Nutrition Cover

Shooting the Messenger: Adverse Health Trends Revealed in the NFHS (5) 2019-2021

উৎসা পট্টনায়েক

আমাদের দেশে জনসাধারণের শারীরিক পুষ্টিসূচকের গড় শেষ তিন দশক ধরে ক্রমশই নিচে নেমেছে। অবনমনের হার ধীর হলেও নিরবিচ্ছিন্ন রূপেই জারী রয়েছে। মনে রাখতে হবে ঐ তিন দশকই ভারতে নয়া-উদারবাদের জমানা। পাঁচ বছর অন্তর প্রকাশিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে মাথা পিছু প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ কমছে। এই সময়েই উচ্চ আয় সহ সমৃদ্ধ পরিবারগুলিতে ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। গড় পুষ্টি সূচকের অবনমন শুরু হয়েছিল গ্রামাঞ্চলে, পরবর্তীকালে শহর এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যায়। আমাদের দেশে জনসাধারণের জন্য শারীরিক শক্তি ও প্রোটিনের যোগানে অন্যতম হল দানাশস্য, বিশেষত ডাল। সাধারণ খাদ্যভ্যাসের দশ ভাগের মধ্যে নয় ভাগই হল এইসমস্ত দানাশস্য, গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের শরীরে প্রোটিন যোগানের তিন ভাগের দুভাগও এগুলিই। নয়া-উদারবাদী জমানার তিন দশক ধরে ঐসকল খাদ্যশস্যের মাথাপিছু পরিমাণ কমতে কমতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যার ফলে এই মুহূর্তে আফ্রিকা সহ পিছিয়ে থাকা অন্যান্য দেশের থেকেও আমরা পিছনে চলে গেছি। এই হিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে খাদ্য হিসাবে গৃহীত দানাশস্য ও প্রাণীজ প্রোটিন হিসাবে দুধ, ডিম ও মাংস ইত্যাদিকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঐ একই পর্বে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ‘প্রকৃত ব্যয়’ও ক্রমশ কমেছে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় মূল্যমানের ফারাক রয়েছে। তাই একটি দেশের ক্ষেত্রে খাদ্য খাতে মোট খরচকে সংশ্লিষ্ট পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি দ্বারা ভাগ করতে হয়। এর ফলে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে একই খাদ্যসামগ্রীর জন্য খরচের ব্যবধানকে এক সাধারণ মাপকাঠির ভিত্তিতে বিচার করা যায়। অতীতের বাজারমূল্যের তুলনায় আজকের পরিস্থিতিকে বুঝতে ঐ তিন দশকের কঞ্জিউমার্স প্রাইস ইন্ডেক্সকেও (ভোগ্যপণ্যের জন্য খরচের খতিয়ান) এই হিসাবের অন্তর্গত করা হয়। অর্থনীতির বিচারে এ এক অভূতপূর্ব প্রবণতা যখন মাথাপিছু জিডিপি’র সূচক ক্রমশ বেড়ে চলছে অথচ একই সময়ে খাদ্যসামগ্রীতে মাথা পিছু খরচের পরিমাণ কমছে। এর একটাই অর্থ। ভারতে শুধু যে আর্থিক বৈষম্য প্রবল আকার নিয়েছে তাই নয়, শারীরিক পুষ্টির বিচারে জনসাধারণের সিংহভাগই নিদারুণ দারিদ্র্যেরও শিকার।       

