Peoples Issues, Peoples Struggle: A Report (I)

এস ভার্গব

একসময় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দেওয়ালে লাগানো পোস্টারে, ছাত্রছাত্রীদের মিছিলের প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকতো “কেন্দ্রীয় বাজেটের ১০% ও জিডিপির ৬% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করতে হবে”। অথচ আজ ছাত্র সংগঠনগুলির মূল লক্ষ্য হলো কিভাবে ছাত্র সংসদের নির্বাচত পুনরায় চালু করা যায়। একবার ভেবে দেখা উচিত, কোনও সভ্য সমাজে (প্রযুক্তিগত ভাবে পিছিয়ে থাকা সমাজও সভ্য) সমাজের সর্বস্তরে ১৮ বছর বয়সীরা কাউন্সিলর – মেয়র থেকে এম এল এ – মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এম পি প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার অধিকারি; কিন্তু নিজেদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চেয়ার টেবিল বেঞ্চ বই খাতা অনুষ্ঠান ক্লাস সিলেবাস কি হবে, কি অবস্থা, কিভাবে চলবে প্রতিষ্ঠান সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না; বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সিনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, বোর্ড অফ স্টাডিজে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে না, এদিকে দেখতে দেখতে সেলফ ফিন্যান্স কোর্স বাড়ছে, ভর্তির সময় বে-নিয়ম চলছে, সিলেবাস শেষ হয় না। সাধারণ প্রচলিত বিষয় পড়তে গেলে এক গুচ্ছ টাকা লাগে, পেশাদার কোর্সের তো কথাই নেই।

ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের স্বার্থরক্ষায় জরুরী রাজনীতিকে ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠাতে গিয়ে দেখা গেলো শিক্ষার্থী সমাজটাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর কমছে! খালি থাকছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আসন। গোটা উপমহাদেশ জুড়ে দেশীয় ভাষার শিক্ষা মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলি উঠে যাচ্ছে। আগে যেখানে একটা নীচু ক্লাসে তিনটি সেকশন করে ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হতো, আজ সেখানে একটা সেকশনে ২০ জন ভর্তি হয়না, ৭৫০-৮৫০ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা আজ ৮০-২০০-র মধ্যে ঠেকেছে। ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় উপাসনা উচিৎ কি উচিৎ না সে প্রশ্ন থেকে চোখ সরালে দেখা যাবে বসন্ত পঞ্চমীর দিন স্কুলগুলিতে উপস্থিত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ পেরোয়নি। ঠিক যেমন বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা কমছে, কারখানায় নতুন বছরে ক্যালেন্ডার ডায়েরি দেওয়ার প্রবণতা কমছে, শ্রম আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে অথচ গণেশ পুজোর চমক শারদীয়াকে চ্যালেঞ্জ করছে।

আর শিক্ষার্থীরা দেখছে স্কুলে ঠিক মতো পড়ানো হচ্ছে না অথচ স্কুলে পড়ানোর দাবি নিয়ে গড়ের মাঠে বসে হবু শিক্ষক, শিক্ষিকারা। ৬০০ দিনের ওপরে চাকরির দাবি নিয়ে বসে আছেন তারা। সেই চাকরি ঠেকাতে লাঠি চার্জ, গ্রেপ্তার এমনকি কোর্টের রায় রুখতে সুপ্রিম কোর্ট যাচ্ছে প্রশাসন।

উচ্চ শিক্ষা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। জানে চাকরি নেই। এদিকে বেসরকারি কাজের সময় বাড়ছে লাগামছাড়া। মাইনে কম, কোনও বৃদ্ধি নেই, উল্টে ছাঁটাইয়ের ভয়। পেটে ছুঁচোর কেত্তন চললেও ধর্ম নিয়ে আবেগের কমতি নেই। কমতি নেই মেলা,খেলা ও উৎসবের।

ফরাসি বিপ্লব আর রুশ বিপ্লবের সময়েও দেখা গিয়েছিল থিয়েটার বা সিনেমা হলের সামনে প্রচুর ভিড়। ফলে মেলা, উৎসব আর উদযাপন দেখে যদি শাসক শ্রেণি মনে করে এই দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যাবে তাহলে ভুল করছে তারা। কৃষক থেকে শ্রমিক, ছাত্র যুব থেকে মহিলা, সবাই নিজেদের দাবিতে লড়ছে। লড়ছে অধিকারের দাবিতে। গত এক দশকের মতো সময় ধরে দেশে ও রাজ্যে যে দ্বিবিধ (বলছি দ্বিবিধ; আসলে একটাই দুমুখো ছুরি) কর্তৃত্ববাদী অসংযমী সরকারের কার্যকলাপ চলছে; তাতে নাভিশ্বাস উঠছে জনগণের। তারা মুক্তির প্রহর গুনছে।

সমস্ত পৃথিবীর একটা বিরাট অংশই ক্রমশ অন্ধকারের টানেলে ঢুকে পড়েছে। আমাদের সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা ধ্বংসের মুখে। একদিকে প্রকৃত বিচারপ্রার্থী বিচার পাচ্ছে না, অন্যদিকে বিপুল অর্থের তছরুপ ও তোলাবাজি, ঘুষের টাকা উদ্ধার হচ্ছে কিন্তু তার জন্য অভিযুক্তরা লজ্জা পাচ্ছে না। ভারতের জনগণের ঐক্য ভাঙছে, তার জায়গা নিচ্ছে বিচ্ছেদ। রাষ্ট্র এতে সরাসরি মদত দিচ্ছে। মানব পীড়নের মহামারী চলছে। মানবাত্মার অপমান ভারতের সর্বত্র ছেয়ে গেছে, বহু বছর পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা।

রাষ্ট্রের যদি পথ রোধ করে সভ্যতা, ন্যায়-নীতি, তাহলে রাষ্ট্র বাধ্য করে সভ্যতাকে পথ ছাড়তে। তখন আগেকার রাষ্ট্রই বদলে যায় ফ্যাসিবাদী কাঠামোয়।

এই লক্ষ্মীছাড়া আবর্জনার স্তূপ একদিনে যাবে না। এর কুপ্রভাব রাতারাতি সবটা মেটে না। আগামী নির্বাচন হলো এদের সবচেয়ে জরুরী ধাক্কা দেওয়ার উপযুক্ত ক্ষেত্র। সেটাই প্রাথমিক লক্ষ্য, আজকের লড়াই।

তাই এমন অন্ধকারের বঞ্চনার সময় পেরোনোর জন্য জোট বাঁধুন, তৈরি হন।  

লেখক ইতিহাসের ছাত্র, প্রাইভেট টিউশন করে জীবিকা নির্বাহ করেন

Spread the word

Leave a Reply