রাস্তার লড়াইয়েই গড়ে তুলতে হবে মানুষের ঐক্য – শমীক লাহিড়ী…

১৯ জুন ২০২২ (রবিবার)

প্রথম পর্ব

কবি বীরেন চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেন –
যখনই জনতা চায়
বস্ত্র ও খাদ্য
তখনই শাসকরা বাজায়
দাঙ্গার বাদ্য।

সব ভুলে যাও


৮ বছরে মোদির রাজত্বে ১৩ টাকার কেরোসিন হয়েছে ৯০টাকা। ৪৫০ টাকার গ্যাস হয়েছে ১০৫০টাকা। ৬০ টাকার সর্ষের তেল হয়েছে ১৮০ টাকা। বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

সব ভুলে জয় শ্রীরাম বনাম আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দাও উন্মত্ত জনতাকে। জীবনের যন্ত্রণা-দুর্দশা জ্বলে যাক হিংসা-দাঙ্গা আর বিদ্বেষের আগুনে।

বাড়ি জ্বলছে, দোকান পুড়ছে, ঘর ভাঙছে।
কার ঘর ভাঙছে? কার দোকান পুড়ছে? কার বাড়ি জ্বলছে? কে ভাঙছে – কে জ্বালাচ্ছে? গরীব-নিম্নবিত্তর বাড়ি-দোকান জ্বলছে। আর আদানি-আম্বানি- মন্ত্রী-নেতারা কোটি কোটি টাকা লুটছে। এ-সব ভুলে যাক মানুষ, দাঙ্গায় নামিয়ে দাও মানুষকে।

বিকল্প বিদ্বেষের বিষ


কে এক নুপুর শর্মা কি বলেছে, তাই নিয়ে আগুন জ্বলছে। একে কেউ চেনে না। কিন্তু বিজেপি একেই দলের মুখপাত্র বানিয়ে, তাকে দিয়ে বিদ্বেষের বিষ ছড়ানোর জন্যই উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে আগুন জ্বালাতে চেয়েছে দেশে, তাই আগুন জ্বলছে।

আসলে দেশ জুড়ে দাঙ্গার আগুন জ্বালানোর বিকল্প কিছুই নেই মোদি’র কাছে।
পেট্রোল-ডিজেল-গ্যাস-কেরোসিন-ভোজ্য তেল-ওষুধ সহ সব জিনিষপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। সরকারি সম্পদ ব্যাংক-বীমা-রেল-খনি সব বেচে দিয়েও দেশের অর্থনীতি সামাল দিতে পারছেন না মোদিজী। স্বাধীনতার পর বেকারত্ব বৃদ্ধির হার এখনই সবচাইতে বেশি। দিশেহারা বিজেপি-আরএসএস তাই দেশ জুড়ে দাঙ্গা লাগানোর জন্যই পরিকল্পিত ভাবে তার মুখপাত্রদের দিয়ে এই সব উস্কানিমূলক মন্তব্য করে চলেছে বেশ কিছুদিন ধরে।

কেন নয় গ্রেপ্তার?


কেন এই নুপুর শর্মাকে এখনও গ্রেপ্তার করছে না দিল্লীর পুলিশ? প্রয়াত পৃথিবী খ্যাত চিত্র শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেইন হিন্দুদের আরাধ্য দেবী সরস্বতীর একটি চিত্র এঁকেছিলেন। তাতে না কি ধর্মের অবমাননা করা হয়েছিল! এই অসত্য প্রচারের ঝড় তুলে আরএসএস- বিজেপি – সঙ্ঘ ওয়ালারা দেশ জুড়ে তান্ডব চালিয়ে ওনাকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছিল। ধর্মের অবমাননা হচ্ছে বলে কয়েক’শ প্রতিবাদী কন্ঠকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে বিজেপি পরিচালিত বিভিন্ন রাজ্যের সরকার বিগত কয়েক বছরে। আর যার মন্তব্যে পৃথিবীর ২০টা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত সরকারকে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছে, দেশ জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে, তার বাড়ির সামনে ডজন খানেক পুলিশ বসিয়ে তাকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। শোনা যাচ্ছে এখন নাকি গোপন ডেরায় তাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

নুপুর শর্মা কে গ্রেফতারের দাবিতে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ

