সৌভিক ঘোষ
গত পর্বের মূল কথা
আদানিদের ব্যবসা যে আগাগোড়া মিথ্যার বেসাতি, হিন্ডেনবার্গ সেটুকুই বলেছে। আমরা বলছি এসবই তো জানা কথা। ফিন্যান্স পুঁজি দেশের সীমার এদিক ওদিক করতে বাধাহীন ক্ষমতার দাবী করেছিল এই জন্যই। যতক্ষণ মুনাফা ততক্ষণই পুঁজি একটি নির্দিষ্ট দেশের বাজারে থাকবে, এতটুকু বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিলেই সে তুরন্ত অন্যত্র চলে যাবে- এটাই আধুনিক সভ্যতার সবচাইতে অসভ্য বন্দোবস্তের সার কথা। এই লক্ষ্যেই বিকাশের ঢাকঢোল, এই উদ্দেশ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ক্যাশলেস ইকোনমি। বাকি সব ছাইপাঁশ। দেশের মানুষের পেটে খাবার জুটুক আর নাই জুটুক, কর্মসংস্থান হোক আর নাই হোক, পুঁজির এসবে কোনও দায় নেই- সেইটুকু নিশ্চিত করতেই তারা আমাদের দেশে চরম সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সমর্থন জানিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছাড়া যাদের আর কিছুই দেওয়ার নেই- তারাও আর কোথাও ঠাঁই না পেয়ে এমন লুটেরা পুঁজির ধামধরা হয়েছে।
ধান্দার ধনতন্ত্র কি?
ধ্রুপদী পুঁজিবাদ বিকশিত হয়ে ওঠার পর্বটি নিজের চোখে দেখেছিলেন মার্কস। তখন ছিল সেই ব্যবস্থার যৌবনকাল। অভিজাত সামন্তসমাজকে প্রতিদিন টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে তৎকালীন ক্যাপিটালিজম। সামন্তসমাজের সমস্ত মূল্যবোধই সেকেলে, অচল বলে চিহ্নিত হচ্ছে- বদলে যাচ্ছে সামাজিক (উৎপাদন) সম্পর্ক। সেই সময়েই মার্কস চিহ্নিত করেছিলেন, দার্শনিক-অর্থনৈতিক-গাণিতিক যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ দিয়েছিলেন উদীয়মান সভ্যতার নিগড়ে মুনাফার প্রতি যে অন্তহীন লালসা মুখ লুকিয়ে রয়েছে, একদিন সেই লোভই দাঁত-নখ বের করে সবটুকু গিলে খেতে আসবে। মার্কসের রচনা ‘পুঁজি’ গ্রন্থকে ‘ম্যাগনাম ওপাস’ বলার কারণ এটাই।
সেই পুঁজিই সময়ের সাথে ক্রমশ সাহসী হয়েছে- মার্কেন্টাইল ক্যাপিটাল পরিণত হয়েছে একচেটিয়া পুঁজিতে। লেনিন দেখালেন মুনাফার তাড়নায় আতুর ব্যাঙ্ক পুঁজি ও শিল্প পুঁজি একে অন্যের সাথে মিলেছে, মাথাচাড়া দিয়েছে লগ্নী পুঁজি। সেই পুঁজিরই গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অবধি পৃথিবীতে মানুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের সবচাইতে জঘন্য হাতিয়ার ছিল সেটাই। হিটলার-মুসোলিনির ঐতিহাসিক পর্বটি দুরমুশ করে দেয় লালফৌজ। এর পরে কিছুদিনের জন্য জনকল্যাণকারী রাষ্ট্রের আড়ালে গা-ঢাকা দেয় পুঁজিবাদ। এমন একটা ভাব নেয় যেন তা নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছে, আর তাই ‘দেয়ার ইজ নো অল্টারনেটিভ’।
এখানেই নিও-ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের প্রসঙ্গ। তারা নতুন বোতলে অনেকটাই পুরানো বিষ ভরে চালান করে দিলেন। প্রতিযোগিতা না থাকলে উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ হয় না, মানুষ কখনো সন্তুষ্ট থাকতে পারে না ইত্যাদি বলে বুঝিয়ে দেওয়া হল মুনাফাই যদি না থাকে তবে নাকি উৎপাদন হবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপর্যয় হল, পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি দ্রুত পোশাক বদলে শিবির পাল্টে ফেলল। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা লিখে ফেললেন- ইতিহাস বলে আর কোনও কিছুর প্রয়োজন রইল না, মানুষের জন্য পুঁজিবাদই হল সর্বশেষ সমাজকাঠামো। নয়া জমানার নামে কায়েম হল নয়া-উদারঅর্থনীতি।
