Subverting Human Rights

মোদি সরকার সংবিধানের অধীনে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে অবমূল্যায়ন করছে এবং তাদের সারমর্মকে অস্বীকার করছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) ২৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে এটা আরো প্রকট হয়।

বার্ষিকী সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উভয়ই উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মানবাধিকারকে কীভাবে দেখা উচিত তার নিজস্ব বিকৃত সংস্করণ দিয়েছেন।তিনি বলেন:“কিছু লোক তাদের স্বার্থ অনুযায়ী মানবাধিকারকে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছে” এবং “মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন ঘটে যখন তাদের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির প্রিজম থেকে দেখা হয়”।

প্রকৃতপক্ষে,মানবাধিকারের এই সুবিধাবাদী নির্বাচন পদ্ধতিই মোদি শাসনের স্বরূপ প্রকাশ করে। এরা আদতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতির প্রিজম থেকে মানবাধিকারকে দেখে। এই একচোখামো দৃষ্টিভঙ্গিই শাসক ব্যবস্থাকে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের এবং দলিত ও আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বিষয়ে অন্ধ করে তোলে।

গণতন্ত্রের পরীক্ষা হল কিভাবে এটি বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের-ধর্মীয়, ভাষাগত বা জাতিগত- অধিকার রক্ষা করে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী শাসনকালে সংখ্যাগরিষ্ঠদের অধিকারই গুরুত্বপূর্ণ।

গণ হত্যা, শারীরিক হামলা, জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রাথমিক অধিকার থেকে বঞ্চনা কেন অনিয়ন্ত্রিত এবং প্রশ্নাতীতভাবে চলছে তার অন্য কোনও ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যুক্তি দিয়েছেন।সর্বশেষ উদাহরণ হল ইন্দোরের একটি কলেজে আয়োজিত গারবা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য চারজন মুসলিম ছাত্র ও যুবককে গ্রেপ্তার করা।

সুতরাং, মোদী যখন “মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন” নিয়ে কথা বলেন যখন তাদের “রাজনীতি এবং রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির প্রিজম” থেকে দেখা হয় এই কথা বলেন – এই অভিযোগটি সম্পূর্ণরূপে বিজেপি শাসিত কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির জন্য প্রযোজ্য।এটা সংকীর্ণ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের অধিকার খর্ব করার বিনিময়ে নিজেরা ফায়দা লুঠতে চায়।

Justice Arun Mishra

NHRC-এর বর্তমান চেয়ারম্যান শাসক দলের সাথে সম্পূর্ণভাবে রয়েছেন তা চেয়ারপার্সন, বিচারপতি অরুণ কুমার মিশ্রের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছিল, যিনি জম্মু এবং কাশ্মীরে ও এবং উত্তর-পূর্বে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের “নিরলস প্রচেষ্টা”কে কৃতিত্ব দিয়েছেন এবং যা নাকি “নতুন যুগের সূচনা করেছে”।

সাম্প্রতিক সময়ে যদি মাত্রা এবং তীব্রতা উভয় ক্ষেত্রেই মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন কোথাও হয়ে থাকে তবে তা জম্মু ও কাশ্মীরে হয়েছে, বিশেষ করে অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিল, রাজ্য ভেঙে ফেলা এবং নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করার পরে।জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যিনি ১৩ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৮ তম অধিবেশনে একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন যে “জম্মু ও কাশ্মীরে জনসাধারণের সমাবেশে বিধিনিষেধ এবং ঘন ঘন যোগাযোগ ব্ল্যাকআউট অব্যাহত রয়েছে। শত শত মানুষকে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য আটক করা হয়েছে এবং সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন”।তিনি ভারতে UAPA এর “উদ্বেগজনক” ব্যবহারও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছিলেন যে জম্মু ও কাশ্মীরে “দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা” রয়েছে।

এই মতামত, অবশ্যই, ভারত সরকারের মুখপাত্র দ্বারা খণ্ডন করা হয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে NHRC-এর প্রধানও সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন যেমন তার বক্তৃতায় বিচারপতি মিশ্র বলেছেন: “বহিরাগত শক্তির পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ করা সাধারণ প্রবনতা হয়ে উঠেছে এবং এর বিরোধিতা করা উচিত”।বিচারপতি মিশ্রের জন্য,রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সংস্থাটিও একটি বহিরাগত শক্তি যারা ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

এমন একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে, ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার অক্ষুন্ন রাখার জন্য NHRC-এর থেকে কী আশা করা যায়? বাস্তব হল যে হিন্দুত্ববাদী কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে, নাগরিকদের সমস্ত মৌলিক অধিকারের নিয়মতান্ত্রিক এবং বড় আকারে লঙ্ঘন হচ্ছে এবং এনএইচআরসিও এই শাসনকালের শিকার হয়েছে।

(১৭ অক্টোবর,২০২১ পিপলস্ ডেমোক্রাসির সম্পাদকীয়’র অনুবাদ)

Spread the word

Leave a Reply