এমন ভয়ানক পরিস্থিতির পক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই নানাবিধ কুযুক্তির আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ বলছেন উৎপাদনের কাজে মেশিন, যন্ত্র ইত্যাদির বেড়ে যাওয়ায় নাকি শরীরে পুষ্টির চাহিদা আগের চাইতে কমে গেছে, কারোর বক্তব্য জীবনদায়ী ঔষধ, স্বাস্থ্যপরিষেবার উন্নতির ফলে জনসাধারণের গড় বয়স বেড়ে যাওয়ায় পুষ্টির সূচকে এমন পরিবর্তন ঘটেছে এমনকি ভারতীয়দের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশে অবস্থাটা কেমন? উৎপাদনের কাজে ভারতের চাইতে অনেক বেশি মেশিন, যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার করে এমন দেশসমূহে জনসাধারণের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ ও পুষ্টিসূচক দুইই অনেকটা বেশি, এটুকু মনে রাখলেই বোঝা যায় পেশ করা ঐসকল যুক্তি আসলে শয়তানির মুখোশ। জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রতিবেদনে (২০১৯-এ প্রকাশিত) উল্লেখ ছিল দানাশস্য ও প্রাণীজ উৎসকে খাদ্য হিসাবে একসাথে বিবেচনা করলে ভারতে মাথাপিছু পরিমাণ ১৭১ কেজি। বাকিরা কে কোথায় রয়েছে? আফ্রিকায় সেই পরিমাণ ১৯০ কেজি, পিছিয়ে থাকা অন্যান্য দেশসমূহে ২০৫ কেজি। মাথা পিছু ৩০৪ কেজি খাদ্যকে আন্তর্জাতিক গড় হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। চীন ও ব্রাজিল দুদেশেই গড় ৩৬০ কেজি, রাশিয়ায় ৪০৭ কেজি। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ শিল্পউৎপাদনের প্রধান অঞ্চল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হিসাব প্রায় ৪৯৪ কেজি। আমেরিকা সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে, সেদেশে মাথা পিছু ৫৯০কেজি খাদ্য লাগে। মনে রাখা দরকার জাতি সংঘ এসমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেনি, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের তরফেই পেশ করা হয়েছে। ক্ষুধা সূচকের ভিত্তিতে ১২১টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১০৭ নম্বরে।            

ভোগ্য পণ্যের জন্য ভারতীয় পরিবারগুলির তরফে প্রকৃত ব্যয় ঠিক কত, আগে কেমন ছিল আর এখন কোন অবস্থায় রয়েছে এসব জানতে জাতীয় নমুনা সংগ্রহের তথ্যই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। ২০১৭-১৮ সালে সংগৃহীত তথ্যসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন গতবছর অবধি সংস্থার পোর্টালেই সর্বসাধারণের জন্য লভ্য ছিল। সেই প্রতিবেদন থেকেই জানা যায় ২০১১ সালে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে তুলনা করে ২০১৭-১৮’র পর্বে পণ্য ও পরিষেবা খাতে ভারতীয়দের প্রকৃত ব্যয় ক্রমশ কমেছে। এমনকি সেই অধোগতি তিন দশক ধরে চলা নিরন্তর অবনমনের হারকেও ছাপিয়ে গেছে। নয়া-উদারবাদী জমানার তিন দশকের অন্য কোনও পর্বে এমন ঘটতে দেখা যায়নি।

সরকারের নির্দেশে সম্প্রতি ওয়েবসাইট থেকে ঐ প্রতিবেদনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জরুরী তথ্যসমূহ জানতে জনসাধারণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার এমন ঘটনাও অতীতে ঘটেনি।  

এমন জঘন্য পরিস্থিতির মাঝেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ মুম্বইয়ের ইন্টারন্যশানাল ইন্সটিটিউট অফ পল্যুলেশন সায়্যেন্সেস’র অধিকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সংস্থাটি ঠিক কি করে? জাতীয় স্তরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমীক্ষার দায়িত্ব এদেরই। সেই কাজেই পঞ্চম সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯-২১ পর্বে। এর আগের সমীক্ষায় (চতুর্থ, ২০১৫-১৬) প্রাপ্ত তথ্যের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে শেষ পাঁচ বছরে আমাদের দেশে মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসূচক ক্রমশ খারাপ অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। এই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের মেজাজ বিগড়েছে, কোনোরকম কারণ না দেখিয়েই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত সংস্থায় অধিকর্তা হিসাবে তিনি জ্ঞান ও সত্যনিষ্ঠ বলেই সুপরিচিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে চায় না, তিনি সেই সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন। 