এই বন্দোবস্তের গোড়ার কথা- দেশের সীমানা পেরিয়ে পুঁজি লগ্নী হবে যেকোনো বাজারে, যেকোনো ক্ষেত্রে এবং যেকোনো সময়ে। মুনাফার সুযোগ পেলে সেই লগ্নী রাতারাতি অভ্যন্তরীণ বাজারে ঝড় তুলবে, বিনিয়োগ ঢুকবে। এতটুকু বিপদের লক্ষণ দেখা দিলেই রাতারাতি পুঁজি অন্য দেশে, অন্য বাজারে সরে যাবে। যারা কাজ করছিলেন, আচমকা চাকরি হারিয়ে তাদের কি হবে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। বিনিয়োগ চালু থাকার সময়তে তারা বাজারে যে ভয়ানক অস্থিরতা তৈরি করে দিয়ে গেল (আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি সহ অন্যান্য প্রভাব) তার কোনও দায় সেই পুঁজি নেবে না। এমনকি বাজার দখল করতে বিরাট কলেবরের পুঁজির জোরে আশ্চর্যজনকভাবে কম দামে ‘মাল’ বেচে তারাই যে সমস্ত দেশীয় (ইন্ডিজিনিয়স) ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগের ভিটেমাটি চাটি করে দিয়ে গেল, তাদেরই বা আগামীদিনে কি ভবিতব্য এসব ভাবাও হবে পাপ।
আমরা একথা অনেক আগেই বলেছি। ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলেই উল্লিখিত রয়েছে- International finance capital led neo-liberalism has consolidated the process of widening income and wealth inequalities. This is an indicator of the consolidation of neo-liberalism’s objective of maximization of profits. As noted by the 22nd Congress, neo-liberalism has proven its bankruptcy in providing any solution for the economic crisis, that its policies and prescriptions caused in the first place. On the contrary, its singular focus on profit maximization is only further exacerbating the crisis. However, utilizing the situation created by the global pandemic, it is seeking its further consolidation. The stimulus packages it has designed continue to enrich the rich, creating conditions for strengthening the grip of global finance capital not only over the economy but also in shaping the political dispensations in many countries that favor aggressive neo-liberal policies.
[Paragraph No: 1.9; Global Finance: 23rd Congress Political Resolution of CPI(M)]
এমন শাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ কথা না।
এর জন্যই প্রয়োজন এমন একটা জাতীয় সরকার যারা আন্তর্জাতিক লগ্নী-পুঁজির সামনে শুধু মাথা ঝুঁকিয়ে চলবে তাই নয়, এহেন সরকারকে দিয়েই শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে যাবতীয় আইন বাতিল করে দেওয়া হবে, দেশের যাবতীয় খনিজ ও বনজ সম্পদ জলের দরে বেচে দেওয়া হবে। লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলিকেও যেন-তেন-প্রকারেন বেসরকারি মালিকানায় ঠেলে দেওয়া হবে। সরকারের বিভিন্ন আসনে কারা বসবে পুঁজিই সেসব নিয়ন্ত্রণ করবে, নির্ধারণ করবে।
আর এসবের উদ্দেশ্য একটাই মুনাফা, পরে আরও মুনাফা, তারপরে আরও আরও মুনাফা।
সোজা কথায় লুঠ। তাই ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ মানে শুধুই ‘ধান্দার ধনতন্ত্র’ না। এই পুঁজিবাদ যাবতীয় অবগুণ্ঠন ছিঁড়ে ফেলে পুনরায় নিজের লুঠেরা চরিত্রকে সামনে এনেছে। তাই ‘ক্রোনি’ শব্দের আজকের অর্থ বুঝতে হবে ‘লুঠেরা’।