নীরো থেকে হিটলার


নীরো ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জর্মানিক্যাস ছিলেন জুলিও-ক্লডিয়ান বংশের শেষ রোমান সম্রাট। ১৬ বছর বয়সে তিনি সম্রাটের আসনে বসেন। মাত্র ৩০ বছর তিনি বেঁচেছিলেন। তাঁর এই ছোট্ট জীবনের ১৪ বছরই কেটেছিল সম্রাটের মুকুট পরে। তাঁর ২৭ বছর বয়সে ঘটা ৬দিনের একটা ঘটনাই তাঁকে ২১০০ বছর বাদেও পৃথিবীর সবচাইতে বড় ভিলেন বানিয়ে রেখেছে। যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৬৪ বছর পরের ঘটনা। ১৮ই জুলাই মতান্তরে ১৯শে জুলাই এর সন্ধ্যা। রোম শহরের সার্কাস ম্যাক্সিমাস স্টেডিয়ামের দোকানগুলিতে আগুন লাগে। ৬দিন ধরে চলা এই অগ্নিকান্ডে তৎকালীন রোম শহরের ১৪ টি জেলার ১০টি জেলা পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। অভিযোগ যখন রোম শহর জ্বলছিল তখন তিনি সেই শহর থেকে দূরে আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত ছিলেন। তাই সেই আগুন নেভানোর উদ্যোগ নিতে দেরী হয় প্রশাসনের। সেই থেকেই প্রবাদ চলে আসছে – যখন রোম শহর জ্বলছিল, তখন নীরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন।

এই ঘটনার মাত্র ৪ বছরের মাথায় ৯ইজুন, ৬৮ সালে জনতার ক্ষোভ চরমে পৌঁছালে, রোমান সেনেটররা তাঁকে জনগণের শত্রু বলে ঘোষনা করে। ফলে তিনি পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।

মোদিজির নিজের দলের মুখপাত্রের কথায় দেশজুড়ে হিংসাত্মক ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে, অথচ তিনি নীরব-নিশ্চুপ মৌনীবাবা। নীরোর পরিণতি তাঁর জানা না অজানা, জানি না। তবে ইতিহাসে এমন পরিণতি অনেক অত্যাচারী শাসকেরই হয়েছে – নীরো থেকে হিটলার, মুসোলিনি।

বাড়ছে তীব্র অসাম্য


মোদির রাজত্বে একদিকে গরীব- নিম্নবিত্ত- মধ্যবিত্ত বাজারের দামের আগুনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, অথচ মোদিজির বন্ধু শিল্পপতি আদানীর সম্পদ গত ৮ বছরে বিজেপি’র রাজত্বে সাড়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকা (৫,৫৪, ৬১,৬১,৪৫,০০০টাকা) থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশী (৬৩,২৯,৭৮,৫৫,
০০,০০ টাকা)। মানে সম্পদের পরিমাণ গত ৮ বছরে বেড়েছে ১৩গুন। অন্যদিকে মোদিজির আর এক জিগরী দোস্ত মুকেশ আম্বানীর সম্পদ বেড়ে এখন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮০ লক্ষ কোটি টাকা (৮০,৪৭,০৩,৪৬, ৫০,০০০টাকা)।

২০২১-২২ সালে ভারতবর্ষের বাজেটের মুলধনী খাতে, অর্থাৎ মূলত উন্নয়নের জন্য যেমন রাস্তাঘাট- স্বাস্থ্য- শিক্ষা-পানীয় জল-ঘর বাড়ি নির্মান-বিদ্যুৎ সহ নানাবিধ নতুন প্রকল্পের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৫.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা পরে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৬.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। ১৩৮ কোটি দেশবাসীর উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার খরচ করেছিল ৬.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন ছিল ১৯৭.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা, আর মাত্র ২টো মানুষের মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৪৩ লক্ষ কোটি টাকা।

কিন্তু এসব নিয়ে ভাবা যাবে না। এসব প্রশ্ন করা চলবে না। বরং হিন্দু- মুসলমান- উঁচুজাত- নীচু জাত এসব নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করুক। আদানী-আম্বানীর লুঠের বিরুদ্ধে মোটেই যুদ্ধ করা যাবে না।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ার জন্য দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন…

Spread the word

Leave a Reply