দেশের জনসাধারণের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চিত্রটি উপলব্ধি করতে কেবল পুষ্টি সূচকের ভরসা করলে চলবে না, গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় রয়েছে। নাগরিক জীবনের বিবিধ হাল-হকিকতের ভিত্তিতে সেই কাজ এগোয়। পরিশ্রুত পানীয় জলের পর্যাপ্ত সুযোগ, মশা, শামুক ও কৃমিবাহিত বিভিন্ন রোগসমূহের নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ, জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় যথোপযুক্ত পরিকাঠামো সহ বর্জ্য নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত এসবই বিবেচনায় রাখতে হয়। এমনসব জরুরী বিষয়গুলির বেশ কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো ভারতও  ধীর গতিতে এগিয়েছে। কিন্তু পুষ্টি, উপযুক্ত পরিমাণ আহার ইত্যাদির উপরে জনস্বাস্থ্যের বেশ কিছু সূচক সরাসরি নির্ভর করে বলে ঐ সকল ক্ষেত্রে অবস্থার অবনতি হলে জনসাধারণের সার্বিক জীবনযাত্রায় অধোগতিই চিহ্নিত হয়।

২০১৫-১৬ সালের চতুর্থ সমীক্ষার (এনএইচএফএস-৪) সাথে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে ২০১৯-২১ (এনএইচএফএস-৫) সালে শিশুমৃত্যুর হারে যৎসামান্য উন্নতি হয়েছে। এক্ষেত্রে যা বিশেষ উদ্বেগজনক তা হল আগের তুলনায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ নাগাদ পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা আক্রান্তের হার ছিল ৫৯ শতাংশ, তা বেড়ে ৬৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে। একইসময়ে সামান্য সমস্যা থেকে গুরুতর রক্তাল্পতার গড় হার ৩০.৬ শতাংশ থেকে ৩৮.১ শতাংশ ছুঁয়েছে। মাঝারি রক্তালপ্তার ঘটনা প্রায় একই রয়েছে, আগের সমীক্ষায় যা ছিল ২৮.৪, শেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী তার হার ২৮.৯ শতাংশ।     

প্রাপ্তবয়স্কদের অবস্থাটা কেমন? ৪৯ বছর বয়স অবধি মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার ছিল ৫৩ শতাংশ, যার মধ্যে ২৮.৪ শতাংশের মাঝারি থেকে গুরুতর অ্যানিমিয়া ছিল। পরবর্তী সমীক্ষায় সেই হার ৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে, এর মধ্যে ৩১.৪ শতাংশই মাঝারি থেকে গুরুতর রক্তাল্পতার শিকার। মাঝারি থেকে গুরুতর রক্তশূন্যতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। ৪৯ বছর বয়স অবধি পুরুষদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার আগে অনেকটাই কম ছিল। ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে তা এখন ২৫ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে মাঝারি থেকে গুরুতর অ্যানিমিয়ায় আক্রান্তের হার ৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ শতাংশ। রক্তাল্পতার জাতীয় গড়ের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার হারও বেশি। ইতিমধ্যে যাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কম এমন মায়ের ক্ষেত্রে শিশুদেরও রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হয়। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল সরকার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল, বাস্তবে সরকার যা করছে তাকে নিছক তথ্য গোপন ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।

শিশুদের ক্ষেত্রে পুষ্টি সম্পর্কিত সমীক্ষার ফয়ালফল প্রত্যাশার চাইতেও খারাপ। ২০১৫-১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ৫ তার চাইতে কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৬ শতাংশের বয়সের অনুপাতে ওজন এবং ৩৮ শতাংশেরই শারীরিক উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে কম ছিল। ২০১৯-২১ পর্বের পঞ্চম সমীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে, কম ওজনের হার কমে হয়েছে ৩২ শতাংশ এবং বয়সের অনুপাতে উচ্চতা কম থাকার সমস্যা রয়েছে ৩৬ শতাংশ শিশুর। অর্থাৎ অবস্থার উন্নতি হয়েছে খুবই সামান্য। বেশিরভাগ রাজ্যেই সংশ্লিষ্ট গড় সূচক রীতিমত দুশ্চিন্তার কারণ। সারা দেশের মধ্যে পাঁচটি রাজ্যের তুলনামূলক ভালো অবস্থাকে অন্যদের সাথে একত্রে বিবেচনা করা হয়েছে বলেই শিশুদের পুষ্টির চিত্রে সারা দেশের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা এগিয়েছে। অপুষ্টিযুক্ত শিশুদের ভিত্তিতে পিছিয়ে থাকা প্রদেশসমুহে যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।   