মার্কস যেটুকু বলে গেছেন
আজকের দুনিয়ায় এমন শাসন প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় লাতিন আমেরিকায়- চিলিতে। এই অর্থনীতির প্রভাব ক্রমশ আমাদের পুনঃস্মরণ করতে বাধ্য করে সেই অবস্থাকে যার ব্যখায় কার্ল মার্কস ‘পুঁজির আদিম সঞ্চয়’ শব্দটি প্রয়োগ করেছিলেন। পুঁজি থাকলে তবেই তা বিনিয়োগ হবে, তার থেকে উদ্বৃত্ত তৈরি হবে যা আসলে মৃত শ্রম যাকে চুরি করে পুঁজিপতির সম্পদ ক্রমশ বাড়বে অন্যদিকে সমাজে নির্বিত্ত, সর্বহারা শ্রেণির অন্তর্গত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে- এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু প্রাথমিক পর্বে পুঁজি এল কি করে- পুঁজিবাদের সমালোচনায় এটাই মার্কসের অতি গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার।
দেখা যাক সেই ধাঁধাটি কেমন এবং মার্কস কীভাবে সেই প্রশ্নেরও সমাধান করলেন।
কিছুটা ধীর কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন পথে ক্রমশ একটা বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হবার সময়েই একটা প্রকল্পনা (হাইপোথিসিস)-কে পুঁজিবাদ নিজের জন্মরহস্যের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। অথচ লোকঠকানো ব্যবসার গোড়াতেই সেই বিরাট গলদটি রয়ে গেছে। চক্রাকার পরিচলনের পথে যাকে সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না তা হল- প্রথমে জন্ম নিল কে, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা নাকি পুঁজি নিজেই? কারন পুঁজি, পুঁজির বিনিয়োগ এবং জমি ও শ্রমশক্তি সম্বলিত পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যাবস্থা না থাকলে উদ্বৃত্ত মূল্য (যার একটি পরে আবার নিজেই পুঁজি হয়ে ওঠে) সৃষ্টি হতে পারে না। আবার পুঁজি বিনিয়োগ না করা হলে সবার প্রথম ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাটা গড়ে ওঠে কীভাবে? এই চক্রাকার চরিত্রের ঘূর্ণাবর্তে জনসাধারণের মাথাটা গুলিয়ে দিতে পারছে বলেই পুঁজিবাদ নিজেকে বহুবিধ সংকট সত্বেও একটা বিশ্বব্যবস্থা হিসাবে টিকিয়ে রাখতে পারছে। মানুষের মনে কিছুটা হলেও এই ধারণা ঢুকিয়ে দিতে পারছে পুঁজি, মুনাফা এসব মানুষের চেতনায় শুরু থেকেই রয়েছে অতএব মুনাফার সংস্কৃতি – ভোগবাদী সংস্কৃতি এসব মানুষের নিজস্ব অস্তিত্বের মতোই জায়েজ! অন্যের প্রাপ্য চুরি করে নিজে ভালো থাকার ভাবনা মানুষের প্রবৃত্তিগত। মার্কস উপ্লব্ধি করেছিলেন পুঁজিবাদ শুধুই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা না, পুঁজিবাদ একটা সংস্কৃতি – একটা দর্শন। তাই তাকে ভাঙবার, বদলে দেবার লড়াইটাও শুধু অর্থশাস্ত্র সম্মত পথে করলে চলবে না, দুনিয়া বদলের নিজস্ব দর্শন নির্মাণ করতে হবে, নতুন সমাজের উপযুক্ত নতুন মানুষের জন্য প্রয়োজন হবে নতুন সংস্কৃতির।
মুনাফাকে জায়েজ প্রতিপন্ন করতে পুঁজিবাদের নিজস্ব যুক্তির পুরোটাই আগাগোড়া একটা বিরাট মিথ্যা। পুঁজি আছে এবং পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার সাহায্যে সেই পূঁজির চক্রাকার সঞ্চালনায় আজকের সভ্যতার মেরুদণ্ড অর্থাৎ মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলতে ধনতন্ত্রের রৈখিক পথকে অবরোহী যুক্তির (Step Down Approach) সাহায্যে ব্যাখ্যা করলেন মার্কস। কিন্তু বিনিয়োগযোগ্য সেই প্রথম পুঁজি কোথা থেকে এল? এখানেই মার্কসের দার্শনিক অনন্যতা – ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারনার সাথে অর্থশাস্ত্রের যুক্তির অমোঘ শরচালনার যৌথ আক্রমন। পুঁজিবাদ নিজেকে সমাজের গতিধারায় অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে তুলে ধরতে চায়, ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী পৃথিবীর বেশিরভাগ সম্পদের অধিকারী কতিপয় ধনীর মুঠোয় অথবা যোগ্যতমের প্রাপ্য এসব বলে তারা আসলে মুনাফা নির্ভর মানুষখেকো ব্যবস্থাটাকেই কায়েম রাখতে চায়। এমন মহান ইচ্ছাকেই রাজনীতির ভাষায় কায়েমি স্বার্থ (Vested Interest) বলে। কার্ল মার্কস ঈশ্বরের ইচ্ছায় বেশিরভাগ মানুষের নরকভোগ মেনে নিতে চান নি। তার আবিস্কারের সাফল্য সেখানেই। বিনিময়যোগ্য পুঁজি থেকে উদ্বৃত্ত মূল্য আহরন যে আসলে বহুজনের শ্রমশক্তির ন্যায্য বিনিময় মূল্য চুরি করে গড়ে ওঠে শুধু এটুকু বুঝলেই মার্কস পুরোটা বোঝা যাবে না। মার্কস ওখানেই থেমে থাকেন নি, তেমনটা হলে তার নাম শুধু এক মহান পন্ডিত হিসাবেই চিহ্নিত হত। তার শিক্ষা পণ্ডিতম্মন্যতার সিমানা পেরিয়ে বিপ্লবী স্তরে পৌঁছে যায় যখন তিনি দেখিয়ে দেন পুঁজি সঞ্চয়ের প্রাথমিক প্রক্রিয়াই হল দুনিয়াজূড়ে রক্তস্নাত লুঠতরাজ। এখানেই মার্কসীয় প্রজ্ঞায় আরোহী যুক্তির (Step Up Approach) প্রয়োগ। ধনতন্ত্রের মুখোশ টেনে ছিড়ে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন দুনিয়াজূড়ে সম্পদ লুঠ করেছে প্রাক পুঁজিবাদী সমাজের লুঠেরা নেতৃবর্গ এবং দুহাতে রক্তমেখে সেই লুটের টাকাতেই পুনিবাদের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি প্রমাণ করলেন পূঁজির আদিমতম সঞ্চয় কোন পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার ফলা না বরং ঠিক তার উল্টো – পুঁজি ছিল বলেই ধনতন্ত্র নির্মিত হতে পেরেছে। সেই নির্মাণের ভিত দুনিয়াজূড়ে অসংখ্য অসহায় মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে পোক্ত হয়েছে। এই মহাপাপ থেকে পুঁজি এবং পুঁজিবাদ কারোরই মুক্তি নেই – কখনো হবে না। যে ব্যবস্থাটা নিজেই নিজের নামে ঢাক পিটিয়ে প্রচার করছে There is no alternative – সম্পদ সৃষ্টির মহান ও পবিত্র কর্তব্য সম্পর্কে নিজেদের উপরওয়ালার প্রেরিত দূত বলে বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা আসলে ছিল খুনি লুঠেরা- এখন হয়েছে চোর।
অতিদ্রুত নিজেকে একটি বিশ্বব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পুঁজিবাদের উল্লেখযোগ্য পূর্বশর্ত ছিল ক্রমবর্ধমান ‘পূঁজির আদিম সঞ্চয়’, এর পিছনে দুইপ্রকার জবরদস্তির ভূমিকা রয়েছে। প্রথমটি হল ইংলন্ডে জোরপূর্বক কৃষিজমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হল, তাদের গায়ের জোর খাটিয়ে সর্বহারায় (প্রলেতারিয়েত) রূপান্তরিত করা হল, তার সাথে যুক্ত হল অনেক আগেই চার্চের থেকে কেড়ে নেওয়া বিরাট পরিমানের জমি – যা বাড়তি পুঁজি হিসাবে ব্যবহারযোগ্য ব্যাক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল। আদিম সঞ্চয়ের নির্মাণে এটাই ছিল অভ্যন্তরীণ কারন। দ্বিতীয়টি বাইরে থেকে শক্তি যুগিয়েছিল, ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের মাধ্যমে যার সুত্রপাত ঘটে। ঔপনিবেশিক বন্দোবস্তের ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে ইংলন্ডে সম্পদ আহরিত হতে থাকে।
মার্কস লিখছেন-
