সংক্রমণ মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপের কৃতিত্ব কার সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই কঠিন সময়ে মানুষের জন্য স্বাস্থ্যপরিষেবার সঠিক আয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কলকাতায় সংক্রমণের পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও উত্তরবঙ্গে এখনও সেরকম কোন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
অথচ শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রিকে অনেক আগেই ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি লিখে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেন। তখন সেই অনুযায়ী কাজের কথা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই কাজের কৃতিত্ব কার এই নিয়ে তরজার শেষ না হওয়ায় পুরো উদ্যোগটাই থমকে যায়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সংগ্রহ করা নমুনা কলকাতা এবং দিল্লিতে পাঠিয়ে পরীক্ষা চলতে থাকে – এই কাজে প্রতিটি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পরে চিকিৎসা শুরু করতেই সময় লেগে যায় প্রায় ৭ দিন!
এই দীর্ঘ সময়ে সম্ভাব্য সংক্রামিত রোগীদের বাকিদের সাথে একই জায়গায় চিকিৎসার জন্য ফেলে রাখা হল। অথচ উত্তরবঙ্গ আন্তর্জাতিক সীমানায় অবস্থানের কারনে খুবই গুরুত্বপূর্ন। লকডাউনের ঘোষণায় কলকাতা বা দিল্লিতে ট্রেন বা অন্যান্য পরিবহনের অবস্থা ভাল নয়, সেখানে নমুনা পরীক্ষার জন্য উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে COVID-19 সহ বহু রোগেরই পরীক্ষার কোন সূযোগ নেই। – যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন তাদের জন্য চিন্তা করা হল না।
কার্যত উত্তরবঙ্গ সংক্রমনের আতংকে টাইম বোমার মতো হয়ে রয়েছে।
বারে বারে রাজ্যসরকারকে এই নিয়ে তৎপর হতে বলেছিলেন, অশোক ভট্টাচার্য আজ জানিয়েছেন ” বেশ কিছুদিন ধরে শুনে আসছি উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এই পরীক্ষা শীঘ্রই শুরু করা হবে। কিন্তু আজও তা শুরু হয় নি। অথচ কিট এসে পড়ে রয়েছে। বর্তমানে কলকাতার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।কেউ বুঝতেই পারছে না এই রোগে কতজন আক্রান্ত।তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হয়ত রোগও ছড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছিল তারা কিছু বেসরকারী ল্যাবরেটরি কে অনুমতি দিতে আগ্রহী। এ গুলিকে আজও চিহ্নিত করা হয় নি। ডেঙ্গুর মতো এই রোগের তথ্য গোপন করা উচিত নয়। উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ বা অন্যান্য হাসপাতালে যে সমস্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডের নামে কিছু স্থান চিহ্নিত করে রাখা আছে, তার মান নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।গত কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রথম (২৭শে মার্চ) রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী উত্তর বঙ্গের এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তাও বহু চিঠি লেখার পর। কলকাতার বাইরে অন্যান্য জেলা গুলির অবস্থা আরও খারাপ। সতর্কতা ও সচেতনতা যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের যথাযথ চিকিৎসাও।”
জানা গেছে আগামীকাল, সোমবার কলকাতা থেকে একটি চিকিৎসক টিম উত্তরবঙ্গ যাবেন সংক্রমণের পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য। মানুষের জীবন অমুল্য – এই সময়ে দলীয় রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে সবাইকে একসাথে এই বিপদের মোকাবিলা করতে হবে।
অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন ” রাজ্য তথা দেশের মানুষ এই বিপর্যয়ের সময় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে।এই রকম একটি বিপর্যয় রোধে জনগণের সহযোগিতা, গণসচেতনতা,গণ উদ্যোগ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সরকারের দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও কোথাও তার অভাব অনুভূত হচ্ছে।এই অভাবকে অবশ্যই দূর করতে হবে। আমাদের শ্লোগান হোক Fight against Corona virus, we shall overcome.”