ভারতে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে বলে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন দাবীর পিছনে ভিত্তি কি? বিগত ৭০ বছর যাবত দারিদ্র্যের অবস্থা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে স্বীকৃত কোনও পদ্ধতিই তারা অনুসরণ করেননি, নিজেদের মতো করে বিভিন্ন মাপকাঠি, সূচক ইত্যাদি নির্ধারণ করেছেন। সরকার নির্ধারিত এই পদ্ধতিতে পুষ্টির গুরুত্ব স্বীকৃত পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত গুরুত্বের ছ-ভাগের এক ভাগ। ব্যংক ব্যালেন্স শুন্য হলেও তাকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে, বসতি এলাকায় নলবাহিত জলের সুযোগ রয়েছে কিনা (সেই জল পানীয় হিসাবে আদৌ যোগ্য কিনা তা বিবেচ্য না), ঝুপড়ি ইত্যাদির মাথায় চালা হিসাবে কিসের ব্যবহার করা হয়েছে এসবই হল নয়া সরকারী পরিসংখ্যানের ভিত্তি। নয়া বিধি অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির বডি মাস ইন্ডেক্স ১৮.৮ বা তার নিচে না গেলে তার শরীরে অপুষ্টি রয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে না। মোদী সরকার নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে শিল্পোন্নত দেশগুলিতে কার্যত কোনও দারিদ্র্যই খুঁজে পাওয়া যাবে না।        

ভারতের মত একটি দেশ, যেখানে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে জনসাধারণের শরীরে পুষ্টির গুরুতর অভাব রয়েছে সেখানে বডি মাস ইন্ডেক্সের মত অনুপাতকে খুবই সতর্কতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক উল্টোটাই করেছে, পরিসংখ্যানের স্বীকৃত পদ্ধতি কিংবা বহুপরিক্ষিত সূচকসমূহেই তাদের গভীর অনাস্থা- তাই তারা সেসব এড়িয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের এক বিরাট অংশই বয়সের অনুপাতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন এবং কম উচ্চতার শিকার। শারীরিক বিকাশের এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চিহ্নিত করতে কোনও সূচকই ব্যবহৃত হয়নি। বডি মাস ইন্ডেক্স আসলে একটি অনুপাত, যা কোনও ব্যাক্তির ওজনকে (কেজি হিসাবে বিবেচিত) তার উচ্চতার (মিটার হিসাবে বিবেচিত) বর্গ দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়। ভারতে এক বিরাট অংশের মানুষই হয় কম ওজন নয়তো কম উচ্চতা অথবা দুটিতেই আক্রান্ত। তাই অনুপাতটি সুস্থ শরীরে যেমনটা হওয়া উচিত তার চাইতে অনেক্ষেত্রেই কম হবে এবং তাকেই স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।   

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কত কম পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ স্বত্বেও সুস্থ থাকতে পারেন? ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’কে এমন গবেষণায় সসব্যস্ত রাখা হচ্ছে। এমনই নির্দেশ এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে নিজেদের স্বার্থে কতদুর নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন কাজে তারই অন্যতম জঘন্য একটি উদাহরণ মেলে।

এই প্রবন্ধের পাঠকবৃন্দের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। পরিসংখ্যান বিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য, শারীরিক পুষ্টি ইত্যাদি নির্ধারণে স্বীকৃত যাবতীয় সূচক বাতিল করে দিয়ে যে কায়দায় নিত্য-নতুন মাপকাঠি চিহ্নিত হচ্ছে, ‘ভারত দারিদ্র্যশুন্য হয়েছে’ বলে সরকারী ঘোষণাটি হয়ত শীঘ্রই কানে আসবে।   

অনুবাদ- সৌভিক ঘোষ

মূল প্রবন্ধটি ‘Shooting the Messenger: Adverse Health Trends Revealed in the NFHS (5) 2019-2021’ শিরোনামে পিপলস ডেমোক্র্যাসি পত্রিকার ৭-১৩ই আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশিত

Spread the word

Leave a Reply