‘আমেরিকায় সোনা ও রুপা আবিষ্কৃত হওয়া, সেখানকার আদিবাসীদের প্রথমে উচ্ছেদ ও পরে দাসে পরিণত করার মাধ্যমে খনির অন্ধকারে সমাধিস্থ করে, ভারত ও পূর্ব-এশিয়াতে লুঠতরাজ চালিয়ে এবং কালো চামড়ার মানুষদের ব্যবসার পণ্যে পরিণত করতে আফ্রিকাকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের মাধ্যমেই পুঁজিবাদের গোলাপবিছানো ঊষালগ্নের সুত্রপাত। পূঁজির আদিম সঞ্চয়ে প্রাণ সঞ্চারিত করতে প্রধান উপায়গুলি ছিল এমনই সব মনোরম প্রক্রিয়া’।
(ক্যাপিটাল ১ম খন্ড, ডোনা টর সম্পাদিত, পৃষ্ঠা – ৭৩৬-৭৩৯)
ইংরেজরা ভারতে কি কি করেছে তার বর্ণনায় এর পরেও প্রায় গোটা একটি পাতা ব্যয় করেছেন মার্কস, উপনিবেশগুলিতে চলতে থাকা লুঠতরাজ প্রসঙ্গে নিজের সাধারণ মতামতকে বহুবিধ নির্দিষ্ট তথ্যের উদাহরণ সহ ফুটিয়ে তুলেছেন।
মার্কসের রচনায় পূঁজির আদিম সঞ্চয় প্রসঙ্গে সহায়ক বহিঃস্থ শর্ত হিসাবে নির্লজ্জ লুঠতরাজের বিষদ বিবরণ থাকা স্বত্বেও, ইউরোপীয় মার্কসবাদীরা ঔপনিবেশিক লুঠের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দেন নি। সেই তুলনায় পুঁজি সঞ্চয়ের আদিম কৌশল ব্যখ্যায় মার্কস বর্ণিত অভ্যন্তরীণ কারণটিকেই তারা বড় করে দেখিয়েছেন। আমেরিকাতে স্প্যানিশদের লুঠতরাজ সম্পর্কে মার্কস যথেষ্টই অবহিত ছিলেন, তাই এটা আন্দাজ করলে খুব ভুল হবে না যে ১৮৫৩’র পর ভারত থেকে ব্রিটেনে লুঠ করে পাচার করা সম্পদের বিষয়টি তাঁর নজর এড়িয়ে যায় নি। সেই সময় মার্কসের বিভিন্ন লেখায় ব্রিটিশ অর্থনীতির কবলে থাকা ভারতে চলতে থাকা লুঠের কথা প্রকাশিত হয়েছে। ব্রিটেনের স্বৈরাচারী শাসনও তখন ভারতের বাজারকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসতে চাইছে। ১৮৫৯ সালে মার্কস স্পষ্ট করেই উল্লেখ করলেন ১৮৫৮ সাল নাগাদ চীনের সাথে ব্রিটেনের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি, যা তারা পুষিয়ে নিয়েছিল চীনে ৯ মিলিয়ন পাউন্ডের আফিম ও তুলার রপ্তানি মারফৎ। এই সম্পদের সবটাই উদ্বৃত্ত হিসাবে ভারত থেকে আহরিত করা হয়।
১৯৫৯ সালে মস্কো থেকে প্রকাশিত ‘ক্যাপিটাল’ (৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ২৬৯-৭০) উল্লেখ রয়েছে ১৮৫৫ নাগাদ ভারত থেকে নজরানা বাবদ ব্রিটেনের আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় মরিস ডব যেমনটা ধরে নিয়েছিলেন, ইংলন্ডে পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও পুঁজি সঞ্চয়ের আদিম পন্থাটি আদৌ বন্ধ হয় নি, তৎকালীন পুঁজিবাদী শাসনের অঙ্গ হিসাবেই তারা ধারাবাহিকভাবে সেই কৌশল প্রয়োগ করে চলেছিল। মার্কস আরও লিখেছেন, এহেন নজরানার পরিমাণ পরে আরও বেড়ে যায়। ১৮৮১ সালে ড্যানিয়েলসন’কে লেখা মার্কসের চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘কৃতজ্ঞতা স্বরুপ ভারতীয়রা প্রতি বছর ইংলন্ডে বহুল পরিমানে সম্পদ পাঠিয়েই চলেছে – সেদেশে কৃষিকাজ ও শিল্পগুলিতে খেটে চলা ষাট মিলিয়ন মজদুরদের মোট রোজগারের থেকেও সেই নজরানার পরিমাণ বেশি’।
মার্শাল থেকে শুরু করে স্মিথ অবধি অর্থশাস্ত্রীরা এই সত্যটুকু উন্মোচন করতে পারেন নি, ব্যার্থ হয়েছিলেন- হয়ত সেই অনুশোচনা থেকেই অ্যাডাম স্মিথ তার বইতে পুঁজিবাদের স্বরুপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘অদৃশ্য হাত’ বলে থেমে যান, আর এগোন না। মার্কস এদের কারোর অমর্যাদা করেননি, এদের মতামতের সীমাবদ্ধতাই তুলে ধরেছিলেন যথাযোগ্য মূল্যায়ন সহ।
