে তিন! গতবছরই প্রথম, নীতি আয়োগ প্রকাশ করেছে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’-র শহুরে সূচকে।

ক্ষুধা, দারিদ্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য, কেনাকাটা ও উৎপাদন, শিল্প-উদ্ভাবন-পরিকাঠামো, অসাম্য-সহ মোট ১৫টি মাপকাঠির বিচারেও সার্বিকভাবে শহর কলকাতা একেবারে শেষ সারিতে। শেষের ১০টি শহরের একটি। ৫৬টি শহরের মধ্যে কলকাতার স্থান ৪৮-তম। ১০০-তে পেয়েছে ৫৮.৫। যেখানে এই তালিকায় শীর্ষে থাকা সিমলা ৭৫.৫। দ্বিতীয় স্কোয়েম্বাটোর (৭৩)। তৃতীয় স্থানে তিরুবনন্তপুরম (৭২)। ‘জিরো হাঙ্গার’ বা ক্ষুধায় কলকাতার স্থান ৫৪। দারিদ্রেও একই জায়গায়, ৫৪। শিল্প-উদ্ভাবন-পরিকাঠামোয় ৩৭-তম। আর কেনাকাটা ও উৎপাদনে ৪৭-তম।

এক তথ্যশূন্যতার মধ্য রাজ্য। এই সংকট শুধু রাজ্যের নয়। দেশ-দুনিয়াতেও। তারমধ্যেই চলছে সাজানো তথ্য দেওয়ার প্রবণতা। বিকৃত তথ্যের পরিবেশন। কিংবা তথ্যকোষ হাপিস করে দেওয়ার ঘটনা। রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট, এসডিপি) সর্বশেষ তথ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থার (সেন্ট্রাল স্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন, সিএসও) কোনও মিল নেই। দিনের আলোর মতো স্পষ্ট রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনেকটাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো। রাজ্য সরকারের দাবিগুলি আসলেই পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বস্তুত, রাজ্যে কর্মসংস্থান, শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা, অথবা খাদ্য, নিরাপদ পানীয় জল থেকে বিদ্যুৎ, কিংবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিষেবা ক্ষেত্রের হালহকিকত— এককথায় অর্থনৈতিক অবস্থা কী, তা বোঝার কোনও উপায় নেই।

যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের রাজ্যের প্রকৃত চেহারা কী, তার কোনও তথ্য নীতি আয়োগকে আর পাঠায় না রাজ্য। বয়কটের নামে বেমালুম চেপে দিচ্ছে, আড়াল করে চলেছে। যোগ দেয়নি দেশের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির উন্নয়ন প্রকল্পেও। যেমন নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সাম্প্রতিক সূচকে দেশের মধ্যে শেষ সারিতে উত্তরপ্রদেশ। এবং বরাবরের মতো কেরালা একেবারে শীর্ষে, প্রথম স্থানে। পশ্চিমবঙ্গ কোথায় কেউ জানে না! কারণ তথ্যই পাঠায়নি।

রপ্তানিযোগ্যতার বিচারে রাজ্যগুলির মধ্যে ২২-নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২০ সালের জন্য নীতি আয়োগের প্রতিবেদন অনুসারে, উপকূলবর্তী আটটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সবচেয়ে শেষে, একেবারে অষ্টম! প্রথম তিনে যথাক্রমে গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাডু।

নীতি আয়োগের উদ্ভাবন তালিকায়ও প্রথম দশে নেই পশ্চিমবঙ্গ। দেশে কোন রাজ্য উদ্ভাবনে কতটা এগিয়ে, তা মাপতে ২০১৯ সালে কেন্দ্রের পরামর্শদাতা সংস্থা প্রথম ‘উদ্ভাবন সূচক’ প্রকাশ করে। সেবছর প্রথম দশের মধ্যে (৮) ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু গতবছরের জানুয়ারিতে দেশের ১৭টি বড় রাজ্যের মধ্যে নেমে গিয়েছে ১১ নম্বরে।

মাথাপিছু আয়ে (রাজ্যের নিট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ৩৩টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান একুশে।

কোথায় চলেছে রাজ্য?

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

Spread the word

Leave a Reply