জনতা-ভক্ত কথোপকথন – রাম নাম সত্য হ্যায়!
শমীক লাহিড়ী
জঃ ৩,৪৬,৭৮৬ – ২৩ শে এপ্রিল সংক্রামিত। ২,৯৭,৬৯৬ – বিগত ৭দিনের সংক্রমণের গড়।
ভঃ দেশ খতরে মে হ্যায় – No Politics Please।
জঃ ১১,৫৪,৬১,২০২ জন এখনো পর্যন্ত করোনা প্রতিষেধকের ১টি টিকা পেয়েছেন। অর্থাৎ মাত্র ৮.৪% ভারতীয় নাগরিক ১টি টিকা পেয়েছেন। ২,০১,৯৭,১২২ জন ভারতীয় নাগরিক সম্পূর্ণ টিকাকরনের আওতায় এসেছে। মানে, মাত্র ১.৫% ভারতীয় সম্পূর্ণ টিকাকরনের আওতাভুক্ত হয়েছেন।
ভঃ মোদিজি পুরা ইসি কামমে লাগা হুয়া হ্যায়, উনকি চমৎকারি দেখিয়ে, টিকা তো উনহিকা আবিষ্কার হ্যায়। ইসকি নাম মোভ্যাক্সিন আওর মোদিশিল্ড রাখনা চাহিয়ে থা।
জঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সম্পূর্ণ টিকাকরনের আওতায় এসেছে – আমেরিকা – ২৭.৮%, ব্রিটেন – ১৭.৮%। বাংলাদেশ, যাদের নিজেদের টিকা প্রস্তুত করার প্রযুক্তি নেই, তারাই একমাত্র আমাদের নীচে আছে।
ভঃ দেশ খতরে মে হ্যায় – No Politics Please। আভি ইয়েসব সওয়াল ওঠানা দেশবিরোধী কাম হ্যায়।
জঃ ২৩শে এপ্রিল আমাদের ২৬২৪ জন সহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এই সংক্রমণে। ১৬-২৩ এপ্রিল এই ৭ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১৯৮৫জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ভঃ আরে এতে এতো ঘাবড়ানোর কি আছে! ইয়ে মৌক্ত নেহি হ্যায়, ভগবানকা প্যার মিলা ইনহ লোগোকো।
জঃ উপরের সংখ্যাগুলো নিছক সংখ্যা নয়, মৃত্যু মিছিলে সামিল হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত মানুষ। কত পরিবার ছারখার হয়ে যাচ্ছে। কত বাপ-মায়ের কোল খালি হচ্ছে, কত সন্তান অনাথ হচ্ছে এই অতিমারিতে, শুধু সংখ্যা দিয়ে এই শোক মাপা যায়না।
ভঃ ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে – হ্যাঁ দৈনিক সংক্রামিত ব্যক্তি ও মৃত্যুর সংখ্যায় আমরা জগৎ শ্রেষ্ঠ হয়েছি। বিগত বছরে ট্রাম্প ছিলেন, তাই প্রথম স্থান ছিল আমেরিকার। এখন ওর যোগ্য শিষ্যের হাতে প্রথম হওয়ার ব্যাটন তুলে দিয়ে গেছেন। মোদিজি কা খেল আভি দেখিয়ে – ইয়ে তো স্রিফ ট্রেলার হ্যায়, পিকচার আভি বাকি হ্যায়।
জঃ তবে এই পিকচার দেখার জন্য আপনি বা আমি বেঁচে থাকবো কি!!