অর্থশাস্ত্র এবং ইতিহাস, জ্ঞানচর্চার দুটি বিজ্ঞানকেই আরও শক্তিশালী করলেন মার্কস, এগিয়ে দিলেন সামনের দিকে। জ্ঞানচর্চার স্বাভাবিক পদ্ধতিই হল মূল সমস্যার সমাধানে প্রথমে খণ্ড খণ্ড বিভিন্ন সমস্যার উত্তর খোঁজা পরে সেই সকল উত্তরকে একজায়গায় এনে একটি যথাযথ সংশ্লেষে মূল সমস্যার নিরসন। মার্কস সেই কাজটাই করেছিলেন। অর্থশাস্ত্রের একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে যা পেলেন তাঁকে প্রয়োগ করলেন ইতিহাসে আরেক প্রশ্নের সমাধানের লক্ষ্যে – সফলও হলেন। প্রায় কবর খুঁড়ে বের করে আনলেন পুঁজিবাদের ফসিল হয়ে যাওয়া রক্তপিপাসু, লুঠেরা চরিত্রকে। সম্পদ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান এবং আধুনিক সভ্যতার নির্মাণ সবকিছুই পুঁজিবাদ করেছে ঠিকই – কিন্তু এই কাজ করার একমাত্র লক্ষ্য থেকেছে মুনাফা। দুনিয়াজূড়ে লুঠ চালিয়ে, দুহাতে রক্ত মেখে জমা করা অর্থের পাহাড় ভেঙ্গেই আজকের ধনতন্ত্রের সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে- কোন বিশেষ যোগ্যতা না, ওরা সোজাসুজি মানুষ খুন করেছিল। পুঁজি গ্রন্থের প্রথম খন্ডের অষ্টম ভাগে ছাব্বিশ নম্বর অধ্যায়ের নাম ‘The Secret of Primitive Accumulation’। তখনকার Primitive Accumulation আজকের দিনে ফিন্যান্সিয়ালাইজেশন। ফিন্যান্সিয়ালাইজেশন অফ ফিন্যান্স। লগ্নী পুঁজির অতিকেন্দ্রীভবন- অর্থাৎ মুনাফার একচেটিয়া কর্তৃত্ব।
আর তাই পুঁজিবাদ এবং জনকল্যাণ আজও পৃথিবীর বুকে চেপে বসা এক বিরাট oxymoron ব্যাতিত আর কিছুই না।
মোদীর শাসন
নয়া-উদারনীতি পর্বে কোনও দেশের সরকারের চেহারা সম্পর্কে ইতিমধ্যে উল্লেখ করা প্রতিটি বৈশিষ্টই ভারতের জনসাধারণ চিনতে পারবেন। কারণ মোদী সরকার শেষ ন-বছর ধরে সেই কাজই করে চলেছে।
অতীত দিনেও ভারতের বুর্জোয়া-জমিদার শাসনের প্রতিই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুঁজির মনোযোগ নিবিষ্ট ছিল। কিন্তু যে মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় বিজেপি আসীন হয়েছে তখন থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যখ্যায় শুধু আধুনিক পুঁজিবাদ বললে সত্যের অপলাপ হবে। বিজেপি কেবল একটি বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলমাত্র নয়। সরাসরি মুসোলিনির থেকে সংগঠন শিখে বড় হওয়া সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের রাজনৈতিক পক্ষ হল বিজেপি। আর তাই বিজেপি’র শাসনে একদিকে যেমন দেশের শ্রমজীবীরা অতীতের চাইতে অনেক অনেক বেশি নিপীড়িত হচ্ছেন (নয়া কৃষি আইন, নয়া শ্রম কোড, নয়া বিদ্যুৎ আইন, নোট বাতিল, লকডাউন এসবই হল নিপীড়নের উদাহরণ) তেমনই আরেকদিকে এরা দেশের বুনিয়াদকেই ধ্বংস করতে চাইছে। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার, অর্জিত সামাজিক অধিকার, মহিলাদের মর্যাদা, বিজ্ঞানচেতনা এমনকি নিছক বাণিজ্যিক স্বার্থে নির্মিত ছায়াছবি অবধি এদের শাসনে আক্রান্ত। গায়ের জোরে আইন প্রণয়ন করে দেশের মানুষের ন্যুনতম অধিকারটুকু কেড়ে নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দিতে চায় হয় অন্য দেশে নাহলে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। ভারতীয় গণতন্ত্রের স্তম্ভ চারটি- কোনও একটি প্রধান এমন না, চারটি একসাথে মিলে তবে দেশের শাসনকাঠামো। সেই কাঠামোকেই এরা এককেন্দ্রিক (মনোলিথিক) করে তুলতে চায়। এরা চাইছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ থেকে শুরু করে পাড়ার রেস্তরাঁয় খাবার