ভঃ দেশ খতরে মে হ্যায় – No Politics Please। প্রার্থনা করুন, জপতপ করুন। প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্ত করুন। গোচোনা পান করুন।
জঃ ১৪ মাস সময় পাওয়া গিয়েছিল এবার। সংক্রমণের ২য় তরঙ্গাভিঘাত আসবে, এই সতর্কবার্তা WHO বিগত নভেম্বর মাস থেকে আমাদের দিয়ে আসছে। মন্দিরের শিলান্যাস হ’লো, কিন্তু একটাও নতুন হাসপাতাল তৈরি হ’লোনা। রাম মন্দির নির্মাণের দান করমুক্ত হ’লো, কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা – ওষুধ, অক্সিজেন ইত্যাদি করমুক্ত হ’লো না।
ভঃ ইয়ে সব ভগবান বিরোধী, দেশবিরোধী বাত হ্যায়। ইন্সান কি জান ক্যায়া যায়দা কিমতি হ্যায় ভগবান কি মন্দির সে!!! সব ঘোর নাস্তিক হ্যায়। ইয়ে লোগ সব পাকিস্তান কি চর হ্যায়।
জঃ গোমূত্র গবেষণা নিয়ে IIT সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা, পরীক্ষা গ্রহণ ইত্যাদির সরকারি নির্দেশিকা জারি হ’লো। কিন্তু রোগ নির্ণয় পরীক্ষার যন্ত্র, রাসায়নিক, ওষুধ, প্রতিষেধক ইত্যাদি আবিষ্কার করার জন্য কোনো সরকারি নির্দেশিকা জারি হ’লোনা।
ভঃ এই সব নাস্তিকদের জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা। না হ’লে দেশকে তো করোনামুক্ত ক’রে ফেলেছিলেন মোদিজি তাঁর যাদুবলে। সবাই যদি নিয়ম করে গোরুর ন্যাজ তুলে গোমূত্র পান করতো, তাহলে আজ এই পরিস্থিতি তৈরিই হ’তো না।
জঃ সার্বজনীন টিকাদানের প্রক্রিয়া বিগত ৭ দশক ধরেই সরকার বিনামূল্যে পরিচালনা করে আসছে। হঠাৎ ৭দশকের নীতি পালটানোর প্রয়োজন কেন? দেশের ১০০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হয়তো ৭০০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাজেট ঘোষণায় তো ৩৫০০০ কোটি অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কোথায় গেল এই অর্থ? এই অর্থ দিয়ে তো ৫০কোটি মানুষের টিকাদান হয়ে যেত (মাথাপিছু ৭০০টাকা)। এখন মাত্র ৩৫কোটির দায়িত্ব নেবে কেন্দ্র, বাকি ৯৫ কোটি ভাঁড় মে যাও। অবশ্য মাথাপিছু ১৫০ টাকা, যা কোভ্যাক্সিনের প্রকৃত দাম, সেই হিসাবে কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত ৩৫০০০কোটি টাকায় ১১৬কোটি মানুষকে টিকাদান করা যায়।
ভঃ এই তো গোলমাল। সরকার কোতো খর্চা করবে! দেশের জন্য এইটুকু স্বার্থত্যাগ করবে না দেশবাসী? ৭৩ বছর বিনামূল্যে টিকা দিয়েই দেশের সত্যনাশ হ’য়ে গেল। টিকাতেই সব পয়সা খরচা হয়ে গেল, দেশের আর উন্নতি হ’লো না।
জঃ পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ দামে কোভিশিল্ড টিকা কিনতে হচ্ছে কেন ভারতবর্ষকে? সৌদি আরব ও দক্ষিণ আফ্রিকা কিনছে ৫.২৫ ডলারে, আমেরিকা ও বাংলাদেশ ৪ডলারে, ব্রাজিল ৩.১৫ডলার, ব্রিটেন ৩ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২.১৫-৩.৫০ ডলারে কিনছে। যেখানে ভারতের বেসরকারি হাসপাতালে এর দাম পড়বে ৮ডলার প্রায়।