মেনু অবধি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতে। রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে স্বাধীন ভারত কিছু মূল্যবোধ তুলে ধরেছিল। বিশ্বের সামনে সেইসব কর্মসূচিই ছিল আমাদের দেশের পরিচিতি। কোনও আন্তর্জাতিক বহির্শক্তির সমীপে মাথা না নামিয়েই আমরা নিজেদের স্বতন্ত্র বজায় রেখেছিলাম। আজকের ভারত ‘কোয়াড’ জোটে নাম লিখিয়ে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে উস্কানিতে মদত যোগায়, মানবতার প্রতি গভীর অবমাননার আচরণ করছে এমন দেশের রাষ্ট্রনেতাকে আমাদের দেশের সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন অতিথিরূপে অভিনন্দিত করে। এমন শাসন ভারতে আগে কখনো ছিল না।
আমরা ইতিমধ্যেই বলেছিলাম-
Despite the alarming rise in unemployment, growing poverty and sharply widening inequalities, the government’s response to the growth slowdown only served to worsen the inequalities in income and wealth. Huge volumes of bad loans taken by large crony corporate groups have been written off and banks recapitalized using tax payers’ money. This bonanza to defaulting business groups has continued. In the last 7 years of the Modi government, loans taken by corporates worth Rs. 10.72 lakh crore have been written off. Wilful debt defaults have been legalized invoking the Insolvency Bankruptcy Code procedures.
[Paragraph No: 2.19, National Situation: 23rd Congress Political Resolution of CPI(M)]
এই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজির সমর্থন পাওয়া এদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিল। তার জোরেই এরা বলেছে উন্নয়নের অর্থই হল গুজরাট মডেল- দেশজুড়ে প্রচার চলেছে মোদীই ভবিষ্যৎ। নির্বাচনী বন্ড সম্পর্কে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট মোট তহবিলের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই পেয়েছে বিজেপি। ভারতের মতো এক বিরাট দেশের বাজার দখল করতে আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজির প্রয়োজন ছিল এমন একটি দলের যাদের পুঁজিবিরোধী কোনও অতীত নেই, স্লোগান নেই- ভবিষ্যৎও নেই। তাই তারা খুঁজে নিয়েছে বিজেপি’কে। মোদী জমানায় যেভাবেই হোক না কেন মুনাফা থেকে অতি মুনাফা লুটের পথ পরিস্কার থাকায় তাদের বিবেচনায় সাম্প্রদায়িকতা, বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা এমনকি দাঙ্গা অবধি আলোচনার বিষয় না- কেননা আধুনিক লগ্নী পুঁজির কোনোরকম উৎপাদনমুখী চরিত্রই নেই। পণ্য উৎপাদন হোক বা না হোক, বাজারে চাহিদা থাকুক বা মন্দা বেড়ে চলুক- ‘ইধার কা পয়সা উধার’ করেই যদি দিনের শেষে সম্পদের পরিমাণ অনেকগুণ বাড়িয়ে নেওয়া যায় তবে রাস্তার আগুন অ্যাডভান্স লোণ কার্ভের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা কমায় না। যতই কারচুপি হোক না কেন, সবই তো আসলে মাথা পিছু আয়ের গড় মান বাড়িয়ে দেয়! হ্যাঁ, গোটা দেশে কারোর একটি পয়সা বেতন, মাইনে, ভাতা না বাড়লেও যদি শুধু একটি পরিবারের আয় কয়েকশোগুণ বেড়ে যায় তাহলেও মাথাপিছু গড় আয় বাড়ে! এবং তখনও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ‘বিকাশ’-র গপ্পো শুনিয়ে চলে।
আসলে সরকারের নামে আমাদের দেশে কি চলছে?