ভঃ কি মুস্কিল! ওষুধ কোম্পানির খোর্চা কত হুয়েছে জানা আছে? আরও কত খোর্চা হোবে জানেন? ইতনা বড়া একটা আবিষ্কার করলো, আর ২/৪ বিলিয়ন ডলার নাফা করলেই হৈচৈ!! আশ্চর্য আদমি আছেন আপনি!! সব কর্পোরেট বিরোধী- হিন্দু বিরোধী – দেশ বিরোধী লোগগুলোকে NRC করে পাকিস্তানে ভাগাতেই হোবে। নাহলে হিন্দু খতরে সে নিকাল নহি পায়েগা।
জঃ কেন্দ্রীয় সরকার কোভিশিল্ড টিকা কিনলে দাম ১৫০টাকা, রাজ্য সরকার কিনলে ৪০০টাকা আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কিনতে হবে ৬০০টাকা দিয়ে। কোভ্যাক্সিন বেসরকারি হাসপাতালে ১২০০, রাজ্য সরকার কিনলে ৬০০ টাকা। কেন এই বৈষম্য? একদেশ, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক নেতার পক্ষে সওয়াল করে কেন এক দেশ ৩ রকমের দাম? এটা আর একটা বড় ঘোটালা বিজেপি করছে, যখন দেশের মানুষ অসহায়ের মতো মৃত্যু মিছিলে দাঁড়িয়ে।
ভঃ আরে মোদিজিকে কুছু কনসেশন দিচ্ছে তো আপকা ইতনা গুসসা কিঁউ? মোদিজি ওদের অনেক টেক্স কোনসেশন দিয়েছেন, তাই ওরাও এখন কুছু কুছু ছাড় দিচ্ছে। তো আপনার কি? নেতা, ধরম, ভাষা,আইন আর টিকার দাম কি এক চিজ আছে? দামের তো ফারাক থাকবেই। যেমন মুর্গা পাবে তেমন জবাই হোবে – এটাই তো বেওসার নিয়ম আছে।
জঃ সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে কলকারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালত খোলা রাখা মুস্কিল হয়ে পড়ছে। ওখানে ভীড়ে গেলে সংক্রমণ, আর কাজে না গেলে অনাহার। এই আশ্চর্য এক দঁড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে মানুষ দিশেহারা।
ভঃ এতো মহামুস্কিল! আপনি সমাচার শুনেন না, আখবর পোড়েন না! দেখেন নি ৮০ ক্রোড় হিন্দু থুড়ি হিন্দুস্থানি কো ৫কেজি গেঁহু/চাওল মুফত মে ২ মাহিনা দেঙ্গে মোদিজি। ঘর সে নিকালনে কা জরুরত কেয়া?
জঃ চালকে ভাত, গমকে আটা তারপর রুটি বানাতে ৮৩৫ টাকার গ্যাস কেনার টাকা কে দেবে? সংসার চালানোর বাকি খরচ কিভাবে আসবে? ওষুধ-বিদ্যুৎ- সাবান কেনার টাকা? মোদিজির কল্যানে খাবার সর্ষের তেল ২০০ টাকা/কেজি। কিনবে কি ভাবে মানুষ? বামপন্থীদের দাবি অনুযায়ী এই ৮০ কোটি মানুষের ২০কোটি পরিবারকে মাসে ৭৫০০ টাকা ভাতা কেন দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার?
ভঃ ইয়ে কমনিস্ট লোগ বহুত খতরনাক হ্যায়। দেশ কা আদমি সব পাকিস্তানি য্যায়সে বাত করতা হ্যায়। সব কুছ মুফত মে দেগা কেয়া? হারামখোর, ২/৪ মাহিনা চাওল/গেঁহু খাও। আগর ভগবান কা পেয়ার নেহি মিলা, তো বাদ মে আপনে পয়সা সে যো মন চাহে খা সকতে হো। আগর ইসি বিচ মে ভগবান কা প্যার মিল গিয়া তো – রাম নাম সত্য হ্যায় বোলকে খাটিয়া মে চড় যাও। রাম কা নাম লেনে কি পূণ্য ভি মিল যায়গা, আওর ভুখমারিসে ভি পুরা আজাদী মিল জায়গি।