Concessions to corporates in return for political funding are the highlight of crony capitalism under the Modi government. During the last 7 years of this government Rs.10.72 lakh crore of loans taken by its crony corporates have been written off. The consequent money power in the hands of the BJP is completely distorting a level playing field for all contestants to ensure free and fair elections.
[Paragraph: 2.81, 23rd Congress Political Resolution of CPI(M)]
যে আদানি’ ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে এত কথা চলছে তারা যে এতদুর আসতে পেরেছে তার প্রধান কারণ দেশের সরকার ঠিক তাই চেয়েছে। আদানিরা মোদীর নির্বাচনী তহবিল দেখে নেবেন- উল্টোদিকে দেশের সরকার এমন বন্দোবস্ত করবে যাতে এনারা সরকারী ব্যাংক, এলআইসি থেকে নির্ঝঞ্ঝাটে ঋণ নিয়েই চলবেন। জনসাধারণের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো অর্থ আদানিদের হাতে তুলে দিয়ে ব্যাংকগুলি নিজেদের নন পার্ফর্মিং অ্যাসেট বাড়িয়ে চলবে। একটা সময় এনপিএ’র চাপে রিজার্ভ ব্যাংক হয় মার্জার ঘোষণা করবে, নাহলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেবে। এমন হলে ক্ষতি কাদের? জাতীয় বাজেটে কয়েক কোটি টাকার প্রত্যক্ষ কর মুকুবেও যাদের এতটুকু সুবিধা হয় না- তারাই এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ।
কেউ বলতে পারেন, বাড়তি কর দেয় যারা তাদের জন্য বাড়তি সুযোগসুবিধা দেওয়া কেন অন্যায় হবে? অন্যায়, অবশ্যই অন্যায় কারণ একদিন আগেই যে দেশে কর্পোরেটদের ৩৫০০০ কোটি টাকার মতো করছাড় দেওয়া হয় সেই দেশেই নেট ইনডায়রেক্ট ট্যাক্স (NIT) আদায় হয় ৯.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা (২০২০-২১ অর্থবর্ষের হিসাব)। এই কর শুধু বড়লোকেরা দেন না, সারা দেশের সমস্ত জনসাধারণ একসাথে জেনারেট করেন। যদি গোদা ভাবেও হিসাব করা হয় যে ভারতে বড়লোক ও শ্রমজীবীদের আনুপাতিক উপস্থিতি ৭০:৩০, তবে সরকারী ভর্তুকিতে কাদের অধিকার বেশি? অথচ এদেশেই করোনা সংক্রমনে কাজ হারানো গরীব পরিবারগুলি মাথার উপরে ছাদ পায় না, বিনামূল্যে জরুরী অক্সিজেন সিলিন্ডার পায় না, উপযুক্ত পরিমানে খাদ্য মেলে না তাদের, শিক্ষার সুযোগ পেতে নেট প্যাকেজ রিচার্জ করতে হয়। সরকার সারা বছর তাদেরই কেনা প্রতিটি পণ্যে কর আদায় করে কিন্তু দুঃসময়ে মাসিক ন্যুনতম আর্থিক সাহায্যটুকু দিতে রাজী হয় না।
এই জন্যই ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ শুধু একটি বিশেষ অর্থনীতি না, একটি বিশেষ ধরনের রাজনীতিও। আমরা তাকেই কর্পোরেট-কমিউনাল নেক্সাস (কর্পোরেট ও সাম্প্রদায়িক শক্তির আঁতাত) বলেছি।
এই রাজনীতিতে কেবল মুনাফার স্বার্থটুকুই নির্লজ্জের ন্যায় সুরক্ষিত থাকে, ঐটুকু নির্লজ্জতার কারনেই আগেকার শাসন-অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে আজকের অবস্থার ফারাক হয়ে যায় আসমান-জমিনের।
এই লেখার তৃতীয় পর্বে সেই আসমান-জমিনেরই খতিয়ান তুলে ধরা হবে।
অনেকেই ভাবছেন আদানির কি হবে।
আমরা বলছি আদানিদের জন্য এই দেশের কোথায় কি কি হতে পারে।